নিমিষেই পুড়ে ছাই: ৬ বছরের কষ্টের টাকায় দোকান
ছয়
বছর দুবাই ছিলেন শাহ জামান। প্রবাস জীবন ছেড়ে দেশে ফেরেন। জীবিকার তাগিদে
মাত্র দুই মাস আগেই শুরু করেন গুলশান-১ ডিএনসিসি মার্কেটে ব্যবসা। নতুন করে
স্বপ্ন দেখা। এই ব্যবসায়ই ছিল তার একমাত্র অবলম্বন। স্ত্রী- সন্তান নিয়ে
নতুন করে বাঁচার সব স্বপ্ন মুহূর্তেই যেন শেষ হয়ে গেল শাহ জামানের। গতকাল
ভোরে গুলশান-১ ডিএনসিসি মার্কেটের কাঁচাবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে সব
হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন তিনি।
শাহ জামান বলেন, কাঁচাবাজারের ৯১ নম্বর দোকানটি ছিল আমার।
ভোরবেলা আগুনের খবর শুনেই বাড্ডা কুমিল্লাপাড়ার বাসা থেকে দৌড়ে চলে আসি। এসে দেখি সব শেষ। ছয় বছর দুবাইয়ে থাকার পর দেশে এসে কিছু করতে চেয়েছিলাম। এই দোকানটি নিয়েছিলাম। দুই মাস হলো সবে ব্যবসা শুরু করি। এই দোকান দিয়েই মনে করেছি পরিবারের মানুষগুলো নিয়ে বাঁচবো। কিন্তু এই আগুন আমার সব শেষ করে দিয়েছে। এক মুহূর্তেই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দোকানের ভেতর ২৫ লাখ টাকার মালামাল ছিল। কিছুই বাদ নেই। সব পুড়ে গেছে। আমি পথে বসে গেছি। আরেকটা সবজির দোকান ছিল। গতকাল (গত শুক্রবার) দেশের বাইরে থেকে এক লাখ টাকার মাশরুম আনিয়েছি। সেটাও পুড়ে গেছে। এখন যে কি নিয়ে থাকবো! কি করবো কিছুই ভাবতে পারছি না।
দীর্ঘদিন ধরে গুলশানে ব্যবসা করে আসছিলেন মো. ইউসুফ চৌধুরী। অগ্নিকাণ্ডে পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কাঁচাবাজারের পাশাপাশি গুলশান শপিং সেন্টারের একাংশও পুড়ে যায়। সেখানেই তৃতীয় তলার ১২৯ ও ১৩০ নম্বর দোকান দুটি ইউসুফ চৌধুরীর। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডে দুটোই পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, একবারে যা ছিল দোকানের ভেতর সবটাই পুড়ে গেছে। কিছুই বাকি নাই। কালকেও নতুন মালামাল উঠাইসি। ৬০ লাখ টাকার পণ্য ছিল। এক আগুন নিয়ে গেছে। পথে বসে গেলাম। মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল এই দোকানের উপর। আর কিছুই তো করি না। এত বছর ধরে এক ব্যবসায় করে আসছি। এখন কবে আবার এই দোকান নতুন করে চালু করবো। টাকাই বা কই পাবো!
১৭ বছর ধরে শিশুদের পণ্যের ব্যবসা করছেন মো. নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী। গুলশান শপিং সেন্টারেই একটি দোকানের পজেশন ভাড়া নিয়ে তিনি ব্যবসা চালাচ্ছিলেন। দোকানে ২ কোটি টাকারও বেশি পণ্য ছিল বলে দাবি করেন নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার এই ব্যবসাটাই ছিল সম্বল। সংসারের সব খরচ এখান থেকেই ব্যয় করতে হতো। কিন্তু এই আগুন আমাকে শেষ করে দিলো। কিচ্ছু নাই ভেতরে। এমন একটা সময় আগুন লাগলো কিছু বের করতে পারি নাই। শুধু আমি না। এই মার্কেটে এত দোকানের মালিক সবাই নিঃস্ব হয়ে গেছে।
ডিএনসিসি মার্কেটের কাঁচাবাজারের নিত্যপণ্যের একটি দোকান নিয়ে ব্যবসা করতেন আরেক জন- নুরুল ইসলাম। গতকাল আগুনের ঘটনায় তারও স্বপ্নের মৃত্যু ঘটেছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাঁচার একমাত্র অবলম্বন ছিল তার দোকানটি। কিন্তু এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সবজি কাঁচামালের এই ব্যবসা দিয়েই আমার পরিবার চলতো। স্বপ্ন ছিল ব্যবসাটা আরো বড় করবো। কিন্তু আমি একদম রাস্তায় বসে গেছি। কিছুই নেই হাতে। ত্রিশ লাখ টাকার মালামাল ছিল। সব পুড়ে গেছে।
শুক্রবারই ৮ লাখ টাকার মাল নিয়েছি। দোকানে ৫০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। এখন কিছুই নাই। চালের বস্তা যে কয়টা ছিল সব পুড়ে গেছে। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া মুদি দোকান নিয়ে এমনটাই বলছিলেন ফখরুল ইসলাম। পাঁচ বছর আগে কাঁচাবাজারের ভেতর ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ঢাকার বাড্ডায় বসবাস করেন। মুদির ওই দোকান থেকেই পরিবারের ভরণপোষণ চালাতেন ফখরুল। তিনি বলেন, দিন দুপুরে আগুনটা লাগলে কিছু মালামাল বের করে আনতে পারতাম। এখন আমার কি হবে? কার কাছে যাবো? এই ক্ষতি আমার পূরণ করবে কে? এতগুলো টাকা আমাকে কে দেবে!
মসলা ও বেবি ফুডের দুটি দোকানের মালিক ছিলেন আবুল হোসেন। রাতেই দোকান বন্ধ করে যান কালাচাঁদপুরের বাসায়। ভোরবেলায় পাশের দোকানের মালিক ফোন দিয়ে জানালেন মার্কেটে আগুনের খবর। এসে দেখেন দুই দোকানের একটিও নেই। মসলা পুড়ে গেছে, ছাই হয়ে গেছে বেবি ফুডের সব পণ্য। আবুল হোসেন বলেন, কিছুই বের করে আনতে পারিনি। দুই দোকানে ১ কোটি টাকারও বেশি মালামাল ছিল। সব শেষ হয়ে গেছে। কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো। মাস শেষে ছেলেমেয়েদের পড়ার খরচ দেবো কীভাবে। ছেলেটা পড়ে নর্থ সাউথে। মেয়েটাও ডাক্তারি পড়ে। এত খরচ আমি পাবো কই। ওদের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।
আগুনে সব পুড়ে গেলেও ফজলে এলাহীর দোকানের কয়েকটি সয়াবিন তেলের গ্যালন টিকে ছিল। আগুন নেভার পর সেগুলো বের করে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বলেন, ৭০ লাখ টাকার মালামাল দুই দোকানে বোঝাই ছিল। সব পুড়ে গেছে। শুধু বাকি ছিল তেলের কয়েকটা গ্যালন। এগুলোই দোকানের ভেতর থেকে বের করতে পারছি। আর কিছুই নাই। পথের ভিখেরী হয়ে গেলাম। আর কিছুই রইলো না।
গুলশান-১ ডিএনসিসি মার্কেটের ওই আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানির মধ্যে কাঁচামালের আরেক ব্যবসায়ী ফারুক। দোকানের ভেতর ছিল ২৫ লাখ টাকার পণ্য। এখন কিছুই নেই তার। ফারুক মানবজমিনকে বলেন, এক দোকানের উপরই আমি চলতাম। মাছ- মাংসসহ সব মাল একেবারে শেষ। কিছুই নাই। ফ্রিজটাই পুড়ে গেছে। আমি শেষ হয়ে গেছি। বৌ-বাচ্চা নিয়ে এখন না খেয়ে মরতে হবে।
শাহ জামান বলেন, কাঁচাবাজারের ৯১ নম্বর দোকানটি ছিল আমার।
ভোরবেলা আগুনের খবর শুনেই বাড্ডা কুমিল্লাপাড়ার বাসা থেকে দৌড়ে চলে আসি। এসে দেখি সব শেষ। ছয় বছর দুবাইয়ে থাকার পর দেশে এসে কিছু করতে চেয়েছিলাম। এই দোকানটি নিয়েছিলাম। দুই মাস হলো সবে ব্যবসা শুরু করি। এই দোকান দিয়েই মনে করেছি পরিবারের মানুষগুলো নিয়ে বাঁচবো। কিন্তু এই আগুন আমার সব শেষ করে দিয়েছে। এক মুহূর্তেই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দোকানের ভেতর ২৫ লাখ টাকার মালামাল ছিল। কিছুই বাদ নেই। সব পুড়ে গেছে। আমি পথে বসে গেছি। আরেকটা সবজির দোকান ছিল। গতকাল (গত শুক্রবার) দেশের বাইরে থেকে এক লাখ টাকার মাশরুম আনিয়েছি। সেটাও পুড়ে গেছে। এখন যে কি নিয়ে থাকবো! কি করবো কিছুই ভাবতে পারছি না।
দীর্ঘদিন ধরে গুলশানে ব্যবসা করে আসছিলেন মো. ইউসুফ চৌধুরী। অগ্নিকাণ্ডে পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কাঁচাবাজারের পাশাপাশি গুলশান শপিং সেন্টারের একাংশও পুড়ে যায়। সেখানেই তৃতীয় তলার ১২৯ ও ১৩০ নম্বর দোকান দুটি ইউসুফ চৌধুরীর। ভয়াবহ ওই অগ্নিকাণ্ডে দুটোই পুড়ে গেছে। তিনি বলেন, একবারে যা ছিল দোকানের ভেতর সবটাই পুড়ে গেছে। কিছুই বাকি নাই। কালকেও নতুন মালামাল উঠাইসি। ৬০ লাখ টাকার পণ্য ছিল। এক আগুন নিয়ে গেছে। পথে বসে গেলাম। মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল এই দোকানের উপর। আর কিছুই তো করি না। এত বছর ধরে এক ব্যবসায় করে আসছি। এখন কবে আবার এই দোকান নতুন করে চালু করবো। টাকাই বা কই পাবো!
১৭ বছর ধরে শিশুদের পণ্যের ব্যবসা করছেন মো. নুরুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী। গুলশান শপিং সেন্টারেই একটি দোকানের পজেশন ভাড়া নিয়ে তিনি ব্যবসা চালাচ্ছিলেন। দোকানে ২ কোটি টাকারও বেশি পণ্য ছিল বলে দাবি করেন নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমার এই ব্যবসাটাই ছিল সম্বল। সংসারের সব খরচ এখান থেকেই ব্যয় করতে হতো। কিন্তু এই আগুন আমাকে শেষ করে দিলো। কিচ্ছু নাই ভেতরে। এমন একটা সময় আগুন লাগলো কিছু বের করতে পারি নাই। শুধু আমি না। এই মার্কেটে এত দোকানের মালিক সবাই নিঃস্ব হয়ে গেছে।
ডিএনসিসি মার্কেটের কাঁচাবাজারের নিত্যপণ্যের একটি দোকান নিয়ে ব্যবসা করতেন আরেক জন- নুরুল ইসলাম। গতকাল আগুনের ঘটনায় তারও স্বপ্নের মৃত্যু ঘটেছে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাঁচার একমাত্র অবলম্বন ছিল তার দোকানটি। কিন্তু এখন সব হারিয়ে নিঃস্ব নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সবজি কাঁচামালের এই ব্যবসা দিয়েই আমার পরিবার চলতো। স্বপ্ন ছিল ব্যবসাটা আরো বড় করবো। কিন্তু আমি একদম রাস্তায় বসে গেছি। কিছুই নেই হাতে। ত্রিশ লাখ টাকার মালামাল ছিল। সব পুড়ে গেছে।
শুক্রবারই ৮ লাখ টাকার মাল নিয়েছি। দোকানে ৫০ লাখ টাকার মালামাল ছিল। এখন কিছুই নাই। চালের বস্তা যে কয়টা ছিল সব পুড়ে গেছে। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া মুদি দোকান নিয়ে এমনটাই বলছিলেন ফখরুল ইসলাম। পাঁচ বছর আগে কাঁচাবাজারের ভেতর ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ঢাকার বাড্ডায় বসবাস করেন। মুদির ওই দোকান থেকেই পরিবারের ভরণপোষণ চালাতেন ফখরুল। তিনি বলেন, দিন দুপুরে আগুনটা লাগলে কিছু মালামাল বের করে আনতে পারতাম। এখন আমার কি হবে? কার কাছে যাবো? এই ক্ষতি আমার পূরণ করবে কে? এতগুলো টাকা আমাকে কে দেবে!
মসলা ও বেবি ফুডের দুটি দোকানের মালিক ছিলেন আবুল হোসেন। রাতেই দোকান বন্ধ করে যান কালাচাঁদপুরের বাসায়। ভোরবেলায় পাশের দোকানের মালিক ফোন দিয়ে জানালেন মার্কেটে আগুনের খবর। এসে দেখেন দুই দোকানের একটিও নেই। মসলা পুড়ে গেছে, ছাই হয়ে গেছে বেবি ফুডের সব পণ্য। আবুল হোসেন বলেন, কিছুই বের করে আনতে পারিনি। দুই দোকানে ১ কোটি টাকারও বেশি মালামাল ছিল। সব শেষ হয়ে গেছে। কোথায় গিয়ে দাঁড়াবো। মাস শেষে ছেলেমেয়েদের পড়ার খরচ দেবো কীভাবে। ছেলেটা পড়ে নর্থ সাউথে। মেয়েটাও ডাক্তারি পড়ে। এত খরচ আমি পাবো কই। ওদের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।
আগুনে সব পুড়ে গেলেও ফজলে এলাহীর দোকানের কয়েকটি সয়াবিন তেলের গ্যালন টিকে ছিল। আগুন নেভার পর সেগুলো বের করে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বলেন, ৭০ লাখ টাকার মালামাল দুই দোকানে বোঝাই ছিল। সব পুড়ে গেছে। শুধু বাকি ছিল তেলের কয়েকটা গ্যালন। এগুলোই দোকানের ভেতর থেকে বের করতে পারছি। আর কিছুই নাই। পথের ভিখেরী হয়ে গেলাম। আর কিছুই রইলো না।
গুলশান-১ ডিএনসিসি মার্কেটের ওই আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানির মধ্যে কাঁচামালের আরেক ব্যবসায়ী ফারুক। দোকানের ভেতর ছিল ২৫ লাখ টাকার পণ্য। এখন কিছুই নেই তার। ফারুক মানবজমিনকে বলেন, এক দোকানের উপরই আমি চলতাম। মাছ- মাংসসহ সব মাল একেবারে শেষ। কিছুই নাই। ফ্রিজটাই পুড়ে গেছে। আমি শেষ হয়ে গেছি। বৌ-বাচ্চা নিয়ে এখন না খেয়ে মরতে হবে।
No comments