স্বেচ্ছায় বনবাস by তামান্না মোমিন খান
রাজা
বাদশাদের আমলে গুরুতর কোনো অপরাধের শাস্তি দেয়া হতো বনবাস। অভিযুক্তকে
গহিন বনে ছেড়ে দিয়ে আসা হতো। লোকালয়ে আসা তার জন্য ছিল নিষিদ্ধ। কিন্তু
স্বেচ্ছায় বনবাস করতে ক’জন রাজি হবেন? বলতে গেলে কেউ না। কিন্তু সুন্দরবনে
স্বেচ্ছায় বনবাসে যাওয়া লোকের সংখ্যা অনেক। একমাত্র পেটের তাগিদে তারা বেছে
নেয় নির্দিষ্ট একটা সময়ের জন্য বনবাস।
বাঘের ভয়, কুমিরের পেটে যাওয়ার শঙ্কা, বন্য শূকর কিংবা বিষাক্ত সাপের ছোবল সবই তাদের কাছে তুচ্ছ। একমাত্র তাদের কাছে বড় হয়ে দেখা দেয় সংসার। যে সংসারকে ঠেলে নিতে হবে সামনে। আর তাই সব ভয় দূরে ঠেলে তারা বনবাসে চলে যায়। একমাস ধরে স্বেচ্ছায় বনবাসে আছেন এমন দেড় শ’ লোক ছন কাটছেন সুন্দরবনে। আরো কিছুদিন থাকবেন এই বনেই। নিজেরাই ছন কেটে বেঁধেছেন ঘর। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ছন কাটেন তারা। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বনবিভাগ তাদের ছন কাটার অনুমতি দিয়েছে। এ সময়ের মধ্যেই কাটতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণ ছন। বাগেরহাট থেকে কবীর তালুকদার সুন্দরবনে এসেছেন ডিসেম্বরের শুরুতে। একমাসের বেশি সময় ধরে তার পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। সুন্দরবনের ভেতরে মোবাইলের নেটওয়ার্ক না থাকায় পরিবার-পরিজনের কোনো খবর জানেন না তিনি। কবীর বলেন, বাইচ্ছা ফিরতে পারলে আবার পরিবারের সঙ্গে দেখা হইবো। পেটের দায়ে এইখানে ছন কাটতে আইছি। রাত হইলেই এইখানে শুনা যায় বাঘের হুংকার। সেদিন রাতে খুব কাছে বাঘ একটা হরিণ শিকার কইরা নিয়া গেছে। আমরা ঘরে বইসা সেই শব্দ পাইছি আর আল্লাহ আল্লাহ করছি। আরেকদিন ছন কাটতে গিয়া দেখি বড় এক গোখরা সাপ। এইখানে পদে পিদে বিপদ। রাত হইলে যে কত রকম প্রাণীর ডাক শোনা যায়। তখন আর মনে হয় না যে দুনিয়ার মধ্যে আছি। সারা রাত ঘরের বাহিরে মশাল জ্বালায় রাখি যেন আগুন দেইখা বন্য জানোয়ার এইদিকে না আসতে পারে। আমার সঙ্গে আরো ছয়জন আছেন। আমি একজন ছোটখাটো মহাজন। এরকম একেক মহাজনের সঙ্গে ৬/৭ জন কইরা লোক আসছে এইখানে। আমরা প্রায় দেড় শ’র মতো মানুষ আসছি ছন কাটতে। আমি কাটতে পারবো ৫০ হাজার মুঠি ছন। ৫০ হাজার মুঠি ছন কাইটা বিক্রি করতে পারলে ৫০ হাজার টাকার মতো লাভ হইবো। এই ছন নৌকায় কইরা নিমু শরণখোলায়। সেইখানে বিক্রি হইবো। ৫০ হাজার মুঠিতে সরকারকে কর দিতে হইবো ২৫০০ টাকা। এই ছন পান গাছের বর দেয়ার কাজে ব্যবহার হয়। আবার ছালাও বানান হয় এই ছন দিয়ে। শুধু এক মাসের জন্য সুন্দরবন এসেছেন কবীর। বাকি সময়টা বাড়িতে ক্ষেতমজুর করে সংসার চালান। কবীরের মতো মোহাম্মদ নাসিরও এসেছেন ছন কাটতে। তিনি এসেছেন পাথরঘাটা থেকে। নাসির জানান এর আগেও তিনি ছন কাটতে এসেছিলেন সুন্দরবনে। ২০১৪ সালে সুন্দরবনে আগুন লাগার কারণে কয়েক বছর ছন আহরণ বন্ধ রেখেছিল সরকার । ২০১৭ সালে আবার সুন্দরবনে ছন কাটতে এসেছেন তিনি। নাসির বলেন, সুন্দরবনে ছন কাটতে আসি বহু বছর ধইরা। মাঝখানে তিন বছর আসি নাই। আগেতো অনেক বেশি বাঘ দেখা যাইতো। একবার ছন কাটতে ছিলাম, দেখি কাছেই বাঘ আইসা পরছিল তখন হাতে কাঁচি ছিল। কাঁচি ছুইড়া মারছিলাম। আমার সঙ্গের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়া আসলে বাঘ পালিয়ে যায়। তবে এখন বাঘের হুংকার শুনা যায় রাতে। তিনি বলেন, সুুন্দরবনে বন্য শূকরের অনেক ভয় আছে। এ ছাড়া সাপতো ছন গাছের ভিতরে বাসা কইরা থাকে। ছন কাটতে গেলে অনেক সাপ বের হইয়া আসে। তবে সব সাপ বিষধর না। সুন্দরবনে যারাই নানা ধরনের জীবিকার জন্য আসে তারা নানা বিপদের কথা জেনেই আসে। আর এটাকে জেনেশুনে স্বেচ্ছায় বনবাস বলেন তিনি।
বাঘের ভয়, কুমিরের পেটে যাওয়ার শঙ্কা, বন্য শূকর কিংবা বিষাক্ত সাপের ছোবল সবই তাদের কাছে তুচ্ছ। একমাত্র তাদের কাছে বড় হয়ে দেখা দেয় সংসার। যে সংসারকে ঠেলে নিতে হবে সামনে। আর তাই সব ভয় দূরে ঠেলে তারা বনবাসে চলে যায়। একমাস ধরে স্বেচ্ছায় বনবাসে আছেন এমন দেড় শ’ লোক ছন কাটছেন সুন্দরবনে। আরো কিছুদিন থাকবেন এই বনেই। নিজেরাই ছন কেটে বেঁধেছেন ঘর। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ছন কাটেন তারা। ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বনবিভাগ তাদের ছন কাটার অনুমতি দিয়েছে। এ সময়ের মধ্যেই কাটতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণ ছন। বাগেরহাট থেকে কবীর তালুকদার সুন্দরবনে এসেছেন ডিসেম্বরের শুরুতে। একমাসের বেশি সময় ধরে তার পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। সুন্দরবনের ভেতরে মোবাইলের নেটওয়ার্ক না থাকায় পরিবার-পরিজনের কোনো খবর জানেন না তিনি। কবীর বলেন, বাইচ্ছা ফিরতে পারলে আবার পরিবারের সঙ্গে দেখা হইবো। পেটের দায়ে এইখানে ছন কাটতে আইছি। রাত হইলেই এইখানে শুনা যায় বাঘের হুংকার। সেদিন রাতে খুব কাছে বাঘ একটা হরিণ শিকার কইরা নিয়া গেছে। আমরা ঘরে বইসা সেই শব্দ পাইছি আর আল্লাহ আল্লাহ করছি। আরেকদিন ছন কাটতে গিয়া দেখি বড় এক গোখরা সাপ। এইখানে পদে পিদে বিপদ। রাত হইলে যে কত রকম প্রাণীর ডাক শোনা যায়। তখন আর মনে হয় না যে দুনিয়ার মধ্যে আছি। সারা রাত ঘরের বাহিরে মশাল জ্বালায় রাখি যেন আগুন দেইখা বন্য জানোয়ার এইদিকে না আসতে পারে। আমার সঙ্গে আরো ছয়জন আছেন। আমি একজন ছোটখাটো মহাজন। এরকম একেক মহাজনের সঙ্গে ৬/৭ জন কইরা লোক আসছে এইখানে। আমরা প্রায় দেড় শ’র মতো মানুষ আসছি ছন কাটতে। আমি কাটতে পারবো ৫০ হাজার মুঠি ছন। ৫০ হাজার মুঠি ছন কাইটা বিক্রি করতে পারলে ৫০ হাজার টাকার মতো লাভ হইবো। এই ছন নৌকায় কইরা নিমু শরণখোলায়। সেইখানে বিক্রি হইবো। ৫০ হাজার মুঠিতে সরকারকে কর দিতে হইবো ২৫০০ টাকা। এই ছন পান গাছের বর দেয়ার কাজে ব্যবহার হয়। আবার ছালাও বানান হয় এই ছন দিয়ে। শুধু এক মাসের জন্য সুন্দরবন এসেছেন কবীর। বাকি সময়টা বাড়িতে ক্ষেতমজুর করে সংসার চালান। কবীরের মতো মোহাম্মদ নাসিরও এসেছেন ছন কাটতে। তিনি এসেছেন পাথরঘাটা থেকে। নাসির জানান এর আগেও তিনি ছন কাটতে এসেছিলেন সুন্দরবনে। ২০১৪ সালে সুন্দরবনে আগুন লাগার কারণে কয়েক বছর ছন আহরণ বন্ধ রেখেছিল সরকার । ২০১৭ সালে আবার সুন্দরবনে ছন কাটতে এসেছেন তিনি। নাসির বলেন, সুন্দরবনে ছন কাটতে আসি বহু বছর ধইরা। মাঝখানে তিন বছর আসি নাই। আগেতো অনেক বেশি বাঘ দেখা যাইতো। একবার ছন কাটতে ছিলাম, দেখি কাছেই বাঘ আইসা পরছিল তখন হাতে কাঁচি ছিল। কাঁচি ছুইড়া মারছিলাম। আমার সঙ্গের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়া আসলে বাঘ পালিয়ে যায়। তবে এখন বাঘের হুংকার শুনা যায় রাতে। তিনি বলেন, সুুন্দরবনে বন্য শূকরের অনেক ভয় আছে। এ ছাড়া সাপতো ছন গাছের ভিতরে বাসা কইরা থাকে। ছন কাটতে গেলে অনেক সাপ বের হইয়া আসে। তবে সব সাপ বিষধর না। সুন্দরবনে যারাই নানা ধরনের জীবিকার জন্য আসে তারা নানা বিপদের কথা জেনেই আসে। আর এটাকে জেনেশুনে স্বেচ্ছায় বনবাস বলেন তিনি।
No comments