উত্তর কোরিয়ায় কি ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালাতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র
উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংসে কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কোনো কার্যকর উপায় নেই। ধ্বংসাত্মক কোনো প্রচেষ্টা বাস্তবায়নের কথা উঠলেই অনেকে বলেন, এটি দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে বর্বরোচিত পাল্টা হুমকির কারণ হবে এবং দেশটি ধ্বংস হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন যুক্তরাষ্ট্রকে আঘাত করতে সক্ষম একটি পরমাণু অস্ত্রাগার তৈরির লক্ষ্যে অগ্রসর হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে দক্ষিণ কোরিয়া বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মঙ্গলবার উত্তর কোরিয়া একটি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালানোর দাবি করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় আঘাত হানতে সক্ষম। গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বজুড়ে সম্ভাব্য সংকট নিরসনে পেন্টাগন কয়েকটি যুদ্ধ পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করেছে। এগুলোর মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রতিশোধমূলক আক্রমণসহ দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে বার্ষিক মহড়ার আয়োজন রয়েছে। বুধবার ট্রাম্প প্রশাসন সিউলের সঙ্গে যৌথ সামরিক মহড়ার মাধ্যমে পিয়ংইয়ংকে হুমকি দিয়েছে। মার্কিন সেনাবাহিনীর কমান্ডার জেনারেল ভিনসেন্ট কে ব্রুকস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে ‘আত্মনিয়ন্ত্রণের’ পথ বেছে নিয়েছে। জাতিসংঘের মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিক্কি হ্যালি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন,"তার দেশের ‘উল্লেখযোগ্য সামরিক সক্ষমতা’ রয়েছে। বাধ্য হলে আমরা অবশ্যই সে শক্তি ব্যবহার করব, যদিও ওই পথে আমরা যেতে চাই না।" কিন্তু সামরিক পন্থাগুলো আগের তুলনায় এখন আরও নির্মম। এমনকি সবচেয়ে স্বল্পমাত্রার স্ট্রাইকেও বড় ধরনের হতাহতের ঝুঁকি রয়েছে। কারণ সীমান্তের কাছে হওয়ায় হাজার হাজার অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে পারে উত্তর কোরিয়া। যদিও উত্তর কোরিয়ার অস্ত্রগুলো স্বল্পমাত্রার। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস সম্প্রতি সতর্ক করে দিয়েছেন, উত্তর কোরিয়া যদি এটি ব্যবহার করে তবে এটি সম্ভবত অধিক লোকের প্রাণনাশের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক যুদ্ধ হবে। যদিও সামরিক আক্রমণের মাধ্যমে কোনো দেশের পরমাণু অস্ত্রাগার ধ্বংসের ইতিহাস পূর্বে নেই। জানা যায়, ১৯৯৪ সালে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম হামলার পরিকল্পনা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তৎকালীন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী উইলিয়াম জে পেরি পিয়ংইয়ংয়ের পরমাণু চুল্লিতে হামলার পরিকল্পনা তৈরির জন্য পেন্টাগনকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত হাজার হাজার মৃত্যুর শঙ্কায় এ পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পরিস্থিতি এখন আরও তুঙ্গে। মার্কিন কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন, উত্তর কোরিয়া কয়েকডজন পরমাণু বোমা নির্মাণ করেছে- সম্ভবত আরও অনেক কিছু। এমনকি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর হামলার সক্ষমতা দেশটির আরও কয়েকগুণ বেড়েছে। ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিকে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণে দেশটির অর্থনৈতিক বন্ধু চীনকে চাপ দিয়েছেন ট্রাম্প। কোরীয় উপদ্বীপে সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং পরমাণু সমস্যার সমাধানে সেখানে যুদ্ধজাহাজও পাঠিয়েছেন তিনি। বিশ্লেষকরা বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার অস্ত্রাগারকে গুঁড়িয়ে দিতে আমেরিকার আক্রমণাত্মক হামলা ব্যর্থ হতে পারে। কারণ, উত্তর কোরিয়ার বহু ক্ষেপণাস্ত্র পাহাড়ের গুহায় বা ভূগর্ভস্থ এবং কিছু ক্ষেপণাস্ত্র মোবাইল লঞ্চারে লুকানো রয়েছে। উত্তর কোরিয়া বারবার হুমকি দিয়েছে, দেশটি পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার মাধ্যমে প্রতিশোধ নেবে। অধিকাংশ বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্ররোচণাকে এড়িয়ে কিম এখনই তার কেমিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল অস্ত্রের ব্যবহার থেকে বিরত থাকছেন। ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিসের জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক অ্যান্থনি কোর্ডেসম্যান বলেন, ত্রি-মাত্রিক এক জটিল দাবা খেলার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রতিটি পক্ষের জন্য সংঘাত শুরুর বহু পন্থা ও কারণ রয়েছে। তবে এটি একবার বেধে গেলে থামানো আরও কঠিন হবে।
No comments