দেশে ফিরেই দেবেন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের দিকে তাকিয়ে আছেন দলটির নেতাকর্মীরা। কারণ এ সফরের মধ্য দিয়েই নির্বাচন ও প্রয়োজনে আন্দোলনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করা হবে।দলের নীতিনির্ধারক বলছেন, লন্ডন থেকে ফিরলে বিএনপিকে নতুন রূপে দেখা যাবে। দেশে ফিরেই তিনি জাতির সামনে সহায়ক সরকারের ফর্মুলা দেয়া ছাড়াও নির্বাচন বিষয়ে অনেক কিছু খোলাসা করবেন। এছাড়া আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্তসহ তাদেরকে প্রত্যক্ষভাবে মাঠে নামার গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হতে পারে। এজন্য বিভিন্ন জরিপের ওপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকাও খালেদা জিয়া সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন। লন্ডনে ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা শেষে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিএনপির নীতিনির্ধারকরা যুগান্তরকে আরও জানান, দেশে ফিরে সরকারবিরোধী জনমত তৈরিতে রাজপথে নামবে দলটি। লন্ডন থেকে দেশে ফিরে বিভাগীয় ও জেলা শহরে সমাবেশ করতে পারেন খালেদা জিয়া। এ ব্যাপারে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শও নেয়া হবে। তবে একটি সূত্র জানায়, তারেক রহমানই চাচ্ছেন চেয়ারপারসন রাজপথে সক্রিয় হোক। এর মাধ্যমে নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হবেন, যা আগামী নির্বাচনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তবে সাংগঠনিক শক্তি আর ক্ষয় করবে না দলটি। নেতারা মনে করেন, আন্দোলনের নামে শক্তি ক্ষয় নিষ্প্রয়োজন। কারণ বর্তমানে মাঠে দলটির ভোটের যে শক্তি রয়েছে সেটাই সরকারের জন্য বড় আতঙ্কের বিষয়। তাই আন্দোলনের নামে কোনো ঝামেলায় না গিয়ে নির্বাচনের তফসিল পর্যন্ত আরও শক্তি সঞ্চয় করার ওপর অগ্রাধিকার দেয়া হবে। আর যদি সত্যিই আন্দোলন করতেই হয় তবে আন্দোলন যাতে সফল হয় সেদিকটাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
দলটির নেতারা মনে করেন, মুখে যাই কিছু বলুক না কেন সরকার কখনই চাইবে না বিএনপি নির্বাচনে আসুক। কেননা খালেদা জিয়া নির্বাচনে এলে ক্ষমতাসীনদের পরাজয়ের শংকাই বেশি। তাছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে একতরফা বা বড় ধরনের কারচুপিও করতে পারবে না। তাই সরকারকে চাপে রেখে কীভাবে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করানো যায় বিএনপি সেদিকটাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, সবকিছু ঠিক থাকলে ১৫ জুলাই খালেদা জিয়ার লন্ডনের উদ্দেশে যাত্রা করার কথা রয়েছে। সে লক্ষ্যে ইতিমধ্যে প্রাথমিক প্রস্তুতিও শুরু করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তাই আপাতত নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকার ঘোষণার সম্ভাবনা নেই। লন্ডন থেকে ফিরেই তিনি এ রূপরেখা দেবেন। একইসঙ্গে সরকারবিরোধী জনমত ও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে বিভাগীয় ও জেলা শহরে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হতে পারে লন্ডন সফরে। ওই সূত্রটি আরও জানায়, খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী হয়ে লন্ডন যাচ্ছেন বিএনপি নির্বাহী কমিটির এক তরুণ নেতা ও চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার ও গৃহকর্মী ফাতেমা। একই সময়ে দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য ও এক ভাইস চেয়ারম্যানেরও লন্ডনে যাওয়ার কথা রয়েছে। তাই মা-ছেলের সাক্ষাতে দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সেখানে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কোনো কারণে ১৫ জুলাই যাওয়া সম্ভব না হলে চলতি মাসেই তিনি লন্ডন যাচ্ছেন এমনটা নিশ্চিত করেছেন খালেদা জিয়ার এক ঘনিষ্ঠ নেতা। জানতে চাইলে বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ও কূটনৈতিক উইংয়ের সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান রিপন যুগান্তরকে বলেন, চোখ ও পায়ের চিকিৎসা করাতে চেয়ারপারসনের লন্ডন যাওয়ার কথা রয়েছে। এর আগেও তিনি সেখানে চিকিৎসা করিয়েছেন। এ মাসেই তিনি যেতে পারেন। তবে কবে কখন যাবেন তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সূত্র জানায়, আগামী একাদশ নির্বাচনে অংশ নেয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। দলের শীর্ষ দুই নেতার সাক্ষাৎ ছাড়া এসব সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন। তাই আগামী নির্বাচনে অংশ নিলে ওই নির্বাচন কীভাবে হবে, নির্বাচনী জোট করলে কাদের সঙ্গে হবে এসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে পরামর্শ ও মতামত নিয়ে চূড়ান্ত করা হবে। খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গীদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, মা-ছেলের আলোচনায় মূল এজেন্ডা থাকবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং দলের জয়ের ব্যাপারে করণীয় চূড়ান্ত করা হবে। তাই স্বাভাবিকভাবে আলোচনায় স্থান পাবে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকাও। ওই সূত্রটি আরও জানায়, খালেদা জিয়া সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকা লন্ডনে নিয়ে যাচ্ছেন। তিন ক্যাটাগরি বিবেচনা করে এসব প্রার্থীর তালিকা করা হয়েছে। প্রথম বিএনপি ও আওয়ামী লীগ একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলে ভোটের ফলাফল কী হবে, দ্বিতীয়ত- প্রতিটি আসনে তিনজন করে প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে কে কত ভোটে এগিয়ে থাকবেন এবং তৃতীয়ত- জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করলে ফলাফল কী হবে। সম্ভাব্য এ তিন ক্যাটাগরির জরিপকে সামনে রেখেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্তে চমক দেখা যেতে পারে। দলটির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যেমন বিভিন্ন পেশার ক্লিন ইমেজের লোকদের এনে দলের মনোনয়ন দিয়ে সংসদ সদস্য বানিয়েছিলেন, তেমনি এবার সেই পথ অনুসরণ করা হতে পারে। বিগত সময়ে যেসব মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাদের অনেককেই এবার মনোনয়ন দেয়া নাও হতে পারে। এদের জায়গায় নতুন মুখ দেখার সম্ভাবনা রয়েছে। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত নয় এমন নতুন মুখও মনোনয়ন পেতে পারেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করার কথা রয়েছে। নির্বাচনের মাঠে নামার আগে দলের পুনর্গঠন প্রক্রিয়াও শেষ করা হবে। এখন পর্যন্ত দলের স্থায়ী কমিটির গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদসহ জাতীয় নির্বাহী কমিটির কয়েকটি পদ ফাঁকা রয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু জেলার পুনর্গঠনও বাকি। দলের এসব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন খালেদা জিয়া। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারের রূপরেখা নিয়েও তাদের মধ্যে আলোচনা হবে। প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর চোখ ও হাঁটুর চিকিৎসা করাতে লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। ওই সময় প্রায় দুই মাসের বেশি সময় তিনি সেখানে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাটান। দীর্ঘদিন পর ঈদুল আজহা উদযাপন করে ওই বছর ২১ নভেম্বর দেশে ফেরেন খালেদা জিয়া।
No comments