সালিশে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে মারধর চুল কর্তন
‘আমি অন্যজাতের লোকের সঙ্গে খারাপ কাজ করছি, অপবাদ দিয়ে মারধরের পর আমার মাথার চুল কেটে সিঁথির সিঁদুরও মুছে দেয়।’ এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন রংপুরের বদরগঞ্জে ‘চরিত্রহীনা’ অপবাদ দিয়ে সালিশে অমানুষিক নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ সুচিত্রা রানী (৩৫)। শুক্রবার সকালে বদরগঞ্জ থানায় সুচিত্রা রানী বলেন, বৃহস্পতিবার ঘটনার সময় স্বামী ও ছেলেমেয়েরাও বাড়িতে ছিল না। মমিনুল বাড়িতে ঢুকে আমার মুখ চেপে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা করে। আমার চিৎকারে সে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় গ্রামের মানুষ আমাকে ‘খারাপ, নষ্টা, চরিত্রহীনা’ বলে সালিশে আমার ওপর নির্যাতন চালায়। লাঠি দিয়ে মারধরের এক পর্যায়ে আমার পরিধেয় বস্ত্র ছিঁড়ে ফেলে বিবস্ত্র অবস্থায়ই আমার মাথার চুল কেটে সিঁথির সিঁদুর মুছে দেয়। এ পরিস্থিতিতে ভয়ে এখন তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরপত্তাহীনতার মাঝে আছেন। তাকে বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এ ঘটনায় নির্যাতনকারী ১৮ জনকে আসামি করে বদরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছেন দিনমজুর গণেশ চন্দ্র রায়ের (৪৫) স্ত্রী সুচিত্রা রানী। পুলিশ ওই মামলায় ৪ জনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। তারা হল কিশোরী মোহন (৬০), তার স্ত্রী সূর্যবালা (৫০), মলিন চন্দ্র রায় (৪০) ও তার স্ত্রী জ্যোতিকা রানী (৩২)। এলাকাবাসী ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের মোস্তফাপুর এলাকার খাদেমুল হকের ছেলে মমিনুল হক। তার একটি মুদি দোকান রয়েছে চম্পাতলীর বাজারে। ওই দোকান থেকে নিয়মিত খরচ নেন সুচিত্রা রানী। খরচের প্রয়োজনে তিনি মমিনুলের দোকানে গেলে তাকে নানা কুপ্রস্তাব দিয়ে বিরক্ত করত মমিনুল হক। বিষয়টি সুচিত্রা তার স্বামীকেও জানান। এরপর তিনি দোকানে খরচ নেয়া বন্ধ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে মমিনুল হক তার বাড়িতে গিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এক পর্যায়ে ওই গৃহবধূর মুখ চেপে ধরে তার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে মমিনুল হক। এক পর্যায়ে নির্যাতিতা গৃহবধূর আর্তচিৎকারে মমিনুল হক পালিয়ে যায়। বিষয়টি গ্রামে জানাজানি হলে মমিনুল হক প্রভাশালী হওয়ায় তাকে অপবাদ থেকে বাঁচাতে ওই গৃহবধূকে ‘চরিত্রহীনা’ আখ্যায়িত করা হয়। এরপর গ্রামের লোকজন সালিশেও সুচিত্রাকে চরিত্রহীনা অপবাদ দিয়ে প্রকাশ্যে মারধর করে। এক পর্যায়ে তার পরিধেয় বস্ত্র ছিঁড়ে ফেলে বিবস্ত্র করে মারধর করা হয়। তার মাথার চুল কেটে দিয়ে সিঁথির সিঁদুর মুছে দেয় সালিশকারীরা। বদরগঞ্জ থানার ওসি আখতারুজ্জামান প্রধান বলেন, ঘটনাটি গুরুতর ও স্পর্শকাতর হওয়ায় মমিনুল হককে প্রধান আসামি করে নির্যাতিত গৃহবধূর অভিযোগ মামলা হিসেবে নেয়া হয়েছে। চার আসামিকে গ্রেফতার করে রংপুর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
No comments