কয়েক রকম গল্প ট্রাম্পের
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা দৃশ্যত মন ঠিক করে উঠতে পারছেন না ঠিক কোন কারণে এফবিআই-প্রধান জেমস কোমিকে পদচ্যুত করা হলো। গতকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সে গল্প বেশ কয়েকবার পরিবর্তিত হয়েছে। নিজের সিদ্ধান্ত সঠিক, এই যুক্তি দেখাতে গিয়ে ট্রাম্প নিজের জন্যই বিপদ ডেকে আনছেন, এ ব্যাপারে অধিকাংশ ভাষ্যকারই একমত। হোয়াইট হাউস থেকে প্রথমে জানানো হয়েছিল ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রোজেনস্টাইনের পরামর্শ অনুযায়ী কোমিকে পদচ্যুত করা হয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে দায়িত্বপ্রাপ্ত রোজেনস্টাইন এক চিঠিতে কোমিকে পদচ্যুত করার পক্ষে যুক্তি দেখান, হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইল নিয়ে তদন্ত যোগ্যতার সঙ্গে পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ট্রাম্প নিজে ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সেই চিঠিকেই কোমিকে সরিয়ে দেওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে বৃহস্পতিবার এনবিসি টিভির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে সম্পূর্ণ উল্টো কথা বললেন ট্রাম্প। এনবিসিকে ট্রাম্প বলেন, তিন দিন আগে নয়, বরং শপথ গ্রহণের সময় থেকেই তিনি কোমিকে সরিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছিলেন। হোয়াইট হাউস বলেছে, এর সঙ্গে ট্রাম্পের প্রচারণা দলের সঙ্গে রাশিয়ার কথিত আঁতাত নিয়ে কোমি যে তদন্ত পরিচালনা করছিলেন, তার কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ এনবিসিকে ট্রাম্প বলেন, কোমিকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় তিনি ‘এই রাশিয়া ব্যাপারটা’ নিয়ে ভেবেছিলেন। তবে তিনি জোর দিয়ে এ-ও বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ পুরোপুরি বানানো। এর আগে ট্রাম্প ‘সরকারি অর্থে এই অর্থহীন তদন্ত’ বন্ধের দাবি তুলেছিলেন। টিভি সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি চান তদন্ত অব্যাহত থাকুক। এর শেষ দেখতে চান। এনবিসি টিভিকে ট্রাম্প বলেন, কোমির সব কাজ ছিল লোক দেখানো। তাঁর অধীনে এফবিআই এক অথর্ব ও আগাছায় ভরা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
এই সংস্থার অধিকাংশ সদস্য তাঁর প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু প্রেসিডেন্টের এ দাবি যে ভিত্তিহীন, বৃহস্পতিবার সিনেটের শুনানিতে এফবিআইয়ের অস্থায়ী প্রধান এন্ড্রু ম্যাকাবের কথায় তা স্পষ্ট। ম্যাকাবের কথায়, জেমস কোমির প্রতি ব্যাপক সমর্থন আগেও যেমন ছিল, এখনো আছে। একই টিভি সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, কোমি তাঁকে তিন-তিনবার জানিয়েছিলেন রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে তদন্তের লক্ষ্য তিনি নন। তবে কোমিকে পদচ্যুত করার পেছনে রাশিয়া-তদন্তই প্রধান কারণ বলে মনে করেন খ্যাতিমান ভাষ্যকার ইউজিন রবিনসন। তিনি বলেন, ট্রাম্প যে একটা কিছু লুকাতে চাইছেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশের প্রতিটি প্রধান তথ্যমাধ্যম জানিয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্প শিবিরের আঁতাত নিয়ে তদন্ত বন্ধ করতে প্রেসিডেন্ট কোমির ওপর চাপ দিচ্ছিলেন। কোমি তাতে সম্মতি দেননি। সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা নিউইয়র্কে তাঁর বাসভবনে আড়ি পাতার ব্যবস্থা করেছিলেন, ট্রাম্পের এই ভিত্তিহীন দাবি সমর্থন করতেও কোমি অস্বীকার করেন। রবিনসনের মন্তব্য, কোমিকে সরানোর এগুলোই আসল কারণ। এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, ট্রাম্প কোমির কাছে পূর্ণ আনুগত্য দাবি করেছিলেন। কোমি সম্মত হননি। কারণ, মার্কিন শাসনব্যবস্থায় বিচার বিভাগ হোয়াইট হাউস অর্থাৎ প্রশাসন থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ। চলমান কোনো তদন্ত নিয়ে এফবিআই-প্রধান সে তদন্তে যুক্ত কারও সঙ্গে খোলামেলা কথা বলবেন, তা অবৈধ না হলেও ‘যথাযথ নয়’—এ ব্যাপারে অধিকাংশ আইনজ্ঞ একমত। ম্যারিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক মাইকেল গ্রিনবার্গার ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকাকে বলেছেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোমির এমন কথোপকথন হয়েছে, তা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। এই কথোপকথন ঘটে থাকলে ট্রাম্প ‘ন্যায়বিচারে বাধা সৃষ্টির’ অপরাধেও অভিযুক্ত হতে পারেন। কোমিকে পদচ্যুত করে ট্রাম্প কার্যত ন্যায়বিচার অর্জনে বাধা সৃষ্টি করেছেন, নিউইয়র্ক টাইমসও একই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। তবে এ কথা প্রমাণ খুব সহজ হবে না।
No comments