অভিযোগের সত্যতা মিলেছে ২ আসামি রিমান্ডে
রাজধানীর
বনানীর হোটেল রেইনট্রিতে দুই তরুণীকে ধর্ষণের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে
পুলিশ। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার দুই আসামি সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে
গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বনানী থানা
পুলিশের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে ও মামলার তদন্তে সহায়তা করতে পুলিশের
উচ্চপর্যায়ের পৃথক দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গ্রেপ্তার সাফাতকে ছয় দিনের ও
সাকিফকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এর আগে সিলেট থেকে গ্রেপ্তার
করা হয় তাদের। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়ার আগে সাফাত ও
সাদমান তাদের মোবাইলফোন ও অন্যান্য ডিভাইস বন্ধ রেখেছিল। সাফাতের এক মামার
মোবাইলফোনের সূত্র ধরেই খুঁজে বের করা হয় তাদের। ওই মামাকে ধরার পরই সাফাত ও
সাদমানের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে অভিযান চালায় পুলিশ। পরে কঠোর
নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ ও
রেগমান গ্রুপের পরিচালক সাদমান সাকিফকে গতকাল ভোরে ঢাকায় ডিবি’র কার্যালয়ে
নিয়ে আসা হয়। ডিবিতে আনার পর মামলার তদন্তকারী সংস্থা ভিকটিম সাপোর্ট
সেন্টারের হেফাজতে তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদকারী এক
কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানান, ডিবিতে আনার পর সাফাত ও সাকিফকে ক্লান্ত
দেখাচ্ছিল। সকালের নাস্তা ও বিশ্রামের একপর্যায়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের ১০ মিনিটের
মধ্যেই বনানীর হোটেলে দুই তরুণীকে পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে
তারা। বেলা আড়াইটা পর্যন্ত থেমে থেমে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন গোয়েন্দা
কর্মকর্তারা। জিজ্ঞাসাবাদে ভিডিও ধারণের বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।
তবে ভিডিও ফুটেজটি এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এজন্য এই মামলার পলাতক
আসামিদের গ্রেপ্তার করতে তৎপরতা চালাচ্ছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে
তাদের আদালতে পাঠানো হয়।
আদালতে পৌঁছার পর তাদের দেখে সাধারণ মানুষ নানা মন্তব্য করেন। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে কখনো পুলিশের পেছনে গিয়ে আবার কখনো হাত দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করেন তারা। এর আগে পলাতক থাকা অবস্থায় নিজেদের আড়াল করতে দাড়ি ও চুল কেটে চেহারায় কিছুটা পরিবর্তন এনেছে দুই আসামি। এ ঘটনায় নির্যাতিতা দুই তরুণী ইতিমধ্যে বিচারকের সামনে জবানবন্দি দিয়েছেন। ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে নারী শিশু নির্যাতনের ২২ ধারায় এই জবানবন্দি নেয়া হয়।
গতকাল শুক্রবার গ্রেপ্তারকৃত দুই আসামিকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) হেফাজতে তাদের গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আসমা মিলি জানান, দুই আসামির ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করলে আদালত সাফাতের ছয়দিন ও সাকিফের পাঁচ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তার আগে ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি’র যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বনানীর একটি আবাসিক হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা সত্য বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। দুই আসামি দাবি করেছে, অভিযোগকারী তরুণীদের সঙ্গে তাদের সম্মতির ভিত্তিতেই যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে এ?নে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।
এই মামলার তদন্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, এই মামলার তথ্য প্রমাণ এবং ফিজিক্যাল এভিডেন্স যেগুলো আছে, ডিজিটাল এবং মেডিকেল ফরেনসিক আমরা সংগ্রহ করেছি। এই মামলার তদন্ত কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাবে। এ বিষয়ে আমাদের প্রতি সন্দেহ করার কোনো অবকাশ নেই। বিভিন্ন মিডিয়ায় এসেছে যে, আসামিরা প্রভাবশালী এবং উচ্চ পরিবারের সদস্য বলেই ধরছি না। এটা ঠিক নয়। পুলিশ তাদের কার্যক্রম পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করেছে। তদন্তে সঠিক তথ্য আমরা উদঘাটন করতে পেরেছি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে। এ বিষয়ে উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি, বছর দুয়েক আগে রমনা এলাকায় দুজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই মামলায় অনেক প্রভাবশালীর একজন সন্তান জড়িত ছিল। তাকে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। বিচার কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সেই সঙ্গে যারা বাদী ছিল তারা খুবই দুর্বল ছিল। সেই মামলার তদন্ত করতে গিয়েও আমরা পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছি। এই মামলাতেও পুলিশ পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
কৃষ্ণপদ রায় বলেন, তদন্তকারী সংস্থা আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে এভিডেন্স ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আমরা আশাবাদি, তদন্তে প্রথমিকভাবে যে তথ্য উপাত্ত পেয়েছি, তা মামলার যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছানো যাবে। বাদী এফআইআর এ যে তথ্য দিয়েছে পাশাপাশি এর বাইরেও মিডিয়াতে অনেক কথাবার্তা এসেছে। সেটা খুঁজে বের করার দায়িত্ব তদন্তকারী সংস্থার। তদন্তের পারিপার্শ্বিক যে তথ্যগুলো আছে, যেসব ফিজিক্যাল এভিডেন্স আছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে যে এভিডেন্সেগুলোর ফরেনসিক এবং ডিজিটাল ফরেনসিক এবং মেডিকেল ফরেনসিক বিশেষণের প্রয়োজন আছে সে তথ্যগুলো আমরা সংগ্রহ করছি।
দেরিতে মামলা রেকর্ড ও আসামিদের ধারণ করা ভিডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বনানী থানার কার্যক্রম নিয়ে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে সেটা ডিএমপি কমিশনার গুরুত্বসহকারে দেখছেন। এই বিভ্রান্তি নিরসনে একটি কমিটিও গঠন করেছেন। দায়িত্ব কর্তব্যে তাদের কোনো ধরনের অবহেলা আছে কিনা এই কমিটি তা খতিয়ে দেখছে। আমি বলছি, সমস্ত বিষয় আমরা খতিয়ে দেখছি। তদন্তের ধারাবাহিকতায় আমরা এই ফুটেজ পেয়ে যাব। এই ঘটনায় সহযোগিতার সময় আর কেউ ছিল কি না, পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্যও কেউ সহযোগিতা করেছে কি না সেগুলোও আমরা দেখছি। এজাহারনামীয় আসামিদের গ্রেপ্তার করা যেমন জরুরি, তেমনই এ ঘটনায় অন্য কারও জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেলে তাকেও খুঁজে বের করা হবে। ভিডিও ফুটেজটির সন্ধান করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কৃষ্ণপদ রায় বলেন, মামলার ভুক্তভোগীরা ইতিমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সেই জবানবন্দি মামলার এভিডেন্স হিসেবে কাজ করবে। আলামতগুলো সংগ্রহ করছি, সেগুলো এনালাইসিস করতে এক্সপারটিজদের সঙ্গে কথা বলছি। তদন্ত কার্যক্রম আমরা মডেল ইনভেস্টিশন হিসেবে উপস্থাপন করতে পারব। এই মামলার তদন্ত একটি মডেল তদন্ত হয়ে থাকবে। তদন্তে আশা করছি বিষয়টিকে একটি যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাবো। ভিকটিমরা যাতে সুবিচার পান সেজন্য সহায়ক তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
এই মামলা নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, মামলা নিতে বিলম্ব, আর্থিক লেনদেনসহ বনানী থানার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখতে ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশক্রমে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। থানার কর্মকর্তাদের আসলেই কোনো দায় আছে কিনা এই বিভ্রান্তি নিরসনে কমিটি কাজ করবে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) মো. মিজানুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের ওই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির অন্যরা হলেন- ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায়, যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন। অন্যদিকে, চার সদস্যের তদন্ত সহায়ক কমিটির প্রধান করা হয়েছে যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়কে। এই কমিটির সদস্যরা হলেন- উপপুলিশ কমিশনার (ডিবি নর্থ) শেখ নাজমুল আলম, উপপুলিশ কমিশনার (উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন) ফরিদা ইয়াসমিন, উপপুলিশ কমিশনার (গুলশান) মুস্তাক আহমেদ।
গত ২৮শে মার্চ পূর্বপরিচিত সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওই দুই তরুণীকে জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে তরুণীদের রেখে হোটেল ত্যাগ করে সাদাত সাকিফ। পরে অস্ত্র ঠেকিয়ে তাদের ধর্ষণ করে সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওরফে হাসান মো. হালিম। এ ঘটনা সাফাতের গাড়িচালক বিল্লালকে দিয়ে ভিডিও করানো হয় বলেও উল্লেখ করা হয় এজাহারে। এই মামলার পলাতক আসামিরা হচ্ছে- সাফাতের দেহরক্ষী মো. আবুল কালাম আজাদ ও গাড়িচালক বিল্লাল।
আদালতে পৌঁছার পর তাদের দেখে সাধারণ মানুষ নানা মন্তব্য করেন। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে কখনো পুলিশের পেছনে গিয়ে আবার কখনো হাত দিয়ে মুখ ঢাকার চেষ্টা করেন তারা। এর আগে পলাতক থাকা অবস্থায় নিজেদের আড়াল করতে দাড়ি ও চুল কেটে চেহারায় কিছুটা পরিবর্তন এনেছে দুই আসামি। এ ঘটনায় নির্যাতিতা দুই তরুণী ইতিমধ্যে বিচারকের সামনে জবানবন্দি দিয়েছেন। ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে নারী শিশু নির্যাতনের ২২ ধারায় এই জবানবন্দি নেয়া হয়।
গতকাল শুক্রবার গ্রেপ্তারকৃত দুই আসামিকে রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) হেফাজতে তাদের গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আসমা মিলি জানান, দুই আসামির ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করলে আদালত সাফাতের ছয়দিন ও সাকিফের পাঁচ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। তার আগে ডিএমপি’র মিডিয়া সেন্টারে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি’র যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বনানীর একটি আবাসিক হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা সত্য বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। দুই আসামি দাবি করেছে, অভিযোগকারী তরুণীদের সঙ্গে তাদের সম্মতির ভিত্তিতেই যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে এ?নে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আরো তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।
এই মামলার তদন্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, এই মামলার তথ্য প্রমাণ এবং ফিজিক্যাল এভিডেন্স যেগুলো আছে, ডিজিটাল এবং মেডিকেল ফরেনসিক আমরা সংগ্রহ করেছি। এই মামলার তদন্ত কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাবে। এ বিষয়ে আমাদের প্রতি সন্দেহ করার কোনো অবকাশ নেই। বিভিন্ন মিডিয়ায় এসেছে যে, আসামিরা প্রভাবশালী এবং উচ্চ পরিবারের সদস্য বলেই ধরছি না। এটা ঠিক নয়। পুলিশ তাদের কার্যক্রম পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করেছে। তদন্তে সঠিক তথ্য আমরা উদঘাটন করতে পেরেছি সঠিক তদন্তের মাধ্যমে। এ বিষয়ে উদাহরণস্বরূপ আমরা বলতে পারি, বছর দুয়েক আগে রমনা এলাকায় দুজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই মামলায় অনেক প্রভাবশালীর একজন সন্তান জড়িত ছিল। তাকে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। বিচার কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সেই সঙ্গে যারা বাদী ছিল তারা খুবই দুর্বল ছিল। সেই মামলার তদন্ত করতে গিয়েও আমরা পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছি। এই মামলাতেও পুলিশ পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
কৃষ্ণপদ রায় বলেন, তদন্তকারী সংস্থা আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি যাতে এভিডেন্স ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। আমরা আশাবাদি, তদন্তে প্রথমিকভাবে যে তথ্য উপাত্ত পেয়েছি, তা মামলার যৌক্তিক পরিণতিতে পৌঁছানো যাবে। বাদী এফআইআর এ যে তথ্য দিয়েছে পাশাপাশি এর বাইরেও মিডিয়াতে অনেক কথাবার্তা এসেছে। সেটা খুঁজে বের করার দায়িত্ব তদন্তকারী সংস্থার। তদন্তের পারিপার্শ্বিক যে তথ্যগুলো আছে, যেসব ফিজিক্যাল এভিডেন্স আছে এবং ক্ষেত্রবিশেষে যে এভিডেন্সেগুলোর ফরেনসিক এবং ডিজিটাল ফরেনসিক এবং মেডিকেল ফরেনসিক বিশেষণের প্রয়োজন আছে সে তথ্যগুলো আমরা সংগ্রহ করছি।
দেরিতে মামলা রেকর্ড ও আসামিদের ধারণ করা ভিডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বনানী থানার কার্যক্রম নিয়ে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে সেটা ডিএমপি কমিশনার গুরুত্বসহকারে দেখছেন। এই বিভ্রান্তি নিরসনে একটি কমিটিও গঠন করেছেন। দায়িত্ব কর্তব্যে তাদের কোনো ধরনের অবহেলা আছে কিনা এই কমিটি তা খতিয়ে দেখছে। আমি বলছি, সমস্ত বিষয় আমরা খতিয়ে দেখছি। তদন্তের ধারাবাহিকতায় আমরা এই ফুটেজ পেয়ে যাব। এই ঘটনায় সহযোগিতার সময় আর কেউ ছিল কি না, পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্যও কেউ সহযোগিতা করেছে কি না সেগুলোও আমরা দেখছি। এজাহারনামীয় আসামিদের গ্রেপ্তার করা যেমন জরুরি, তেমনই এ ঘটনায় অন্য কারও জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেলে তাকেও খুঁজে বের করা হবে। ভিডিও ফুটেজটির সন্ধান করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
কৃষ্ণপদ রায় বলেন, মামলার ভুক্তভোগীরা ইতিমধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সেই জবানবন্দি মামলার এভিডেন্স হিসেবে কাজ করবে। আলামতগুলো সংগ্রহ করছি, সেগুলো এনালাইসিস করতে এক্সপারটিজদের সঙ্গে কথা বলছি। তদন্ত কার্যক্রম আমরা মডেল ইনভেস্টিশন হিসেবে উপস্থাপন করতে পারব। এই মামলার তদন্ত একটি মডেল তদন্ত হয়ে থাকবে। তদন্তে আশা করছি বিষয়টিকে একটি যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাবো। ভিকটিমরা যাতে সুবিচার পান সেজন্য সহায়ক তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।
এই মামলা নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা তদন্ত করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, মামলা নিতে বিলম্ব, আর্থিক লেনদেনসহ বনানী থানার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা খতিয়ে দেখতে ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশক্রমে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। থানার কর্মকর্তাদের আসলেই কোনো দায় আছে কিনা এই বিভ্রান্তি নিরসনে কমিটি কাজ করবে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) মো. মিজানুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত পুলিশের উচ্চ পর্যায়ের ওই তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির অন্যরা হলেন- ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায়, যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) আব্দুল বাতেন। অন্যদিকে, চার সদস্যের তদন্ত সহায়ক কমিটির প্রধান করা হয়েছে যুগ্ম কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়কে। এই কমিটির সদস্যরা হলেন- উপপুলিশ কমিশনার (ডিবি নর্থ) শেখ নাজমুল আলম, উপপুলিশ কমিশনার (উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন) ফরিদা ইয়াসমিন, উপপুলিশ কমিশনার (গুলশান) মুস্তাক আহমেদ।
গত ২৮শে মার্চ পূর্বপরিচিত সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওই দুই তরুণীকে জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে তরুণীদের রেখে হোটেল ত্যাগ করে সাদাত সাকিফ। পরে অস্ত্র ঠেকিয়ে তাদের ধর্ষণ করে সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওরফে হাসান মো. হালিম। এ ঘটনা সাফাতের গাড়িচালক বিল্লালকে দিয়ে ভিডিও করানো হয় বলেও উল্লেখ করা হয় এজাহারে। এই মামলার পলাতক আসামিরা হচ্ছে- সাফাতের দেহরক্ষী মো. আবুল কালাম আজাদ ও গাড়িচালক বিল্লাল।
No comments