বিএনপির নেতাকর্মীরা আরও চাঙ্গা
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ ঘোষণার পর দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা আরও চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত হয়ে গেছে। এজন্য দলের চেয়ারপারসনের ঘোষিত ভিশনকে সামনে রেখে তারা আগেভাগেই ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত দু’দিনে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে অসংখ্য নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে এমন প্রতিক্রিয়া ও তথ্য জানা গেছে। তারা বলছেন, চেয়ারপারসনের ভিশন ঘোষণা তাদের নতুন করে উজ্জীবিত করেছে। একই সঙ্গে তারা এটাও বিশ্বাস করেন, অতীতে রাষ্ট্রপরিচালনার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিএনপি ভবিষ্যতে সরকার গঠন করতে পারলে রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক নতুন ধারা সৃষ্টি হবে। এদিকে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা শুক্রবার যুগান্তরকে জানান, এই ভিশনের আলোকেই তৈরি হবে আগামী নির্বাচনী ইশতেহার। সেখানে অর্থনীতি ও রাজনীতি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ চমক থাকবে। কম সময়ের মধ্যে বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটানোর বিশেষ কর্মপরিকল্পনা জাতির সামনে তুলে ধরা হবে, যা এই মুহূর্তে প্রকাশ করা হবে না। রাজনীতিতেও ইতিবাচক আমূল পরিবর্তন আসবে। তিনি বলেন, ওই ফর্মুলা দেয়ার পর শুধু দলের নেতাকর্মী নন দেশের প্রতিটি মানুষ নতুন এক প্রত্যাশায় উজ্জীবিত হবে। তারা যৌক্তিকভাবে স্বপ্ন দেখতে পারবে- সেদিন আর বেশি দূরে নয়, বাংলাদেশ খুব কম সময়ের মধ্যে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত দেশে পরিণত হবে। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘোষিত ভিশন-২০৩০ দলটির ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যুক্ত করবে। দল নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি পাবে। ইতিমধ্যে নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নতুন ধারার রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের যে স্বপ্ন ভিশনে দেখানো হয়েছে তা এখন জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়াই মূল লক্ষ্য। এ লক্ষ্যে চলছে জোর প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে ৩৭ ইস্যুতে ২৫৬ দফার এ ভিশনটি বই আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে আজ শনিবার থেকে প্রতিটি জেলা সদরে পাঠানো হচ্ছে। দলটির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার মতে, বিএনপির প্রতি জনআস্থা ও বিশ্বাস আরও সুদৃঢ় করতে এ ভিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তাই বিষয়টিকে কিভাবে সব শ্রেণীপেশার মানুষের আলোচনার অন্যতম উপাদান করা যায় সেই কৌশল নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া পুরো ভিশনকে নির্বাচনের আগে ও পরে দুই ভাগে ভাগ করে তৈরি করা হচ্ছে কর্মপরিকল্পনা। ভিশনে প্রতিটি ইস্যুর সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়েছে। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা থাকবে নির্বাচনী ইশতেহারে। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যে ইশতেহার ঘোষিত হবে তা হবে জনসমর্থন অর্জনে আরও সক্ষম ও সমৃদ্ধ। এদিকে ভিশন-২০৩০ বই আকারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংবাদিক, সুশীলসমাজের প্রতিনিধিসহ নানা পেশার মানুষের কাছে দ্রুত পাঠানো হবে। সঙ্গে একটি চিঠিও দেয়া হবে। এ প্রক্রিয়ায় কারও কোনো যুক্তিসঙ্গত মতামত থাকলে তা সংগ্রহ করা হবে। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা শিগগির কাজ শুরু করবেন। প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, ভিশন-২০৩০ নিয়ে রমজানের মধ্যে অথবা পরে ঢাকায় একটি বড় আকারের সুধীসমাবেশের আয়োজন করা হবে। এ ছাড়া সামনের দিনগুলোতে দলটির প্রতিটি অনুষ্ঠানে নেতাদের বক্তব্যের মূল ফোকাস থাকবে বিএনপির ভিশন-২০৩০। তারা মনে করেন, সময় পাল্টাচ্ছে। নতুন প্রজন্ম ভোটার তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। এ অবস্থায় তাদের চিন্তার সঙ্গে মিল রেখে বিএনপি ভিশন ঘোষণা করেছে। এখানে সব মানুষের প্রত্যাশার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এই ভিশন-২০৩০ ঘোষণায় দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। শুধু দেশেই নয়, বিদেশী কূটনীতিকদের মধ্যেও বিএনপির ভিশন-২০৩০ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ দেখা দিয়েছে। জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি বরাবরই ভিশনারি রাজনৈতিক দল। ২০০১ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালেও আমরা ভিশন তুলে ধরেছি। বর্তমান বাস্তবতা ও বিশ্বায়নের কথা চিন্তা করেই আমাদের নেত্রী ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেছেন। ইতিমধ্যে তা নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মধ্যেও ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে। নতুন ধারার রাজনীতি ও অর্থনৈতিক বিপ্লবের এ বার্তা দেশের প্রতিটি জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। সে লক্ষ্যে আমরা নানা কর্মপরিকল্পনা তৈরি করছি।
এরফলে বিএনপির প্রতি তাদের আস্থা ও বিশ্বাস আরও বাড়বে বলেই মনে করেন তিনি। ফখরুল ইসলাম বলেন, এ ভিশনে যেসব বিষয় রয়েছে তা বাস্তবায়ন কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। তিনি জানান, এ ভিশনে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহারে তা সুনির্দিষ্ট করা হবে। সূত্র জানায়, ভিশন-২০৩০ সবার কাছে পৌঁছে দিতে ইতিমধ্যে নানা পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। কর্মিসভা, সেমিনার, সুধী সমাবেশসহ ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিএনপি। বিষয়টিকে প্রচারের শীর্ষে রাখতে দলটির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করা হবে। প্রাথমিকভাবে আজ থেকে বই আকারে জেলা পর্যায়ে পাঠানো হচ্ছে। এরপর বড় পরিসরে উপজেলাগুলোতে পাঠানো হবে। বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর ব্যানারেও এ নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আজ রাজধানীর লেডিস ক্লাবে হবে একটি শিক্ষাবিষয়ক সেমিনার। সেখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ সেমিনারে অংশ নেয়া প্রায় ৩০০ শিক্ষকের হাতেও ভিশনটি তুলে দেয়া হবে। এ সেমিনারের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আগামীকাল রোববার বিএনপি সমর্থিত একটি সংগঠনের উদ্যোগে রাজধানীতে আরও একটি সেমিনার হবে। সেখানেও আলোচনার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে বিএনপির ভিশন-২০৩০। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যুগান্তরকে বলেন, আমাদের চেয়ারপারসন ঘোষিত ভিশন দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দেশের মানুষও ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। বিএনপির প্রতি সাধারণ মানুষের যে সমর্থন রয়েছে তা ভিশন ঘোষণার পর আরও বাড়ছে। তবে এ ভিশন বাস্তবায়ন করতে গেলে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়া প্রয়োজন। সেজন্য সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার হতে হবে। আশা করি, জনগণের চাহিদা অনুযায়ী নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারও প্রতিষ্ঠা হবে। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স যুগান্তরকে বলেন, ভিশন ২০৩০’র ইতিবাচক দিকগুলো দেশের তৃণমূলের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে দলের চেয়ারপারসন আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। জানতে চাইলে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ ঘোষণার পর যুব সমাজের নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। এ ভিশন আগামী আন্দোলন ও নির্বাচনে যুব সমাজসহ নতুন প্রজন্মের কাছে বিএনপির জন্য সহায়ক ভূমিকা রাখবে। আমরাও যুবদলের চলমান সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি এ ভিশন সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে নানা কর্মসূচি নিচ্ছি। রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন যুগান্তরকে বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল হচ্ছে বিএনপি। এ দল ও দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে তরুণ প্রজন্মসহ মানুষের চাহিদাও অনেক বেশি। এমন প্রেক্ষাপটে ভিশন-২০৩০ এ দেশের মানুষের মনের কথা রয়েছে। ফলে এটা সাধারণ মানুষসহ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলছে, যা সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।
No comments