রিমান্ডে সাফাত ও সাদমানের নানা ‘আবদার’
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে থাকা ধনীর দুলাল সাফাত ও তার বন্ধু সাদমান সাকিফের নানা ‘আবদার’ মেটাতে গিয়ে গলদঘর্ম হচ্ছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। ধর্ষণ মামলাটির তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেছেন, বেশির ভাগ সময় সাফাত পুলিশের সরবরাহ করা খাবার গ্রহণ করছে না। এর বিপরীতে সে দেশের প্রথম শ্রেণীর অভিজাত রেস্টুরেন্ট থেকে ফাস্টফুড আইটেমের খাবার এনে দেয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করছে। সাফাতের আবদার মেটাতে বিদেশি ‘ব্ল্যাক’ ব্র্যান্ডের সিগারেটও সরবরাহ করতে হচ্ছে গোয়েন্দাদের। দু-একবার তার এ ‘আবদার’ রক্ষা করা হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, পুলিশ হেফাজতে কোনো আসামিকে বাইরের খাবার দেয়ার নিয়ম নেই। তারপরও জিজ্ঞাসাবাদে প্রকৃত তথ্য পেতে তারা (পুলিশ) মাঝে মধ্যে আসামির সঙ্গে সখ্য গড়তে এ ধরনের কৌশল গ্রহণ করে থাকেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা যুগান্তরকে আরও বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের প্রথম দিন (শনিবার) কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ছেন সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফ। রিমান্ডের দ্বিতীয় দিন শেষে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে রোববার রাতে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতেও রাজি হন সাফাত। তবে সেদিনের ঘটনাকে কোনোভাবেই ধর্ষণ বলতে রাজি নন সাফাত আহমেদ।
বরং সমঝোতার মধ্য দিয়েই সবকিছু হয়েছে বলে দাবি করছেন সাফাত। তবে পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় এনে আরও কিছু সময় নিতে চান তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। জানতে চাইলে চাঞ্চল্যকর এ ধর্ষণ মামলা তদন্তে গঠিত সহায়ক কমিটির প্রধান ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় যুগান্তরকে বলেন, ঘটনাটি খুবই স্পর্শকাতর। এ কারণে তারা ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেবেন। মামলায় যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা প্রমাণযোগ্য করার মতো তথ্য পেলেই গ্রেফতারকৃতদের আদালতে হাজির করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য ও তদন্তে পাওয়া সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আগামী শুক্রবার এ ব্যাপারে ডিএমপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রেস ব্রিফিং করা হতে পারে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা কৃষ্ণপদ রায়। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অপর এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, যে কোনো সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হতে পারে জেনেও সাফাত দেশ ছাড়তে চায়নি। তার ধারণা ছিল, যেভাবেই হোক বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম তাকে ছাড়িয়ে নেবেন। এ ঘটনা নিয়ে মিডিয়ায় লেখালেখি কিছুটা বন্ধ হলে নিজেই আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেবেন। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদে সাফাত বলেছেন, ওই ঘটনার পর মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হলে বাবার পরামর্শেই সে কিছু দিনের জন্য আত্মগোপনে চলে যান। তবে পলাতক অবস্থায় সময় কাটানোর জন্য তিনি সাদমান সাকিফকে তার সঙ্গে রাখেন। এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, তদন্তের এ পর্যায়ে এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-প্রমাণে সেদিন রাতে দুই তরুণীকে সাফাত ও নাঈম ধর্ষণ করেছিল বলে প্রায় নিশ্চিত হওয়া গেছে। ঘটনার এক মাসেরও বেশি সময় পর ধর্ষিত দুই তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে। এ কারণে মেডিকেল রিপোর্টে ধর্ষণের প্রমাণ মিলবে না ধরেই তারা তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ কারণে তদন্তে মেডিকেল রিপোর্টের বাইরে পারিপার্শ্বিক অন্যান্য আলামতের ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ঘটনার দিন দি রেইনট্রি হোটেলের রুমপার্টিতে সাফাতের দুই বান্ধবী যোগ দিয়েছিলেন। অপরদিকে ধর্ষিত দুই তরুণীর দুই বন্ধুকে একটি কক্ষে সারারাত আটকে রাখা হয়েছিল। এই চারজনকে মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী করা হতে পারে। মামলার তদন্তকারী সংস্থা উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন বিভাগের এডিসি আসমা সিদ্দিকা মিলি যুগান্তরকে বলেন, তদন্তের প্রয়োজনে যাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন, তাকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পুলিশ স্পর্শকাতর এ মামলাটি তদন্ত করছে বলে তিনি দাবি করেন। প্রসঙ্গত, ২৮ মার্চ বন্ধুর সঙ্গে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়ে বনানীর ‘দি রেইনট্রি’ হোটেলে ধর্ষণের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই তরুণী। ওই ঘটনায় ৬ মে রাজধানীর বনানী থানায় আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ (সিরাজগঞ্জের আবদুল হালিম) ও সাদমান সাকিফসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন তারা। শুক্রবার তাদের আদালতে হাজির করা হলে সাফাত আহমেদকে ছয় ও সাদমান সাকিফের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।। দুই তরুণীকে ধর্ষণের মামলায় গ্রেফতার সাফাত আহমেদ ও সাদমান সাকিফকে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
No comments