চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম
রমজান সামনে রেখে ঢাকাসহ সারা দেশে ন্যায্যমূল্যের পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সোমবার থেকে নিজস্ব ডিলারের মাধ্যমে ট্রাকে করে রমজাননির্ভর পণ্য ভোজ্য তেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুর বিক্রি শুরু হয়েছে, যা রমজানজুড়ে চলবে। প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা, মসুর ডাল ৮০ টাকা, প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ৮৫ টাকা, ছোলা ৭০ টাকা এবং খেজুর ১২০ টাকা দরে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তাদের অভিযোগ, নির্ধারিত স্পটে পর্যাপ্ত পণ্য সরবরাহ দেয়া হচ্ছে না। কিনতে এসে না পেয়ে নিন্ম আয়ের মানুষের হাহাকার দেখা গেছে। তাদের দাঁড়াতে হচ্ছে দীর্ঘ লাইনে। আবার লাইন ফুরানোর আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে পণ্য। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও অনেককেই খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। সূত্রে জানায়, সারা দেশে ১৮৫টি ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৩টি, চট্টগ্রামে ১০টি, অন্যান্য বিভাগীয় শহরে ৫টি ও জেলা সদরে ২টি করে ট্রাকে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি চিনি, ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি করে মসুর ডাল, ৩০০ থেকে ৪০০ কেজি ছোলা, ২০ থেকে ৩০ কেজি খেজুর এবং ৩০০ থেকে ৪০০ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে। একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ ৪ কেজি চিনি, মসুর ডাল ৩ কেজি, সয়াবিন তেল ৫ লিটার, ছোলা ৫ কেজি এবং ১ কেজি খেজুর কেনার সুযোগ পাচ্ছেন। সূত্র জানিয়েছে, রমজানে ভোজ্য তেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুরের যা চাহিদা, পণ্যভেদে তার মাত্র এক থেকে দেড় শতাংশের সরবরাহ দিচ্ছে টিসিবি। তবে এখানে ভোক্তারা বাজার দরের চেয়ে অনেক কম দামে কেনার সুযোগ পাওয়ায় হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন বিক্রীত স্পটগুলোয়। এর নেপথ্য কারণ হিসেবে জানা যায়, বাফার মজুদ গড়ে তোলার জন্য টিসিবির অনুকূলে প্রয়োজনীয় অর্থ কখনোই বরাদ্দ রাখা হয় না। যে পরিমাণ পণ্য টিসিবি আমদানি করে থাকে তা ব্যয় বাবদ অর্থ মন্ত্রণালয়কে কাউন্টার গ্যারান্টি দেখিয়ে ঋণ নিতে হয়। সেটিরও সর্বোচ্চ আওতা মাত্র ৮০০ কোটি টাকা। আবার এ পরিমাণ ঋণের অর্থও প্রচলিত সুদ ব্যবস্থায় পরিশোধ করতে হয়। ফলে সংকুচিত হয়ে পড়েছে সংস্থাটির পণ্য সরবরাহ কার্যক্রম। সূত্র আরও জানিয়েছে, যেসব স্পটে টিসিবির পণ্য বিক্রি হচ্ছে, সেসব স্পটে টিসিবির নজরধারীরও যথেষ্ট অভাব রয়েছে। ডিলারের মাধ্যমে এসব পণ্য সরবরাহ দেয়া হলেও অনেক ডিলার ন্যায্যমূল্যে ভোক্তার কাছে তার সবটুকু সরবরাহ না দেয়ারও অভিযোগ আছে। ঢাকায় যেসব স্থানে টিসিবির পণ্য বিক্রি হচ্ছে- সচিবালয় গেট, প্রেস ক্লাব,
কাপ্তান বাজার, ছাপড়া মসজিদ ও পলাশী বাজার, সাইন্স ল্যাব, নিউমার্কেট বা নীলক্ষেত মোড়, শ্যামলী/কল্যাণপুর, ঝিগাতলার মোড়, খামারবাড়ী/ফার্মগেট, কলশীতলা বাজার, রজনীগন্ধা সুপার মার্কেট কচুক্ষেত ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, আগারগাঁও তালতলা ও নির্বাচন কমিশন অফিস, আনসার ক্যাম্প/পাইকপাড়া মিরপুর, মিরপুর ১নং মাজার রোড, শান্তিনগর বাজার, মালিবাগ বাজার, বাসাবো বাজার, বনশ্রী, বাংলাদেশ ব্যাংক বা শাপলা চত্বর, মহাখালী কাঁচাবাজার, শেওড়াপাড়া বাজার, দৈনিক বাংলার মোড়, শাহজাহানপুর বাজার, ফকিরাপুল বাজার ও আইডিয়াল জোন, মতিঝিল বক চত্বর, খিলগাঁও তালতলা বাজার, রামপুরা বাজার, মিরপুর-১০ গোল চত্বর, আশকোনা হাজী ক্যাম্প ও রাজলক্ষ্মী উত্তরা, মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজার, দিলকুশা, মাদারটেক নন্দীপাড়া কৃষি ব্যাংকের সামনে, কালশি মোড়। জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর যুগান্তরকে বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবি ক্রমশই গুরুত্ব হারাতে বসেছে। বিদ্যমান বাজার ব্যবস্থা এখন অনেক বড়। এই বাজার চাহিদায় সীমিত মজুদ দিয়ে কিছুই হবে না। আর টিসিবির কার্যক্রম এখন নামমাত্রই বলা যায়। এদিকে রাজশাহীতে টিসিবির পণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। মহানগীরর ৫টি পয়েন্টে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। ট্রাকে টিসিবির পণ্য বিক্রির নির্ধারিত স্থানগুলো হচ্ছে- রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া এলাকায়, নগরীর রেলগেট, সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট লক্ষ্মীপুর মোড় এলাকা এবং বিনোদপুর এলাকা। রাজশাহীর টিসিবির আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রত্যেক গ্রাহক ৫ লিটার তেল এবং ৩ কেজি করে অন্যান্য পণ্য কিনতে পারছেন।
No comments