তাজা ফুলের চাহিদায় ভাটা, কমছে চাষ
সাতকানিয়া উপজেলার চরখাগরিয়া গ্রামটি ফুল চাষের জন্য বিখ্যাত। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের আয়ের উৎস ফুল চাষ। নগরসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ দেওয়া হয় এখানকার ফুল। তবে এবার চরখাগরিয়ায় ফুলের চাষ কমেছে। গত বছর এই গ্রামে ফুলের চাষ হয় আট হেক্টরে, এ বছর তা দঁাড়িয়েছে পঁাচে। একইভাবে সাতকানিয়া পৌর সদর ও এওচিয়া ইউনিয়নেও কমেছে ফুলের চাষ। চাষি ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, কৃত্রিম ফুলের (প্লাস্টিক ও কাপড়ের তৈরি ফুল) সহজলভ্যতা ও দামে কম হওয়ায় তাজা ফুলের চাহিদায় ভাটা পড়েছে। ফলে ফুল চাষ কমিয়ে দিয়েছেন অনেক চাষি।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বছর সাতকানিয়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ২১ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছিল। অথচ এ বছর চাষ কমে দঁাড়িয়েছে ১৬ হেক্টরে। এবার পৌর সদরে ফুলের চাষ হয়েছে দুই হেক্টরে, গত বছর ছিল তিন হেক্টর। কাঞ্চনা ও চরতিতে গত বছর ছিল পঁাচ হেক্টর, এবারও একই পরিমাণ জমিতে চাষ হয়েছে। এওচিয়ায় চাষ হয়েছে চার হেক্টরে, গত বছর ছিল পঁাচ। এসব জমিতে গঁাদা, গ্ল্যাডিওলাস, স্টার, গোলাপ, জিপসি, চন্দ্র মল্লিকা, চেরিসহ বিভিন্ন জাতের ফুলের চাষ হয়েছে। চরখাগরিয়া এলাকার ফুলচাষি শাহ আলম (৩৬) বলেন, ‘গত বছর ১১ কানি জমিতে গঁাদা ও গ্ল্যাডিওলাস ফুলের চাষ করেছিলাম। লাভ হয়েছিল মোটামুটি। এ বছর বাজারে কৃত্রিম ফুলের প্রভাবে তাজা ফুলের চাহিদা কমে যাওয়ায় সাত কানি জমিতে ফুলের চাষ করেছি।’ সাতকানিয়া পৌরসভা সদরের চাষি মোহাম্মদ আইয়ুব (৫১) জানান, তিনি ১০ বছর ধরে পঁাচ কানি জমিতে গোলাপের বাগান করে আসছেন।
কিন্তু এ বছর স্থানীয়ভাবে ফুলের চাহিদা কম থাকায় কেবল চার কানি জমিতেই গোলাপের চারা রোপণ করেছেন। উপজেলার কেরানীহাটের ফুলের দোকানি আবদুল মান্নান (৪৮) বলেন, ‘আমরা মেহেদি অনুষ্ঠান, বিয়ে ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সভা-সেমিনারের জন্য ফুল সরবরাহ করি। কিন্তু তাজা ফুল দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয় না। তা ছাড়া কৃত্রিম ফুলের দাম কম ও সহজলভ্যতার কারণে ফুলের দোকানিরা এখন তাজা ফুলের চেয়ে কৃত্রিম ফুলের ব্যবহার বেশি করছেন।’ চরখাগরিয়া এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিউটন দে প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামে সাতকানিয়ার চরখাগরিয়া এলাকা ফুল ও আলু চাষের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু এ বছর চরখাগরিয়া এলাকায় ফুল চাষ কমে গেছে। তিনি বলেন, প্লাস্টিকের ফুলের প্রভাবে এলাকায় ফুলের চাষ কমেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শোয়েব মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, দাম কম হওয়ায় বিয়ে, সভা-সেমিনারে অনেকেই কৃত্রিম ফুল ব্যবহার করছেন। কিন্তু তা দীর্ঘ সময় স্থায়ী হবে না। ফুল চাষে ভালো লাভ হয়। তাই আশা করছি, আগামী মৌসুমে চাষিরা আবারও ফুল চাষে নেমে পড়বেন।
No comments