এক দশকে বিদেশে নারীর কর্মসংস্থান বেড়েছে ১০ গুণ
বিদেশে কর্মসংস্থানে বাংলাদেশের নারীদের সংখ্যা গত এক দশকে ১০ গুণ বেড়েছে। আর দুই দশক ধরলে এই বৃদ্ধি ৬০ গুণ। তবে এখনো ঢাকা বিভাগের মেয়েরাই বিদেশে বেশি যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে উত্তরাঞ্চল একদমই পিছিয়ে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, এক দশক আগে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ থেকে ১৮ হাজার নারী বিদেশে কাজ করতে গিয়েছিলেন। আর ২০১৬ সালে সেই সংখ্যা ১০ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৮ হাজারে। এই বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে গেছেন ২০ হাজার নারী। বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের নারীরা মূলত লেবানন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও জর্ডানে কাজ করতে যাচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি যাচ্ছেন ঢাকা, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, কিশোরগঞ্জ, বরিশাল, হবিগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জ থেকে। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা নারীদের বিদেশে কর্মসংস্থানকে ইতিবাচক উল্লেখ করে বলেছেন, নারীরা যদি বিদেশে যাওয়ার আগে যথাযথ প্রশিক্ষণ নেন, সচেতন হন এবং সরকার যদি যথাযথভাবে নজরদারি করে, তবেই ঝুঁকিগুলো এড়ানো সম্ভব। বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সাল থেকে বিদেশে নারীদের কর্মসংস্থান শুরু হয়। ওই বছর মাত্র ২ হাজার ১৮৯ নারী বিদেশে গিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯৯৪ জন। ২০১৩ সালে এই সংখ্যা প্রথমবারের মতো বছরে ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। গত বছর সবচেয়ে বেশি নারী কর্মী গেছেন সৌদি আরবে। এই সংখ্যা ৬৮ হাজার ২৮৬। অবশ্য সৌদি আরবেই নারী নিপীড়নের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া জর্ডানে গেছেন ২২ হাজার ৬৮৯ জন। বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ থেকে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ৫ লাখ ৯৩ হাজার ১১১ জন নারী বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে ৩১ শতাংশই গেছেন জর্ডানে। এ ছাড়া আরব আমিরাতে ২৬ শতাংশ, সৌদি আরবে ১৫ শতাংশ, জর্ডানে ৯ শতাংশ, কুয়েতে ৪ শতাংশ এবং ওমানে ৩ শতাংশ নারী গেছেন। এর মধ্যে জর্ডান ও লেবাননে পোশাক কারখানায় অনেক নারী কাজ করলেও বাকি দেশগুলোতে এখনো গৃহকর্মী হিসেবেই কাজ করতে যাচ্ছেন।
ফলে তাঁরা ঝুঁকিতে থাকেন সবচেয়ে বেশি। নির্যাতনের কারণে গত আড়াই বছরে সৌদি আরব থেকে হাজারখানেক নারী ফেরত এসেছেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ধর্ষণ ও নিপীড়নেরও অভিযোগ করেছেন। আবার বিপরীত চিত্রও কম নয়। লেবাননের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করছেন রিজিয়া বেগম। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা পোশাক কারখানায় কাজ করি। দেশে টাকা পাঠাচ্ছি। শুধু আমি নই, এখানে পোশাক কারখানায় কাজ করছেন এমন অনেক মেয়েই ভালো আছেন।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ মহিলা অভিবাসী শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের (বমসা) পরিচালক সুমাইয়া ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নারী কর্মীদের বিদেশে যাওয়াকে আমরা খুবই ইতিবাচকভাবে দেখি। একজন পুরুষ প্রবাসী কর্মী অনেক সময় কিছু টাকা বিদেশে খরচ করে কিছু টাকা দেশে পাঠান। বিপরীতে একজন নারী প্রবাসী কর্মী তাঁর আয়ের পুরোটাই দেশে পাঠিয়ে দেন। তবে সংসার, সন্তান বা পরিজন ছেড়ে নারীরা এই যে বিদেশে থাকছেন, তাঁরা যখন নিপীড়নের শিকার হন, তখন বিষয়টি খুবই অমানবিক।’ বিএমইটির মহাপরিচালক সেলিম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, এখন আর নারীদের বিদেশে যেতে কোনো খরচ হচ্ছে না। নিয়োগকর্তারাই টাকা দিয়ে দিচ্ছেন। ফলে নারীরা বেশি বিদেশে যাচ্ছেন। এখন নারী কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। ফলে সমস্যাও কমে আসছে।
No comments