নতুন পাখি পেল বাংলাদেশ
নতুন পাখি পেল বাংলাদেশ। পাখিটির নাম সাইক্সের-রাতচরা। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব ও চার ব্রিটিশ পাখি বিশেষজ্ঞ দল গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজশাহীর পদ্মার চরে পাখিটি আবিষ্কার করেন। পাখি বিশেষজ্ঞদের হিসাবমতে, বাংলাদেশ এমনকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও এর আগে কেউ এই পাখি দেখেননি। এই আবিষ্কারের মাধ্যমে জানা গেল, বিশ্বে এই বিশেষ পাখির বিচরণ এলাকা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সম্প্রতি এই এলাকায় সারা পৃথিবীতে বিপন্ন ও বিরল কয়েক জাতের পাখির সন্ধান মিলেছে। পাখিটির গায়ে মেটে ও হালকা খয়েরি রঙের মিশ্রণ রয়েছে। ডানা ও লেজের কিছু কিছু জায়গায় স্পষ্ট সাদা রঙের পালক আছে। এই পাখিরা ২১ থেকে ২৩ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয়ে থাকে। প্রকৃতির সঙ্গে এরা এমনভাবে মিশে থাকে যে প্রায় চোখে পড়ে না। বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব এবং আইইউসিএন-বাংলাদেশের সহযোগিতায় ব্রিটিশ পাখি বিশেষজ্ঞ বিল জোনস, ম্যাট প্রায়ার, স্টিফেন স্যামওয়াথ ও ডিন রিয়া, বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সহসভাপতি তারেক অণু ও স্থানীয় পাখিপ্রেমী শাহরিয়ার সবুজ গত মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজশাহী চরে আসেন। ব্রিটিশ বিশেষজ্ঞ দলটি গবেষণার জন্য এই চরে বসবাসকারী বিরল পাখি ধলালেজ শিলাফিদ্দার ডিএনএ সংগ্রহ করতে এসেছিলেন। এই দলের সদস্যরা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের জালে একটি অচেনা পাখি চলে আসে। পাখিটি যে সাইক্সের-রাতচরা হতে পারে, এটা তাঁরা চিন্তাও করেননি। তারপর তাঁরা গবেষণার নিয়ম অনুযায়ী জালে পাওয়া পাখিটির পায়ে রিং পরানোর জন্য মাপজোখের সময় দেখেন যে পাখিটির আকৃতি বেশ ছোট। তখন তাদের পাখিটিকে সাইক্সের-রাতচরা বলে সন্দেহ হয়। সমস্ত বায়োমেট্রিক তথ্য এবং তার ডানা, লেজ, গলা ইত্যাদি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ছবি বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। তারপর রাতচরাটিকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় তার আপন ভুবনে। তারেক অণু বলেন, চারজন ব্রিটিশ পাখি বিশেষজ্ঞ সেখানে উপস্থিত থাকার পরেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পাখি বিশেষজ্ঞদের কাছে পাখিটির শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ছবি তুলে পাঠানো হয়। ছবি দেখে তাঁদের সঙ্গে বাইরের বিশেষজ্ঞরাও একমত হন যে রাজশাহীতে পাওয়া এই পাখি সাইক্সের-রাতচরা।
নিশ্চিত হওয়ার পর তাঁরা সম্প্রতি ঘোষণা দেন যে বাংলাদেশের রাজশাহীর চরে সাইক্সের-রাতচরা পাওয়া গেছে অর্থাৎ বাংলাদেশ একটি নতুন পাখি পেল। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই নিশাচর পাখি ভারত, ইরান ও পাকিস্তানের মরুপ্রধান এলাকায় বিচরণ এবং প্রজনন করে শীতকালে মধ্য ও উত্তর ভারতে পরিযায়ন করে। সেই এলাকা থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের পদ্মার চরে তাদের দেখা পাওয়ার ঘটনা পাখিবিজ্ঞানের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক বলেন, সারা পৃথিবীর পাখি গবেষকদের জন্য এটা নতুন তথ্য। এই পাখিরা সাধারণত বালুবেষ্টিত এলাকার রাতের পোকা খেয়ে বেঁচে থাকে। তিনি বলেন, রাজশাহীর চরে এই পাখি দেখা গেছে বলে এটা মনে করা ঠিক হবে না যে, মরু এলাকার পাখি এসেছে মানে রাজশাহীতে মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। চরের প্রকৃতি এমনিতেই অনেকটা মরুভূমির কাছাকাছি। ম্যাট প্রায়ার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৮০ হাজারের বেশি পাখিকে রিং পরিয়েছেন। তাঁর অভিমত হচ্ছে, এটি একটি প্রাপ্তবয়স্ক সাইক্সের-রাতচরা এবং যেহেতু তাকে একটি দলে দেখা গেছে, ধারণা করা যেতে পারে যে এটি কোনো পথভ্রষ্ট পাখিদের দল নয়। গবেষণা করলে হয়তো রাজশাহীর চরে এই দলের আরও দেখা পাওয়া যেতে পারে। এর দৈর্ঘ্য ২১ সেন্টিমিটার।
No comments