শিল্পের আয়নায় নারীর মুখ
ভিডিওচিত্রে ভেসে ওঠে যন্ত্রণাবিদ্ধ এক নারীর মুখ। কালো কাপড়ে মুখ ঢাকা। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে জল। পটভূমি বদল হলে দেখা যায় আরেকটি দৃশ্য। যন্ত্রণাকাতর নারীটি এবার হালকা সবুজ রঙের বেলুন ফোলাতে শুরু করেন। বেলুনটি যতই বাতাসে ভর্তি হতে থাকে, ততই যেন তঁার শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। একটু পর বিকট শব্দে বেলুনটি ফেটে গেলে নারীর চোখে-মুখে দেখা মেলে স্বস্তির হাসি। আর এই স্বস্তির কথা জানাতেই যেন পেছনে জড়ো হয় অনেকগুলো বেলুন। ভিডিও আর্টের মাধ্যমে শিল্পী নাজিয়া আন্দালিব এভাবে নানা প্রেক্ষাপটে নারীর যন্ত্রণা ফুটিয়ে তুলেছেন। শিল্পী নাজিয়া আন্দালিব শিল্পের নানা মাধ্যমে নারীর আনন্দ-বেদনা ও লড়াইয়ের ছবি তুলে আনেন। নগরের মেহেদীবাগের বিস্তার আর্ট কমপ্লেক্সে তঁার ২০তম একক শিল্পকর্ম প্রদর্শনীও এর ব্যতিক্রম ছিল না। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়া ‘অবজেকটিফায়েড’ শিরোনামের চার দিনের এই প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ভিডিও আর্ট, জলরং, ছাপচিত্র, আলোকচিত্র, স্থাপনা, অ্যাক্রিলিক ও দেয়ালচিত্র। প্রসাধন ও পোশাকের আড়ম্বরে ঢাকা নারীর বাহ্যিক সত্তাই আমরা দেখি। কিন্তু তঁার মনের খবর রাখে কজন? নারীর ভেতর ও বাইরের সত্তাকে তাই একসঙ্গে দর্শকের সামনে উপস্থিত করেন শিল্পী। নানা মাধ্যমে কাজ করলেও শিল্পীর সাবলীল ড্রয়িং মুগ্ধ করেছে দর্শককে।
প্রায় প্রতিটি শিল্পকর্মেই নাটকীয় মুহূর্ত রচনা করেছেন তিনি। দ্বিমাত্রিক ক্যানভাস এবং ভিডিও আর্ট ছাড়াও একাধিক স্থাপনাশিল্প দর্শকের ভাবনার খোরাক জুগিয়েছে। একটি প্রদর্শনীকক্ষের দেয়াল তুলির আঁচড়ে রাঙিয়েছেন তিনি। দেয়ালের মাঝে ঝুলিয়ে দিয়েছেন একটি পেনসিল হিলের জুতো। এভাবে নারীর ব্যবহার্য নানা জিনিস এসেছে তঁার শিল্পকর্মে। ব্যবহার করেছেন রান্না ও গৃহস্থালির নানা উপাদান। প্রদর্শনীতে স্থান পাওয়া ছাপচিত্র মাধ্যমের সিরিজ কাজটি ছিল ব্যতিক্রমধর্মী। ভালো লেগেছে সাড়ে পঁাচ মিনিটের ভিডিওচিত্র ‘ম্যারি মাই এগ’। এই শিল্পকর্মে নারীর দ্বৈত সত্তা, মাতৃত্ব, গর্ভধারণ ও সমাজে নারীর অবস্থান তুলে ধরেছেন তিনি, যা প্রদর্শনী দেখতে আসা দর্শকদের ভাবনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রদর্শনীটির উদ্বোধন করেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের পরিচালক শায়লা শারমিন। অতিথি ছিলেন ক্যাপ্টেন আজিজুল ইসলাম, শিক্ষাবিদ সাফিয়া গাজী, দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক, ফ্যাশন ডিজাইনার আইভি হাসান ও বিস্তারের পরিচালক আলম খোরশেদ।
No comments