জাতীয় ‘উন্নয়ন’, বনাম ‘গুম খুনের প্রতিবাদ’!
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের প্রায় ১৫ কিলোমিটার অংশ পড়েছে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায়। নির্বাচনী প্রচার তাই মহাসড়কলাগোয়া হাট–বাজারগুলোতে বেশি। গত কয়েক দিন উপজেলার কেন্দ্রস্থলের গোয়ালাবাজার, তাজপুর, কদমতলা, দয়ামীরবাজার-জমজমাট—এই চারটি হাট সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রার্থীদের প্রচারে ছিল মুখরিত। প্রায় এক সপ্তাহ এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আতাউর রহমানের প্রচারে উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। একইভাবে প্রচার চলছে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আক্তারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে। উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার এ নির্বাচনী কৌশলের বিপরীতে বিএনপি শুরুতে নির্বাচনী প্রচারণায় ‘নিখোঁজ’ নেতা এম ইলিয়াস আলীর ‘গুম’ হওয়ার প্রতিবাদ জানানোর বিষয়টি এনেছে। ইলিয়াস আলী এ আসনের সাবেক সাংসদ ছিলেন। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল থেকে তিনি নিখোঁজ। ওসমানীনগরে বিএনপির প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচার শুরুর দিকে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর একটানা চার দিন প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন। তাঁর প্রচারণায় ছিল ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী হলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে হবে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মো. আতাউর রহমান ও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মো. আখতারুজ্জামান চৌধুরীর মধ্য থেকে অগ্রগামী একজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বিএনপির ময়নুল হক চৌধুরীর সঙ্গে।
চেয়ারম্যান পদে জাতীয় পার্টির মো. শিব্বির আহমদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপির শুরুর দিকে ‘গুম’ নিয়ে প্রচারণায় এখন যুক্ত হয়েছে ‘খুন’। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাবাজারে দুই হত্যার ঘটনাও প্রচার অনুষ্ঠানগুলোতে আনা হয়েছে। বলা হচ্ছে ‘গুম ও খুনের প্রতিবাদ’ জানাতেই বিএনপির প্রার্থীকে ভোট দিতে। গতকাল বিকেলে তাজপুর এলাকায় সর্বশেষ নির্বাচনী প্রচারে গুম-খুনের প্রতিবাদ জানাতে বিএনপির প্রার্থী ময়নুল হক চৌধুরীকে জয়ী করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির জেলা নেতারা। এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির আলী আহমদ গতকাল বলেন, ইলিয়াস আলীর নির্বাচনী এলাকা হওয়ায় এ রকম প্রচারণা স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলছে। এর মধ্যে বাংলাবাজারে ক্ষমতাসীন দলের দুই প্রার্থীর পক্ষে জোড়া খুনের ঘটনাটিও যুক্ত হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উন্নয়ন তো স্বাভাবিক একটি ধারা। যেহেতু রাজনৈতিক প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে, তাই রাজনৈতিক প্রচারণা চালিয়ে বিএনপি অগ্রসর হচ্ছে। সুষ্ঠু ভোট হলে অবশ্যই বিএনপির প্রার্থী জয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে গুম ও খুনের প্রতিবাদ জানানো হবে। উন্নয়নের ধারা বজায় রাখার প্রচারণায় ভোটাররা আকৃষ্ট হচ্ছেন দাবি করে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ওসমানীনগর একটি নতুন উপজেলা। প্রথম নির্বাচন হচ্ছে, তাই সাধারণ ভোটাররা উন্নয়নমুখী। এ বিষয়টি বিবেচনায় এনে প্রচার চালানো হচ্ছে।
No comments