কম খরচে ইচ্ছাপূরণ
সৌদি আরবপ্রবাসী শওকত আলী। দীর্ঘদিন বিদেশে থাকার পর বছর তিনেক আগে দেশে ফেরেন। পরিবারের জন্য খুঁজতে থাকেন পছন্দের একটি আবাস। তবে মাথায় ছিল, তা যেন হয় সাধ্যের মধ্যে। অবশেষে নগরের জয়নগর এলাকায় পান ১ হাজার ৩০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট। সব মিলিয়ে তাঁর ব্যয় হয় ৬৫ লাখ টাকা। শওকত আলীর মতো প্রবাসী, ব্যাংকার, সরকারি চাকরিজীবী, অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী,
ব্যবসায়ী ও চিকিৎসকেরা তুলনামূলকভাবে ছোট ও কম দামের ফ্ল্যাট কেনার দিকে ঝুঁকছেন। এসব অ্যাপার্টমেন্টের দাম মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের সামর্থ্যের মধ্যে থাকায় বিক্রিও হচ্ছে বেশি। এসব অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি গ্রাহকদের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বলে জানিয়েছেন আবাসন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের কথা মাথায় রেখে কোম্পানিগুলোও একের পর এক প্রকল্প চালু করছে। এসব ভবনে বসবাসের বাইরে অন্যান্য নাগরিক সুযোগ-সুবিধাও রাখছে কোম্পানিগুলো। আবাসন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৯০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ বর্গফুটের আকৃতির ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজারমূল্য ৩৫ থেকে ৮০ লাখ টাকা। সিপিডিএল, এমডিসি, এপিক, এয়ারবেল, স্যানমারসহ বিভিন্ন আবাসনপ্রতিষ্ঠান এ ধরনের ফ্ল্যাট বিক্রি করছে। রিহ্যাবের প্রেস অ্যান্ড মিিডয়া কমিটির আহ্বায়ক এ এস এম আবদুল গাফফার মিয়াজী বলেন, এবারের আবাসন মেলায়ও কমবেশি সব প্রতিষ্ঠান ছাড় দিচ্ছে। গ্রাহকেরা নিজের সামর্থ্য আর ইচ্ছার সমন্বয় করতে পারবেন। প্রবাসী শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রামে বাড়ি থাকলেও নগরে মাথা গোঁজার নিজস্ব কোনো আবাস ছিল না। প্রবাসে থাকার সময়ই চিন্তা ছিল নগরে একটি ফ্ল্যাট কেনার। তবে দাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে ওঠে। তবে এখন যে ফ্ল্যাটটি কিনেছি, তার দাম সামর্থ্যের মধ্যেই ছিল। এর মধ্যে দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ হয়েছে।’ সিপিডিএলের ব্যবস্থাপক (সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং) আমজাদ হোসেন জানান, ৪০-৬০ লাখ টাকা দামের ফ্ল্যাটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকজনই এ দামের ফ্ল্যাটের গ্রাহক। এ ছাড়া প্রবাসীরাও এ ধরনের ফ্ল্যাট কিনছেন। তাঁরা ফ্ল্যাট কিনতে চাইলেও অনেক সময় দামের কারণে তা সম্ভব হয় না। কেননা বড় আকারের অ্যাপার্টমেন্টের দাম কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। মূল্য সহনীয় হওয়ায় তাঁরা ছোট ও মাঝারি সাইজের ফ্ল্যাট বুকিং দিচ্ছেন। গ্রাহকদের চাহিদার বিষয় চিন্তা করে নগরের পাথরঘাটায় ছোট ও মাঝারি আকারের ফ্ল্যাট প্রকল্প চালু রয়েছে বলে জানান আমজাদ হোসেন। তিনি জানান, ‘ডাউন টাউন সিপিডিএল’ নামের এ প্রকল্পে তিনটি ভবন রয়েছে। অ্যাপার্টমেন্টগুলোর আয়তন ৯৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ বর্গফুটের। মোট ১৪০টি অ্যাপার্টমেন্টের মধ্যে ইতিমধ্যে ৮০ শতাংশ বিক্রি হয়ে গেছে। নগরের কর্নেলহাট, আগ্রাবাদ, হালিশহর, বাকলিয়া, চকবাজার, জামালখান, পাথরঘাটা, আন্দরকিল্লা, চট্টেশ্বরী,
চন্দনপুরা, কালা মিয়া বাজার, ও আর নিজাম রোড আবাসিক এলাকা, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা ও কাতালগঞ্জ এলাকায় ছোট ও মাঝারি সাইজের ফ্ল্যাট প্রকল্প রয়েছে রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোর। এপিকের হেড অব মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস খুরশীদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, নগরের ও আর নিজাম রোড আবাসিক এলাকা, লালখান বাজার, চন্দনপুরা, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, কালা মিয়া বাজার এলাকায় অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প রয়েছে। এসব এলাকায় চালু থাকা প্রকল্পে তিন কক্ষবিশিষ্ট ফ্ল্যাটের আকার ১২৫০ বর্গফুট। তিনি বলেন, গত জানুয়ারিতে অন্তত ২০০ গ্রাহক তাঁদের কার্যালয়ে এসে এ ধরনের অ্যাপার্টমেন্টের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়েছেন। অর্ধেকের বেশি আগ্রহী গ্রাহক প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন। কয়েকজন বুকিংও দিয়েছেন। এ ছাড়া চলতি মাসে আরও ২০টি অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রিহ্যাবের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে ছোট আকারের ফ্ল্যাটের চাহিদা বাড়ছে। এলাকাভেদে দামের রকমফের রয়েছে। নাসিরাবাদ এলাকায় যেখানে বর্গফুটপ্রতি দাম ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা, কর্নেলহাট, আগ্রাবাদ ও হালিশহর এলাকায় এর দাম পড়ে সাতে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া জামালখান এলাকায় ফ্ল্যাটের বর্গফুটপ্রতি দাম ৭ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে সামর্থ্যের মধ্যেও ফ্ল্যাট মিলবে। সর্বনিম্ন ৩৫ লাখ টাকার মধ্যে ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন গ্রাহকেরা।
No comments