রাজধানীতে উৎসবের আমেজ
শীতটা চলেই গেল। গাছের শাখা থেকে ঝরে পড়ছে পুরোনো মলিন পাতা। কোথাও কোথাও উঁকি দিচ্ছে কচি সবুজ পাতারা। ফুরফুরে মেজাজের হালকা শীতল বাতাস। বাইরে বেরোলেই মন ভালো করা আবহাওয়া। কদিন পরই বসন্ত। প্রকৃতির এই সাজ সাজ রব এখন নগরবাসীর মনেও। নগরে চলছে বইমেলা, নাট্যোৎসবসহ নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীতে। মাথায় ফুল। একটু পর পর মুঠোফোনে ছবি তোলা। একই রং ও ঢঙের পোশাক। শ্রাবণী ইসলাম ও লাবনী ইসলাম দুই বোন। একজন ঢাকায় থাকেন, অন্যজন খুলনায়। খুলনার লাবনী বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছেন। সারা দিন টইটই করে ঘুরে বেড়ানো দুজনকে বইমেলায় পাওয়া গেল। তাঁদের দুই বোনের মতো অনেকেই ঘুরছেন এসব অনুষ্ঠান-উৎসবে। এক উৎসব শেষ হতে না হতেই আরেক উৎসব এসে হাজির। সাংস্কৃতিক অঙ্গন এখন মানুষের পদচারণায় মুখর। নানান বয়সী মানুষ ছুটে বেড়াচ্ছে এই উৎসব থেকে ওই উৎসবে। এ মাসে ঢাকায় বিভিন্ন উৎসব হয় বলেই বেড়াতে এসেছেন লাবনী ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বোনকে নিয়ে সারা দিনই ঘুরছি। চারুকলায় দেখলাম সুন্দর সুন্দর ব্যাগ, ফ্রেম প্রদর্শন করছে। এখন বইমেলায় আসছি। ভালোই লাগছে।’ মাসজুড়ে শুরু হওয়া অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বইপ্রেমী ছাড়াও ঘুরতে আসা মানুষের সংখ্যাও কম নয়। গতকাল বুধবার বিকেলে দেখা যায়, খুব বেশি ভিড় না হলেও প্রায় সব স্টলেই কমবেশি মানুষ বই নেড়েচেড়ে দেখছেন। বইমেলার পাশেই মাইকে ভেসে আসছে নাটকের সংলাপ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে চলছে বুদ্ধি নাটকের মঞ্চায়ন। ভেতরে গিয়ে দেখা গেল দর্শকভর্তি গ্যালারি।
মেলা ঘুরে বই হাতেও অনেকে এসেছেন। নাটকের সংলাপে কখনো কখনো হেসে উঠছেন দর্শক। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের আয়োজনে ফেব্রুয়ারিজুড়েই চলবে এই নাট্যোৎসব। প্রতিদিন দুটি নাটক প্রদর্শন করা হয়। বিকেল সারে চারটা থেকে শুরু হয় নাটক। ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’ স্লোগানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট গতকাল থেকে শুরু করেছে অমর একুশের অনুষ্ঠানমালা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও দর্শকের সমাগম ছিল ভালোই। নাটক, কবিতা, সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি চলবে প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। জোটের এই অনুষ্ঠান ১৭ থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে। হ্যান্ডিক্যাম, ইস্ত্রি, টাইপরাইটার, রেডিও, গয়নার বাক্স, ক্যালকুলেটরসহ পরিত্যক্ত সব প্রয়োজনীয় জিনিস দেয়ালে সাঁটানো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থী মো. জুবায়ের মনোযোগ দিয়ে দেখছিলেন এসব পরিত্যক্ত জিনিসপত্র। এসব জিনিসপত্র দিয়েই শিল্পী মিনহাজ মারজু তৈরি করেছেন তাঁর একটি শিল্পকর্ম। আন্তর্জাতিক আলোকচিত্র উৎসব ‘ছবিমেলা ৯’ উপলক্ষে করা হয়েছে এই শিল্পকর্মটি। দেশ-বিদেশের বিখ্যাত আলোকচিত্রীদের ছবির প্রদর্শনী চলছে উৎসবের মূল ভেন্যু শিল্পকলা একাডেমিতে। জুবায়ের বলেন, ‘ঘুরতে ঘুরতে এখানে চলে এলাম। গুণী শিল্পীদের কাজ দেখতে পারা সৌভাগ্যের ব্যাপার।’ ছবিমেলায় প্রদর্শিত ছবির চরিত্রগুলো হঠাৎ হঠাৎ জীবন্ত মনে হয়। আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুনের কাজগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন দর্শনার্থীরা। ছবিমেলা-৯ চলবে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
No comments