নেই মাঠ, কমিউনিটি সেন্টারে থানা
উত্তর ও দক্ষিণ মুগদাপাড়ায় দেড় লক্ষাধিক লোকের বসবাস। অথচ মহল্লার শিশু-কিশোরদের কোনো খেলার মাঠ ও পার্ক নেই। এতে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকেরা। এই এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) একমাত্র কমিউনিটি সেন্টারটি চার বছর ধরে দখল করে রেখেছে মুগদা থানার পুলিশ। ফলে ডিএসসিসির এই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নাগরিকেরা।
অবিলম্বে বিকল্প স্থানে থানার কার্যক্রম সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। মুগদাপাড়া সমাজকল্যাণ ও ক্রীড়া সংসদের সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, খেলার মাঠ ও পার্ক না থাকায় মহল্লার শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কোনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও নেই। সারা দিন চারদেয়ালের ঘরে তাদের বন্দী থাকতে হয়। এতে একসময় তাদের একটি অংশ মাদকাসক্তিতে ঝুঁকে পড়ে। সন্ধ্যার পর মহল্লার অলিগলিতে ভাসতে থাকে গাঁজার গন্ধ। অবিলম্বে সরকারকে মুগদাপাড়ায় মাঠ ও পার্কের ব্যবস্থা করতে হবে। দক্ষিণ মুগদাপাড়ার বাজার রোডের স্থানীয় বাসিন্দা রুবেল আহমেদ বলেন, আগে এই কমিউনিটি সেন্টারে প্রতিদিন বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো। কিন্তু ২০১২ সালের ৫ জুন থানার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে তা বন্ধ রয়েছে।
অথচ এই এলাকায় ডিএসসিসির বিকল্প কোনো কমিউনিটি সেন্টার নেই। অবিলম্বে কমিউনিটি সেন্টার থেকে থানাটি স্থানান্তর করা দরকার। ওই দুটি এলাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। ওয়াসা রোড, মদিনাবাগ, খালপাড় রোড, বিশ্বরোড, দক্ষিণ মুগদাপাড়া বাজার রোড, স্কুল গলি, ৭ নম্বর রোড, ব্যাংক কলোনি, আরব বেকারি রোড, জান্নাতবাগ রোড, শান্তিকানন, ওয়াপদা গলি, জিরো পয়েন্ট, সরদারবাড়ি রোড, বড় মসজিদ রোড, মুগদা প্রধান সড়ক এলাকা নিয়ে উত্তর মুগদাপাড়া ও দক্ষিণ মুগদাপাড়া এলাকা গঠিত। এই ওয়ার্ডে ভোটারসংখ্যা প্রায় ৪৭ হাজার। গতকাল বুধবার এসব এলাকা ঘুরে দেখা যায়, উত্তর ও দক্ষিণ মুগদাপাড়ায় যাতায়াতের প্রধান সড়ক বিশ্বরোড, বাজার রোড ও হাসপাতাল রোড। এর মধ্যে খানাখন্দে ভরা বিশ্বরোড ও বাজার রোডের বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনা স্তূপ হয়ে আছে। বাতাসে উড়ছে ধুলাবালু। নাক-মুখ চেপে চলাচল করছে পথচারীরা। ধুলাবালু থেকে বাঁচতে দোকানিদের সড়কে পানি ছিটাতে দেখা গেছে। সড়কে ব্যাটারিচালিত অবৈধ রিকশা চলছে প্রচুর।
মহল্লার সড়ক সরু হওয়ায় রিকশা ছাড়া অন্য যানবাহন চলে না। এ ছাড়া বিশ্বরোডের পূর্ব পাশের ফুটপাতে অবৈধ দোকানপাট ও মালামাল রেখে তা দখল করে রেখেছেন দোকানিরা। এতে পথচারীদের চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মদিনাবাগের বাসাবাড়িতে আছে গ্যাসের সংকট। এলাকায় মশার ব্যাপক উপদ্রব। খালপাড় রোডের স্থানীয় বাসিন্দা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, মহল্লার অলিগলিতে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানো হয় না। বাসিন্দারা মশার কামড়ে অতিষ্ঠ। কয়েল জ্বালিয়েও মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। দিনের বেলায়ও মশারি টানিয়ে রাখতে হয়৷ মশার উপদ্রব দিনে দিনে বাড়ছে৷ মহল্লার নালাগুলো পরিষ্কার করা হয় না। এসব নালা থেকেই মশা জন্মায়। মদিনাবাগের একটি গলিতে ক্রিকেট খেলছিল মহল্লার কয়েকটি শিশু। রাসেল ও নাজমুল বলে, তাদের এলাকায় কোনো খেলার মাঠ নেই। গলি ফাঁকা পেলে এর মধ্যেই ক্রিকেট খেলে। তবে অনেক সময় দৌড়াতে গিয়ে ইট-পাথরে হোঁচট খেতে হয়। এতে মহল্লার অনেক শিশু আহত হয়।
No comments