নির্বাচন–ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে রকিব কমিশনের বিদায়
নির্বাচন-ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করে গতকাল বুধবার বিদায় নিয়েছে রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, এই কমিশন তার পাঁচ বছরের মেয়াদে তা ধ্বংস করে দিয়েছে। তবে বিদায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ মনে করেন, তাঁর কমিশনের কোনো ব্যর্থতা নেই।
গতকাল বুধবার বিদায়ের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, পাঁচ বছরের মেয়াদে সবকিছুতেই তাঁরা সফল হয়েছেন এবং জাতির সামনে নিরপেক্ষতা প্রমাণ করেছেন। গতকাল সর্বশেষ অফিস করার মাধ্যমে কাজী রকিবউদ্দীন, নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ ও জাবেদ আলী পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করেছেন। কমিশনার মো. শাহনেওয়াজের মেয়াদ শেষ হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি। বিদায়ী কমিশনের সাফল্য-ব্যর্থতা সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান কমিশন যা করে গেছে, তাতে কমিশনের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই বিদায়ের আগে তাদের বলে যাওয়া উচিত, তারা কী কী ভালো কাজ করেছে। আর কোথায় কোথায় সমস্যা দেখেছে। নতুন কমিশনকে দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য হলেও তাদের এ কাজটি করা উচিত।
যত অনিয়ম
বিদায়ী কমিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। এর অধীনে জাতীয় সংসদ, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়েছে। কমিশন সচিবালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এত বেশি নির্বাচন করার সুযোগ অতীতের কোনো কমিশন পায়নি। এই কমিশনের অধীনে ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী জয়লাভ করেন। পরের বছর রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে জয় পান বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা। এসব নির্বাচন সুষ্ঠু হয়। নির্বাচনী অনিয়মের শুরু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে। এ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ নেয়নি। প্রায় ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দেড় শতাধিক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম দুই পর্ব মোটামুটি সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়। প্রথম দুই ধাপে বিএনপি-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জয় পান।
যত অনিয়ম
বিদায়ী কমিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। এর অধীনে জাতীয় সংসদ, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন হয়েছে। কমিশন সচিবালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এত বেশি নির্বাচন করার সুযোগ অতীতের কোনো কমিশন পায়নি। এই কমিশনের অধীনে ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী জয়লাভ করেন। পরের বছর রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনে জয় পান বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা। এসব নির্বাচন সুষ্ঠু হয়। নির্বাচনী অনিয়মের শুরু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে। এ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অংশ নেয়নি। প্রায় ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দেড় শতাধিক প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম দুই পর্ব মোটামুটি সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়। প্রথম দুই ধাপে বিএনপি-সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জয় পান।
পরের ধাপগুলোতে দেশব্যাপী কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে সিল মারার সংস্কৃতি শুরু হয় এবং বেশির ভাগ উপজেলায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। গত বছরের ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই সিটি এবং চট্টগ্রাম সিটির নির্বাচন নিয়েও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ আছে। এই কমিশনের অধীনে সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে তার আগে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সীমাহীন অনিয়মের মধ্য দিয়ে। এ দুটি নির্বাচনে অনেক জায়গায় বিএনপির মনোনীত প্রার্থীরা মনোনয়নপত্রও জমা দিতে পারেননি। অনেক জায়গায় ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অনিয়মে অংশ নেন। কিন্তু কমিশন থেকে এসব অনিয়ম প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ক্ষমাপ্রার্থনা
আইনে অনিয়ম প্রমাণিত হলে নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের আছে। কিন্তু এই কমিশন ইউপি নির্বাচনে অনিয়ম-সংক্রান্ত প্রার্থীদের অভিযোগ আমলেই নেয়নি। উল্টো এক চিঠিতে সব প্রার্থীকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঁদপুরের চরভৈরবী ইউনিয়নের এক প্রার্থী হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। হাইকোর্ট কমিশনকে অভিযোগ নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। কমিশন সেই আদেশ আমলে নেয়নি। এ জন্য হাইকোর্ট কমিশনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ তোলেন। এ ঘটনায় সিইসি ও চার কমিশনার গত ২৬ নভেম্বর আদালতে গিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। উপজেলা নির্বাচনের পর বিরোধী দলসহ সমালোচকদের অনেকে বর্তমান কমিশনকে ‘মেরুদণ্ডহীন’ বলে আখ্যায়িত করেছিল। এ বিষয়ে নিজেদের ব্যাখ্যা তুলে ধরতে গিয়ে কমিশনার জাবেদ আলী টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে কোমর দুলিয়ে বলেছিলেন, ‘মেরুদণ্ড তো ঠিকই আছে।’ বিদায়ী কমিশন সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সময় লাগে,
ক্ষমাপ্রার্থনা
আইনে অনিয়ম প্রমাণিত হলে নির্বাচন বাতিল করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের আছে। কিন্তু এই কমিশন ইউপি নির্বাচনে অনিয়ম-সংক্রান্ত প্রার্থীদের অভিযোগ আমলেই নেয়নি। উল্টো এক চিঠিতে সব প্রার্থীকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চাঁদপুরের চরভৈরবী ইউনিয়নের এক প্রার্থী হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। হাইকোর্ট কমিশনকে অভিযোগ নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। কমিশন সেই আদেশ আমলে নেয়নি। এ জন্য হাইকোর্ট কমিশনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ তোলেন। এ ঘটনায় সিইসি ও চার কমিশনার গত ২৬ নভেম্বর আদালতে গিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। উপজেলা নির্বাচনের পর বিরোধী দলসহ সমালোচকদের অনেকে বর্তমান কমিশনকে ‘মেরুদণ্ডহীন’ বলে আখ্যায়িত করেছিল। এ বিষয়ে নিজেদের ব্যাখ্যা তুলে ধরতে গিয়ে কমিশনার জাবেদ আলী টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে কোমর দুলিয়ে বলেছিলেন, ‘মেরুদণ্ড তো ঠিকই আছে।’ বিদায়ী কমিশন সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সময় লাগে,
কিন্তু ভাঙতে সময় লাগে না। দুই দশকে অন্য কমিশন যা অর্জন করেছে, বর্তমান কমিশন তা বিসর্জন দিয়েছে। নতুন কমিশন আগের অবস্থানে ফিরে যেতে চাইলে তাকে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। এদিকে নির্বাচন-ব্যবস্থা ধ্বংস করার অভিযোগ সম্পর্কে বিদায়ী সিইসি গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন-ব্যবস্থাকে দুর্বল অবস্থায় নিয়ে যাইনি। দেশে কথায় কথায় মারামারি বেড়ে গেছে। এটা একধরনের সামাজিক অবক্ষয়।’ দেড় শতাধিক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার বিষয়টি আইনেই আছে। মাঠ ছেড়ে দিলে তো প্রতিপক্ষ গোল দেবেই। এটা রাজনীতির খেলা। কমিশন সচিবালয় সূত্র জানায়, নতুন কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেবে। নিয়োগ পাওয়া পাঁচজন হলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী, কবিতা খানম ও মো. রফিকুল ইসলাম। তাঁদের শপথ নেওয়ার আগ পর্যন্ত কমিশনার শাহনেওয়াজ একা দায়িত্ব পালন করবেন।
No comments