দেশি সুবাসের বাজার বাড়ছে by রাজীব আহমেদ
শীতাতপনিয়ন্ত্রণ
যন্ত্রের (এসি) কারণে ঘরে এখন আর বাইরের হাওয়া প্রবেশের সুযোগ নেই। একই
অবস্থা গাড়িরও। এসির বাতাসবদ্ধ ঘর অথবা গাড়িতে গুমোট ভাব তৈরি, আর তা দূর
করতে ব্যবহার বাড়ছে এয়ার ফ্রেশনারের। সঙ্গে বড় হচ্ছে পণ্যটির বাজার।
ব্যবসায়ীদের হিসাবে, দেশে বছরে ৪০ লাখ ইউনিট এয়ার ফ্রেশনার বিক্রি হচ্ছে।
যার প্রায় ৭০ শতাংশের জোগান দিচ্ছে দুটি দেশীয় কোম্পানি—এসিআই ও স্কয়ার।
কোম্পানি দুটি জানিয়েছে, পণ্যটির বাজার বছরে ২৫ শতাংশ হারে বড় হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশে এয়ার ফ্রেশনারের ব্যবহার বাড়তে থাকে এক দশক
আগে থেকে। তখন প্যারিস, ডেইলি ফ্রেশসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এয়ার ফ্রেশনার
আমদানি করে চাহিদা মেটানো হতো। দেশে পণ্যটি প্রথমে উৎপাদন শুরু করে এসিআই।
এরপর বাজারে আসে স্কয়ার। বর্তমানে ওই দুটি কোম্পানির উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ৫০
লাখ ইউনিট। কোম্পানিগুলো এখন সাধারণ এয়ার ফ্রেশনারের পাশাপাশি রান্নাঘর,
আলমারি, শৌচাগারে ব্যবহার উপযোগী এয়ার ফ্রেশনার উৎপাদনে ঝুঁকছে। স্কয়ার
টয়লেট্রিজের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মালিক মোহাম্মদ সাঈদ প্রথম আলোকে বলেন,
তিনটি কারণে দেশি এয়ার ফ্রেশনারের ব্যবহার বাড়ছে। প্রথমত, খুচরা
বিক্রেতারা দেশীয় ব্র্যান্ডকে গ্রহণ করেছে। দ্বিতীয়ত, ক্রেতাদের অভ্যাস
পরিবর্তন হয়েছে। তৃতীয়ত, এসির ব্যবহার বেড়েছে। তিনি বলেন, ‘এসি ব্যবহার
করলে বদ গন্ধ দূর করতে এয়ার ফ্রেশনার প্রয়োজন হয়।’ এসিআইয়ের এয়ার
ফ্রেশনারের ব্র্যান্ড নাম অ্যানজেলিক। স্কয়ার বিক্রি করে স্প্রিং ব্র্যান্ড
নামে। রাজধানীর বিভিন্ন দোকানে এ দুটি এয়ার ফ্রেশনার ২১০ টাকা দরে বিক্রি
হচ্ছে। তবে ১৭০ থেকে শুরু করে ২০০ টাকা দরে বিভিন্ন বিদেশি ব্র্যান্ডের
এয়ার ফ্রেশনারও বিক্রি হতে দেখা যায়। মালিক মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, বিভিন্ন
দেশ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এয়ার ফ্রেশনার আমদানি হচ্ছে। খুচরা
ব্যবসায়ীদের বেশি লাভ দিয়ে এসব এয়ার ফ্রেশনার বিক্রি করা হয়। তবে দেশীয়
কোম্পানিগুলো সরবরাহ ও স্থিতিশীল দাম নিশ্চিত করায় খুচরা ব্যবসায়ীরা দেশীয়
পণ্য বিক্রি করছেন। জানা গেছে, এসিআই ও স্কয়ার তাদের মশা তাড়ানোর ওষুধ ও
সুগন্ধি তৈরির কারখানায় এয়ার ফ্রেশনার উৎপাদন করে। রাসায়নিক আমদানি করে
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে। মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে ক্যান আমদানি করে।
এসিআই সম্প্রতি বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের (বিটিসি) কাছে ক্যান আমদানিতে
শুল্ক ছাড়ের আবেদন জানিয়েছে। ওই আবেদনের ওপর গত ১৮ এপ্রিল ট্যারিফ কমিশনে
অনুষ্ঠিত এক সভার কার্যপত্রে বলা হয়, দেশে চীন, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, আরব
আমিরাত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও তুরস্ক থেকে বছরে ১৬ লাখ ইউনিট এয়ার
ফ্রেশনার আমদানি হয়। চীন থেকে আমদানি করা একটি এয়ার ফ্রেশনারের (৩৩০ মি.
লি.) দাম পড়ে গড়ে ২২ টাকা। এর ওপর প্রায় ৯১ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর দাম
দাঁড়ায় ৪৫ টাকা। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করলে উৎপাদন খরচ, করসহ দাম দাঁড়ায়
প্রায় ৯০ টাকা। মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, ‘কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশ
থেকে আমদানিতে কম মূল্য দেখানো হয় (আন্ডার ইনভয়েসিং)। এটা ঠেকানো কঠিন। এ
জন্য আমরা চাই ক্যান আমদানিতে শুল্ক কমানো হোক। এটা হলে দেশীয় কোম্পানির
সক্ষমতা বাড়বে।’ ক্যান আমদানিতে এখন মোট করভার প্রায় ৬০ শতাংশ। এর মধ্যে ২৫
শতাংশ আমদানি শুল্ক। ১৮ এপ্রিল ট্যারিফ কমিশনে বৈঠক শেষে এসিআইয়ের
কনজ্যুমার ব্র্যান্ড বিভাগের বিজনেস ম্যানেজার এম হোসেইন ইরাজ বলেন, দেশের
কোনো কোম্পানি এখনো এয়ার ফ্রেশনারের ক্যান তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেনি। এ
জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
No comments