এই তাহলে বার্সার আসল সমস্যা?
লুইস
এনরিকে এখন হয়তো মনে মনে আন্তর্জাতিক বিরতিটাকে শাপ-শাপান্ত করছেন। বিরতি
কাটিয়ে খেলোয়াড়েরা সুস্থভাবে ফিরে তো এসেছেন, কিন্তু পেছনে রেখে এসেছেন
ফর্মটা। মেসি-নেইমার-সুয়ারেজে ভর করে অন্য গ্রহের ফুটবলের আমেজ নিতে থাকা
বার্সেলোনাও এখন ভূপাতিত। চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে অ্যাটলেটিকো
মাদ্রিদের কাছে হেরে ট্রেবলের আশা তো শেষই, কদিন আগেও প্রায় ‘নিশ্চিত’ লিগ
সম্ভাবনা নিয়েও এখন আর জোর কণ্ঠে বলতে পারছে না বার্সা। এক ম্যাচেই পা
ফসকালেই যে শেষ হয়ে যেতে পারে স্প্যানিশ লিগের স্বপ্নও। কিন্তু এমন হওয়ার
কারণ কী? বার্সেলোনা সমর্থকদের চোখে সমস্যাটা মূল একাদশের বাইরে বেঞ্চ
শক্তিশালী না হওয়া, কেউ তুলে আনছেন টানা ৩৯ জয়ে পাওয়া আত্মবিশ্বাস একটু
বেশিই ভেসে যাওয়ার সম্ভাবনা, আবার কেউ কেউ বলছেন এনরিকের কৌশলগত ভুলগুলোর
কথা। কিন্তু স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের চোখে কারণটা ভিন্ন—ক্লান্তি।
পরিসংখ্যানও ক্লান্তির পক্ষেই জোর সমর্থন দিচ্ছে। এই মৌসুমে বার্সা মোট
ম্যাচ খেলেছে ৫৬টি, যা অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের চেয়ে ৭টি বেশি, রিয়াল
মাদ্রিদের চেয়ে বেশি ১২টি। বলতে গেলে গত মৌসুমের সাফল্যই বার্সার এই
মৌসুমের শেষ দিকে এভাবে বেপথু হওয়ার কারণ। ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ, ইউরোপিয়ান
সুপার কাপ, স্প্যানিশ সুপার কাপ—এই ম্যাচগুলো তো বার্সাকে এবার বেশি খেলতে
হয়েছেই, সঙ্গে যোগ হয়েছে দূরদুরান্ত ভ্রমণ। বার্সার মূল তিন ভরসাসহ রক্ষণের
আসল সেনানী হাভিয়ের মাসচেরানো দক্ষিণ আমেরিকায় বাছাইপর্ব খেলতে
গিয়েছিলেন। ইউরোপ টু দক্ষিণ আমেরিকা তো আছেই, এর আগে ইউরোপ টু এশিয়াও
ঘুরতে হয়েছে ক্লাব বিশ্বকাপ খেলতে। বার্সার কথা বললে পুরো দলের পাশাপাশি
লিওনেল মেসি, লুইস সুয়ারেজ, নেইমারের কথা বলাটাও ‘নিয়ম’। বার্সার জয়রথ
ছোটার সময়টাতে ‘এমএসএন’কে নিয়ে অনেক প্রশস্তিগাথা লেখা হয়েছে। এখন বিরূপ
সময়ে স্বাভাবিকভাবেই সমালোচনার আঙুলও তাঁদের দিকেই বেশি যাচ্ছে। বার্সার
পুরো দলের ক্লান্তি বোঝাতে স্প্যানিশ সংবাদপত্রগুলোও ‘উদাহরণ’ হিসেবে এই
ত্রয়ীর ম্যাচের হিসেবও তুলে এনেছে। ক্লান্তিটা সবচেয়ে বেশি সুয়ারেজেরই
হওয়ার কথা, এরই মধ্যে ৪৭টি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার। দুই
মাস চোটে থাকার পরও মেসি ম্যাচ খেলেছেন নেইমারের সমান—৪৩টি। বার্সা কোচ
এনরিকে যদিও ক্লান্তি, অবসন্নতার ব্যাপারগুলো স্বীকার করেন না। সর্বশেষ
ম্যাচে ভ্যালেন্সিয়ার সঙ্গে হারের পর ‘বার্সা খেলোয়াড়েরা ক্লান্ত কি না’
সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নগুলো পাশ কাটিয়ে গেছেন এনরিকে। তবে এনরিকে স্বীকার
করুন আর না করুন, পরিসংখ্যান হয়তো স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের দাবিকেই সমর্থন
দিচ্ছে। আর এটিই যদি বার্সার এমন হঠাৎ ধসের কারণ হয়, তবে আপাতত মৌসুম শেষ
হওয়া পর্যন্ত মেসি-নেইমারদের জন্য ভরসা হতে পারে রবীন্দ্রসংগীত—ক্লান্তি
আমায় ক্ষমা করো প্রভু!
No comments