নতুনরূপে মোগলি আশিষ আচার্য্
বাপ-মা-হারা
মানবশিশু মোগলি। গহিন অরণ্যে এক নেকড়ে পরিবারে তার ঠাঁই। সেখানে প্রকৃতির
কোলেই লালিত হয় ছেলেটি। তবে একসময় বুঝতে পারে, জঙ্গলটা তার জন্য আর অনুকূল
নয়। ভয়ংকর বাঘ শেরে খান যাকে হুমকি মনে করবে, শেষ করে দেবে। মনে তার বেজায়
ক্ষোভ। কারণ, গায়ে সে বয়ে বেড়ায় মানুষের আঘাতের ক্ষতচিহ্ন। অগত্যা মোগলিকে
পথ দেখতে হয়। কিন্তু সে কি এত সহজে ছেড়ে দেবে নিজের একমাত্র আবাস? শুরু হয়
মোগলির আত্ম-অনুসন্ধানের এক মনোমুগ্ধকর অভিযাত্রা। এতে দিকনির্দেশনা দেয়
বাঘিরা নামের চিতা এবং মুক্ত আত্মার অধিকারী ভালুক বালু। এ যাত্রায় মোগলির
দেখা হয় বুনো প্রাণিকুলের অনেকের সঙ্গে। তাদের মধ্যে যেমন আছে সম্মোহনী
কণ্ঠের অধিকারী অজগর কা, তেমনি রয়েছে কিং লুই। তারা মোগলিকে আটকানোর চেষ্টা
করে যেন সে ছলনাময়ী রক্ত পুষ্পকে (আগুন) ‘গোপন কথা’ বলে না দেয়। কাহিনি
এগোয় এভাবেই। ইংরেজ সাহিত্যিক রুডিয়ার্ড কিপলিংয়ের এই গল্প নিয়ে ১৯৬৭ সালে
প্রথম ছবি বানিয়েছিল ডিজনি। তারাই এবার নতুনরূপে নিয়ে এসেছে দ্য জঙ্গল বুক।
এবারের ছবিতে ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) প্রযুক্তির পাশাপাশি যোগ হয়েছে
কম্পিউটারনির্ভর নানা কল্পচিত্র, ব্যতিক্রমী সংগীত ও অন্যান্য উপাদান।
পর্দায় একমাত্র মানব চরিত্র হিসেবে মোগলিকেই দেখা যাবে, বাকি সব পশুপাখি।
এগুলো বানানো হয়েছে জটিল ডিজিটাল ইফেক্টের সাহায্যে, যার সঙ্গে লাইফ অব
পাই ছবির মিল অনেক। পরিচালক আয়রন ম্যান ও অ্যাভেঞ্জারস ছবির জন ফাভ্রুর
আশা, হলিউডের ইতিহাসে মাইলফলক হবে সর্বকালের অন্যতম জনপ্রিয় এই অ্যানিমেটেড
চলচ্চিত্র। প্রধান চরিত্র মোগলির সঙ্গে ছবিতে রয়েছে জংলি অনেক
জন্তু-জানোয়ার। তারাও এ ছবির চরিত্র। তবে এসব প্রাণীর কণ্ঠ দিয়েছেন হলিউডের
নামী তারকা স্কারলেট জোহানসন, বিল মুর, বেন কিংসলে, ক্রিস্টোফার ওয়াকেন,
ইদ্রিস এলবা, লুপিতা নিয়োঙ্গো প্রমুখ। মোগলির চরিত্রে অভিনয় করেছে নবাগত
শিশুশিল্পী নিল শেঠি। ত্রিমাত্রিক বা থ্রিডি প্রযুক্তির চলচ্চিত্র দ্য
জঙ্গল বুক মুক্তি পেয়েছে ১৫ এপ্রিল। ফাভ্রু মনে করেন, ১৯৬৭ সালের ছবিতে
নারী চরিত্রের বড্ড ঘাটতি ছিল। এবার ছবিতে তাই স্ত্রী প্রাণীগুলোকে
প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। আর মোগলি চরিত্রের জন্য তিনি প্রায় দুই হাজার
শিশুর অডিশন নিয়েছেন। তারপর বেছে নেন নিল শেঠিকে। এখানে যেনতেন বালক দিয়ে
তো আর কাজ চলে না! অরণ্যের আঙুরলতায় ঝুলে ঝুলে ক্ষিপ্রগতিতে মোগলিকে ছুটতে
হয় আত্মরক্ষার জন্য। শারীরিক ব্যায়াম আর কসরতেও পটু হওয়া চাই তার। নিল
অবশ্য এসব পরীক্ষায় উতরে গেছে। কেন পারবে না, তায়কোয়ান্দোতে ব্ল্যাক বেল্ট
আছে যে তার। খুদে শিল্পীর ভাষ্য, ‘আগে কখনো ভাবিনি অভিনয় করব। নাচের
শিক্ষকই খবরটা আমাকে দিয়েছিলেন। তারপর লস অ্যাঞ্জেলেসে গিয়ে অডিশন দিলাম।
ব্যস, হয়ে গেল।’ অ্যানিমেশনকে আরও জীবন্ত রূপ দেওয়ার প্রচেষ্টায় ডিজনির
সাফল্যের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। বক্স অফিসে ইতিমধ্যে ভালো করেছে
প্রতিষ্ঠানটির ব্যানারে নির্মিত ম্যালেফিসেন্ট, সিন্ডারেলা এবং অ্যালিস ইন
ওয়ান্ডারল্যান্ড। দ্য জঙ্গল বুক হয়তো সেগুলোকেও ছাড়িয়ে যাবে। পরিচালক
ফাভ্রু বলেন, তিনি ছবিটি এমনভাবে বানিয়েছেন যাতে সারা বিশ্বের শিশুদের
পাশাপাশি সব বয়সের, সব রকমের দর্শকেরই সেটা পছন্দ হয়। তবে এবারের ছবিতে
মোগলির লড়াইকে আগের চেয়ে অনেক বেশি জীবন্ত রূপ দেওয়া হয়েছে।
No comments