চিরকুটের সফল সফর
জোহান অ্যালকোভার ও লাতিন ব্যান্ড টোয়েন্টি ফোর আওয়ারসের সদস্যদের সঙ্গে চিরকুট |
বাংলাদেশের
চিরকুট মুগ্ধ করেছে অসংখ্য শ্রোতাকে।’ সাউথ বাই সাউথওয়েস্ট
(এসএক্সএসডব্লিউ) উৎসব নিয়ে ১৮ মার্চ ভয়েস অব আমেরিকার অনলাইন সংস্করণে
একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। চিরকুটের পরিবেশনা নিয়ে এই মন্তব্য করা হয়েছে
তাতে। একই দিনে দ্য অস্টিন ক্রনিকলসের অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে,
‘চিরকুটের পরিবেশনায় বাংলাদেশের লোকসুর সহজেই পৌঁছে গেছে পাশ্চাত্যের
শ্রোতাদের কাছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের অস্টিন শহরে সাউথ বাই
সাউথওয়েস্ট (এসএক্সএসডব্লিউ) উৎসবে এবার চিরকুটকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
মার্চ মাসে এই উৎসবে অস্টিন কনভেনশন সেন্টারের ইন্টারন্যাশনাল ডে স্টেজে
এবং রাশান হাউসের দুটি কনসার্টে গান করেছে চিরকুট। চিরকুটের অন্যতম সদস্য
সুমী বলেন, ‘সাউথ বাই সাউথওয়েস্ট উৎসবে এবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২ হাজার
১০০ ব্যান্ড ও শিল্পী অংশ নিয়েছেন। তাঁদের মধ্য থেকে চিরকুটকে নিয়ে ভয়েস
অব আমেরিকা ও দ্য অস্টিন ক্রনিকলসের প্রতিবেদনের মন্তব্যগুলো আমাদের জন্য
উল্লেখযোগ্য ঘটনা।’দারুণ একটা সময় কাটাচ্ছেন চিরকুটের সদস্যরা।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরেছেন ১২ এপ্রিল। দেশে ফিরেই আবার উৎসবের আমন্ত্রণ।
এবার কানাডা আর অস্ট্রেলিয়ায়। দুটিই আন্তর্জাতিক সংগীত উৎসব। কিন্তু সুমী
জানালেন, কানাডার উৎসব হবে জুন মাসে আর অস্ট্রেলিয়ায় সেপ্টেম্বর মাসে।
অস্ট্রেলিয়ার উৎসব নিয়ে ভাববার সময় আছে, কিন্তু কানাডার উৎসবে অংশ নেওয়া
হয়তো সম্ভব নাও হতে পারে। দেশে ফিরেই চিরকুটের সদস্যরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন
নিজেদের কাজ নিয়ে। সুমী চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। ইমন আছেন গিটারের শিক্ষকতা
নিয়ে। পাশাপাশি আছে স্টুডিওর ব্যস্ততা। স্টুডিও নিয়ে ব্যস্ত পাভেলও। আর দিন
শেষে ব্যান্ডের অন্য সদস্য পিন্টু আর দিদারসহ সুমী, পাভেল ও ইমন ব্যস্ত
থাকেন নতুন গান নিয়ে। কথা হলো এরই ফাঁকে। এবার নতুন অ্যালবাম তৈরির পালা।
ঈদের আগেই নতুন অ্যালবাম শ্রোতাদের হাতে তুলে দিতে চান চিরকুটের সদস্যরা।
অ্যালবামের নাম? সুমী বললেন, ‘একবার তো ভেবেছিলাম লালে লাল। এখন ভাবছি
অন্য কিছু হলে আরও ভালো হবে। ভাবছি।’ এবারের সফর থেকে চিরকুটের বড় অর্জন
কী? সুমী বললেন, ‘অবশ্যই লাতিন গ্র্যামি, লাতিন বিলবোর্ড আর বিএমআইজয়ী
প্রযোজক জোহান অ্যালকোভার ও তাঁর দলের সঙ্গে একটি গান করা।’ প্রস্তাব
পাওয়ার পর চিরকুটের সদস্যরা ভেবেছিলেন, জোহান অ্যালকোভার ও তাঁর দলের
সঙ্গে নিজেদের জনপ্রিয় কোনো গান করবেন। জোহান অ্যালকোভার লাতিন সংগীতের
জনপ্রিয় ‘বাচাটা’ ধারার গান করেন। বাচাটা ধারার সঙ্গে বাংলাদেশি সুরের
এবার এক মেলবন্ধন তৈরি হবে। কিন্তু প্রথম দিন শেষে জানা গেল, বাচাটা ধারার
সঙ্গে বাংলাদেশি লোকসুরের মেলবন্ধন সহজ কাজ নয়। তাই পরদিন সকালে স্টুডিওতে
গিয়েই নতুন একটি গান লেখেন চিরকুটের সদস্যরা। গানটির স্থায়ী অংশ হলো ‘ওরে
মেঘ ডাকিস না/ ও হাওয়া বহিস না/ ওরে ও ঝরাপাতা/ কেন মন বুঝিস না’। লেখার
পাশাপাশি সুর দেওয়া হলো। অল্প সময়েই তৈরি হলো গানটি। সব দেখে খুশি
গানটির প্রযোজক জোহান অ্যালকোভার। বাংলায় গানটির কয়েকটি লাইন গেয়েছে
লাতিন ব্যান্ড টোয়েন্টি ফোর আওয়ারস। আর লাতিন ভাষায় গেয়েছেন চিরকুটের
সদস্যরা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ব্রনক্সের উই লাউড স্টুডিওতে রেকর্ড করা
হয় গানটি। মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের রেকর্ড লেবেল ইউন্ডার মিউজিক। গানটি যে এই
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগেই তৈরি হয়েছে। গানটি শিগগিরই
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন জনপ্রিয় মিউজিক প্ল্যাটফর্মে রিলিজ করবে
ইউন্ডার মিউজিক। এসব প্ল্যাটফর্ম থেকে গানটি ডাউনলোড করা যাবে। তার আগে
গানটির মিউজিক ভিডিও তৈরি করতে হবে। ইউন্ডার মিউজিকই সব ব্যবস্থা করেছে।
সুমী বললেন, ‘পরদিন সকালে আমাদের দেশে ফেরার ফ্লাইট। কী আর করা, ১০ এপ্রিল
সকাল থেকেই উই লাউড স্টুডিওতে মিউজিক ভিডিওর শুটিং করেছি। তবে শুটিং শেষে
আমরা জনপ্রিয় রক ব্যান্ড পিংক ফ্লয়েডের সদস্য ডেভিড গিলমোরের কনসার্ট
দেখার সুযোগ পেয়ে যাই। রেডিও সিটি মিউজিক হলে ছিল এই কনসার্ট। ইমন আর
পাভেল যে কী খুশি হয়েছে, তা বলে বোঝানো যাবে না।’ সেই মুগ্ধতার রেশ এখনো
কাটেনি ইমন, পাভেল আর সুমীর। ইমন বললেন, ‘গুরু কী বাজাইল!’
No comments