বাংলাদেশে রাজনীতি বেশি, উন্নয়ন কম -মানবজমিনকে মাহাথির মোহাম্মদ by ড. সিরাজুল আই. ভূঁইয়া
মাহাথির মোহাম্মদ
মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তাকে বলা হয় আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার।
পূর্ব-এশিয়ায় অন্যতম শিল্পসমৃদ্ধ দেশ হিসেবে মালয়েশিয়ার আজকের অবস্থানের
পেছনে অনেকখানি কৃতিত্ব দেয়া হয় তাকে। এছাড়া রাজধানী কুয়ালালামপুরকে আধুনিক
শহরে পরিণত করাটাও তার অবদান। ‘মালয়েশিয়া পারে’ স্লোগানটি ১৯৯৩ সালে
প্রবর্তন করেছিলেন তিনি। ২০২০ সালের মধ্যে তিনি মালয়েশিয়াকে উন্নত দেশে
পরিণত করতে ভিশন-২০২০ প্রণয়ন করেছিলেন।
বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প ও উচ্চপ্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে মালয়েশিয়ায় ব্যাপক অর্থ ব্যয় করেছিলেন মাহাথির। কিন্তু সে সময় অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভুগছিল তার দেশ। নিজেকে ‘সাইবারে আসক্ত’ বলেও একবার দাবি করেছিলেন তিনি। বিশ্বের গুটিকয়েক বিশ্বনেতা, যারা নিজের ওয়েবসাইট ও ব্লগ পরিচালনা করেন, তাদের মধ্যে তিনি একজন। চিকিৎসা পেশা থেকে রাজনীতিতে প্রবেশ করা মাহাথির ১৯৮১ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার দল ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের নেতৃত্বাধীন জোট এখনও মালয়েশিয়ার ক্ষমতায়।
সম্প্রতি দৈনিক মানবজমিন এবং বাংলাদেশ ও কুয়েতের দু’টি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মাহাথির মোহাম্মদ বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, সন্ত্রাসবাদ, বাণিজ্য, পূর্ব এশিয়া, চীন-আমেরিকাসহ বহু প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন। সাক্ষাৎকারের সংক্ষেপিত অংশ এখানে তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের মানুষ একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, সৎ ও কার্যকর নেতার কথা চিন্তা করলেই আপনার কথা বলে, আপনার নেতৃত্বগুণের কথা বলে। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতি খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। দেশের উন্নয়নেও এটি প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী? এ রাজনৈতিক সমস্যা থেকে দেশটির উত্তরণের উপায় কী?
উত্তর: আমি সাধারণত আমাদের প্রতিবেশী দেশ বা বাংলাদেশের মতো বন্ধুভাবাপন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করি না। কিন্তু আমি দেখছি, বাংলাদেশে রাজনীতি বেশি, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের দিকে মনোযোগ কম। একই সময়ে, অবশ্যই, আপনি যদি রাজনীতি এবং দেশ কারা শাসন করছে, তা নিয়ে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন, তবে অর্থনীতি ভুগবে। আমি মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকবেই। কিন্তু সেসব সরিয়ে রেখে, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত দেশের উন্নয়ন ও বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে একযোগে কাজ করা। আমি মনে করি, আপনি যদি বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করেন, তবে বাংলাদেশে প্রচুর বিদেশী বিনিয়োগ আসবে। দেশের আপামর জনতার জীবনমানে অগ্রগতি হবে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। যেমন, গার্মেন্ট শিল্প। ওষুধ শিল্প ও অন্যান্য খাতেও দেশটি ভালো করছে। বাংলাদেশের মানুষ খুব উদ্যোগীও। তাদের দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ভালো নীতিমালা। কিন্তু তারা তা পাচ্ছে না। এ অবস্থা নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
উত্তর: বাংলাদেশে উন্নয়নের চেয়ে রাজনীতি বেশি। আপনি যদি দেশের অর্থনীতির কথা ভাবেন, দৃষ্টি দেন ও অর্থনৈতিক নীতির কথা বলেন, তবে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির একটি।
প্রশ্ন: মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাই। আপনার কাছে মূল চ্যালেঞ্জগুলো কী কী মনে হয়?
উত্তর: আপনি যদি মধ্যপ্রাচ্যের সামপ্রতিক ইতিহাস দেখেন, তবে দেখবেন, যা আজ ঘটছে, তা হলো ৬০ বছর আগে ফিলিস্তিনি ভূমি দখল করে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তের ফল। ফিলিস্তিনিরা প্রচলিত কায়দায় লড়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু ইসরাইলিদের কাছে হেরেছে। কিন্তু এখন তাদের অন্য উপায়ে লড়তে হবে, যাকে ইসরাইল সন্ত্রাসবাদ বলছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বিস্তার করাটাও ইসরাইলি সন্ত্রাসবাদের মধ্যে পড়ে। ইসরাইলিদের সঙ্গে অব্যাহত লড়াইয়ের মাধ্যমে কিছুই অর্জন হয়নি ফিলিস্তিনিদের। তাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়া হচ্ছে। তারা এখন ক্ষুদ্ধ। এ সবই পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের মধ্যে বিভক্তি এনেছে। অনেকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো গণতান্ত্রিক হলেই, সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু গণতন্ত্রের কার্যাবলী তারা বুঝতে পারে না। গণতন্ত্র এলে সরকার গঠিত হবে, নির্বাচন হবে, কিছু মানুষ সরকার বানাবে, কেউ বিরোধী দলে থাকবে। কিন্তু বিরোধীরা পরাজিত হতে চাইবে না, সবাই জিততে চাইবে। এসবের কারণে গণতন্ত্র এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও সুশাসন আনেনি।
প্রশ্ন: আইএস’র দ্বারা সৃষ্ট সঙ্কটের দিকে পশ্চিমা নীতির ভূমিকা আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
উত্তর: পশ্চিমারা চায় ক্ষমতার পরিবর্তন। তারা চায় মুসলিম দেশগুলোর সরকার চালাবে তাদের বেছে নেয়া মানুষরা। ক্ষমতা পরিবর্তন করতে গিয়ে, দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেয়া হয়। আমি সাধারণ অর্থে মনে করি, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতার পেছনে পশ্চিমাদের ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না। তারা নিজেরাই মাঝে মধ্যে অস্থিতিশীলতা নিয়ে এসেছে, কিছু সময় নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে তারা সমর্থন দিয়েছে, সরকারের ভূমিকাকে খর্ব করেছে, প্রোপাগান্ডা যুদ্ধ চালিয়েছে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যে অস্থিতিশীলতা আপনি দেখছেন, এর পেছনে পশ্চিমারা অনেক বেশি জড়িত।
প্রশ্ন: সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে শীতল-যুদ্ধের মতো চলমান উত্তেজনার এবং সৌদি আরবের নেতৃত্বে ৩৪ দেশের সন্ত্রাসবিরোধী জোটের বিষয়ে আপনার মতামত কী?
উত্তর: আমরা মনে করি না, দ্বন্দ্ব কোনো সমস্যার সমাধান করবে। যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান নয়। মালয়েশিয়ার স্বাধীনতার প্রথমদিকে, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বা বিরোধের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। হ্যাঁ, তারা প্রথমে শক্তি খাটিয়েছে। কিন্তু দিনশেষে কূটনৈতিক সমাধান ও সংলাপের মাধ্যমে সমস্যাটির আমরা সমাধান করেছি। কোনো দেশকে আমাদের শত্রু ভাবা উচিত নয়। যদি ভাবি, তারাও আমাদের শত্রু ভাববে। তারপর আপনাদের মুখোমুখি হতে হবে। এটি অত্যন্ত নেতিবাচক। দেশে দেশে মতপার্থক্য থাকবেই, তবে কূটনৈতিক উপায় ও সংলাপের মাধ্যমে মতপার্থক্য নিরসন বা হ্রাস করা সম্ভব।
প্রশ্ন: আইএস’র কারণে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ বাধার বিষয়ে চিন্তিত অনেক পশ্চিমা নেতা। এ ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কী?
উত্তর: পশ্চিমারা অবশ্যই আইএস’র বিরুদ্ধে। কিন্তু আইএস তাদেরই সৃষ্টি। অনেকেই প্রেসিডেন্ট আসাদকে (সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট) উৎখাত করতে চায়। পশ্চিমারা ওই মানুষগুলোকে অস্ত্র, অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এরাই পরে আইএস হয়েছে। তাদের এখন নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে। তারা আসাদের বিরুদ্ধেও লড়ছে, আবার পশ্চিমাদেরও ওই এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিতে চায়। তাদের আবার অনেকে সমর্থনও দিচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে, মুসলিমরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়ছে। এক হিসাবে, পশ্চিমা বা ইসরাইলের বিরুদ্ধে কেউ লড়ছে না। লড়ছে একে-অপরের বিরুদ্ধে। এর ফলে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম। অনেকে আইএস’কে সমর্থন দিচ্ছে। ফলে যুদ্ধটা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। মালয়েশিয়ায় আগে এ নিয়ে কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু এখন অনেকে আইএস-এ যোগ দিতে দেশ ছাড়ছে। মূলত, এটা পুরো বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। সবাই এখন আক্রান্ত, কারণ কেউই নিরাপদ বোধ করছে না। আমি মনে করি, এ সব কিছুই ঘটছে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কারণে।
প্রশ্ন: অনেক মানুষই মনে করেন, সমপ্রতি সাবেক বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও স্বীকার করেছেন যে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের নেতৃত্বে ইরাক যুদ্ধই আইএস সৃষ্টির কারণ। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
উত্তর: তিনি (ব্লেয়ার) ছিলেন প্রেসিডেন্ট বুশের অন্যতম বড় সমর্থক। তিনিই বৃটিশ পার্লামেন্টে বলেছিলেন যে, ৪৫ মিনিটের মধ্যে লন্ডন আক্রমণ করতে পারবে ইরাক, কারণ ইরাকের কাছে বিপুল পরিমাণ গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে। এটি ছিল মিথ্যা। তিনি পার্লামেন্ট ও বৃটিশ জনগণকে মিথ্যা বলেছেন। এখন তিনি উপলব্ধি করছেন যে, তার মিথ্যাই আইএস সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে। টনি ব্লেয়ার নিন্দনীয়; প্রেসিডেন্ট বুশ যা করেছেন, তার অন্যতম কট্টর সমর্থক ছিলেন তিনি।
প্রশ্ন: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ে এশিয়ার, নির্দিষ্ট করে মালয়েশিয়ার ভূমিকা আপনি কীভাবে দেখেন?
উত্তর: আমরা চাই মানুষ সন্ত্রাসবাদের মূল কারণ বুঝুক। সব কিছুরই কারণ থাকে। মানুষ কাউকে এমনি এমনি আতঙ্কগ্রস্থ করে না। মানুষ অন্য কাউকে সন্ত্রস্ত করে মজা পায় না। সব মুসলিম দেশ দুর্বল। তারা পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে লড়তে চায় না। কারণ, তারা জানে তারা জিতবে না। ফলে মুসলিম ব্যক্তি ও গোষ্ঠীবিশেষ পদক্ষেপ নেয়। এসব অবশ্যই প্রথা মেনে হয় না। এসব অপ্রথাসিদ্ধ আচরণই পশ্চিমাদের দ্বারা সন্ত্রাসবাদ হিসেবে সংজ্ঞায়িত হয়। পশ্চিমাদের প্রোপাগান্ডায় বলা হয়, মুসলিমদের অপ্রথাসিদ্ধ আচরণ সন্ত্রাসবাদ। অপপ্রচারে এসবও বলা হয়, পশ্চিমারা যে বোমা পাঠাচ্ছে, মানুষের ওপর বোমা ফেলছে, অন্য দেশ দখল করছে, এসব সন্ত্রাসবাদ নয়! কিন্তু আসলে, এগুলোও সন্ত্রাসবাদের অংশ।
প্রশ্ন: উপসাগরীয় দেশসমূহ ক্রমেই বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পূর্বের দিকে ঝুঁকছে। পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে উপসাগরীয় দেশগুলোর সমপর্ক আপনি কীভাবে দেখছেন?
উত্তর: উপসাগরীয় দেশগুলো পশ্চিমের দিকে ঝুঁকে। আরব দেশগুলোর সমপর্ক পশ্চিমাদের সঙ্গেই বেশি। এসব দেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রচুর পশ্চিমা বিশেষজ্ঞ কাজ করেন। তারা (উপসাগরীয় দেশগুলো) আমাদের সঙ্গে বেশি ব্যবসা করে না। কারণ, এ দেশগুলো মূলত আমদানি-নির্ভর দেশ। রপ্তানির জন্য তারা পণ্য উৎপাদন করে না। এটা একতরফা ব্যবসা। কিন্তু পূর্ব এশিয়ায় আমরা পণ্য আমদানি ও রপ্তানি-উভয়ই করতে চাই। আমরা জিনিসপত্র কিনতে চাই, বিক্রি করতে চাই। কিন্তু আমরা যেসব রপ্তানি করতে চাই, তার অনেককিছুই পশ্চিম থেকে আমদানি করা যায়। ফলে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্য নামেমাত্র। কিন্তু আমি মনে করি, পূর্বের সঙ্গে বাণিজ্যে তাদের জন্য অনেক সম্ভাবনা লুকায়িত রয়েছে। এখন অনেক মানুষই পূর্বে ভ্রমণ করছে। কারণ, নিরাপত্তাজনিত কারণে তারা পশ্চিমে যেতে পারছে না।
প্রশ্ন: উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে মালয়েশিয়ার সমপর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
উত্তর: আমরা উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে শক্ত বাণিজ্যিক সমপর্কের প্রত্যাশা করি। আমরা একসঙ্গে অনেক কিছুই করতে পারি। মালয়েশিয়া একটি বাণিজপ্রবণ জাতি। আমাদের জন্য আরও বাজার তৈরি করতে চাই আমরা। একই সময়ে অন্য দেশগুলো থেকেও আমদানি করতে চাই। কিন্তু উপসাগরীয় দেশগুলো তেমন কিছুই উৎপাদন করে না। তারা এখন শিল্পায়ন করছে হয়তো। আমরা হয়তো পরে তাদের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে পারি, বিনিয়োগ বাড়াতে পারি।
প্রশ্ন: সমপ্রতি তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় উপসাগরীয় ও অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী দেশসমূহই কেবল আক্রান্ত হয়নি, গোটা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়েছে। এর কারণ সমপর্কে আপনার অভিমত কী? বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও তেল উৎপাদনকারী দেশসমূহের জন্য দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব কী হতে পারে?
উত্তর: তেলের দামের মূল্য নির্ধারণ সবসময়ই কৃত্রিমতায় ভরা ছিল। হ্যাঁ, এটি অবশ্যই চাহিদা ও যোগানের সঙ্গে তাল মিলিয়েই করা হয়। বর্তমানে তেল উৎপাদনের খরচের চেয়েও পড়ে গেছে তেলের দাম। এটা দীর্ঘমেয়াদি হবে না। যখনই তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, তখনই তেলের দাম পড়ে যাবে। বৈশ্বিক চাহিদার কারণে অনেক দেশ তেল থেকে বিপুল অর্থ লাভ করতো অতীতে। কিন্তু এখন তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় অনেক দেশ ভুগছে, আরও ভুগবে যদি দাম আরও পড়ে যায়। এটি স্রেফ সমন্বয়ের একটি বিষয়। মূলদামের চেয়ে বর্তমানের ব্যারেলপ্রতি ৩৫ ডলার দাম কিন্তু অনেক বেশি। তবে আগের চেয়ে এ দাম অনেক যুক্তিসম্মত। অবশ্যই, অনেক দেশ ভুগবে, কারণ তাদের উন্নয়ন বাজেট তেল বিক্রির ওপর নির্ভরশীল। তারা এখন টের পাচ্ছে। কোনো দেশেরই শুধু তেল বিক্রির ওপর নির্ভরশীল থাকা উচিত নয়। বরং, অর্থনীতিতে বৈচিত্র্যতা আনলে ভবিষ্যতের জন্য উন্নয়ন হবে টেকসই।
প্রশ্ন: মালয়েশিয়ার ওপেক নীতিমালা ও তাদের ভবিষ্যৎ গন্তব্য নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
উত্তর: যদিও মালয়েশিয়া তেল উৎপাদনকারী দেশ, তবে এটি কখনও ওপেকের সদস্য ছিল না। আমরা একসময় পর্যবেক্ষক ছিলাম। এটি অনেকটা মনোপলি বা একাধিপত্যবাদী সংগঠন, যা অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। তেলের দাম ঠিক করে দেয়াটা সবসময়ই খারাপ।
প্রশ্ন: উন্নত দেশে পরিণত হতে মালয়েশিয়াকে নেতৃত্ব দেয়ার বেলায় প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের নেতৃত্বগুণের ভূমিকা আপনি কীভাবে দেখেন?
উত্তর: মালয়েশিয়া আমার সময়ে ছিল বাড়বাড়ন্ত। আমার শাসনামলের বেশির ভাগ সময়েই ছিল। কিন্তু এখন বেঠিক ব্যবস্থাপনার কারণে দেশটি একেবারে আটকে গেছে। নজর এখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে নেই, রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার দিকে বেশির ভাগ নজর চলে গেছে। সব প্রধানমন্ত্রীই টিকে থাকতে চায়। তারা ভাবে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে মনোযোগ না দিয়ে, অন্য ইস্যু নিয়ে পড়ে থাকলেই তারা টিকে যাবে। এ কারণেই, অর্থনীতির গতি ধীর হয়ে গেছে। জাতিগত উত্তেজনা, বাজে প্রশাসন, দুর্নীতি, ইত্যাদি থাকলে অর্থনীতি ডুবে যায়। ফলে আমরা ভিশন-২০২০ অর্জন করে পূর্ণ উন্নত দেশে পরিণত হতে পারবো না। এখন পারবো না। মুদ্রার মান পড়ে গেছে, শেয়ারবাজার বাজে অবস্থায়। মানুষও খুশি নয়।
প্রশ্ন: মালয়েশিয়া সরকারের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল বিলের কড়া সমালোচনা করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন এক কাউন্সিলকে ব্যাপক ক্ষমতা দেয়ার কথা বলা হয়েছে ওই বিলে। আপনার অভিমত কী?
উত্তর: মালয়েশিয়া সরকারের এ বিলটি নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন পার্লামেন্টে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার অবশ্যই ভিত্তি আছে। এ বিলটি একটি মধ্যযুগীয় বিল। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি পরিষদ নিরাপত্তার অজুহাতে যে কাউকে বিচার ছাড়া আটক করতে পারবে। আদালতের শুনানিও হবে না। এটা এক ধরনের কর্তৃত্বপরায়ণ আইন। কাউকেই ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি এখানে। মালয়েশিয়ার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও মূল্যবোধের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
প্রশ্ন: দক্ষিণ চীন সাগরে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বিরোধ আপনি কীভাবে দেখেন? আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর বিভক্তিকরণে এটি কীভাবে ভূমিকা রাখবে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: আমার আশা, আমরা (আসিয়ানভুক্ত দেশসমূহ) একসঙ্গে থাকবো। আসিয়ান কিন্তু ইইউ’র (ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন) মতো নয়। আমরা নির্দিষ্ট কিছু ইস্যুতে কেবল একসঙ্গে আছি। আমাদের কোন প্রতিরক্ষা চুক্তি নেই, শুধু বাণিজ্য চুক্তি আছে। চীনকে মোকাবিলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে আমাদের উচিত বিষয়টির সুরাহা করা। তবে অনেক আসিয়ানভুক্ত দেশই বিপন্ন বোধ করছে। নিজেরা সমর্থ না হওয়ায়, চীনকে থামাতে তারা আমেরিকার ভূমিকা মেনে নিচ্ছে। আমাদের এ অঞ্চলে লড়াই দরকার নেই। চীনের সঙ্গে তাদের ও আমাদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে আমাদের আলাপ আলোচনা করে চুক্তিতে উপনীত হওয়া উচিত।
প্রশ্ন: মার্কিন নেতৃত্বাধীন ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (টিপিপিএ) ও চীনের সমর্থিত রিজিওনাল কমিপ্রহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপের মুখোমুখি মালয়েশিয়া। এসব চুক্তির বিষয়ে আপনার অবস্থান কী?
উত্তর: টিপিপিএ’তে মুক্ত বাণিজ্যের কথা আছে। কিন্তু টিপিপিতে এসব নেই। বরং টিপিপিএ’র নীতিমালার অধীনে বাণিজ্য করার কথা আছে এখানে। ফলে মুক্ত বাণিজ্য আর হচ্ছে না। বরং, ব্যবসা যুক্তরাষ্ট্রের অনুকূলে নিয়ন্ত্রিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি উপকারী, কিন্তু অন্য দেশগুলোর জন্য নয়।
প্রশ্ন: আমি যখন ২০০১ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম, আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কখনও নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলে তিনি অবাক হবেন কিনা। পরে তিনি পেয়েও যান। যদি কেউ আপনাকে পুরস্কারটির জন্য মনোনীত করে, আপনি অবাক হবেন?
উত্তর: সত্যি বলতে কি, আমি পুরস্কার নিয়ে একদমই ভাবি না। আমি মনে করি, আমি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য। এটাই আমার জন্য যথেষ্ট। আমি যখন শপিং কমপ্লেক্সে ঢুঁ মারি, মানুষ আসে, আমার সঙ্গে হাত মেলায়, ধন্যবাদ জানায়। এটা যে কোন পুরস্কারের চেয়েও বড় পুরস্কার।
ড. সিরাজুল আই. ভূঁইয়া: কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও যুক্তরাষ্ট্রের অবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও প্রধান। সাক্ষাৎকারটি ভাষান্তর করেছেন নাজমুল আহসান।
বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প ও উচ্চপ্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে মালয়েশিয়ায় ব্যাপক অর্থ ব্যয় করেছিলেন মাহাথির। কিন্তু সে সময় অর্থনৈতিক সঙ্কটে ভুগছিল তার দেশ। নিজেকে ‘সাইবারে আসক্ত’ বলেও একবার দাবি করেছিলেন তিনি। বিশ্বের গুটিকয়েক বিশ্বনেতা, যারা নিজের ওয়েবসাইট ও ব্লগ পরিচালনা করেন, তাদের মধ্যে তিনি একজন। চিকিৎসা পেশা থেকে রাজনীতিতে প্রবেশ করা মাহাথির ১৯৮১ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার দল ইউনাইটেড মালয় ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনের নেতৃত্বাধীন জোট এখনও মালয়েশিয়ার ক্ষমতায়।
সম্প্রতি দৈনিক মানবজমিন এবং বাংলাদেশ ও কুয়েতের দু’টি গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মাহাথির মোহাম্মদ বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, সন্ত্রাসবাদ, বাণিজ্য, পূর্ব এশিয়া, চীন-আমেরিকাসহ বহু প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন। সাক্ষাৎকারের সংক্ষেপিত অংশ এখানে তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: বাংলাদেশের মানুষ একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, সৎ ও কার্যকর নেতার কথা চিন্তা করলেই আপনার কথা বলে, আপনার নেতৃত্বগুণের কথা বলে। বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতি খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। দেশের উন্নয়নেও এটি প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী? এ রাজনৈতিক সমস্যা থেকে দেশটির উত্তরণের উপায় কী?
উত্তর: আমি সাধারণত আমাদের প্রতিবেশী দেশ বা বাংলাদেশের মতো বন্ধুভাবাপন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করি না। কিন্তু আমি দেখছি, বাংলাদেশে রাজনীতি বেশি, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের দিকে মনোযোগ কম। একই সময়ে, অবশ্যই, আপনি যদি রাজনীতি এবং দেশ কারা শাসন করছে, তা নিয়ে অনেক বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন, তবে অর্থনীতি ভুগবে। আমি মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকবেই। কিন্তু সেসব সরিয়ে রেখে, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত দেশের উন্নয়ন ও বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে একযোগে কাজ করা। আমি মনে করি, আপনি যদি বিনিয়োগের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করেন, তবে বাংলাদেশে প্রচুর বিদেশী বিনিয়োগ আসবে। দেশের আপামর জনতার জীবনমানে অগ্রগতি হবে।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। যেমন, গার্মেন্ট শিল্প। ওষুধ শিল্প ও অন্যান্য খাতেও দেশটি ভালো করছে। বাংলাদেশের মানুষ খুব উদ্যোগীও। তাদের দরকার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ভালো নীতিমালা। কিন্তু তারা তা পাচ্ছে না। এ অবস্থা নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
উত্তর: বাংলাদেশে উন্নয়নের চেয়ে রাজনীতি বেশি। আপনি যদি দেশের অর্থনীতির কথা ভাবেন, দৃষ্টি দেন ও অর্থনৈতিক নীতির কথা বলেন, তবে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধিষ্ণু অর্থনীতির একটি।
প্রশ্ন: মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাই। আপনার কাছে মূল চ্যালেঞ্জগুলো কী কী মনে হয়?
উত্তর: আপনি যদি মধ্যপ্রাচ্যের সামপ্রতিক ইতিহাস দেখেন, তবে দেখবেন, যা আজ ঘটছে, তা হলো ৬০ বছর আগে ফিলিস্তিনি ভূমি দখল করে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্তের ফল। ফিলিস্তিনিরা প্রচলিত কায়দায় লড়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু ইসরাইলিদের কাছে হেরেছে। কিন্তু এখন তাদের অন্য উপায়ে লড়তে হবে, যাকে ইসরাইল সন্ত্রাসবাদ বলছে। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের ওপর নিয়ন্ত্রণ বিস্তার করাটাও ইসরাইলি সন্ত্রাসবাদের মধ্যে পড়ে। ইসরাইলিদের সঙ্গে অব্যাহত লড়াইয়ের মাধ্যমে কিছুই অর্জন হয়নি ফিলিস্তিনিদের। তাদের সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়া হচ্ছে। তারা এখন ক্ষুদ্ধ। এ সবই পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের মানুষের মধ্যে বিভক্তি এনেছে। অনেকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো গণতান্ত্রিক হলেই, সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু গণতন্ত্রের কার্যাবলী তারা বুঝতে পারে না। গণতন্ত্র এলে সরকার গঠিত হবে, নির্বাচন হবে, কিছু মানুষ সরকার বানাবে, কেউ বিরোধী দলে থাকবে। কিন্তু বিরোধীরা পরাজিত হতে চাইবে না, সবাই জিততে চাইবে। এসবের কারণে গণতন্ত্র এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও সুশাসন আনেনি।
প্রশ্ন: আইএস’র দ্বারা সৃষ্ট সঙ্কটের দিকে পশ্চিমা নীতির ভূমিকা আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
উত্তর: পশ্চিমারা চায় ক্ষমতার পরিবর্তন। তারা চায় মুসলিম দেশগুলোর সরকার চালাবে তাদের বেছে নেয়া মানুষরা। ক্ষমতা পরিবর্তন করতে গিয়ে, দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেয়া হয়। আমি সাধারণ অর্থে মনে করি, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতার পেছনে পশ্চিমাদের ভূমিকা অস্বীকার করা যাবে না। তারা নিজেরাই মাঝে মধ্যে অস্থিতিশীলতা নিয়ে এসেছে, কিছু সময় নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে তারা সমর্থন দিয়েছে, সরকারের ভূমিকাকে খর্ব করেছে, প্রোপাগান্ডা যুদ্ধ চালিয়েছে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যে অস্থিতিশীলতা আপনি দেখছেন, এর পেছনে পশ্চিমারা অনেক বেশি জড়িত।
প্রশ্ন: সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে শীতল-যুদ্ধের মতো চলমান উত্তেজনার এবং সৌদি আরবের নেতৃত্বে ৩৪ দেশের সন্ত্রাসবিরোধী জোটের বিষয়ে আপনার মতামত কী?
উত্তর: আমরা মনে করি না, দ্বন্দ্ব কোনো সমস্যার সমাধান করবে। যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান নয়। মালয়েশিয়ার স্বাধীনতার প্রথমদিকে, ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ বা বিরোধের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। হ্যাঁ, তারা প্রথমে শক্তি খাটিয়েছে। কিন্তু দিনশেষে কূটনৈতিক সমাধান ও সংলাপের মাধ্যমে সমস্যাটির আমরা সমাধান করেছি। কোনো দেশকে আমাদের শত্রু ভাবা উচিত নয়। যদি ভাবি, তারাও আমাদের শত্রু ভাববে। তারপর আপনাদের মুখোমুখি হতে হবে। এটি অত্যন্ত নেতিবাচক। দেশে দেশে মতপার্থক্য থাকবেই, তবে কূটনৈতিক উপায় ও সংলাপের মাধ্যমে মতপার্থক্য নিরসন বা হ্রাস করা সম্ভব।
প্রশ্ন: আইএস’র কারণে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে যুদ্ধ বাধার বিষয়ে চিন্তিত অনেক পশ্চিমা নেতা। এ ব্যাপারে আপনার মূল্যায়ন কী?
উত্তর: পশ্চিমারা অবশ্যই আইএস’র বিরুদ্ধে। কিন্তু আইএস তাদেরই সৃষ্টি। অনেকেই প্রেসিডেন্ট আসাদকে (সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট) উৎখাত করতে চায়। পশ্চিমারা ওই মানুষগুলোকে অস্ত্র, অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এরাই পরে আইএস হয়েছে। তাদের এখন নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে। তারা আসাদের বিরুদ্ধেও লড়ছে, আবার পশ্চিমাদেরও ওই এলাকা থেকে তাড়িয়ে দিতে চায়। তাদের আবার অনেকে সমর্থনও দিচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে, মুসলিমরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়ছে। এক হিসাবে, পশ্চিমা বা ইসরাইলের বিরুদ্ধে কেউ লড়ছে না। লড়ছে একে-অপরের বিরুদ্ধে। এর ফলে দেখা যাচ্ছে ব্যাপক সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম। অনেকে আইএস’কে সমর্থন দিচ্ছে। ফলে যুদ্ধটা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। মালয়েশিয়ায় আগে এ নিয়ে কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু এখন অনেকে আইএস-এ যোগ দিতে দেশ ছাড়ছে। মূলত, এটা পুরো বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। সবাই এখন আক্রান্ত, কারণ কেউই নিরাপদ বোধ করছে না। আমি মনে করি, এ সব কিছুই ঘটছে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কারণে।
প্রশ্ন: অনেক মানুষই মনে করেন, সমপ্রতি সাবেক বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারও স্বীকার করেছেন যে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের নেতৃত্বে ইরাক যুদ্ধই আইএস সৃষ্টির কারণ। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
উত্তর: তিনি (ব্লেয়ার) ছিলেন প্রেসিডেন্ট বুশের অন্যতম বড় সমর্থক। তিনিই বৃটিশ পার্লামেন্টে বলেছিলেন যে, ৪৫ মিনিটের মধ্যে লন্ডন আক্রমণ করতে পারবে ইরাক, কারণ ইরাকের কাছে বিপুল পরিমাণ গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে। এটি ছিল মিথ্যা। তিনি পার্লামেন্ট ও বৃটিশ জনগণকে মিথ্যা বলেছেন। এখন তিনি উপলব্ধি করছেন যে, তার মিথ্যাই আইএস সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে। টনি ব্লেয়ার নিন্দনীয়; প্রেসিডেন্ট বুশ যা করেছেন, তার অন্যতম কট্টর সমর্থক ছিলেন তিনি।
প্রশ্ন: সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক লড়াইয়ে এশিয়ার, নির্দিষ্ট করে মালয়েশিয়ার ভূমিকা আপনি কীভাবে দেখেন?
উত্তর: আমরা চাই মানুষ সন্ত্রাসবাদের মূল কারণ বুঝুক। সব কিছুরই কারণ থাকে। মানুষ কাউকে এমনি এমনি আতঙ্কগ্রস্থ করে না। মানুষ অন্য কাউকে সন্ত্রস্ত করে মজা পায় না। সব মুসলিম দেশ দুর্বল। তারা পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে লড়তে চায় না। কারণ, তারা জানে তারা জিতবে না। ফলে মুসলিম ব্যক্তি ও গোষ্ঠীবিশেষ পদক্ষেপ নেয়। এসব অবশ্যই প্রথা মেনে হয় না। এসব অপ্রথাসিদ্ধ আচরণই পশ্চিমাদের দ্বারা সন্ত্রাসবাদ হিসেবে সংজ্ঞায়িত হয়। পশ্চিমাদের প্রোপাগান্ডায় বলা হয়, মুসলিমদের অপ্রথাসিদ্ধ আচরণ সন্ত্রাসবাদ। অপপ্রচারে এসবও বলা হয়, পশ্চিমারা যে বোমা পাঠাচ্ছে, মানুষের ওপর বোমা ফেলছে, অন্য দেশ দখল করছে, এসব সন্ত্রাসবাদ নয়! কিন্তু আসলে, এগুলোও সন্ত্রাসবাদের অংশ।
প্রশ্ন: উপসাগরীয় দেশসমূহ ক্রমেই বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পূর্বের দিকে ঝুঁকছে। পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে উপসাগরীয় দেশগুলোর সমপর্ক আপনি কীভাবে দেখছেন?
উত্তর: উপসাগরীয় দেশগুলো পশ্চিমের দিকে ঝুঁকে। আরব দেশগুলোর সমপর্ক পশ্চিমাদের সঙ্গেই বেশি। এসব দেশের বহু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রচুর পশ্চিমা বিশেষজ্ঞ কাজ করেন। তারা (উপসাগরীয় দেশগুলো) আমাদের সঙ্গে বেশি ব্যবসা করে না। কারণ, এ দেশগুলো মূলত আমদানি-নির্ভর দেশ। রপ্তানির জন্য তারা পণ্য উৎপাদন করে না। এটা একতরফা ব্যবসা। কিন্তু পূর্ব এশিয়ায় আমরা পণ্য আমদানি ও রপ্তানি-উভয়ই করতে চাই। আমরা জিনিসপত্র কিনতে চাই, বিক্রি করতে চাই। কিন্তু আমরা যেসব রপ্তানি করতে চাই, তার অনেককিছুই পশ্চিম থেকে আমদানি করা যায়। ফলে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে পূর্ব এশিয়ার বাণিজ্য নামেমাত্র। কিন্তু আমি মনে করি, পূর্বের সঙ্গে বাণিজ্যে তাদের জন্য অনেক সম্ভাবনা লুকায়িত রয়েছে। এখন অনেক মানুষই পূর্বে ভ্রমণ করছে। কারণ, নিরাপত্তাজনিত কারণে তারা পশ্চিমে যেতে পারছে না।
প্রশ্ন: উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে মালয়েশিয়ার সমপর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনার প্রত্যাশা কী?
উত্তর: আমরা উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে শক্ত বাণিজ্যিক সমপর্কের প্রত্যাশা করি। আমরা একসঙ্গে অনেক কিছুই করতে পারি। মালয়েশিয়া একটি বাণিজপ্রবণ জাতি। আমাদের জন্য আরও বাজার তৈরি করতে চাই আমরা। একই সময়ে অন্য দেশগুলো থেকেও আমদানি করতে চাই। কিন্তু উপসাগরীয় দেশগুলো তেমন কিছুই উৎপাদন করে না। তারা এখন শিল্পায়ন করছে হয়তো। আমরা হয়তো পরে তাদের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি করতে পারি, বিনিয়োগ বাড়াতে পারি।
প্রশ্ন: সমপ্রতি তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় উপসাগরীয় ও অন্যান্য তেল উৎপাদনকারী দেশসমূহই কেবল আক্রান্ত হয়নি, গোটা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়েছে। এর কারণ সমপর্কে আপনার অভিমত কী? বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও তেল উৎপাদনকারী দেশসমূহের জন্য দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব কী হতে পারে?
উত্তর: তেলের দামের মূল্য নির্ধারণ সবসময়ই কৃত্রিমতায় ভরা ছিল। হ্যাঁ, এটি অবশ্যই চাহিদা ও যোগানের সঙ্গে তাল মিলিয়েই করা হয়। বর্তমানে তেল উৎপাদনের খরচের চেয়েও পড়ে গেছে তেলের দাম। এটা দীর্ঘমেয়াদি হবে না। যখনই তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, তখনই তেলের দাম পড়ে যাবে। বৈশ্বিক চাহিদার কারণে অনেক দেশ তেল থেকে বিপুল অর্থ লাভ করতো অতীতে। কিন্তু এখন তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় অনেক দেশ ভুগছে, আরও ভুগবে যদি দাম আরও পড়ে যায়। এটি স্রেফ সমন্বয়ের একটি বিষয়। মূলদামের চেয়ে বর্তমানের ব্যারেলপ্রতি ৩৫ ডলার দাম কিন্তু অনেক বেশি। তবে আগের চেয়ে এ দাম অনেক যুক্তিসম্মত। অবশ্যই, অনেক দেশ ভুগবে, কারণ তাদের উন্নয়ন বাজেট তেল বিক্রির ওপর নির্ভরশীল। তারা এখন টের পাচ্ছে। কোনো দেশেরই শুধু তেল বিক্রির ওপর নির্ভরশীল থাকা উচিত নয়। বরং, অর্থনীতিতে বৈচিত্র্যতা আনলে ভবিষ্যতের জন্য উন্নয়ন হবে টেকসই।
প্রশ্ন: মালয়েশিয়ার ওপেক নীতিমালা ও তাদের ভবিষ্যৎ গন্তব্য নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
উত্তর: যদিও মালয়েশিয়া তেল উৎপাদনকারী দেশ, তবে এটি কখনও ওপেকের সদস্য ছিল না। আমরা একসময় পর্যবেক্ষক ছিলাম। এটি অনেকটা মনোপলি বা একাধিপত্যবাদী সংগঠন, যা অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক নয়। তেলের দাম ঠিক করে দেয়াটা সবসময়ই খারাপ।
প্রশ্ন: উন্নত দেশে পরিণত হতে মালয়েশিয়াকে নেতৃত্ব দেয়ার বেলায় প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের নেতৃত্বগুণের ভূমিকা আপনি কীভাবে দেখেন?
উত্তর: মালয়েশিয়া আমার সময়ে ছিল বাড়বাড়ন্ত। আমার শাসনামলের বেশির ভাগ সময়েই ছিল। কিন্তু এখন বেঠিক ব্যবস্থাপনার কারণে দেশটি একেবারে আটকে গেছে। নজর এখন অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে নেই, রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার দিকে বেশির ভাগ নজর চলে গেছে। সব প্রধানমন্ত্রীই টিকে থাকতে চায়। তারা ভাবে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে মনোযোগ না দিয়ে, অন্য ইস্যু নিয়ে পড়ে থাকলেই তারা টিকে যাবে। এ কারণেই, অর্থনীতির গতি ধীর হয়ে গেছে। জাতিগত উত্তেজনা, বাজে প্রশাসন, দুর্নীতি, ইত্যাদি থাকলে অর্থনীতি ডুবে যায়। ফলে আমরা ভিশন-২০২০ অর্জন করে পূর্ণ উন্নত দেশে পরিণত হতে পারবো না। এখন পারবো না। মুদ্রার মান পড়ে গেছে, শেয়ারবাজার বাজে অবস্থায়। মানুষও খুশি নয়।
প্রশ্ন: মালয়েশিয়া সরকারের ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল বিলের কড়া সমালোচনা করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন এক কাউন্সিলকে ব্যাপক ক্ষমতা দেয়ার কথা বলা হয়েছে ওই বিলে। আপনার অভিমত কী?
উত্তর: মালয়েশিয়া সরকারের এ বিলটি নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন পার্লামেন্টে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার অবশ্যই ভিত্তি আছে। এ বিলটি একটি মধ্যযুগীয় বিল। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি পরিষদ নিরাপত্তার অজুহাতে যে কাউকে বিচার ছাড়া আটক করতে পারবে। আদালতের শুনানিও হবে না। এটা এক ধরনের কর্তৃত্বপরায়ণ আইন। কাউকেই ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি এখানে। মালয়েশিয়ার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও মূল্যবোধের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
প্রশ্ন: দক্ষিণ চীন সাগরে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বিরোধ আপনি কীভাবে দেখেন? আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর বিভক্তিকরণে এটি কীভাবে ভূমিকা রাখবে বলে আপনি মনে করেন?
উত্তর: আমার আশা, আমরা (আসিয়ানভুক্ত দেশসমূহ) একসঙ্গে থাকবো। আসিয়ান কিন্তু ইইউ’র (ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন) মতো নয়। আমরা নির্দিষ্ট কিছু ইস্যুতে কেবল একসঙ্গে আছি। আমাদের কোন প্রতিরক্ষা চুক্তি নেই, শুধু বাণিজ্য চুক্তি আছে। চীনকে মোকাবিলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে আমাদের উচিত বিষয়টির সুরাহা করা। তবে অনেক আসিয়ানভুক্ত দেশই বিপন্ন বোধ করছে। নিজেরা সমর্থ না হওয়ায়, চীনকে থামাতে তারা আমেরিকার ভূমিকা মেনে নিচ্ছে। আমাদের এ অঞ্চলে লড়াই দরকার নেই। চীনের সঙ্গে তাদের ও আমাদের দাবিদাওয়ার বিষয়ে আমাদের আলাপ আলোচনা করে চুক্তিতে উপনীত হওয়া উচিত।
প্রশ্ন: মার্কিন নেতৃত্বাধীন ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (টিপিপিএ) ও চীনের সমর্থিত রিজিওনাল কমিপ্রহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপের মুখোমুখি মালয়েশিয়া। এসব চুক্তির বিষয়ে আপনার অবস্থান কী?
উত্তর: টিপিপিএ’তে মুক্ত বাণিজ্যের কথা আছে। কিন্তু টিপিপিতে এসব নেই। বরং টিপিপিএ’র নীতিমালার অধীনে বাণিজ্য করার কথা আছে এখানে। ফলে মুক্ত বাণিজ্য আর হচ্ছে না। বরং, ব্যবসা যুক্তরাষ্ট্রের অনুকূলে নিয়ন্ত্রিত হবে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি উপকারী, কিন্তু অন্য দেশগুলোর জন্য নয়।
প্রশ্ন: আমি যখন ২০০১ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম, আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কখনও নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলে তিনি অবাক হবেন কিনা। পরে তিনি পেয়েও যান। যদি কেউ আপনাকে পুরস্কারটির জন্য মনোনীত করে, আপনি অবাক হবেন?
উত্তর: সত্যি বলতে কি, আমি পুরস্কার নিয়ে একদমই ভাবি না। আমি মনে করি, আমি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য। এটাই আমার জন্য যথেষ্ট। আমি যখন শপিং কমপ্লেক্সে ঢুঁ মারি, মানুষ আসে, আমার সঙ্গে হাত মেলায়, ধন্যবাদ জানায়। এটা যে কোন পুরস্কারের চেয়েও বড় পুরস্কার।
ড. সিরাজুল আই. ভূঁইয়া: কুয়েত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও যুক্তরাষ্ট্রের অবার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও প্রধান। সাক্ষাৎকারটি ভাষান্তর করেছেন নাজমুল আহসান।
No comments