উত্তর কোরিয়ার রকেট উৎক্ষেপণ, উত্তেজনা, নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক আহ্বান
উত্তর
কোরিয়া দূর পাল্লার একটি রকেটের পরীক্ষা চালিয়েছে। সমালোচকরা বলছেন,
নিষিদ্ধ ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির পরীক্ষা এটি। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক
উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া,
যুক্তরাষ্ট্র সজ বিভিন্ন দেশ। তারা একই সঙ্গে আজ দিনশেষে জরুরি ভিত্তিতে
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক আহ্বান করেছে। তবে আগেভাগেই উত্তর কোরিয়া
জাতিসংঘকে এ বিষয়ে জানিয়েছিল। তারা বলেছিল, পৃথিবীতে পর্যবেক্ষণ চালাতে
পারে এমন একটি স্যাটেলাইট তারা পাঠাবে পৃথিবীর কক্ষপথে। এ খবর দিয়ে অনলাইন
বিবিসি বলছে, উত্তর কোরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি ঘাঁটি থেকে ওই রকেটটি
উৎক্ষেপণ করা হয়েছে এবং তা উড়ে গেছে জাপানের দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ
ওকিনাওয়ার ওপর দিয়ে। উত্তর কোরিয়া বলছে, বৈজ্ঞানিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে
গবেষণার জন্য তাদের মহাকাশ বিষয়ক কর্মসূচি। কিন্তু তাতে বিশ্বাস করতে পারছে
না যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, এমনকি মিত্র চীন। তারা মনে করছে, এই রকেট
উৎক্ষেপণ করা হয়েছে ব্যাপক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র বহনের পরীক্ষা, যে
ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত করতে সক্ষম। গত ৬ই জানুয়ারি উত্তর কোরিয়া
চতুর্থ পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালিয়েছে। তখন থেকেই এ বছর আন্তর্জাতিক
সমালোচনার জন্ম দিয়েছে দেশটি। দক্ষিণ কোরিয়ার বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী ১৬ই
ফেব্রুয়ারি উত্তর কোরিয়ার স্বৈরশাসক প্রয়াত কিম জং ইলের জন্মদিন। সেই
দিনটিকে সামনে রেখে তারা ওই পরীক্ষা চালিয়ে থাকতে পারে। তবে জাপানের
প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এ পরীক্ষাকে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য বলে আখ্যায়িত
করেছেন। তিনি বলেন, এটা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নিয়মনীতির পরিষ্কার
লঙ্ঘন। এ পরিষদের প্রস্তাবনায় উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অথবা ব্যাপক
বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইসও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন,
উত্তর কোরিয়ার ব্যাপক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি ব্যবহার পরিস্থিতিকে
অস্থিতিশীল করে তোলার একটি পদক্ষেপ এবং এর মধ্য দিয়ে প্ররোচণা দেয়া হচ্ছে।
তাদের মিসাইল ও পারমাণবিক কর্মসূচি আমাদের স্বার্থের জন্য মারাত্মক হুমকি।
বিশেষ করে আমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের নিরাপত্তার জন্য তো বটেই। এ বিষয়ে এবার
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মতামত জানতে
চাওয়া হয়। জবাবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, উত্তর কোরিয়ার পারমাণনিক ইস্যু নিয়ে
সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করতে তিনি চীনের সঙ্গে কাজ করবেন। চীনকে এ সমস্যা
সমাধান করতে দিন। তারা দ্রুততার সঙ্গে তা করতে পারবে। উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে
আমাদের এটাই করা উচিত। উত্তর কোরিয়া গত বছর মে মাসে ঘোষণা দেয় যে,
প্রথমবারের মতো তারা সাবমেরিন চালিত একটি মিসাইলের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে।
২০১২ সালের ডিসেম্বরে তারা তিন স্তরের রটেক উৎক্ষেপণ করে। বলা হয়, সফলতার
সঙ্গে তা পৃথিবীর কক্ষপথে একটি স্যাটেলাইট স্থাপন করেছে। এ বিষয়টি নিশ্চিত
করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিষয়ক কর্মকর্তারা। ২০১২ সালের এপ্রিলে
তিন স্তরের একটি রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়। তবে তা উৎক্ষেপণের পর পরই বিস্ফোরিত
হয়ে সমুদ্রে পড়ে। ২০০৯ সালের এপ্রিলে একই রকম একটি রকেট উৎক্ষেপণ করে।
উত্তর কোরিয়া দাবি করে তা সফল হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বলে এ পরীক্ষা
ব্যর্থ হয়েছে এবং রকেটটি সমুদ্রে পতিত হয়েছে। ২০০৬ সালের জুলাইয়ে উত্তর
কোরিয়া দীর্ঘ পাল্লার টাইপোডং-২ মিসাইল পরীক্ষা চালায়। তবে যুক্তরাষ্ট্র
বলে, মিসাইলটি উৎক্ষেপণের অল্প সময়ের মধ্যে সে পরীক্ষা ব্যর্থ হয়ে যায়।
No comments