ভয়ঙ্কর গাড়ি পার্টি
রাজধানীতে নয়া আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে ‘গাড়ি পার্টি’। দিনেদুপুরে নগরজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বেপরোয়া এ চক্র। বলতে গেলে ‘অভিজাত ছিনতাইচক্র’। প্রাইভেট গাড়িতে ভাড়ায় যাত্রী নেয়ার কথা বলে তারা সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে। যাত্রীর ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড দিয়ে টাকা তুলে নিচ্ছে এটিএম বুথ থেকে। এখানেই থেমে থাকে না এ চক্র। কারও কাছে টাকা বা মূল্যবান কিছু না পেলে তাকে আটকে আদায় করছে মুক্তিপণ। সম্প্রতি রাজধানীতে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে।
যাত্রী পরিবহনের নামে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় ওরা। এজন্য তারা বেছে নেয় অফিসে যাওয়ার বা ফেরার সময়কে। এ সময় ওঁৎ পেতে থাকে নির্ধারিত স্থানে। কাঙ্ক্ষিত কাউকে দেখলেই যাত্রীর জন্য ডাকাডাকি শুরু করে। রামপুরা, বাড্ডা, বনানী, গুলশান, উত্তরা, আবদুল্লাহপুর, টঙ্গী, সায়েদাবাদ, গাবতলী, পল্টন, মতিঝিলসহ পুরো রাজধানীজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই গাড়ি পার্টি। সূত্রমতে, এরকম অন্তত ১৫টি পার্টি রয়েছে। গাড়ি দিয়ে ছিনতাই করাই তাদের কাজ। সম্প্রতি গাড়ি পার্টির তৎপরতা বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। কিন্তু ঝামেলা এড়াতে থানা-পুলিশের সহায়তা চাচ্ছেন না ঘটনার শিকার অনেকেই। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দাবি করেছে, কয়েক বছর আগের তুলনায় এ ধরনের ঘটনা অনেক কমেছে। কিন্তু বাস্তবে সম্প্রতি প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর কোথায় না কোথায় এ ধরনের ঘটছে।
গত বুধবার সন্ধ্যায় হাতিরঝিলে এই ভয়ঙ্কর গাড়ি পার্টির শিকার হন বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহমুদ। সময় তখন প্রায় সন্ধ্যা। ঘটনাটি ঘটে বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) সামনে। মাহমুদ জানান, হাতিরঝিলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে যাচ্ছিলেন তিনি। কাওরানবাজারের টিসিবি ভবনের সামনে রামপুরাগামী মাইক্রোবাসগুলো যাত্রীর জন্য অপেক্ষমাণ থাকে। তারা রামপুরা-রামপুরা বলে যাত্রীদের ডাকে। মাহমুদকে হাতিরঝিলের রামপুরা বিজ্রের পাশে যেতে হবে। এজন্য সেখান থেকেই মাইক্রোবাসে উঠেন তিনি। এ সময় আর একজন যাত্রী উঠেন তার সঙ্গে। তার আগেই চালকের পাশে দুইজন ও পেছনে একজন বসা ছিলেন। তাদের প্রত্যেকের বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছর। গাড়ি চালানোর সঙ্গে সঙ্গে জানালা বন্ধ করে দেয় আগে থেকে পেছনে বসা ব্যক্তি। বিএফডিসির সামনে গেলেই ভয়ঙ্কর রূপ প্রকাশ করে তারা। চালকের পাশে যুবক একটি পিস্তল বের করে তাক করে মাহমুদসহ ওই যুবকের দিকে। তাদের দুজনকেই টার্গেট করে এই গাড়ি পার্টি। অস্ত্র হাতে ওই যুবক ধমক দিয়ে বলে, মানিব্যাগ, মোবাইলফোন ও ডেবিট কার্ড দিয়ে দে। নইলে গুলি করে মেরে লাশ হাতিরঝিলে ফেলে দেবো। মাহমুদ জানান, জীবনে প্রথম সরাসরি পিস্তল দেখে কাঁপতে থাকেন তিনি। তার পাশে থাকা যুবকটিও ভয় পায়। বাধ্য হয়েই মানিব্যাগ ও মোবাইলফোন বের করে তাদের হাতে দিয়ে দেন। গাড়ি ততক্ষণে হাতিরঝিলের মধুবাগের ব্রিজের পাশে। পরে রামপুরা ব্রিজে মাহমুদ ও ওই যুবককে নামিয়ে দেয় ওই গাড়ি পার্টির সদস্যরা। নামার আগে পিস্তল ধরে আবার হত্যার হুমকি দিয়ে তাদের একজন বলে, সোজা চলে যাবি। এইদিকে তাকালে, কাউকে কিছু বলতে গেলে গুলি করে মেরে ফেলবো।
মাহমুদ জানান, তিনি আর পিছন ফিরে তাকাননি। এ নিয়ে থানা পুলিশেও কোনো অভিযোগ করেননি। তিনি বলেন, অভিযোগ করে কি হবে। যা হওয়ার তা হয়েছে। মাহমুদের গ্রামের বাড়ি বরিশাল সদরে। তিন থাকেন যাত্রাবাড়ী এলাকায়। প্রায় একইভাবে গাড়ি পার্টির ছিনতাইয়ের শিকার হন আহমেদ আদনান নামক যুবক। তিনি কাওরানবাজার এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। শেরেবাংলা নগর এলাকার তালতলা বাস স্টপেজ থেকে ফার্মগেট আসার পথে গাড়ি পার্টির শিকার হন তিনি। আদনান জানান, সময় তখন সকাল সোয়া ৯টা। গণপরিবহনে উঠার মতো অবস্থা নেই। প্রতিটি বাস যাত্রীতে পরিপূর্ণ। এ সময় তালতলায় একটি প্রাইভেট কার থামানো ছিল। ফার্মগেট ফার্মগেট বলে ডাকছিল চালক। আদনান কারে উঠেন। তিনি জানান এর আগেও কয়েকবার এভাবে তালতলা থেকে ফার্মগেটে গিয়েছেন। কোনো সমস্যা হয়নি। চালকের পাশে আগে থেকেই একজন বসা ছিল। আদনানের সঙ্গে উঠে আরও দুজন। তারা আদনানের দুই পাশের সিটে বসে। গাড়িটি আইডিবি ভবনের সামনে যাওয়ামাত্রই দুই পাশের দুই ব্যক্তি গাড়ির গ্লাস বন্ধ করে দেয়। আদনান তখন গ্লাস বন্ধ না করতে বললে তাদের একজন বলে, ঠাণ্ডা বাতাস আসছে। জানালা বন্ধ করেই শুরু হয় তাদের ভয়ঙ্কর মিশন। দুই পাশের দুই যুবক তার দিকে অস্ত্র তাক করে। একজনের হাতে পিস্তল। অন্যজনের হাতে ধারালো ছুরি। চালকের আসনের পাশে বসা যুবকটি বলে, কী কী আছে দিয়ে দেন। ডেবিট কার্ড ও পিন নম্বর দেন। চালাকি করলে জানে মেরে ফেলবো। আদনান ডেবিট কার্ড ও পিন নম্বর দেন। গাড়িটি তখন মহাখালীর দিকে যাচ্ছিলো। মহাখালী থেকে গুলশান সড়কের দিকে ঢুকে ব্র্যাক ব্যাংকের বুথে যায় তারা। কিন্তু আদনানের অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় হতাশ হয় ছিনতাইচক্র। তার সঙ্গে থাকা মানিব্যাগের কয়েক হাজার টাকা নিয়ে আদনানকে মহাখালী নামিয়ে দিয়ে তারা চলে যায়। যথারীতি তারা আগে হুমকি দিয়ে যায় বিষয়টি কাউকে জানালে পরিণতি হবে ভয়াবহ।
এ ঘটনার পর বিষয়টি পুলিশকে জানাবেন দূরে থাক আতঙ্কে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চান না তিনি। আদনান জানান, এটি সংঘবদ্ধ চক্র। যে কোনো সময় তার ক্ষতি করতে পারে। একইভাবে গুলশান থেকে রাত ৯টার দিকে লালবাগের বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইয়ের শিকার হন আবদুল আলীম ও তার স্ত্রী হেনা বেগম। পঞ্চাশোর্ধ্ব আলীম জানান, তাদের সঙ্গে নগদ কয়েক হাজার টাকা ছিল। ওই টাকা তারা নিয়ে গেছে। কিন্তু হাতে থাকা মোবাইল ফোন নেয়নি বলে জানান তিনি। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আলীম জানান, গুলশান গুদারাঘাট এলাকায় এক আত্মীয়রে বাসায় বেড়াতে যান। ফেরার সময় কোনো গণপরিবহন পাচ্ছিলেন না। এ সময় কয়েকটি প্রাইভেট কার ছিল সড়কে। তাদের একটির গাড়িচালক জানতে চায় কোথায় যাবেন। লালবাগ বলার পর সে গাড়িতে উঠে বসতে বলে। চালক জানায়, আরও কয়েকজন যাত্রী আসবে। এজন্য পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপরেই লালবাগে নিয়ে যাবে। ওই যাত্রীরা ঢাকা মেডিকেলে যাবে বলে জানায় সে। কিছুক্ষণের মধ্যে আরও চারজন যাত্রীবেশী ছিনতাইকারী ওই গাড়িতে উঠে। গাড়িটি কিছুদূর যাওয়ার পরই পিস্তল দেখিয়ে তাদের জিম্মি করা হয়। এ সময় আলীমকে মারধর করে এক যুবক। একপর্যায়ে তাদের কাছে থাকা টাকা রেখে নামিয়ে দেয়। গাড়িতে উঠার কয়েক মিনিটের মধ্যেই এ ঘটনা ঘটে বলে জানান আলীম।
কিছুদিন আগে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের বার্তা সম্পাদককে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় এই চক্র। জানা গেছে, সিনিয়র ওই সাংবাদিক রাতে দায়িত্ব পালন শেষে রামপুরার বাসায় ফিরছিলেন। হাতিরঝিল থেকে একটি প্রাইভেট কারে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তার ডেবিট কার্ড ও পিন নম্বর নেয় তারা। শুরুতে পিন নম্বর দিতে না চাইলে প্রাণনাশের হুমকি দেয় গাড়ি পার্টির ছিনতাইকারীরা। পরে গুলশানের নিকুঞ্জ এলাকায় গাড়ি থামিয়ে ব্যাংকের বুথ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে নিয়ে ছেড়ে দেয় তাকে।
গত ২৭শে জানুয়ারি এই পার্টির খপ্পড়ে পড়েন প্রবাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমজাদ হোসেন হারুণ। ওই দিন বিকালে পল্টন থেকে সাদা রঙের প্রাইভেটকারে চড়ে গুলশানে যাচ্ছিলেন তিনি। গাড়িতে চালকসহ আরও দুজন ছিল। গাড়িতে উঠার পর তার মুখ চেপে ধরে। হাত, পা ও চোখ বাঁধে। এ সময় তার কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা লুটে নেয়। বাসা থেকে বিকাশে আর ২০ হাজার টাকা পাঠানোর জন্য তাকে চাপ দেয়। একপর্যায়ে ফোনে বাসায় ২০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠাতে বলেন। ওই রাতেই চোখ বাঁধা অবস্থায় তাকে ধামরাইয়ের বালুর মাঠে ফেলে যায় ছিনতাইকারীরা। এ বিষয়ে রমনা থানার উপ-পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, ২৮শে জানুয়ারি এ ঘটনায় রমনা থানায় একটি জিডি করেছেন আমজাদ হোসেন।
এসব ঘটনার বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার ও পশ্চিম জোনের ছিনতাই, ডাকাতি, দস্যুতা প্রতিরোধ দলের প্রধান যায়েদ শাহরিয়ার বলেন, গত দুই বছরে এ ধরনের কিছু অভিযোগ ছিল। এসব অপরাধ দমন করতে পুলিশ সবসময় তৎপর। উন্নত প্রযুক্তি ও সোর্স ব্যবহার করে এসব অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
যাত্রী পরিবহনের নামে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় ওরা। এজন্য তারা বেছে নেয় অফিসে যাওয়ার বা ফেরার সময়কে। এ সময় ওঁৎ পেতে থাকে নির্ধারিত স্থানে। কাঙ্ক্ষিত কাউকে দেখলেই যাত্রীর জন্য ডাকাডাকি শুরু করে। রামপুরা, বাড্ডা, বনানী, গুলশান, উত্তরা, আবদুল্লাহপুর, টঙ্গী, সায়েদাবাদ, গাবতলী, পল্টন, মতিঝিলসহ পুরো রাজধানীজুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই গাড়ি পার্টি। সূত্রমতে, এরকম অন্তত ১৫টি পার্টি রয়েছে। গাড়ি দিয়ে ছিনতাই করাই তাদের কাজ। সম্প্রতি গাড়ি পার্টির তৎপরতা বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। কিন্তু ঝামেলা এড়াতে থানা-পুলিশের সহায়তা চাচ্ছেন না ঘটনার শিকার অনেকেই। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দাবি করেছে, কয়েক বছর আগের তুলনায় এ ধরনের ঘটনা অনেক কমেছে। কিন্তু বাস্তবে সম্প্রতি প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর কোথায় না কোথায় এ ধরনের ঘটছে।
গত বুধবার সন্ধ্যায় হাতিরঝিলে এই ভয়ঙ্কর গাড়ি পার্টির শিকার হন বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মাহমুদ। সময় তখন প্রায় সন্ধ্যা। ঘটনাটি ঘটে বাংলাদেশ ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের (বিএফডিসি) সামনে। মাহমুদ জানান, হাতিরঝিলে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে যাচ্ছিলেন তিনি। কাওরানবাজারের টিসিবি ভবনের সামনে রামপুরাগামী মাইক্রোবাসগুলো যাত্রীর জন্য অপেক্ষমাণ থাকে। তারা রামপুরা-রামপুরা বলে যাত্রীদের ডাকে। মাহমুদকে হাতিরঝিলের রামপুরা বিজ্রের পাশে যেতে হবে। এজন্য সেখান থেকেই মাইক্রোবাসে উঠেন তিনি। এ সময় আর একজন যাত্রী উঠেন তার সঙ্গে। তার আগেই চালকের পাশে দুইজন ও পেছনে একজন বসা ছিলেন। তাদের প্রত্যেকের বয়স ৩৫ থেকে ৪০ বছর। গাড়ি চালানোর সঙ্গে সঙ্গে জানালা বন্ধ করে দেয় আগে থেকে পেছনে বসা ব্যক্তি। বিএফডিসির সামনে গেলেই ভয়ঙ্কর রূপ প্রকাশ করে তারা। চালকের পাশে যুবক একটি পিস্তল বের করে তাক করে মাহমুদসহ ওই যুবকের দিকে। তাদের দুজনকেই টার্গেট করে এই গাড়ি পার্টি। অস্ত্র হাতে ওই যুবক ধমক দিয়ে বলে, মানিব্যাগ, মোবাইলফোন ও ডেবিট কার্ড দিয়ে দে। নইলে গুলি করে মেরে লাশ হাতিরঝিলে ফেলে দেবো। মাহমুদ জানান, জীবনে প্রথম সরাসরি পিস্তল দেখে কাঁপতে থাকেন তিনি। তার পাশে থাকা যুবকটিও ভয় পায়। বাধ্য হয়েই মানিব্যাগ ও মোবাইলফোন বের করে তাদের হাতে দিয়ে দেন। গাড়ি ততক্ষণে হাতিরঝিলের মধুবাগের ব্রিজের পাশে। পরে রামপুরা ব্রিজে মাহমুদ ও ওই যুবককে নামিয়ে দেয় ওই গাড়ি পার্টির সদস্যরা। নামার আগে পিস্তল ধরে আবার হত্যার হুমকি দিয়ে তাদের একজন বলে, সোজা চলে যাবি। এইদিকে তাকালে, কাউকে কিছু বলতে গেলে গুলি করে মেরে ফেলবো।
মাহমুদ জানান, তিনি আর পিছন ফিরে তাকাননি। এ নিয়ে থানা পুলিশেও কোনো অভিযোগ করেননি। তিনি বলেন, অভিযোগ করে কি হবে। যা হওয়ার তা হয়েছে। মাহমুদের গ্রামের বাড়ি বরিশাল সদরে। তিন থাকেন যাত্রাবাড়ী এলাকায়। প্রায় একইভাবে গাড়ি পার্টির ছিনতাইয়ের শিকার হন আহমেদ আদনান নামক যুবক। তিনি কাওরানবাজার এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। শেরেবাংলা নগর এলাকার তালতলা বাস স্টপেজ থেকে ফার্মগেট আসার পথে গাড়ি পার্টির শিকার হন তিনি। আদনান জানান, সময় তখন সকাল সোয়া ৯টা। গণপরিবহনে উঠার মতো অবস্থা নেই। প্রতিটি বাস যাত্রীতে পরিপূর্ণ। এ সময় তালতলায় একটি প্রাইভেট কার থামানো ছিল। ফার্মগেট ফার্মগেট বলে ডাকছিল চালক। আদনান কারে উঠেন। তিনি জানান এর আগেও কয়েকবার এভাবে তালতলা থেকে ফার্মগেটে গিয়েছেন। কোনো সমস্যা হয়নি। চালকের পাশে আগে থেকেই একজন বসা ছিল। আদনানের সঙ্গে উঠে আরও দুজন। তারা আদনানের দুই পাশের সিটে বসে। গাড়িটি আইডিবি ভবনের সামনে যাওয়ামাত্রই দুই পাশের দুই ব্যক্তি গাড়ির গ্লাস বন্ধ করে দেয়। আদনান তখন গ্লাস বন্ধ না করতে বললে তাদের একজন বলে, ঠাণ্ডা বাতাস আসছে। জানালা বন্ধ করেই শুরু হয় তাদের ভয়ঙ্কর মিশন। দুই পাশের দুই যুবক তার দিকে অস্ত্র তাক করে। একজনের হাতে পিস্তল। অন্যজনের হাতে ধারালো ছুরি। চালকের আসনের পাশে বসা যুবকটি বলে, কী কী আছে দিয়ে দেন। ডেবিট কার্ড ও পিন নম্বর দেন। চালাকি করলে জানে মেরে ফেলবো। আদনান ডেবিট কার্ড ও পিন নম্বর দেন। গাড়িটি তখন মহাখালীর দিকে যাচ্ছিলো। মহাখালী থেকে গুলশান সড়কের দিকে ঢুকে ব্র্যাক ব্যাংকের বুথে যায় তারা। কিন্তু আদনানের অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় হতাশ হয় ছিনতাইচক্র। তার সঙ্গে থাকা মানিব্যাগের কয়েক হাজার টাকা নিয়ে আদনানকে মহাখালী নামিয়ে দিয়ে তারা চলে যায়। যথারীতি তারা আগে হুমকি দিয়ে যায় বিষয়টি কাউকে জানালে পরিণতি হবে ভয়াবহ।
এ ঘটনার পর বিষয়টি পুলিশকে জানাবেন দূরে থাক আতঙ্কে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চান না তিনি। আদনান জানান, এটি সংঘবদ্ধ চক্র। যে কোনো সময় তার ক্ষতি করতে পারে। একইভাবে গুলশান থেকে রাত ৯টার দিকে লালবাগের বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইয়ের শিকার হন আবদুল আলীম ও তার স্ত্রী হেনা বেগম। পঞ্চাশোর্ধ্ব আলীম জানান, তাদের সঙ্গে নগদ কয়েক হাজার টাকা ছিল। ওই টাকা তারা নিয়ে গেছে। কিন্তু হাতে থাকা মোবাইল ফোন নেয়নি বলে জানান তিনি। ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আলীম জানান, গুলশান গুদারাঘাট এলাকায় এক আত্মীয়রে বাসায় বেড়াতে যান। ফেরার সময় কোনো গণপরিবহন পাচ্ছিলেন না। এ সময় কয়েকটি প্রাইভেট কার ছিল সড়কে। তাদের একটির গাড়িচালক জানতে চায় কোথায় যাবেন। লালবাগ বলার পর সে গাড়িতে উঠে বসতে বলে। চালক জানায়, আরও কয়েকজন যাত্রী আসবে। এজন্য পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তারপরেই লালবাগে নিয়ে যাবে। ওই যাত্রীরা ঢাকা মেডিকেলে যাবে বলে জানায় সে। কিছুক্ষণের মধ্যে আরও চারজন যাত্রীবেশী ছিনতাইকারী ওই গাড়িতে উঠে। গাড়িটি কিছুদূর যাওয়ার পরই পিস্তল দেখিয়ে তাদের জিম্মি করা হয়। এ সময় আলীমকে মারধর করে এক যুবক। একপর্যায়ে তাদের কাছে থাকা টাকা রেখে নামিয়ে দেয়। গাড়িতে উঠার কয়েক মিনিটের মধ্যেই এ ঘটনা ঘটে বলে জানান আলীম।
কিছুদিন আগে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের বার্তা সম্পাদককে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় এই চক্র। জানা গেছে, সিনিয়র ওই সাংবাদিক রাতে দায়িত্ব পালন শেষে রামপুরার বাসায় ফিরছিলেন। হাতিরঝিল থেকে একটি প্রাইভেট কারে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তার ডেবিট কার্ড ও পিন নম্বর নেয় তারা। শুরুতে পিন নম্বর দিতে না চাইলে প্রাণনাশের হুমকি দেয় গাড়ি পার্টির ছিনতাইকারীরা। পরে গুলশানের নিকুঞ্জ এলাকায় গাড়ি থামিয়ে ব্যাংকের বুথ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে নিয়ে ছেড়ে দেয় তাকে।
গত ২৭শে জানুয়ারি এই পার্টির খপ্পড়ে পড়েন প্রবাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমজাদ হোসেন হারুণ। ওই দিন বিকালে পল্টন থেকে সাদা রঙের প্রাইভেটকারে চড়ে গুলশানে যাচ্ছিলেন তিনি। গাড়িতে চালকসহ আরও দুজন ছিল। গাড়িতে উঠার পর তার মুখ চেপে ধরে। হাত, পা ও চোখ বাঁধে। এ সময় তার কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা লুটে নেয়। বাসা থেকে বিকাশে আর ২০ হাজার টাকা পাঠানোর জন্য তাকে চাপ দেয়। একপর্যায়ে ফোনে বাসায় ২০ হাজার টাকা বিকাশে পাঠাতে বলেন। ওই রাতেই চোখ বাঁধা অবস্থায় তাকে ধামরাইয়ের বালুর মাঠে ফেলে যায় ছিনতাইকারীরা। এ বিষয়ে রমনা থানার উপ-পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, ২৮শে জানুয়ারি এ ঘটনায় রমনা থানায় একটি জিডি করেছেন আমজাদ হোসেন।
এসব ঘটনার বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার ও পশ্চিম জোনের ছিনতাই, ডাকাতি, দস্যুতা প্রতিরোধ দলের প্রধান যায়েদ শাহরিয়ার বলেন, গত দুই বছরে এ ধরনের কিছু অভিযোগ ছিল। এসব অপরাধ দমন করতে পুলিশ সবসময় তৎপর। উন্নত প্রযুক্তি ও সোর্স ব্যবহার করে এসব অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
No comments