র্যাগিংয়ের নামে নিপীড়ন
জাহাঙ্গীরনগর
বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখার প্রথম দিনই নবীন এক ছাত্রীকে ফেলে দেয়া থুতু খেতে
বাধ্য করেন সিনিয়র শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার পর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে আরেক নির্মমতা। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের নবীন
এক ছাত্রীকে ক্যাফেটেরিয়ার ছাদে নিয়ে মানসিক নির্যাতন করেন বিভাগের দ্বিতীয়
সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা। এতে ওই ছাত্রীটি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেন। এভাবে
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় চলছে র্যাগিংয়ের নামে নীরব নিপীড়ন। রসিকতার
নামে নীরব এই নির্যাতনে পিছিয়ে নেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যাডেট কলেজ,
মেডিকেল কলেজ ও খ্যাতনামা সরকারি কলেজগুলোও। র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে অসংখ্য
শিক্ষার্থী স্বপ্ন সিঁড়িতে পা রাখতেই হোঁচট খাচ্ছেন। ক্যাম্পাস পরিবর্তন,
আত্মহত্যার চেষ্টা ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন তারা। অভিযুক্তদের
বহিষ্কারসহ কর্তৃপক্ষের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার পরও দেদার চলছে এমন নির্মমতা।
র্যাগিংয়ের নির্মমতায় এগিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৮ সালে
র্যাগিং প্রথা নিষিদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্তৃপক্ষ। তারপরও থেমে নেই
এই নিষ্ঠুর ‘রসিকতা’। র্যাগিংয়ের দায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী
বহিষ্কারও হয়েছেন। ২০১৫ সালের মার্চে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে
র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে নতুন কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদে প্রথম বর্ষের দুই
শিক্ষার্থী গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ক্লাস শেষে
সিনিয়রদের দ্বারা অতিরিক্ত মানসিক নির্যাতনের (গালাগাল ও হুমকি-ধামকি
প্রভৃতির) কারণে অজ্ঞান হয়ে পড়েন ওই দুই শিক্ষার্থী। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে
২০১৪ সালে নবীন এক ছাত্রীকে ফেলে দেয়া থুথু খেতে বাধ্য করার অভিযোগে ৩
ছাত্রীকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়। সম্প্রতি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি)
গণিত বিভাগের এক ছাত্রীর বিরুদ্ধে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা এক ছাত্রকে
র্যাগ দেয়ার অভিযোগ ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মো. শফিউল
আলম বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখেছি, সেটা র্যাগ ছিল না। সেটা উভয়ের
দ্বন্দ্ব ছিল। র্যাগিংয়ের ব্যাপারে আমাদের স্পষ্ট অবস্থান হচ্ছে, আমরা
কোনোভাবেই এটা সহ্য করবো না। যদি কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়
তাহলে তাকে বহিষ্কার করা হবে বলে জানান তিনি। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের ভয়াবহতা তেমন নেই, আছে ভিন্নতা। চার বছরের
রিপোর্টে দেখা গেছে, বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় র্যাগিং প্রথা
অতিমাত্রায় বেড়ে গেছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে র্যাগিং সংস্কৃতিটা দেশের সবচেয়ে
মেধাবীরাই অনুশীলন করছে। এটাকে তারা ‘মজা’, ‘আদব-কায়দা শেখানো’, ‘বাস্তব
পৃথিবীর জন্য তৈরি করা’, ও ‘সিনিয়র-জুনিয়র সম্পর্কোন্নয়ন’ নামে প্রচার করে।
এসবের নামে নবীন শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক সব পলিটিক্যাল ভাইদের পরিচয়
মুখস্থ রাখা, পিতা-মাতা ও পরিবারের অন্যদের জড়িয়ে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার,
সবার সামনে পুরোপুরি নগ্ন করে নাচানো, সবার সম্মুখে চরম অশ্লীল বই পড়তে
বাধ্য করা, সবার সামনে যৌন অভিনয়ে বাধ্য করা, পেস্ট খেতে বাধ্য করা, সবার
সামনে পর্নো দৃশ্য দেখতে বাধ্য করা, রাতে মশার কামড় খাওয়ানোর জন্য বাইরে
দাঁড় করিয়ে রাখা, কান ধরে উঠবস, বুকডন, মুরগি হয়ে বসিয়ে রাখা, প্রকাশ্যে
কোনো মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে বাধ্য করা, শীতের মধ্যে পানিতে নামানো ও
ফুটবল খেলতে বাধ্য করা, শীতের রাতে সিনিয়রদের কাজে বাইরে পাঠানো, সিগারেট,
গাঁজা, মদ পানে বাধ্য করা, ম্যাচের কাঠি দিয়ে রুম, মাঠের মাপ নেয়া, কোনো
আদেশ না মানলে গায়ে হাত তোলা, জীবনে কখন কোনোভাবে সেক্স করেছে কি না কথার
মারপ্যাঁচে বিব্রত করা হয়।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, কেরালা, তামিল প্রভৃতি রাজ্যে র্যাগিং প্রতিরোধে আইন থাকলেও বাংলাদেশে সুস্পষ্টভাবে র্যাগিং প্রতিরোধে কোনো আইন নেই। তবে উচ্চ আদালতে বিভিন্ন সময়ে র্যাগিংয়ের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্ট আইনের অভাব আর সুস্থধারার ছাত্র রাজনীতির অনুপস্থিতি এমন সামাজিক ব্যাধি আরও ছড়িয়ে পড়ছে বলে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্ররা মনে করেন। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন বলেন, এটা অবশ্যই প্রত্যাশিত নয়। নতুন ছাত্রদের বরণ করতে অনেক সুন্দর সুন্দর কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে সিনিয়ররা। শেখানোর নামে কাউকে মানুষিক নির্যাতন অনাকাঙিক্ষত। একই মত প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান। তিনি বলেন, নতুনরা ক্যাম্পসের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে কিছুটা সময় নেবে- এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে কাউকে নির্যাতন করে নিয়ম-কানুন শেখানো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর কাজ হতে পারে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। সিট পাওয়ার আগে জুনিয়রদের গণরুমে রাখা হয় আর প্রতিরাতে চলে র্যাগিং। এ র্যাগিংকে তারা ‘সিটিং’ বলে। কর্তৃপক্ষ এসবের বিরুদ্ধে কঠোর হলেও হরহামেশাই চলছে বিব্রতকর, অপমানকর এ মানুষিক অত্যাচার। প্রতি বছর র্যাগিং প্রতিরোধে নোটিশ টাঙানো হলেও, কাজের কাজ কিছুই হয় না বলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। কেউ প্রশাসনের কাছে অভিযোগের সাহসও পায় না। এতে করে একজন শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানুষিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছেন। শুধু এ কারণে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা দিতে চান না। র্যাগিংয়ের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের গেস্টরুম, গণরুম ও বিভাগের করিডোরে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা মধ্য রাত পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতন করে বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সাধারণত র্যাগিং যারা দেয় তারা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। তারা নবীনদের প্রথমেই জানিয়ে দেয় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কোনো লাভ নেই এবং দু-চারটি উদাহরণ পেশ করেন। তাছাড়া অভিযোগ করলে পরবর্তীকালে অন্য সমস্যা হতে পারে এই ভয় আছে। অনেকেই এটাকে ‘রীতি’ হিসেবে মেনে নেয়। কিছু ছাত্র আছে যারা আবার এটা উপভোগ করে আর সহপাঠী র্যাগিংয়ের শিকার হলে তাকে সান্ত্বনা দেয় ও অভিযোগে অনুৎসাহিত করে। র্যাগিংয়ের ফলে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে, অনেকে মানসিক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন। র্যাগিংয়ের ব্যাপারে একদম জিরো টলারেন্স বলে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তপন কুমার সাহা। তিনি বলেন, কোনো শিক্ষার্থী যদি কোনো শিক্ষার্থীকে র্যাগ দেয় এবং এটা প্রমাণ হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
র্যাগিং শব্দের প্রচলিত অর্থ হচ্ছে ‘পরিচয় পর্ব’। অর্থাৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুরাতন শিক্ষার্থীদের একটা সখ্য গড়ে তোলার জন্য যে পরিচিতি প্রথা সেটাকে র্যাগিং বলে অভিহিত করা হয়। অনেকের মতে র্যাগিং সংস্কৃতি এসেছে মূলত মিলিটারি থেকে। যেখানে ‘চেইন অফ কমান্ড’ মেনে চলতে হয়। আবার, অনেকের মতে, এর প্রথম শুরুটা হয়েছিল গ্রিক কালচারে; সপ্তম ও অষ্ঠম শতকে খেলার মাঠে টিম স্পিরিট নিয়ে আসার জন্য। কালের বিবর্তনে পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এটা ঢুকে যায় অষ্টদশ শতাব্দীতে; বিশেষ করে ইউরোপিয়ান দেশগুলোয়। ১৮২৮ থেকে ১৮৪৫ সালের দিকে যুক্তরাষ্টের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এর প্রচলন ঘটে বিভিন্ন ছাত্র সংস্থা পাই, আলফা, বিটা, গামা, কাপ্পা ও অন্যান্য ছাত্র সংস্থার উদ্ভবের মাধ্যমে। এগুলোয় সদস্যদের সাহসের পরিচয় নিতে র্যাগিং (পশ্চিমে এটাকে বলে হ্যাজিং) এর প্রচলন ঘটে। আমাদের উপমহাদেশে ইংরেজদের মাধ্যমে এই অপসংস্কৃতি অনুপ্রবেশ করে এবং এর বিবর্তিত রূপটা রয়ে যায়। বিশেষ করে র্যাগিংয়ের খারাপ প্রভাব সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বর্তমানে শ্রীলঙ্কাতে। যেসব দেশে র্যাগিং এর উদ্ভব হয়েছে, তারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রভাব মুক্ত হলেও আমাদের উপমহাদেশে এটি আরও ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। এমন অপমানকর প্রথা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুঁড়ে ফেলার সময় এসেছে।
র্যাগিংকে চরম অনাকাঙিক্ষত আচরণ উল্লেখ বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী ড. মোহিত কামাল বলেন, এর ফলে ভুক্তভোগীরা আতঙ্ক ও মানুষিক বিষণ্নতায় ভোগে। যারা এগুলো কাটিয়ে উঠতে পারে তারা পরবর্তীকালে র্যাগিংয়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। যারা র্যাগিং করেন তারা এটাকে ফান মনে করেন। মানুষকে কষ্ট দিয়ে তাদের মনকে সঙ্কুচিত করে তারা আনন্দ পায়। র্যাগিংকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নবীনদের বরণ করতে, তাদের সঠিক জিনিসটি শিক্ষা দিতে অনেক ভাল ভাল পদ্ধতি রয়েছে। মানুষের কথা শুনতে হবে, কাউকে কোন কিছুতে বাধ্য করা যাবে না।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, কেরালা, তামিল প্রভৃতি রাজ্যে র্যাগিং প্রতিরোধে আইন থাকলেও বাংলাদেশে সুস্পষ্টভাবে র্যাগিং প্রতিরোধে কোনো আইন নেই। তবে উচ্চ আদালতে বিভিন্ন সময়ে র্যাগিংয়ের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্ট আইনের অভাব আর সুস্থধারার ছাত্র রাজনীতির অনুপস্থিতি এমন সামাজিক ব্যাধি আরও ছড়িয়ে পড়ছে বলে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্ররা মনে করেন। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন বলেন, এটা অবশ্যই প্রত্যাশিত নয়। নতুন ছাত্রদের বরণ করতে অনেক সুন্দর সুন্দর কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারে সিনিয়ররা। শেখানোর নামে কাউকে মানুষিক নির্যাতন অনাকাঙিক্ষত। একই মত প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান। তিনি বলেন, নতুনরা ক্যাম্পসের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে কিছুটা সময় নেবে- এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে কাউকে নির্যাতন করে নিয়ম-কানুন শেখানো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর কাজ হতে পারে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। সিট পাওয়ার আগে জুনিয়রদের গণরুমে রাখা হয় আর প্রতিরাতে চলে র্যাগিং। এ র্যাগিংকে তারা ‘সিটিং’ বলে। কর্তৃপক্ষ এসবের বিরুদ্ধে কঠোর হলেও হরহামেশাই চলছে বিব্রতকর, অপমানকর এ মানুষিক অত্যাচার। প্রতি বছর র্যাগিং প্রতিরোধে নোটিশ টাঙানো হলেও, কাজের কাজ কিছুই হয় না বলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ। কেউ প্রশাসনের কাছে অভিযোগের সাহসও পায় না। এতে করে একজন শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানুষিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছেন। শুধু এ কারণে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা দিতে চান না। র্যাগিংয়ের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের গেস্টরুম, গণরুম ও বিভাগের করিডোরে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা মধ্য রাত পর্যন্ত শারীরিক নির্যাতন করে বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। সাধারণত র্যাগিং যারা দেয় তারা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। তারা নবীনদের প্রথমেই জানিয়ে দেয় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কোনো লাভ নেই এবং দু-চারটি উদাহরণ পেশ করেন। তাছাড়া অভিযোগ করলে পরবর্তীকালে অন্য সমস্যা হতে পারে এই ভয় আছে। অনেকেই এটাকে ‘রীতি’ হিসেবে মেনে নেয়। কিছু ছাত্র আছে যারা আবার এটা উপভোগ করে আর সহপাঠী র্যাগিংয়ের শিকার হলে তাকে সান্ত্বনা দেয় ও অভিযোগে অনুৎসাহিত করে। র্যাগিংয়ের ফলে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে, অনেকে মানসিক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন। র্যাগিংয়ের ব্যাপারে একদম জিরো টলারেন্স বলে জানিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তপন কুমার সাহা। তিনি বলেন, কোনো শিক্ষার্থী যদি কোনো শিক্ষার্থীকে র্যাগ দেয় এবং এটা প্রমাণ হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
র্যাগিং শব্দের প্রচলিত অর্থ হচ্ছে ‘পরিচয় পর্ব’। অর্থাৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুরাতন শিক্ষার্থীদের একটা সখ্য গড়ে তোলার জন্য যে পরিচিতি প্রথা সেটাকে র্যাগিং বলে অভিহিত করা হয়। অনেকের মতে র্যাগিং সংস্কৃতি এসেছে মূলত মিলিটারি থেকে। যেখানে ‘চেইন অফ কমান্ড’ মেনে চলতে হয়। আবার, অনেকের মতে, এর প্রথম শুরুটা হয়েছিল গ্রিক কালচারে; সপ্তম ও অষ্ঠম শতকে খেলার মাঠে টিম স্পিরিট নিয়ে আসার জন্য। কালের বিবর্তনে পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এটা ঢুকে যায় অষ্টদশ শতাব্দীতে; বিশেষ করে ইউরোপিয়ান দেশগুলোয়। ১৮২৮ থেকে ১৮৪৫ সালের দিকে যুক্তরাষ্টের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এর প্রচলন ঘটে বিভিন্ন ছাত্র সংস্থা পাই, আলফা, বিটা, গামা, কাপ্পা ও অন্যান্য ছাত্র সংস্থার উদ্ভবের মাধ্যমে। এগুলোয় সদস্যদের সাহসের পরিচয় নিতে র্যাগিং (পশ্চিমে এটাকে বলে হ্যাজিং) এর প্রচলন ঘটে। আমাদের উপমহাদেশে ইংরেজদের মাধ্যমে এই অপসংস্কৃতি অনুপ্রবেশ করে এবং এর বিবর্তিত রূপটা রয়ে যায়। বিশেষ করে র্যাগিংয়ের খারাপ প্রভাব সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বর্তমানে শ্রীলঙ্কাতে। যেসব দেশে র্যাগিং এর উদ্ভব হয়েছে, তারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রভাব মুক্ত হলেও আমাদের উপমহাদেশে এটি আরও ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। এমন অপমানকর প্রথা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুঁড়ে ফেলার সময় এসেছে।
র্যাগিংকে চরম অনাকাঙিক্ষত আচরণ উল্লেখ বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী ড. মোহিত কামাল বলেন, এর ফলে ভুক্তভোগীরা আতঙ্ক ও মানুষিক বিষণ্নতায় ভোগে। যারা এগুলো কাটিয়ে উঠতে পারে তারা পরবর্তীকালে র্যাগিংয়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। যারা র্যাগিং করেন তারা এটাকে ফান মনে করেন। মানুষকে কষ্ট দিয়ে তাদের মনকে সঙ্কুচিত করে তারা আনন্দ পায়। র্যাগিংকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নবীনদের বরণ করতে, তাদের সঠিক জিনিসটি শিক্ষা দিতে অনেক ভাল ভাল পদ্ধতি রয়েছে। মানুষের কথা শুনতে হবে, কাউকে কোন কিছুতে বাধ্য করা যাবে না।
No comments