‘৮ জন মানুষ পুড়ে ছাই হয়া গেল বিচার পাল্যাম না বাহে’
‘আগুনত পুড়িয়া ৮ জন মানুষ ছাই হয়া মরি গেল বাহে, তার বিচার পাল্যাম না। সরকার হামাক ট্যাকা দিছে, কিন্তু মানুষ তো আর ফেরত দিবার পায় নাই। এক বছর গেলো বিচারও হলো না।’- এই কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের চন্ডিপুর গ্রামের নিহত শিশু শিল্পী রানীর হতভাগা বাবা বলরাম দাশ। আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে যাওয়া মেয়ের লাশ না পেয়ে তার যন্ত্রণা কমেনি। এখন মেয়ের ছবি আর গায়ের পোড়া জামা বুকে জড়িয়ে শুধু স্মৃতিচারণ করেন। বছর পেরিয়ে গেলেও দুর্বৃত্তদের আগুন সন্ত্রাসের শিকার ৮ নিহতের পরিবারের কান্না থামেনি। মেডিকেল রিপোর্টের কারণে ঘাতকদের নামে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়নি এক বছরেও। পেট্রল বোমার আগুনে পুড়ে মারা যাওয়ার পরও জড়িতদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করা সম্ভব না হওয়ায় বিক্ষুব্ধ ওই স্বজনরা। গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মেহেদী হাসান মামলার বর্ণনা করে জানান, আন্দোলনের সময় ২০১৫ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে গাইবান্ধায় ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা। পুলিশ প্রহরায় বাস যোগে গাইবান্ধা থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে সাহাপাড়া নামক স্থানে দুর্বৃত্তরা সুন্দরগঞ্জ থেকে আগত ঢাকাগামী নাপু এন্টারপ্রাইজের যাত্রীভর্তি একটি বাসে পেট্রল বোমা ছুড়ে মারে। বোমার আগুনে পুড়ে নারী ও শিশুসহ ঘটনাস্থলে উপজেলার চণ্ডিপুর ইউনিয়নের কালির খামার গ্রামের বাসিন্দা দিনমজুর সৈয়দ আলী, চণ্ডিপুর গ্রামের সুমন মিয়া, শিশু শিল্পী রানী, পশ্চিম সিচা গ্রামের হালিমা বেগম ৪ জন ও পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চন্ডিপুর পাইকপাড়া গ্রামের শিশু সুজন, সুজনের মা সোনাভান, সাজু মিয়া, গাইবান্ধা সদর উপজেলার ফকিরপাড়া গ্রামের আবুল কালাম আজাদসহ ৮ জন মারা যায়। আহত হয় প্রায় ৩৫ জন। আহতরা দীর্ঘদিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে ফিরে আসে পঙ্গুত্ব নিয়ে। পরে সরকারিভাবে নিহত এবং আহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়। এ ব্যাপারে গাইবান্ধা সদর থানার এসআই মাহবুব আলম বাদী হয়ে জামায়াত-বিএনপির ৬০ জনের নাম উল্লেখ করে গাইবান্ধা থানায় মামলা করেন। পুলিশ জানায়, মামলার দীর্ঘদিন অভিযান চালিয়ে ও তদন্ত করে মামলার মূল আসামিসহ অধিকাংশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু ডাক্তারি সার্টিফিকেট না পাওয়ায় দীর্ঘ এক বছরেও বোমা হামলায় ৮ জনের হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করা যায়নি। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ায় নিহতের স্বজনরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। ওই ঘটনায় নিহতদের স্বজনরা জানান, ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা পেয়েছি কিন্তু হত্যার বিচার পাইনি। নিহত শিশু শিল্পী রানীর পিতা বলরাম দাস বলেন, আমার মেয়ে পুড়ে মারা গেছে কিন্তু আগুনে পুড়ে যাওয়া তার লাশও পাইনি। প্রতিবেশী সুমতি রানী, নিহত শিশু শিল্পী দাসের মা সাধনা রানী জানান, আমরা তো রাজনীতি করি না। কাজ করে খাই, গাইবান্ধা থেকে অন্য খানে কাজ করে পেটের খাবার যোগাড় করি। তার পরও আমাদের ওপর হামলা কেন? আমরা ওই সন্ত্রাসী অপরাধীদের বিচার চাই। গাইবান্ধার পুলিশ সুপার আশরাফুল ইসলাম ডাক্তারি সার্টিফিকেট বিলম্বে পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, মামলার চার্জশিট জমা দিতে দেরি হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করা গেছে এবং তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
No comments