আমিনুল পাশে না দাঁড়ালে জিয়া হয়তো তার ভাগ্য তাহেরের হাতেই সমর্পণ করতেন
৩রা
নভেম্বর খালেদ মোশাররফ ও তার অনুগামীরা বঙ্গভবন ঘেরাও করেন। কিন্তু এর আগে
অক্টোবর মাসে তাকে এই বলে সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল যে সেনাপ্রধান জিয়াউর
রহমানকে সঙ্গে নিয়ে খুনিদের শায়েস্তা করা কোন ব্যাপারই নয়। কিন্তু তাকে বাদ
দিয়ে করতে গেলে সেনাবাহিনীতে বিভাজন দেখা দেবে। ফলাফল নৈরাশ্যজনক হবে।
তদুপরি চেইন অব কমান্ড স্থাপন করতে গিয়ে সেনাপ্রধানকে বাদ দিয়ে অপারেশন
শুরু করলে তা চেইন অব কমান্ড ভঙ্গেরই শামিল হবে। তাতে অপারেশন শুরু করার
আগেই অপারেশন ভেস্তে যাবে। তিনি হেসে বলেছিলেন, চিফ ওদের (এক লেফটেন্যান্ট
কর্নেল ও পাঁচ মেজর) বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাবেন না।
প্রয়াত মেজর জেনারেল আমীন আহম্মেদ চৌধুরী ‘১৯৭১ ও আমার সামরিক জীবন’ বইয়ে এসব কথা লিখেছেন। প্রথমা থেকে সদ্য প্রকাশিত ওই বইয়ে তিনি আরও লিখেছেন, সঙ্গে সঙ্গে তাকে (খালেদ মোশাররফ) এও বলা হলো যে সিরাজ সিকদার ও জাসদের গ্রুপ বহুদিন থেকে সেনাবাহিনীর ভেতরে তৎপর, তারাও অরাজকতার সুযোগ নিতে পারে। বিশেষ করে কর্নেল তাহের তার সেনা ব্যাকগ্রাউন্ড কাজে লাগিয়ে একটা অঘটন ঘটাতে পারেন। জবাবে আত্মপ্রত্যয়ী খালেদ মোশাররফ বলেন, তাহের একজন আরবান গেরিলা ব্যাপক আকারে কিছু করার ক্ষমতা তার নেই। মিসেস খালেদ মোশাররফও জেনারেল খালেদকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, তিনি যেন জিয়ার বিরুদ্ধে কিছু করতে না যান। শাফায়াত জামিলও ব্যক্তিগতভাবে জিয়াকে পছন্দ করতেন। ফলে, জিয়াকে গৃহবন্দী করেই তারা তাদের অপারেশন শুরু করেন।
অনেকেই মনে করেন, খালেদ-শাফায়াত গোড়ায় গলদ করে বসেছিলেন। সেনাদের মধ্যে জিয়ার ইমেজ ঈর্ষণীয় পর্যায়ে ছিল। কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে জিয়ার ভারী গলায় ঘোষণা সেনাসহ সর্বস্তরের মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করেছিল, ফলে তার একটা আলাদা ইমেজ ছিল। কর্নেল আবু তাহের এ সুযোগ আগ বাড়িয়ে গ্রহণ করেন। তাহেরের সঙ্গে জিয়ার যোগাযোগ সবসময়ই ছিল। তাহের রুশ বিপ্লবের তারিখকে স্মরণ করে তার বিপ্লবের তারিখ আগ থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন ৬ই নভেম্বর (ঘড়ির কাঁটা অনুসারে ৭ই নভেম্বর) রাত ১২টা। এর মধ্যে নভেম্বরের অভ্যুত্থান তাকে সুবর্ণ সুযোগ করে দেয়। তাহের আগে থেকেই ওসমানী, জিয়া ও খালেদের মধ্যে জিয়াকে বেছে নিয়েছিলেন তার বিপ্লবের নায়ক হিসেবে। জিয়াকে গৃহবন্দী থেকে উদ্ধার করতে হবে- এ দাবি সামনে নিয়ে এসে সেনা ও সিভিল কর্মচারী-কর্মকর্তাদের একত্র করেন তিনি। সঙ্গে রাখেন সৈনিকদের ১২ দফা। রাত ১২টায় প্রথম গোলাগুলি শুরু হয়।
এ সময় শাফায়াত জামিল বঙ্গভবন থেকে টেলিফোনে জানতে চাইলেন, সত্যিই কোন ফায়ারিং শুরু হয়েছে কিনা। তারপর তিনি বঙ্গভবন ত্যাগ করেন। খালেদ মোশাররফ, কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রম ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার বীর উত্তম বঙ্গভবন থেকে বের হন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। ৬ই নভেম্বর হায়দারের সঙ্গে আমার দেখা হয়। ওইদিন তিনি আমার বাসায় ফোন করেন। তখন আমি ছিলাম না। আমার স্ত্রীকে হায়দার জানান, রাতে তিনি আমাদের বাসায় আসবেন ও খাবেন। তিনি আমার স্ত্রীকে বলেন, আমি স্যারের মতো সাহেব না, মুরগি খাই না। আমার জন্য ছোট মাছ রান্না করবেন। সেদিন সন্ধ্যার পর তিনি আমাদের বাসায় আসেন। আমাদের বাসা থেকে হায়দার নতুন সেনাপ্রধান খালেদ মোশাররফের বাসায় ফোন করেন। ঘটনাচক্রে তখন খালেদ মোশাররফ বাসায় ছিলেন। তারা দুজন কিছুক্ষণ কথা বলেন।
মুক্তিযুদ্ধকালে খালেদ মোশাররফ ও হায়দার একসঙ্গে যুদ্ধ করেন। এছাড়া খালেদ মোশাররফকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করতেন হায়দার। খালেদ মোশাররফের সঙ্গে কথা বলার পর হায়দার তার বাসায় যান তার সঙ্গে দেখা করতে। যাওয়ার আগে হায়দার আমাদের বলে যান, তিনি খালেদ মোশাররফের সঙ্গে দেখা করে কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবেন। ফিরে এসে আমাদের সঙ্গে খাবেন। আমরা যেন তার জন্য অপেক্ষা করি। হায়দারের আর সেই খাওয়া হয়নি।
পরে খালেদ মোশাররফের সঙ্গে বঙ্গভবনে যান হায়দার। রাতে সেনানিবাসে গোলগুলি শুরু হলে খালেদ মোশাররফ, খন্দকার নাজমুল হুদা ও হায়দার বঙ্গভবন থেকে বের হওয়ার পর শেরেবাংলা নগরে অবস্থানরত ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের হেডকোয়ার্টারে এসে হঠকারিতার শিকার হন। ৭ই নভেম্বর সকালে তারা তিনজন নির্মমভাবে নিহত হন। মুক্তিযুদ্ধের কে ফোর্স কমান্ডার কিংবদন্তি এক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের এ করুণ পরিণতি সবাইকে ব্যথিত করেছিল।
এদিকে গৃহবন্দী অবস্থা থেকে বের হয়ে জিয়া শক্ত হাতে হাল ধরার চেষ্টা করতে থাকেন। কর্নেল তাহের সশস্ত্রবাহিনীর কমান্ড কাঠামোর একেবারে কোমরে আঘাত করেছিলেন। সেই সময় কর্নেল আমিনুল হক বীর উত্তম তার ব্যাটালিয়ন নিয়ে অতন্দ্র প্রহরীর মতো জিয়ার পাশে না দাঁড়ালে জিয়া হয়তো তার ভাগ্য তাহেরের হাতেই সমর্পণ করতেন।
প্রয়াত মেজর জেনারেল আমীন আহম্মেদ চৌধুরী ‘১৯৭১ ও আমার সামরিক জীবন’ বইয়ে এসব কথা লিখেছেন। প্রথমা থেকে সদ্য প্রকাশিত ওই বইয়ে তিনি আরও লিখেছেন, সঙ্গে সঙ্গে তাকে (খালেদ মোশাররফ) এও বলা হলো যে সিরাজ সিকদার ও জাসদের গ্রুপ বহুদিন থেকে সেনাবাহিনীর ভেতরে তৎপর, তারাও অরাজকতার সুযোগ নিতে পারে। বিশেষ করে কর্নেল তাহের তার সেনা ব্যাকগ্রাউন্ড কাজে লাগিয়ে একটা অঘটন ঘটাতে পারেন। জবাবে আত্মপ্রত্যয়ী খালেদ মোশাররফ বলেন, তাহের একজন আরবান গেরিলা ব্যাপক আকারে কিছু করার ক্ষমতা তার নেই। মিসেস খালেদ মোশাররফও জেনারেল খালেদকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিলেন, তিনি যেন জিয়ার বিরুদ্ধে কিছু করতে না যান। শাফায়াত জামিলও ব্যক্তিগতভাবে জিয়াকে পছন্দ করতেন। ফলে, জিয়াকে গৃহবন্দী করেই তারা তাদের অপারেশন শুরু করেন।
অনেকেই মনে করেন, খালেদ-শাফায়াত গোড়ায় গলদ করে বসেছিলেন। সেনাদের মধ্যে জিয়ার ইমেজ ঈর্ষণীয় পর্যায়ে ছিল। কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে জিয়ার ভারী গলায় ঘোষণা সেনাসহ সর্বস্তরের মানুষকে উদ্ধুদ্ধ করেছিল, ফলে তার একটা আলাদা ইমেজ ছিল। কর্নেল আবু তাহের এ সুযোগ আগ বাড়িয়ে গ্রহণ করেন। তাহেরের সঙ্গে জিয়ার যোগাযোগ সবসময়ই ছিল। তাহের রুশ বিপ্লবের তারিখকে স্মরণ করে তার বিপ্লবের তারিখ আগ থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন ৬ই নভেম্বর (ঘড়ির কাঁটা অনুসারে ৭ই নভেম্বর) রাত ১২টা। এর মধ্যে নভেম্বরের অভ্যুত্থান তাকে সুবর্ণ সুযোগ করে দেয়। তাহের আগে থেকেই ওসমানী, জিয়া ও খালেদের মধ্যে জিয়াকে বেছে নিয়েছিলেন তার বিপ্লবের নায়ক হিসেবে। জিয়াকে গৃহবন্দী থেকে উদ্ধার করতে হবে- এ দাবি সামনে নিয়ে এসে সেনা ও সিভিল কর্মচারী-কর্মকর্তাদের একত্র করেন তিনি। সঙ্গে রাখেন সৈনিকদের ১২ দফা। রাত ১২টায় প্রথম গোলাগুলি শুরু হয়।
এ সময় শাফায়াত জামিল বঙ্গভবন থেকে টেলিফোনে জানতে চাইলেন, সত্যিই কোন ফায়ারিং শুরু হয়েছে কিনা। তারপর তিনি বঙ্গভবন ত্যাগ করেন। খালেদ মোশাররফ, কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রম ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার বীর উত্তম বঙ্গভবন থেকে বের হন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে। ৬ই নভেম্বর হায়দারের সঙ্গে আমার দেখা হয়। ওইদিন তিনি আমার বাসায় ফোন করেন। তখন আমি ছিলাম না। আমার স্ত্রীকে হায়দার জানান, রাতে তিনি আমাদের বাসায় আসবেন ও খাবেন। তিনি আমার স্ত্রীকে বলেন, আমি স্যারের মতো সাহেব না, মুরগি খাই না। আমার জন্য ছোট মাছ রান্না করবেন। সেদিন সন্ধ্যার পর তিনি আমাদের বাসায় আসেন। আমাদের বাসা থেকে হায়দার নতুন সেনাপ্রধান খালেদ মোশাররফের বাসায় ফোন করেন। ঘটনাচক্রে তখন খালেদ মোশাররফ বাসায় ছিলেন। তারা দুজন কিছুক্ষণ কথা বলেন।
মুক্তিযুদ্ধকালে খালেদ মোশাররফ ও হায়দার একসঙ্গে যুদ্ধ করেন। এছাড়া খালেদ মোশাররফকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করতেন হায়দার। খালেদ মোশাররফের সঙ্গে কথা বলার পর হায়দার তার বাসায় যান তার সঙ্গে দেখা করতে। যাওয়ার আগে হায়দার আমাদের বলে যান, তিনি খালেদ মোশাররফের সঙ্গে দেখা করে কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবেন। ফিরে এসে আমাদের সঙ্গে খাবেন। আমরা যেন তার জন্য অপেক্ষা করি। হায়দারের আর সেই খাওয়া হয়নি।
পরে খালেদ মোশাররফের সঙ্গে বঙ্গভবনে যান হায়দার। রাতে সেনানিবাসে গোলগুলি শুরু হলে খালেদ মোশাররফ, খন্দকার নাজমুল হুদা ও হায়দার বঙ্গভবন থেকে বের হওয়ার পর শেরেবাংলা নগরে অবস্থানরত ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের হেডকোয়ার্টারে এসে হঠকারিতার শিকার হন। ৭ই নভেম্বর সকালে তারা তিনজন নির্মমভাবে নিহত হন। মুক্তিযুদ্ধের কে ফোর্স কমান্ডার কিংবদন্তি এক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের এ করুণ পরিণতি সবাইকে ব্যথিত করেছিল।
এদিকে গৃহবন্দী অবস্থা থেকে বের হয়ে জিয়া শক্ত হাতে হাল ধরার চেষ্টা করতে থাকেন। কর্নেল তাহের সশস্ত্রবাহিনীর কমান্ড কাঠামোর একেবারে কোমরে আঘাত করেছিলেন। সেই সময় কর্নেল আমিনুল হক বীর উত্তম তার ব্যাটালিয়ন নিয়ে অতন্দ্র প্রহরীর মতো জিয়ার পাশে না দাঁড়ালে জিয়া হয়তো তার ভাগ্য তাহেরের হাতেই সমর্পণ করতেন।
No comments