বিচারপতিদের ডাকা মানে স্বাধীনতা খর্ব করা
বিচার বিভাগ স্বাধীন না থাকলে দেশের কেউ নিরাপদ থাকতে পারবে না। ইমপিচমেন্টের বিধান থাকতে আপনি সংসদ বা টকশো কোথাও বিচারপতিদের সমালোচনা করতে পারেন না। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনায় বিশিষ্টজনরা এসব মন্তব্য করেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন এ আলোচনার আয়োজন করে। আলোচনায় অংশ নিয়ে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি আবদুল মতিন বলেন, বিচারপতিদের ডাকা মানে তাদের স্বাধীনতা কার্টেল করা। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ যদি পান তাহলে তাদের ইমপিচমেন্ট করেন। আর চায়ের দাওয়াত না, আর ডিনার পার্টি না। তিনি বলেন, সর্বজনীন মানবাধিকায় ঘোষণায় প্রত্যেক নাগরিকের বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু সে বিচার হতে হবে স্বাধীনভাবে। তিনি বলেন, ‘বিচারপতিদের নিয়ে সংসদে আলোচনা করা যাবে না এবং ব্যক্তিগত ডিনারে আহ্বান করা যাবে না- ভারতে এ ধরনের আইন থাকলেও আমাদের এখানে এ ধরনের আইন নেই। আমি মনে করি, এ ধরনের সংস্কৃতি বন্ধ করা দরকার। না হয় বিচারপতিরা স্বাধীনভাবে রায় দিলেও জনগণের মধ্যে বিচার বিভাগের প্রতি এক ধরনের অনাস্থা তৈরি হবে।
আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন নির্বাহী সদস্য ও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। প্রবন্ধে তিনি বলেন, বিচার বিভাগ, নির্বাহী ও আইন বিভাগ থেকে পৃথক হতে হবে। একইসঙ্গে বিচারকার্যে বিচার বিভাগের থাকতে হবে সমপূর্ণ স্বাধীনতা। আমরা স্বাধীনতার চার দশক পরেও এখনও প্রায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলছি। এবং যা আলাপ-আলোচনা করছি তার প্রায় সব কথাই সমালোচনা-ধর্মীয়। অর্থাৎ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন আছে। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে স্বস্তি নেই, আছে উৎকণ্ঠা।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট আইনজীবী গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি সত্যিকার নিরপেক্ষ না থাকে, তাহলে গণতন্ত্র থাকবে না। বিচারকদের নৈতিকতা, সত্যবাদিতা ও ন্যায়বোধ না থাকলে যত আইনই থাকুক না কেন তাতে কোনো কাজ হবে না। প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, বিচারকরা কোনো যোগ্যতায় নিয়োগ হলো-তা জনগণের জানার অধিকার আছে। আমরা সেই যোগ্যতা দেখতে চাই। যোগ্য লোক নিজের দলের হলেও আপত্তি নেই, তবে অযোগ্য লোক কীভাবে নিয়োগ পায়- এটা জানার অধিকার জনগণের আছে। সংবিধান জনগণকে সে অধিকার দিয়েছে। তিনি বলেন, দলীয়করণের কারণে আমরা ক্যানসারে ভুগছি। দলীয়করণ একটা পুরাতন রোগ। বিচার বিভাগের বর্তমান অবস্থার সমালোচনা করে ড. কামাল বলেন, বিচার বিভাগ একটি স্তম্ভ, এই স্তম্ভকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা থাকে না। বিচার বিভাগ স্বাধীন না থাকলে কেউ নিরাপদ থাকতে পারবে না। আমাদের ছেলে মেয়ে, নাতি-নাতনিরাও নিরাপদ থাকবে না। তারা কিসের মধ্যে বাস করবে! তিনি এও বলেন, বিচার বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে কখনও দলীয়করণ হতে পারে না। এদেশের মানুষের মধ্যে মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে। তাই জনগণ দেশের মালিক নয় এবং বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকবে না- এ ধরনের ঘোষণা দেয়া হলে জনগণ মেনে নেবে না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা না থাকলে কারো অধিকার সুরক্ষিত থাকে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন-বিচার বিভাগ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। বিচার বিভাগ সম্পর্কে জনগণের মাঝে নেতিবাচক হতাশা আছে। প্রধান বিচারপতি নিয়ে বিতর্কের কোনো কারণ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সাধারণ মানুষকে বিচারবঞ্চিত করার অধিকার আছে কিনা- এতে বোঝা যায় আমরা গণতান্ত্রিক দেশে আছি কিনা? আমাদের বলা হয় স্বৈরতান্ত্রিক প্রোডাক্ট। তিনি বলেন, যে সংগঠনগুলো নাগরিকের নিরাপত্তা দেবে, আজ তারাই জনগণকে আগুন দিয়ে-তেল দিয়ে পুড়িয়ে মারছে। এর প্রতিকার করার দায়িত্ব বিচার বিভাগের। তা না হলে গণতন্ত্র হুমকির মধ্যে আছে, আরও হুমকির মধ্যে পড়বে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে বিচার মানা হয় না, বিচারহীনতা, বিচারবঞ্চনা, আইনের শাসন পাওয়ার অধিকার পদে পদে লঙ্ঘিত হচ্ছে। তিনি বলেন, কিছু লোক বিচার করার জন্য বসেই আছে, ইউনিয়ন পরিষদে যান, দেখবেন গ্রাম্য আদালতের প্রধান ইউপি চেয়ারম্যান। দলীয় লোক হয়ে কীভাবে নিরপেক্ষ বিচার করবেন- প্রশ্ন রেখে তোফায়েল আহমেদ এই কোর্টের থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। থানাতেও রাতের বেলা একজন উপ-পরিদর্শকের নেতৃত্বে আদালত বসছে, সেখানে ঘুষের ছড়াছড়ি। যে কারণে এখন আর জমি সংক্রান্ত মামলা কোর্টে না গিয়ে থানায় চলে যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম (আসিফ নজরুল) বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খোলামেলা ও বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করা দরকার। কিন্তু আদালত অবমাননা আইনের অপপ্রয়োগের কারণে বর্তমানে খোলামেলা আলোচনা করা যায় না। আমরা শুনেছি যে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মানে না আইন মন্ত্রণালয়। অথচ সেক্ষেত্রে আদালত অবমাননার রুল জারি করা হচ্ছে না। বিচারক নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিচারক নিয়োগের আইন না থাকায় অনেক অযোগ্য আইনজীবী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন। চারটি ডিগ্রির মধ্যে তিনটিতেই তৃতীয় শ্রেণি পেয়েছেন এমন আইনজীবীও বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বলে শোনা যায়। আমরা আদালতের সমালোচনা করলে আদালত অবমাননা হয়ে যায়, কিন্তু সরকারের কোনো লোক- বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী একবার আদালতের আদেশ অমান্য করলেন, এবং বললেন আমি আমার কাজ করবো, দেখি আদালত কী করতে পারে। তারপরও তার প্রতি আদালত অবমাননা হলো না! আমরা গঠনমূলক সমালোচনা করলেই অবমাননা হয়ে যায়, তাহলে কী আমরা কথা বলবো না?
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, আমরা বিচার বিভাগকে স্বাধীন ও কার্যকর দেখতে চাই। কিন্তু কলুষিত রাজনীতি বিরাজমান থাকলে বিচার বিভাগ স্বাধীন হবে না। এ অবস্থায় দুর্নীতি রোধ করা এবং রাজনৈতিক সংস্কার দরকার, যাতে বিচার বিভাগকেও স্বাধীন করা যায় এবং মানুষ ন্যায়বিচার পায়। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা দরকার। এছাড়া বিচার বিভাগ স্বাধীন হলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়। কিন্তু আমাদের বিচার বিভাগ গরিব ও দুর্বলবান্ধব নয়। এ অবস্থায় আমাদের বিচার বিভাগকে ক্ষমতাবান্ধব না হয়ে দুর্বলবান্ধব হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, এখন কোর্ট দুই ভাগে বিভক্ত। একটি আওয়ামী লীগ, আরেকটি বিএনপি। যদি আইনমন্ত্রী, এমপি বা বিচারপতির সন্তান হওয়া যায়, তাহলে তাদের কাছে ক্লায়েন্টরা যায়। তাহলে আমরা কীভাবে প্র্যাকটিস করবো? সুজন সভাপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মহসেন রশিদ, অ্যাডভোকেট হাসান তারিক চৌধুরী, জাকির হোসেন, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, হুমায়ূন কবীর হিরু প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন নির্বাহী সদস্য ও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। প্রবন্ধে তিনি বলেন, বিচার বিভাগ, নির্বাহী ও আইন বিভাগ থেকে পৃথক হতে হবে। একইসঙ্গে বিচারকার্যে বিচার বিভাগের থাকতে হবে সমপূর্ণ স্বাধীনতা। আমরা স্বাধীনতার চার দশক পরেও এখনও প্রায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলছি। এবং যা আলাপ-আলোচনা করছি তার প্রায় সব কথাই সমালোচনা-ধর্মীয়। অর্থাৎ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন আছে। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে স্বস্তি নেই, আছে উৎকণ্ঠা।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট আইনজীবী গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি সত্যিকার নিরপেক্ষ না থাকে, তাহলে গণতন্ত্র থাকবে না। বিচারকদের নৈতিকতা, সত্যবাদিতা ও ন্যায়বোধ না থাকলে যত আইনই থাকুক না কেন তাতে কোনো কাজ হবে না। প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, বিচারকরা কোনো যোগ্যতায় নিয়োগ হলো-তা জনগণের জানার অধিকার আছে। আমরা সেই যোগ্যতা দেখতে চাই। যোগ্য লোক নিজের দলের হলেও আপত্তি নেই, তবে অযোগ্য লোক কীভাবে নিয়োগ পায়- এটা জানার অধিকার জনগণের আছে। সংবিধান জনগণকে সে অধিকার দিয়েছে। তিনি বলেন, দলীয়করণের কারণে আমরা ক্যানসারে ভুগছি। দলীয়করণ একটা পুরাতন রোগ। বিচার বিভাগের বর্তমান অবস্থার সমালোচনা করে ড. কামাল বলেন, বিচার বিভাগ একটি স্তম্ভ, এই স্তম্ভকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হলে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা থাকে না। বিচার বিভাগ স্বাধীন না থাকলে কেউ নিরাপদ থাকতে পারবে না। আমাদের ছেলে মেয়ে, নাতি-নাতনিরাও নিরাপদ থাকবে না। তারা কিসের মধ্যে বাস করবে! তিনি এও বলেন, বিচার বিভাগে নিয়োগের ক্ষেত্রে কখনও দলীয়করণ হতে পারে না। এদেশের মানুষের মধ্যে মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে। তাই জনগণ দেশের মালিক নয় এবং বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকবে না- এ ধরনের ঘোষণা দেয়া হলে জনগণ মেনে নেবে না। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা না থাকলে কারো অধিকার সুরক্ষিত থাকে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন-বিচার বিভাগ অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। বিচার বিভাগ সম্পর্কে জনগণের মাঝে নেতিবাচক হতাশা আছে। প্রধান বিচারপতি নিয়ে বিতর্কের কোনো কারণ নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সাধারণ মানুষকে বিচারবঞ্চিত করার অধিকার আছে কিনা- এতে বোঝা যায় আমরা গণতান্ত্রিক দেশে আছি কিনা? আমাদের বলা হয় স্বৈরতান্ত্রিক প্রোডাক্ট। তিনি বলেন, যে সংগঠনগুলো নাগরিকের নিরাপত্তা দেবে, আজ তারাই জনগণকে আগুন দিয়ে-তেল দিয়ে পুড়িয়ে মারছে। এর প্রতিকার করার দায়িত্ব বিচার বিভাগের। তা না হলে গণতন্ত্র হুমকির মধ্যে আছে, আরও হুমকির মধ্যে পড়বে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে বিচার মানা হয় না, বিচারহীনতা, বিচারবঞ্চনা, আইনের শাসন পাওয়ার অধিকার পদে পদে লঙ্ঘিত হচ্ছে। তিনি বলেন, কিছু লোক বিচার করার জন্য বসেই আছে, ইউনিয়ন পরিষদে যান, দেখবেন গ্রাম্য আদালতের প্রধান ইউপি চেয়ারম্যান। দলীয় লোক হয়ে কীভাবে নিরপেক্ষ বিচার করবেন- প্রশ্ন রেখে তোফায়েল আহমেদ এই কোর্টের থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। থানাতেও রাতের বেলা একজন উপ-পরিদর্শকের নেতৃত্বে আদালত বসছে, সেখানে ঘুষের ছড়াছড়ি। যে কারণে এখন আর জমি সংক্রান্ত মামলা কোর্টে না গিয়ে থানায় চলে যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম (আসিফ নজরুল) বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খোলামেলা ও বিস্তারিত আলাপ-আলোচনা করা দরকার। কিন্তু আদালত অবমাননা আইনের অপপ্রয়োগের কারণে বর্তমানে খোলামেলা আলোচনা করা যায় না। আমরা শুনেছি যে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা মানে না আইন মন্ত্রণালয়। অথচ সেক্ষেত্রে আদালত অবমাননার রুল জারি করা হচ্ছে না। বিচারক নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিচারক নিয়োগের আইন না থাকায় অনেক অযোগ্য আইনজীবী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন। চারটি ডিগ্রির মধ্যে তিনটিতেই তৃতীয় শ্রেণি পেয়েছেন এমন আইনজীবীও বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বলে শোনা যায়। আমরা আদালতের সমালোচনা করলে আদালত অবমাননা হয়ে যায়, কিন্তু সরকারের কোনো লোক- বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী একবার আদালতের আদেশ অমান্য করলেন, এবং বললেন আমি আমার কাজ করবো, দেখি আদালত কী করতে পারে। তারপরও তার প্রতি আদালত অবমাননা হলো না! আমরা গঠনমূলক সমালোচনা করলেই অবমাননা হয়ে যায়, তাহলে কী আমরা কথা বলবো না?
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, আমরা বিচার বিভাগকে স্বাধীন ও কার্যকর দেখতে চাই। কিন্তু কলুষিত রাজনীতি বিরাজমান থাকলে বিচার বিভাগ স্বাধীন হবে না। এ অবস্থায় দুর্নীতি রোধ করা এবং রাজনৈতিক সংস্কার দরকার, যাতে বিচার বিভাগকেও স্বাধীন করা যায় এবং মানুষ ন্যায়বিচার পায়। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য এবং আইনের শাসন নিশ্চিত করার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা দরকার। এছাড়া বিচার বিভাগ স্বাধীন হলে গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়। কিন্তু আমাদের বিচার বিভাগ গরিব ও দুর্বলবান্ধব নয়। এ অবস্থায় আমাদের বিচার বিভাগকে ক্ষমতাবান্ধব না হয়ে দুর্বলবান্ধব হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, এখন কোর্ট দুই ভাগে বিভক্ত। একটি আওয়ামী লীগ, আরেকটি বিএনপি। যদি আইনমন্ত্রী, এমপি বা বিচারপতির সন্তান হওয়া যায়, তাহলে তাদের কাছে ক্লায়েন্টরা যায়। তাহলে আমরা কীভাবে প্র্যাকটিস করবো? সুজন সভাপতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ মহসেন রশিদ, অ্যাডভোকেট হাসান তারিক চৌধুরী, জাকির হোসেন, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, হুমায়ূন কবীর হিরু প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
No comments