সংসদীয় ব্যবস্থায় ফিরে আসাই সাফল্য -তোফায়েল আহমেদ by সোহরাব হাসান
তোফায়েল আহমেদ, বাণিজ্যমন্ত্রী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, আ.লীগ |
প্রথম আলো: ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে আপনারা নেতৃত্ব দিয়েছেন। নব্বইয়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন। ফল কী হলো?
তোফায়েল আহমেদ: ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের পেছনে ছিল বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রাম। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই তিনি দেখলেন, পশ্চিমারা বাঙালিদের স্বার্থ রক্ষা করবে না। তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা। সেই লক্ষ্যেই তিনি ৬ দফা কর্মসূচি দিলেন, এরপর ছাত্রসমাজের ১১ দফা যুক্ত হলো। মানুষের হৃদয়ের দাবিকে যুক্ত করেছিলাম বলেই তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিয়েছিল, আন্দোলন সফল হয়েছিল। একই ঘটনা ঘটে নব্বইয়েও।
প্রথম আলো: আন্দোলন তো সফল হয়েছিল। কিন্তু মানুষ কী পেল?
তোফায়েল আহমেদ: গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে তৎকালীন সরকারের পতন ঘটে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে যে সংসদ গঠিত হয়, সেই সংসদ সংসদীয় ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। আর সেটি ছিল আওয়ামী লীগেরই প্রস্তাব। বিএনপি প্রথমে সংসদীয় ব্যবস্থায় যেতে চায়নি। পরে তারা মেনে নেয়। আমরা সর্বসম্মতভাবে সংসদীয় ব্যবস্থা চালু করি। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে আগের ধারায় দেশ শাসন করলেও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনে। এটাও নব্বইয়ের আন্দোলনের বিজয়।
প্রথম আলো: নব্বইয়ে আপনারা স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সফল হয়েছিলেন। সেই স্বৈরশাসকের এখনকার অবস্থান কী?
তোফায়েল আহমেদ: এটাও সত্য যে এরশাদ ১৯৯১ সালেও কারাগারে থেকে নির্বাচন করে পাঁচটি আসনে জয়ী হয়েছিলেন। তাঁর দল ৩৫টি আসন পেয়েছিল। এ ভোট তো আমরা দিইনি। ১৯৯৬-এও তিনি পাঁচটি আসনে জয়ী হন। দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ায় ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। আমরা তাঁকে বলি স্বৈরাচার, কিন্তু জনগণ তো তাঁকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। সেখানে আমরা কী করতে পারি?
প্রথম আলো: আমরা সাংসদ এরশাদের কথা বলছি না। আমরা বলছি সেই এরশাদের কথা, যিনি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতায় এসেছিলেন।
তোফায়েল আহমেদ: অবৈধ উপায়ে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয় জাতির জনককে হত্যার পর। এরপরই সামরিক শাসকেরা গায়ের জোরে ক্ষমতায় এসে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তো আমরা ভাবিনি বাংলাদেশে এ রকমটি হবে। বঙ্গবন্ধু ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। সামরিক শাসকেরা তা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছেন; স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছেন। বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের এটাও কারণ।
প্রথম আলো: নব্বইয়ের গণ-আন্দোলন তথা তিন জোটের রূপরেখায় আপনারা কার্যকর সংসদের কথা বলেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখছি?
তোফায়েল আহমেদ: আমরা তো এখন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই আছি। নবম সংসদে তো বিএনপি ছিল, তাদের আসন যত কমই হোক না কেন। ক্ষমতায় থাকতে তারা বলেছিল, আওয়ামী লীগ ৩০টি আসনও পাবে না। কিন্তু আমরা তিন-চতুর্থাংশ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করি। সেই সংসদে তাঁরা কথা বলতেন, আমরা তার জবাব দিতাম। সংসদ কার্যকর হয় সরকারি ও বিরোধী দলের সক্রিয় অংশগ্রহণে। তাঁরা প্রায়ই সংসদে গরহাজির থাকতেন। এখন জাতীয় পার্টির সাংসদেরা বিরোধী দলের আসনে। আমি মনে করি, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে যে নির্বাচন হবে, সেটি সব দলের অংশগ্রহণেই হবে এবং সংসদীয় ধারা এগিয়ে যাবে।
প্রথম আলো: তখন আপনারা স্বৈরাচারকে সঙ্গে রাখবেন না?
তোফায়েল আহমেদ: আমি তাঁকে এভাবে দেখি যে তিনি পাঁচটি আসনে জয়ী হয়েছেন। তিনি নিজেও ভুল স্বীকার করেছেন।
প্রথম আলো: তিন জোটের রূপরেখার অঙ্গীকার ছিল সংসদের সার্বভৌমত্ব। সেটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কি?
তোফায়েল আহমেদ: আমরা রাষ্ট্রপতিশাসিত পদ্ধতি থেকে সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরে এসেছি। এটা কম অর্জন নয়। গণতন্ত্রের বিকল্প কিছু নেই। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ও দশম সংসদ নিয়ে অনেকই প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু সারা বিশ্ব তো এটি মেনে নিয়েছে, স্বাগত জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সাবের হোসেন চৌধুরী, কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সভাপতি স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এটাই প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সচল আছে। আজ দেশের যে এত উন্নতি হয়েছে, বিএনপির আমল থেকে রপ্তানি তিন গুণ বেড়েছে, রিজার্ভ সাত গুণ বেড়েছে; গণতন্ত্রের কারণেই সেটি সম্ভব হয়েছে।
প্রথম আলো: আপনি সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চাইছেন। কিন্তু বিরোধী দলকে তো সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
তোফায়েল আহমেদ: এটি তারা নিজেরা নষ্ট করেছে। আগে তো বিএনপি সভা-সমাবেশ করত। তারা আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, পেট্রলবোমা দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে, মানুষকে পঙ্গু করেছে; এটি তো রাজনীতি নয়। এ জন্যই বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা হচ্ছে। এখনো জনসভার অনুমতি চাইলে অনুমতি দেওয়া হয়।
প্রথম আলো: তিন জোটের রূপরেখায় রাষ্ট্রায়ত্ত বেতার-টিভির স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এখন কী অবস্থা?
তোফায়েল আহমেদ: আসলে রাষ্ট্রায়ত্ত বেতার-টিভির আরও স্বচ্ছ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। তবে এখন অনেক প্রাইভেট টিভি চ্যানেল আছে, এফএম রেডিও আছে; সেগুলো জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে। বেসরকারি টিভি ও সংবাদপত্র তো অনেক সমালোচনা করে সরকারের।
প্রথম আলো: কিন্তু এসব অগ্রগতি সত্ত্বেও সামাজিক অস্থিরতা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটছে না। জঙ্গিবাদ নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
তোফায়েল আহমেদ: জঙ্গিবাদ এখন বিশ্বব্যাপী প্রবণতা। বিশ্বের অনেক দেশই জঙ্গিবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। ইউরোপের মতো উন্নত দেশেও তারা হামলা চালাচ্ছে। কদিন আগে প্যারিসে হামলা হয়েছে, তার আগে তুরস্কে হয়েছে। সেদিক থেকে বাংলাদেশ অনেক নিরাপদ। সম্প্রতি মার্কিন জরিপেও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে বাংলাদেশ বেশি নিরাপদ।
প্রথম আলো: কিন্তু যে স্বৈরশাসককে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিতাড়িত করে গণতন্ত্রের সূচনা করলেন, সেই স্বৈরশাসন এখন আপনাদের সহযোগী। বিষয়টি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
তোফায়েল আহমেদ: দক্ষিণ আফ্রিকায়নেলসন ম্যান্ডেলাকে যে শ্বেতাঙ্গ শাসক ২৭ বছর কারাগারে বন্দী রেখেছিল, তিনি ক্ষমতায় এসে তো তাদের নিয়েই সরকার গঠন করেছিলেন। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ কালোদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করত। এটি করেছিলেন দেশের উন্নয়নের জন্য। মানুষের কল্যাণের জন্য। সেটি করেছিলেন জাতীয় সমঝোতার জন্য।
প্রথম আলো: জাতীয় সমঝোতায় কি বিএনপির জায়গা নেই?
তোফায়েল আহমেদ: বিএনপির চিন্তা, ধ্যানধারণা গণতান্ত্রিক নয়। তাদের ধ্যানধারণা গণতান্ত্রিক হলে একটি নির্বাচনকে বন্ধ করার জন্য তারা এভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালাত না। পৃথিবীর অনেক দেশেই অনেক দল নির্বাচন বর্জন করে, কিন্তু বিএনপি তো শুধু নির্বাচন বর্জন করেনি, তারা নির্বাচন বানচাল করতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে খুন করেছে, ৫০০ ভোটকেন্দ্র ধ্বংস করেছে, ২৪ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। এমনকি স্কুলশিক্ষিকাকেও রেহাই দেয়নি।
প্রথম আলো: আশির দশকে তাদের নিয়েই তো স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছিলেন?
তোফায়েল আহমেদ: আমরা তাদের এই চেহারা বুঝতে পারিনি।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
তোফায়েল আহমেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান
তোফায়েল আহমেদ: ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের পেছনে ছিল বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রাম। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই তিনি দেখলেন, পশ্চিমারা বাঙালিদের স্বার্থ রক্ষা করবে না। তাঁর চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল স্বাধীনতা। সেই লক্ষ্যেই তিনি ৬ দফা কর্মসূচি দিলেন, এরপর ছাত্রসমাজের ১১ দফা যুক্ত হলো। মানুষের হৃদয়ের দাবিকে যুক্ত করেছিলাম বলেই তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাড়া দিয়েছিল, আন্দোলন সফল হয়েছিল। একই ঘটনা ঘটে নব্বইয়েও।
প্রথম আলো: আন্দোলন তো সফল হয়েছিল। কিন্তু মানুষ কী পেল?
তোফায়েল আহমেদ: গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে তৎকালীন সরকারের পতন ঘটে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে যে সংসদ গঠিত হয়, সেই সংসদ সংসদীয় ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। আর সেটি ছিল আওয়ামী লীগেরই প্রস্তাব। বিএনপি প্রথমে সংসদীয় ব্যবস্থায় যেতে চায়নি। পরে তারা মেনে নেয়। আমরা সর্বসম্মতভাবে সংসদীয় ব্যবস্থা চালু করি। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে আগের ধারায় দেশ শাসন করলেও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনে। এটাও নব্বইয়ের আন্দোলনের বিজয়।
প্রথম আলো: নব্বইয়ে আপনারা স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সফল হয়েছিলেন। সেই স্বৈরশাসকের এখনকার অবস্থান কী?
তোফায়েল আহমেদ: এটাও সত্য যে এরশাদ ১৯৯১ সালেও কারাগারে থেকে নির্বাচন করে পাঁচটি আসনে জয়ী হয়েছিলেন। তাঁর দল ৩৫টি আসন পেয়েছিল। এ ভোট তো আমরা দিইনি। ১৯৯৬-এও তিনি পাঁচটি আসনে জয়ী হন। দুর্নীতির মামলায় সাজা হওয়ায় ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেননি। আমরা তাঁকে বলি স্বৈরাচার, কিন্তু জনগণ তো তাঁকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। সেখানে আমরা কী করতে পারি?
প্রথম আলো: আমরা সাংসদ এরশাদের কথা বলছি না। আমরা বলছি সেই এরশাদের কথা, যিনি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতায় এসেছিলেন।
তোফায়েল আহমেদ: অবৈধ উপায়ে ক্ষমতা দখলের পালা শুরু হয় জাতির জনককে হত্যার পর। এরপরই সামরিক শাসকেরা গায়ের জোরে ক্ষমতায় এসে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তো আমরা ভাবিনি বাংলাদেশে এ রকমটি হবে। বঙ্গবন্ধু ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিলেন। সামরিক শাসকেরা তা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছেন; স্বাধীনতাবিরোধীদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়েছেন। বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক অবক্ষয়ের এটাও কারণ।
প্রথম আলো: নব্বইয়ের গণ-আন্দোলন তথা তিন জোটের রূপরেখায় আপনারা কার্যকর সংসদের কথা বলেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখছি?
তোফায়েল আহমেদ: আমরা তো এখন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই আছি। নবম সংসদে তো বিএনপি ছিল, তাদের আসন যত কমই হোক না কেন। ক্ষমতায় থাকতে তারা বলেছিল, আওয়ামী লীগ ৩০টি আসনও পাবে না। কিন্তু আমরা তিন-চতুর্থাংশ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করি। সেই সংসদে তাঁরা কথা বলতেন, আমরা তার জবাব দিতাম। সংসদ কার্যকর হয় সরকারি ও বিরোধী দলের সক্রিয় অংশগ্রহণে। তাঁরা প্রায়ই সংসদে গরহাজির থাকতেন। এখন জাতীয় পার্টির সাংসদেরা বিরোধী দলের আসনে। আমি মনে করি, ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে যে নির্বাচন হবে, সেটি সব দলের অংশগ্রহণেই হবে এবং সংসদীয় ধারা এগিয়ে যাবে।
প্রথম আলো: তখন আপনারা স্বৈরাচারকে সঙ্গে রাখবেন না?
তোফায়েল আহমেদ: আমি তাঁকে এভাবে দেখি যে তিনি পাঁচটি আসনে জয়ী হয়েছেন। তিনি নিজেও ভুল স্বীকার করেছেন।
প্রথম আলো: তিন জোটের রূপরেখার অঙ্গীকার ছিল সংসদের সার্বভৌমত্ব। সেটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কি?
তোফায়েল আহমেদ: আমরা রাষ্ট্রপতিশাসিত পদ্ধতি থেকে সংসদীয় পদ্ধতিতে ফিরে এসেছি। এটা কম অর্জন নয়। গণতন্ত্রের বিকল্প কিছু নেই। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ও দশম সংসদ নিয়ে অনেকই প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু সারা বিশ্ব তো এটি মেনে নিয়েছে, স্বাগত জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন সাবের হোসেন চৌধুরী, কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সভাপতি স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। এটাই প্রমাণ করে যে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সচল আছে। আজ দেশের যে এত উন্নতি হয়েছে, বিএনপির আমল থেকে রপ্তানি তিন গুণ বেড়েছে, রিজার্ভ সাত গুণ বেড়েছে; গণতন্ত্রের কারণেই সেটি সম্ভব হয়েছে।
প্রথম আলো: আপনি সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চাইছেন। কিন্তু বিরোধী দলকে তো সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
তোফায়েল আহমেদ: এটি তারা নিজেরা নষ্ট করেছে। আগে তো বিএনপি সভা-সমাবেশ করত। তারা আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, পেট্রলবোমা দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে, মানুষকে পঙ্গু করেছে; এটি তো রাজনীতি নয়। এ জন্যই বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা হচ্ছে। এখনো জনসভার অনুমতি চাইলে অনুমতি দেওয়া হয়।
প্রথম আলো: তিন জোটের রূপরেখায় রাষ্ট্রায়ত্ত বেতার-টিভির স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এখন কী অবস্থা?
তোফায়েল আহমেদ: আসলে রাষ্ট্রায়ত্ত বেতার-টিভির আরও স্বচ্ছ হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। তবে এখন অনেক প্রাইভেট টিভি চ্যানেল আছে, এফএম রেডিও আছে; সেগুলো জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে। বেসরকারি টিভি ও সংবাদপত্র তো অনেক সমালোচনা করে সরকারের।
প্রথম আলো: কিন্তু এসব অগ্রগতি সত্ত্বেও সামাজিক অস্থিরতা ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কাটছে না। জঙ্গিবাদ নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
তোফায়েল আহমেদ: জঙ্গিবাদ এখন বিশ্বব্যাপী প্রবণতা। বিশ্বের অনেক দেশই জঙ্গিবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। ইউরোপের মতো উন্নত দেশেও তারা হামলা চালাচ্ছে। কদিন আগে প্যারিসে হামলা হয়েছে, তার আগে তুরস্কে হয়েছে। সেদিক থেকে বাংলাদেশ অনেক নিরাপদ। সম্প্রতি মার্কিন জরিপেও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে বাংলাদেশ বেশি নিরাপদ।
প্রথম আলো: কিন্তু যে স্বৈরশাসককে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিতাড়িত করে গণতন্ত্রের সূচনা করলেন, সেই স্বৈরশাসন এখন আপনাদের সহযোগী। বিষয়টি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
তোফায়েল আহমেদ: দক্ষিণ আফ্রিকায়নেলসন ম্যান্ডেলাকে যে শ্বেতাঙ্গ শাসক ২৭ বছর কারাগারে বন্দী রেখেছিল, তিনি ক্ষমতায় এসে তো তাদের নিয়েই সরকার গঠন করেছিলেন। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ কালোদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করত। এটি করেছিলেন দেশের উন্নয়নের জন্য। মানুষের কল্যাণের জন্য। সেটি করেছিলেন জাতীয় সমঝোতার জন্য।
প্রথম আলো: জাতীয় সমঝোতায় কি বিএনপির জায়গা নেই?
তোফায়েল আহমেদ: বিএনপির চিন্তা, ধ্যানধারণা গণতান্ত্রিক নয়। তাদের ধ্যানধারণা গণতান্ত্রিক হলে একটি নির্বাচনকে বন্ধ করার জন্য তারা এভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালাত না। পৃথিবীর অনেক দেশেই অনেক দল নির্বাচন বর্জন করে, কিন্তু বিএনপি তো শুধু নির্বাচন বর্জন করেনি, তারা নির্বাচন বানচাল করতে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে খুন করেছে, ৫০০ ভোটকেন্দ্র ধ্বংস করেছে, ২৪ জন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। এমনকি স্কুলশিক্ষিকাকেও রেহাই দেয়নি।
প্রথম আলো: আশির দশকে তাদের নিয়েই তো স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছিলেন?
তোফায়েল আহমেদ: আমরা তাদের এই চেহারা বুঝতে পারিনি।
প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।
তোফায়েল আহমেদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান
No comments