রাশিয়া-তুরস্ক উত্তেজনা: পুতিন কতটা খেপেছেন? by মশিউল আলম
সিরিয়ার
আকাশে একটা রুশ বোমারু বিমান তুর্কিরা ভূপাতিত করেছে বলে মস্কোর লোকজন
রেগে গিয়ে সেখানকার তুর্কি দূতাবাসে ঢিল, রং ইত্যাদি ছুড়ে মেরেছে। ডিমও বাদ
রাখেনি। ডিমগুলো তুর্কি হাঁস-মুরগির ডিম হতে পারে। এবং এরপর আগামী কয়েক
সপ্তাহ ডিমের কিছু ঘাটতি দেখা দিতে পারে মস্কোর বাজারে।
না, মস্কোর সব ডিম ওখানকার তুর্কি দূতাবাসের গায়ে ছুড়ে মারা হয়েছে—এ রকম খবর পাওয়া যায়নি। খবর হলো, রুশ সরকার ঘোষণা করেছে তুরস্ক থেকে আর কোনো পোলট্রি পণ্য কেনা হবে না।
ডিম ছোট্ট একটা উদাহরণ। রাশিয়ার পোলট্রি ও কৃষিজাত আমদানি-পণ্যের উল্লেখযোগ্য অংশ আসে তুরস্ক থেকে। কিন্তু ব্যাপার শুধু এই খাতেই সীমাবদ্ধ নয়।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাশিয়ার নাগরিকদের তুরস্ক সফরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। বলেছে, তুরস্ক এখন রুশিদের জন্য মিসরের মতোই নিরাপত্তাহীন। সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়ার সব পর্যটন কোম্পানি তুরস্কে পর্যটক পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। পর্যটন প্যাকেজের বুকিং বাতিল করা ও উড়োজাহাজের টিকিট ফেরত দেওয়ার ধুম লেগেছে। বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছে তুরস্কের পর্যটন ব্যবসা। দেশটির পর্যটন খাতের মোট রাজস্বের ১২ শতাংশ আসে রুশ পর্যটকদের কাছ থেকে। ২০১৪ সালে ৪৪ লাখ রুশ পর্যটক তুরস্কে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এ থেকে তুরস্ক আয় করেছে ৩.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ বছরের প্রথম নয় মাসে ২৭ লাখ ৮০ হাজার রুশ নাগরিক তুরস্ক সফর করেছেন। এখন রুশিরা তুরস্কে বেড়াতে যাওয়া বন্ধ করলে দেশটি ২.৭৭ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে।
রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের আরও অনেক বড় বড় ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে। রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাসের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা তুরস্ক। তুরস্কের মোট গ্যাস-চাহিদার ৬০ শতাংশ মেটায় রাশিয়া। রাশিয়ার গ্যাস ছাড়া তুরস্কের অর্থনীতি স্রেফ ভেঙে পড়বে। রাশিয়ার রোসআতম কোম্পানি তুরস্কে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। ওই কেন্দ্রের চারটি রিঅ্যাক্টর মোট ৪৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।
বিগত বছরগুলোতে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্রমশ বেড়েছে। কখনো কখনো দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক শীতল হয়েছে, আবার কিছু সময় পরে তা কেটেও গেছে। এভাবে গত দেড় দশকে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় আট গুণ। ২০০১ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪.৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩৩ বিলিয়ন ডলার। তুরস্ক ন্যাটো জোটের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে তার বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা ক্রমেই বাড়ছিল। গত বছর ক্রিমিয়া ও ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে আমেরিকা ও তার ইউরোপীয় মিত্রদেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক অবরোধ আরোপ করলে রুশ অর্থনীতি বেশ সংকটে পড়ে যায়। নভেম্বরের শেষে রুশ প্রেসিডেন্ট তুরস্ক সফরে যান। তখন দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি খাতে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তুরস্কের কাছে গ্যাসের দাম ছয় শতাংশ কম নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন পুতিন। তুরস্ক আরও তিন বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস চাইলে তাতেও তিনি সম্মতি দেন। দুই দেশের প্রেসিডেন্ট ২০২০ সালের মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৩৩ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য ঘোষণা করেন।
ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে বিরাট মতপার্থক্য আছে। বিশেষত ইউক্রেন ও সিরিয়ার ব্যাপারে তুরস্কের অবস্থান রাশিয়ার অবস্থানের বিপরীতে। সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী সশরীরে গিয়ে উপস্থিত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। ১৯৮৯ সালে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করার পর রুশ সামরিক বাহিনীর এটাই প্রথম নিজ ভূখণ্ডের বাইরে যাওয়া। সুতরাং বাশার আসাদের পক্ষে পুতিনের অবস্থানের দৃঢ়তা খুবই স্পষ্ট। অন্যদিকে তুরস্ক বাশারের পতন চায়; তার এই চাওয়া মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে আমেরিকা ও তার মিত্রদের ইচ্ছার অনুকূল। ন্যাটো জোটের সদস্য তুরস্ক ওই অঞ্চলে বস্তুত তাদের ইচ্ছামাফিক আচরণ করতেই বাধ্য। তার নিজের লাভের মধ্যে যা হচ্ছে তা হলো, ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে নিয়ে ইসলামিক স্টেট যে তেল তুরস্ক সীমান্ত দিয়ে চোরাই বাজারে বিক্রি করছে, তা অতি সস্তায় পাচ্ছে তুরস্ক।
কিন্তু এর মধ্যে কেন তাকে রুশ বোমারু বিমান ভূপাতিত করতে হবে, ইচ্ছা করেই সে তা করেছে নাকি ভুলবশত—
এসব প্রশ্নের উত্তর এখনই পাওয়া কঠিন। এমন অদূরদর্শিতা পাগলামির শামিল এবং তা বিস্ময়কর রকমের অস্বাভাবিক। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত খবর: পুতিন তুরস্কের দুঃখ প্রকাশের অপেক্ষা করছেন। আর এরদোয়ান বলেছেন, তুরস্ক রাশিয়ার প্রতিক্রিয়ায় ‘বিচলিত’।
এ কথা ঠিক যে ঘটনার পরপরই তুরস্ক রাশিয়ার ‘পিঠে ছুরি মেরেছে’ বলে ভ্লাদিমির পুতিন যে উত্তাপ ছড়িয়েছেন, তাতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যাবে না। অবশ্য রাশিয়ার স্পুৎনিক নিউজ এক মার্কিন পর্যবেক্ষকের এমন মন্তব্য প্রকাশ করেছে যে, ‘ন্যাটোর উন্মাদ’ এরদোয়ান রুশ বোমারু বিমান ভূপাতিত করার মধ্য দিয়ে সামরিক আক্রমণ শুরু করেছে একই সঙ্গে মস্কো ও দামেস্কের বিরুদ্ধে। এরদোয়ানের এই ‘উন্মাদনা’ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ উসকে দিতে পারে। আবার, পুতিনের রাশিয়ায় জাতীয়তাবাদী আবেগের প্রবল বহিঃপ্রকাশের মধ্যেই সুস্থির বুদ্ধি-বিবেচনারও প্রকাশ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। মস্কোর অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা ভজগ্লিয়াদ বৃহস্পতিবার লিখেছে, রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে কার লাভ হবে—এটা মাথায় রাখা দরকার। নিশ্চিতভাবেই মস্কোর নয়, এবং আঙ্কারারও নয়।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়ায় এরদোয়ানের ‘বিচলিত’ হওয়ার খবর যদি সত্য হয়, উত্তেজনা নিশ্চিতভাবেই কমে যাবে। অবশ্য লন্ডনের গার্ডিয়ান বৃহস্পতিবার সকালেই লিখেছে, রাশিয়ার দিক থেকে যে শোরগোল ও উত্তেজনা লক্ষ করা যাচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে না।
কিন্তু ভ্লাদিমির পুতিন ও রাশিয়ার জনগণ তুরস্কের ওপর সত্যিই ক্রুদ্ধ হয়েছেন। তাঁদের গৌরবে চোট লেগেছে। এটা ভালো খবর নয়। না তুরস্কের জন্য, না রাশিয়ার জন্য।
মশিউল আলম: সাংবাদিক।
না, মস্কোর সব ডিম ওখানকার তুর্কি দূতাবাসের গায়ে ছুড়ে মারা হয়েছে—এ রকম খবর পাওয়া যায়নি। খবর হলো, রুশ সরকার ঘোষণা করেছে তুরস্ক থেকে আর কোনো পোলট্রি পণ্য কেনা হবে না।
ডিম ছোট্ট একটা উদাহরণ। রাশিয়ার পোলট্রি ও কৃষিজাত আমদানি-পণ্যের উল্লেখযোগ্য অংশ আসে তুরস্ক থেকে। কিন্তু ব্যাপার শুধু এই খাতেই সীমাবদ্ধ নয়।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাশিয়ার নাগরিকদের তুরস্ক সফরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। বলেছে, তুরস্ক এখন রুশিদের জন্য মিসরের মতোই নিরাপত্তাহীন। সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়ার সব পর্যটন কোম্পানি তুরস্কে পর্যটক পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে। পর্যটন প্যাকেজের বুকিং বাতিল করা ও উড়োজাহাজের টিকিট ফেরত দেওয়ার ধুম লেগেছে। বিরাট ক্ষতির মুখে পড়েছে তুরস্কের পর্যটন ব্যবসা। দেশটির পর্যটন খাতের মোট রাজস্বের ১২ শতাংশ আসে রুশ পর্যটকদের কাছ থেকে। ২০১৪ সালে ৪৪ লাখ রুশ পর্যটক তুরস্কে বেড়াতে গিয়েছিলেন। এ থেকে তুরস্ক আয় করেছে ৩.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ বছরের প্রথম নয় মাসে ২৭ লাখ ৮০ হাজার রুশ নাগরিক তুরস্ক সফর করেছেন। এখন রুশিরা তুরস্কে বেড়াতে যাওয়া বন্ধ করলে দেশটি ২.৭৭ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হবে।
রাশিয়ার সঙ্গে তুরস্কের আরও অনেক বড় বড় ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে। রাশিয়ার প্রাকৃতিক গ্যাসের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা তুরস্ক। তুরস্কের মোট গ্যাস-চাহিদার ৬০ শতাংশ মেটায় রাশিয়া। রাশিয়ার গ্যাস ছাড়া তুরস্কের অর্থনীতি স্রেফ ভেঙে পড়বে। রাশিয়ার রোসআতম কোম্পানি তুরস্কে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। ওই কেন্দ্রের চারটি রিঅ্যাক্টর মোট ৪৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।
বিগত বছরগুলোতে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্রমশ বেড়েছে। কখনো কখনো দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক শীতল হয়েছে, আবার কিছু সময় পরে তা কেটেও গেছে। এভাবে গত দেড় দশকে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় আট গুণ। ২০০১ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৪.৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩৩ বিলিয়ন ডলার। তুরস্ক ন্যাটো জোটের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও রাশিয়ার সঙ্গে তার বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা ক্রমেই বাড়ছিল। গত বছর ক্রিমিয়া ও ইউক্রেনকে কেন্দ্র করে আমেরিকা ও তার ইউরোপীয় মিত্রদেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক অবরোধ আরোপ করলে রুশ অর্থনীতি বেশ সংকটে পড়ে যায়। নভেম্বরের শেষে রুশ প্রেসিডেন্ট তুরস্ক সফরে যান। তখন দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি খাতে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তুরস্কের কাছে গ্যাসের দাম ছয় শতাংশ কম নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন পুতিন। তুরস্ক আরও তিন বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস চাইলে তাতেও তিনি সম্মতি দেন। দুই দেশের প্রেসিডেন্ট ২০২০ সালের মধ্যে পারস্পরিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৩৩ বিলিয়ন ডলার থেকে বাড়িয়ে ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য ঘোষণা করেন।
ভূরাজনৈতিক ক্ষেত্রে রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে বিরাট মতপার্থক্য আছে। বিশেষত ইউক্রেন ও সিরিয়ার ব্যাপারে তুরস্কের অবস্থান রাশিয়ার অবস্থানের বিপরীতে। সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী সশরীরে গিয়ে উপস্থিত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। ১৯৮৯ সালে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করার পর রুশ সামরিক বাহিনীর এটাই প্রথম নিজ ভূখণ্ডের বাইরে যাওয়া। সুতরাং বাশার আসাদের পক্ষে পুতিনের অবস্থানের দৃঢ়তা খুবই স্পষ্ট। অন্যদিকে তুরস্ক বাশারের পতন চায়; তার এই চাওয়া মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে আমেরিকা ও তার মিত্রদের ইচ্ছার অনুকূল। ন্যাটো জোটের সদস্য তুরস্ক ওই অঞ্চলে বস্তুত তাদের ইচ্ছামাফিক আচরণ করতেই বাধ্য। তার নিজের লাভের মধ্যে যা হচ্ছে তা হলো, ইরাক ও সিরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা দখল করে নিয়ে ইসলামিক স্টেট যে তেল তুরস্ক সীমান্ত দিয়ে চোরাই বাজারে বিক্রি করছে, তা অতি সস্তায় পাচ্ছে তুরস্ক।
কিন্তু এর মধ্যে কেন তাকে রুশ বোমারু বিমান ভূপাতিত করতে হবে, ইচ্ছা করেই সে তা করেছে নাকি ভুলবশত—
এসব প্রশ্নের উত্তর এখনই পাওয়া কঠিন। এমন অদূরদর্শিতা পাগলামির শামিল এবং তা বিস্ময়কর রকমের অস্বাভাবিক। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত খবর: পুতিন তুরস্কের দুঃখ প্রকাশের অপেক্ষা করছেন। আর এরদোয়ান বলেছেন, তুরস্ক রাশিয়ার প্রতিক্রিয়ায় ‘বিচলিত’।
এ কথা ঠিক যে ঘটনার পরপরই তুরস্ক রাশিয়ার ‘পিঠে ছুরি মেরেছে’ বলে ভ্লাদিমির পুতিন যে উত্তাপ ছড়িয়েছেন, তাতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যাবে না। অবশ্য রাশিয়ার স্পুৎনিক নিউজ এক মার্কিন পর্যবেক্ষকের এমন মন্তব্য প্রকাশ করেছে যে, ‘ন্যাটোর উন্মাদ’ এরদোয়ান রুশ বোমারু বিমান ভূপাতিত করার মধ্য দিয়ে সামরিক আক্রমণ শুরু করেছে একই সঙ্গে মস্কো ও দামেস্কের বিরুদ্ধে। এরদোয়ানের এই ‘উন্মাদনা’ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ উসকে দিতে পারে। আবার, পুতিনের রাশিয়ায় জাতীয়তাবাদী আবেগের প্রবল বহিঃপ্রকাশের মধ্যেই সুস্থির বুদ্ধি-বিবেচনারও প্রকাশ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। মস্কোর অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা ভজগ্লিয়াদ বৃহস্পতিবার লিখেছে, রাশিয়া ও তুরস্কের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেলে কার লাভ হবে—এটা মাথায় রাখা দরকার। নিশ্চিতভাবেই মস্কোর নয়, এবং আঙ্কারারও নয়।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়ায় এরদোয়ানের ‘বিচলিত’ হওয়ার খবর যদি সত্য হয়, উত্তেজনা নিশ্চিতভাবেই কমে যাবে। অবশ্য লন্ডনের গার্ডিয়ান বৃহস্পতিবার সকালেই লিখেছে, রাশিয়ার দিক থেকে যে শোরগোল ও উত্তেজনা লক্ষ করা যাচ্ছে, তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে না।
কিন্তু ভ্লাদিমির পুতিন ও রাশিয়ার জনগণ তুরস্কের ওপর সত্যিই ক্রুদ্ধ হয়েছেন। তাঁদের গৌরবে চোট লেগেছে। এটা ভালো খবর নয়। না তুরস্কের জন্য, না রাশিয়ার জন্য।
মশিউল আলম: সাংবাদিক।
No comments