'ঘুমিয়ে পড়লেই আমার স্বপ্ন সত্যি হয়ে যায়'

মোহাম্মদ ইমরান খান। পেশা শিক্ষকতা। নিস্বার্থভাবে কাজ করা ভারতের রাজস্থানের ৩৬ বছর বয়সী এই শিক্ষক রাতারাতি 'তারকা' বনে গেছেন।
কিভাবে?
বলছি শুনুন।
তথ্য-প্রযুক্তির ওপর তিনি হাতে-কলমে কোনো শিক্ষা নেননি ইমরান খান। কিন্তু নিজের চেষ্টায় গত তিন বছরে তিনি সাধারণ জ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, ইতিহাস, ইংরেজি ও রাজস্থানের প্রশাসনিক সেবার ওপর ৫২টি অ্যানড্রয়েড অ্যাপস বানিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা কোনো খরচ ছাড়াই অ্যাপসগুলো ব্যবহার করছে।
অ্যানড্রয়েড ফোন থেকে 'প্লে-স্টোর' এ ক্লিক করে ‘gktalk’ লিখে সার্চ দিলেই শিক্ষামূলক এই অ্যাপসগুলো পাওয়া যাবে। এ পর্যন্ত তিন মিলিয়নেরও বেশি গ্রাহক অ্যাপসগুলো ডাউনলোড করেছেন। এর মধ্যে সাধারণ জ্ঞানের অ্যাপসটি ডাউনলোড হয়েছে সবচেয়ে বেশি, সাত লাখ বার।
মোহাম্মদ ইমরান খান। কখনো দেশের বাইরে পা না রাখলেও এখন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে তার নাম
সম্প্রতি ব্রিটেন সফরের সময় লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে এক ভাষণে মোহাম্মদ ইমরান খানের কাজের প্রশংসা করেন নরেন্দ্র মোদি। ভারত প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, "আপনারা 'পত্রিকার শিরোনামে' এবং 'টিভিতে যা দেখেন' ভারতে তার চেয়েও অনেক বেশি কিছু আছে। আমাদের আলওয়ারে (রাজস্থান) ইমরান খান আছেন!"
পরিবারের সাথে ইমরান
মোদির এ প্রশংসার পরই ইমরানের টেলিফোন বেজেই চলছে, বন্ধ আর হচ্ছে না।
সাবই ফোন করে 'মোদির ওই প্রশংসা বাক্য শোনাচ্ছেন'। টেলি-যোগাযোগ মন্ত্রী রবী শঙ্কর প্রসাদ তো রাষ্ট্রীয় টেলি-যোগাযোগ প্রতিষ্ঠান 'ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (বিএসএনএল) থেকে তাকে ফ্রি ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করেছেন।
এক স্বাক্ষাৎকারে গালফ নিউজকে তিনি বলেন, 'মোদি জি যখন লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে আমার প্রশংসা করছিলেন তখন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। এখন অবশ্য আমি বলতে পারি, আমি যখন ঘুমিয়ে পড়ি কখন আমার স্বপ্ন সত্যি হয়ে যায়।'
ভারতের একটি টিভি চ্যানেলকে
স্বাক্ষাৎকার দিচ্ছেন ইমরান খান
গালফ নিউজ : তাহলে আপনি কিভাবে এবং কার কাছ থেকে এ ঘটনা জানলেন? এবং এ কথা শোনার পর ওই মুহূর্তে আপনার অনভূতি কেমন ছিল?
ইমরান খান : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমার নাম উচ্চারণের পর পরই আমার বন্ধু রাজেশ লাওয়ানিয়া ফোন করেন এবং পুরো ঘটনা জানান। কিন্তু সত্যি করে বলতে, আমি ওর কথা বিশ্বাসই করিনি। ও তারপর আমাকে টিভি অন করে লাইভ টেলিকাস্ট দেখতে বলল। কিন্তু কোথাও না দেখতে পেয়ে আমি অনিচ্ছাস্বত্ত্বেও লেপটপ অন করলাম। আধা ঘণ্টা পর আমি ইউটিউবে ভাষণটি দেখলাম। এটি অবিশ্বাস্য একটি অভিজ্ঞতা ছিল! এর মধ্যেই আমার বন্ধু-বান্ধব ও সাংবাদিকদের ফোন আসতে শুরু করেছে।
গালফ নিউজ : আপনার পরিবারের অনুভূতি কেমন?
ইমরান খান : আমার বাবা কৃষক। আমরা চার ভাই, তিন বোন। আমাদের গ্রামে পড়াশোনার ভালো কোনো সুযোগ না থাকলেও মা-বাবা সব সময় অনুপ্রেরণা দিতেন। আমার বড় ভাই একটি কলেজের লেকচারার, বাকী দুই ভাই ইঞ্জিনিয়ার। মনে আছে শিক্ষক আমাকে বলতেন, বিজ্ঞানী হওয়ার সব গুণ তোমার আছে। তুমি বিজ্ঞানী হবে। কিন্তু মা-বাবা চাইতেন সংস্কৃতির শিক্ষক হই। সেই হিসেবে উচ্চ মাধ্যমিকের পর শিক্ষকতার ওপর দুই বছরের একটি প্রশিক্ষণ কোর্স করি। এবং ১৯৯৯ সালে শিক্ষকতা শুরু করি। এর পাশাপাশি বাকি পড়াশোনাও চালিয়ে যাই।
উল্লেখ্য, মোহাম্মদ ইমরান খান রাজস্থানের আলওয়াল জেলার খারেদায় ১৯৭৮ সালের ৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। সরকারি স্কুল থেকে পড়াশোনার পর ২০০১ সালে রাজস্থান ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরে ইংলিশে মাস্টার্স (২০০৪) এবং ইকোনমিকসের (২০০৬) ওপর ডিগ্রী নেন।
গালফ নিউজ ইন্ডিয়া অবলম্বনে সাবরিনা সোবহান

No comments

Powered by Blogger.