৭ম দফায় কারাগারে মির্জা ফখরুল
নানা
জটিল রোগে আক্রান্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম
আলমগীরকে ফের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। সিঙ্গাপুর ও আমেরিকায় ক্যারোটিড
আর্টারির ব্লকের চিকিৎসা করিয়ে আসা মির্জা আলমগীর এ নিয়ে ৭মবারের মতো
কারাগারে গেলেন। গতকাল বিকালে নাশকতার তিন মামলায় নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে
জামিন চাইলে বিচারক তার আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে মহাজোট সরকারের দুই আমলে ৬ দফায় ৩৩১ দিন কারাভোগ করেন বিএনপির
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। সর্বশেষ চলতি বছরের ৬ই জানুয়ারি গ্রেপ্তার হয়ে ১৮৯ দিন
কারাভোগ করেন তিনি। ওই সময় কারান্তরীণ থাকাকালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এরপর কারাগার থেকে তাকে এম্বুলেন্সে করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ওই হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্টের
ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে জামিন দেন উচ্চ আদালত। গত ১৪ই জুলাই
হাসপাতাল থেকে মুক্তি পাওয়ার কয়েকদিন পর চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান তিনি।
সেখানের চিকিৎসকদের পরামর্শে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসা সেবা নিয়ে দেশে ফিরেন
তিনি। পরে সিঙ্গাপুরে প্রথমদফা ফলোআপ চিকিৎসাও করান। চিকিৎসার জন্য দুদফা
বাড়ানো জামিনের মেয়াদ শেষে সোমবার তাকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়
হাইকোর্টের আপিল বিভাগ। ওই নির্দেশ অনুযায়ী গতকাল দুপুরে মির্জা আলমগীর
নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে যান। বিকাল সাড়ে ৪টায় ঢাকা মহানগর হাকিম মো.
মারুফ হোসেনের আদালতে আত্মসসর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তিনি। মির্জা
আলমগীরের পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার
মাহবুব হোসেন, সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও অ্যাডভোকেট সগীর
হোসেন লিওনসহ আরও ৪০-৫০ জন আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেন। আদালত দীর্ঘ সময় উভয়
পক্ষের শুনানি শেষে জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর
আগে সোমবার আপিল বিভাগ মির্জা আলমগীরকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে
নির্দেশ দেন। ফখরুলের করা আত্মসমর্পণের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন খারিজ করে দিয়ে
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ
আদেশ দেন। একইসঙ্গে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মির্জা আলমগীরের মামলায়
হাইকোর্টের দেয়া রুল নিষ্পত্তি করতে বলেছেন আদালত। উল্লেখ্য, রাজধানীর
পল্টন থানায় নাশকতার অভিযোগে করা এ তিন মামলায় ১৩ই জুলাই আপিল বিভাগ
ফখরুলের অসুস্থতার কারণ বিবেচনায় নিয়ে এ মামলাগুলোতে তাকে ছয় সপ্তাহের
জামিন দেন। এরপর এ চিকিৎসার জন্য আরও দু’দফা সময় দেয়া হয় তাকে। সোমবার যার
মেয়াদ শেষ হয়েছে ।
৬ দফায় ৩৩১ দিন কারাভোগ ফখরুলের
২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মামলার সিডর বইয়ে যায় মির্জা আলমগীরের ওপর দিয়ে। একে একে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় ৮৪টি মামলা। মহাজোট সরকারের দুই আমলে ৬ দফায় ৩৩১দিন কারাভোগ করেছেন তিনি। ২০১২ সালের ১৬ই মে তিনি প্রথমবার কারাগারে যান। হরতালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানো মামলায় আদালতে হাজির হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। সেবার ৩০দিন পর ১৪ই জুন তিনি মুক্তি পান। ২০১২ সালের ১০ই ডিসেম্বর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে দ্বিতীয়বার গ্রেপ্তার করা হয় মির্জা আলমগীরকে। হরতালে সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি ভাংচুরের মামলায় দীর্ঘ ৫৭ দিন কারাভোগের পর ২০১৩ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি তিনি জামিনে মুক্তি পান। দেড় মাসের মাথায় ২০১৩ সালের ১১ই মার্চ বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানের সময় ১৫৭জন নেতাকর্মীর সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তারের ১৯ ঘণ্টা পর ডিবি কার্যালয় থেকে মুক্তি পান তিনি। ২০১৩ সালের ৭ই এপ্রিল ৭ মামলায় ঢাকার সিএমএম কোর্টে আত্মসমর্পন করলে তৃতীয় দফায় কারাগারে পাঠানোর ৩০দিন পর ৬ই মে মুক্তি পান। ২০১৪ সালের ১৬ই মার্চ বাংলামটর এলাকায় নাশকতার তিন মামলায় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির হলে চতুর্থ দফায় কারাগারে পাঠানো হয় মির্জা আলমগীরকে। ২৪দিন পর ১০ই এপ্রিল তিনি জামিনে মুক্তি পান। সর্বশেষ জাতীয় প্রেস ক্লাবে দুদিন অবরুদ্ধ থাকার পর ২০১৫ সালের ৭ই জানুয়ারি বের হলে গেট থেকেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। শেষদফায় টানা ১৮৯ দিন কারাভোগের পর তিনি চিকিৎসার জন্য জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন।
ফখরুলকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে সরকার: বিএনপি
জটিল রোগে আক্রান্ত দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কারাগারের পাঠানোর মাধ্যমে সরকার তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কারান্তরীণ অবস্থায় মির্জা আলমগীরের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে বলে অভিমত দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ অবস্থায় তিনি স্বাস্থ্য সঙ্কটে পড়লে, সেই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই দায়ী হবেন। তাই মির্জা আলমগীরের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে অবিলম্বে তাকে জামিন দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে দলটি। গতকাল বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এ দাবি জানান। মির্জা আলমগীরের স্বাস্থ্যের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মুখপাত্র বলেন, তিনি অনেক দিন ধরেই অসুস্থ। তার হৃদরোগসহ ঘাড়ে ক্যারোটিড আর্টারিতে ব্লক রয়েছে। এ বছর প্রায় ছয় মাস কারাভোগের পর উচ্চ আদালত তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামিন দেয়ায় তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং সিঙ্গাপুরে কয়েক দফা চিকিৎসা নেন। কিন্তু তার ক্যারোটিড আর্টারিতে ব্লকটির অবস্থান খুবই জটিল হওয়ায় তা শৈল্য চিকিৎসার জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় তার অস্ত্রোপচার সম্ভব হয়নি। ক’দিন আগেও তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য ফলোআপে যান এবং চলতি মাসের ২৪শে নভেম্বর সিঙ্গাপুরে তার আবারও উন্নত চিকিৎসার জন্য যাওয়ার তারিখ ছিল। ড. রিপন বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে একজন আইন মান্যকারী নাগরিক হিসেবে মির্জা আলমগীর নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আদালত তার আবেদন নাকচ করে এই অসুস্থ মানুষটিকে কারাগারে পাঠানোয় আমরা তার স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে বিচলিত হয়ে পড়েছি। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, নিম্ন আদালত তার স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনা করে তাকে জামিন দেবেন। তিনি বলেন, মির্জা আলমগীরের স্বাস্থ্যের অবস্থাটি অনেকদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন সজ্জন-পরিশীলিত ও স্বচ্ছ ইমেজের মানুষ হিসেবে তার একটি উজ্জল ভাবমূর্তি দল-মত নির্বিশেষে মানুষের মধ্যে রয়েছে বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন। এমন একজন আদর্শবান রাজনীতিক অসংখ্য মিথ্যা-হয়রানিমূলক মামলায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। তার মতো আমাদের দলের বেশ কয়েকজন প্রবীণ-বয়োবৃদ্ধ নেতাও অনুরূপভাবে মিথ্যা মামলায় জর্জরিত এবং অনেকেই অন্তরীণ কারাগারে। তার মধ্যে বিশেষ করে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও গাজীপুর সিটি মেয়র অধ্যাপক আবদুল মান্নান, যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের অবস্থা খুবই গুরুতর। মির্জা আলমগীরসহ কারারুদ্ধ সকল নেতৃবৃন্দ, মিথ্যা মামলায় জর্জরিত অন্যান্য সকল নেতৃবৃন্দেরও মুক্তির দাবি জানান তিনি। সরকারের উদ্দেশে ড. রিপন বলেন, মির্জা আলমগীর জটিল রোগে আক্রান্ত। কারান্তরীণ অবস্থায় তার স্বাস্থ্যের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে বলে চিকিৎসকরাও অভিমত দিয়েছেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাস্থ্য সঙ্কটে পড়লে, সেই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই দেশবাসী দায়ী করবেন। কারণ এর আগেও কারাগারে থাকাকালে মির্জা আলমগীর কয়েক দফা সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং তার শরীরের ওজন ১৬ কেজি হ্রাস পেয়েছিল। সরকার বিরোধী দলের সঙ্গে রাজনীতি করবেন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায়। কিন্তু কাউকে তিলে তিলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হবে অত্যন্ত অমানবিক। সরকারের সমালোচনা করে ড. রিপন বলেন, সরকার ছায়ার সঙ্গে শত্রু শত্রু খেলায় লিপ্ত। বিরোধী দল, বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকে অকারণেই তারা শত্রু ভাবছেন। অথচ বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ ও বিরোধী দল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। সেই প্রতিষ্ঠানটিকেই সরকার ধ্বংস করার এক আত্মঘাতী কাজে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছেন দুর্ভাগ্যজনকভাবে। এদিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত এবং যশোর সদর পৌর মেয়র ও সদর থানা বিএনপি’র সভাপতি মারুফ ইসলামসহ ১০ বিএনপি নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান তিনি।
৬ দফায় ৩৩১ দিন কারাভোগ ফখরুলের
২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মামলার সিডর বইয়ে যায় মির্জা আলমগীরের ওপর দিয়ে। একে একে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় ৮৪টি মামলা। মহাজোট সরকারের দুই আমলে ৬ দফায় ৩৩১দিন কারাভোগ করেছেন তিনি। ২০১২ সালের ১৬ই মে তিনি প্রথমবার কারাগারে যান। হরতালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সামনে গাড়ি পোড়ানো মামলায় আদালতে হাজির হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। সেবার ৩০দিন পর ১৪ই জুন তিনি মুক্তি পান। ২০১২ সালের ১০ই ডিসেম্বর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে দ্বিতীয়বার গ্রেপ্তার করা হয় মির্জা আলমগীরকে। হরতালে সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি ভাংচুরের মামলায় দীর্ঘ ৫৭ দিন কারাভোগের পর ২০১৩ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি তিনি জামিনে মুক্তি পান। দেড় মাসের মাথায় ২০১৩ সালের ১১ই মার্চ বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানের সময় ১৫৭জন নেতাকর্মীর সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তারের ১৯ ঘণ্টা পর ডিবি কার্যালয় থেকে মুক্তি পান তিনি। ২০১৩ সালের ৭ই এপ্রিল ৭ মামলায় ঢাকার সিএমএম কোর্টে আত্মসমর্পন করলে তৃতীয় দফায় কারাগারে পাঠানোর ৩০দিন পর ৬ই মে মুক্তি পান। ২০১৪ সালের ১৬ই মার্চ বাংলামটর এলাকায় নাশকতার তিন মামলায় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে হাজির হলে চতুর্থ দফায় কারাগারে পাঠানো হয় মির্জা আলমগীরকে। ২৪দিন পর ১০ই এপ্রিল তিনি জামিনে মুক্তি পান। সর্বশেষ জাতীয় প্রেস ক্লাবে দুদিন অবরুদ্ধ থাকার পর ২০১৫ সালের ৭ই জানুয়ারি বের হলে গেট থেকেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। শেষদফায় টানা ১৮৯ দিন কারাভোগের পর তিনি চিকিৎসার জন্য জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন।
ফখরুলকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে সরকার: বিএনপি
জটিল রোগে আক্রান্ত দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কারাগারের পাঠানোর মাধ্যমে সরকার তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কারান্তরীণ অবস্থায় মির্জা আলমগীরের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে বলে অভিমত দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ অবস্থায় তিনি স্বাস্থ্য সঙ্কটে পড়লে, সেই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই দায়ী হবেন। তাই মির্জা আলমগীরের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে অবিলম্বে তাকে জামিন দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে দলটি। গতকাল বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন এ দাবি জানান। মির্জা আলমগীরের স্বাস্থ্যের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মুখপাত্র বলেন, তিনি অনেক দিন ধরেই অসুস্থ। তার হৃদরোগসহ ঘাড়ে ক্যারোটিড আর্টারিতে ব্লক রয়েছে। এ বছর প্রায় ছয় মাস কারাভোগের পর উচ্চ আদালত তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জামিন দেয়ায় তিনি যুক্তরাষ্ট্র এবং সিঙ্গাপুরে কয়েক দফা চিকিৎসা নেন। কিন্তু তার ক্যারোটিড আর্টারিতে ব্লকটির অবস্থান খুবই জটিল হওয়ায় তা শৈল্য চিকিৎসার জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় তার অস্ত্রোপচার সম্ভব হয়নি। ক’দিন আগেও তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য ফলোআপে যান এবং চলতি মাসের ২৪শে নভেম্বর সিঙ্গাপুরে তার আবারও উন্নত চিকিৎসার জন্য যাওয়ার তারিখ ছিল। ড. রিপন বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে একজন আইন মান্যকারী নাগরিক হিসেবে মির্জা আলমগীর নিম্ন আদালতে জামিন আবেদন করেছিলেন। কিন্তু আদালত তার আবেদন নাকচ করে এই অসুস্থ মানুষটিকে কারাগারে পাঠানোয় আমরা তার স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে বিচলিত হয়ে পড়েছি। আমরা প্রত্যাশা করেছিলাম, নিম্ন আদালত তার স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনা করে তাকে জামিন দেবেন। তিনি বলেন, মির্জা আলমগীরের স্বাস্থ্যের অবস্থাটি অনেকদিন ধরেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন সজ্জন-পরিশীলিত ও স্বচ্ছ ইমেজের মানুষ হিসেবে তার একটি উজ্জল ভাবমূর্তি দল-মত নির্বিশেষে মানুষের মধ্যে রয়েছে বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন। এমন একজন আদর্শবান রাজনীতিক অসংখ্য মিথ্যা-হয়রানিমূলক মামলায় জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। তার মতো আমাদের দলের বেশ কয়েকজন প্রবীণ-বয়োবৃদ্ধ নেতাও অনুরূপভাবে মিথ্যা মামলায় জর্জরিত এবং অনেকেই অন্তরীণ কারাগারে। তার মধ্যে বিশেষ করে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, এমকে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও গাজীপুর সিটি মেয়র অধ্যাপক আবদুল মান্নান, যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদের অবস্থা খুবই গুরুতর। মির্জা আলমগীরসহ কারারুদ্ধ সকল নেতৃবৃন্দ, মিথ্যা মামলায় জর্জরিত অন্যান্য সকল নেতৃবৃন্দেরও মুক্তির দাবি জানান তিনি। সরকারের উদ্দেশে ড. রিপন বলেন, মির্জা আলমগীর জটিল রোগে আক্রান্ত। কারান্তরীণ অবস্থায় তার স্বাস্থ্যের ঝুঁকি আরও বেড়ে যাবে বলে চিকিৎসকরাও অভিমত দিয়েছেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাস্থ্য সঙ্কটে পড়লে, সেই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য সরকারকেই দেশবাসী দায়ী করবেন। কারণ এর আগেও কারাগারে থাকাকালে মির্জা আলমগীর কয়েক দফা সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং তার শরীরের ওজন ১৬ কেজি হ্রাস পেয়েছিল। সরকার বিরোধী দলের সঙ্গে রাজনীতি করবেন রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায়। কিন্তু কাউকে তিলে তিলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হবে অত্যন্ত অমানবিক। সরকারের সমালোচনা করে ড. রিপন বলেন, সরকার ছায়ার সঙ্গে শত্রু শত্রু খেলায় লিপ্ত। বিরোধী দল, বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দকে অকারণেই তারা শত্রু ভাবছেন। অথচ বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দ ও বিরোধী দল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ। সেই প্রতিষ্ঠানটিকেই সরকার ধ্বংস করার এক আত্মঘাতী কাজে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছেন দুর্ভাগ্যজনকভাবে। এদিকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত এবং যশোর সদর পৌর মেয়র ও সদর থানা বিএনপি’র সভাপতি মারুফ ইসলামসহ ১০ বিএনপি নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপির বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান তিনি।
No comments