বাংলাদেশে আতঙ্ক, নিস্তব্ধতা by এলেন বেরি
বাংলাদেশে টেলিভিশন নিউজ চ্যানেলে দুটি টকশো উপস্থাপনা করেন মিথিলা ফারজানা। কিন্তু তার মনে আতঙ্ক বাসা বেঁধেছে। চলমান সময়ে তার পাশ দিয়ে কোন পুরুষ চলে গেলে তিনি সতর্ক হন। ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান তিনি। সেখানে কাউকে দেখলে তিনি পাশে সরে দাঁড়ান। হৃদয় কেঁপে ওঠে। তিনি সরে দাঁড়ান যাতে শিক্ষার্থীরা চলে যেতে পারে। কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য তার স্বামী এখন আর তাকে গাড়ি নিতে দেন না। এর কারণ, যে শহরে জঙ্গিদের ভাল নেটওয়ার্ক রয়েছে সেখানে একজন চালকও সহজে তাকে অন্যের হাতে তুলে দিতে পারে। তাই তাকে তার স্বামী নিজেই গাড়ি চালিয়ে নামিয়ে দিয়ে আসেন। এর আগে ফারজানা পেশাগত দূরত্ব বহায় রেখে ঝুঁকির বিষয়ে সার্ভে করতে পারতেন। যখনই কোন কট্টরপন্থি কোন একজন ব্লগারকে হত্যা করেছে তখনই তার সত্য কাহিনী তুলে ধরতেন তিনি। ব্লগারদের হত্যার দায় স্বীকারকারী গ্রুপগুলোর একটি গত মাসে আড়ালে থেকে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে চিঠি পাঠায়। নারী সাংবাদিকরা যদি পর্দানশীন না হন তাহলে তাদেরকে নিউজ মিডিয়া থেকে বাদ না দিলে এর জন্য ভয়াবহ পরিণতির হুমকি দেয়া হয়। গত শনিবার সন্ত্রাসীরা ধর্মনিরপেক্ষ নন এমন দু’জন প্রকাশকের ওপর পর পর হামলা চালায়। এ দু’জন প্রকাশক তেমন প্রচারে না থাকা ব্যবসায়ী। তারা দেশের খ্যাতনামা লেখকদের বই বোদ্ধা মহলে সরবরাহ করছিলেন। মিথিলা ফারজানার বয়স এখন ৩৭ বছর। তিনি ভুলতে পারেন না যে, এর পেছনে একটি নীলনকশা আছে। কেউ একজন, কোন জায়গায় টার্গেটের তালিকায় তার নামটিও যোগ করে থাকতে পারে। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে আমি আসলেই শঙ্কিত। আমার মনে হচ্ছে, হতে পারে তারা এখন একজন নারীকে হত্যা করে নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। এখন আপনার একক কোন ধারণা থাকার কথা নয় যে, আসলে সব মিলিয়ে কি হতে যাচ্ছে। হয়তো হতে পারে, আপনি টার্গেট হয়েছেন, যা আপনি কখনো জানেন না।
চারজন ব্লগার ও একজন প্রকাশককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বাংলাদেশে। এ দেশটি ১৬ কোটি মানুষের ছোট্ট একটি দেশ। কিন্তু বেনামি হুমকি এখন সাধারণ বিষয়। সব মিলে মানসিক যে অবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে সন্ত্রাসী হুমকির বিষয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা থেকে সুখ্যাত, সুপরিচিত সাধারণ মানুষগুলো দূরে সরে যাচ্ছেন। পেন ইন্টারন্যাশনালস রাইটারস ইন প্রিজন কমিটির চেয়ারম্যান সলিল ত্রিপাঠি। গত মে মাসে একজন ব্লগার হত্যার পর মন্তব্যের জন্য বাংলাদেশী লেখকদের একটি লম্বা তালিকা করেছিলেন তিনি। কিন্তু সবাই তার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। জবাবে তারা বলেছেন, এ বিষয়ের সঙ্গে তাদের নাম যুক্ত হওয়া হবে ভীষণ ভয়ানক। ‘পেন নেম’-এর আওতায় একজন বিদেশী কলাম লেখকের একটি কলাম প্রকাশে তিনি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
সলিল ত্রিপাঠি ‘দ্য কর্নেল হু উড নট রিপেন্ট’ নামের বইয়ের লেখক। এ বইটি পাকিস্তানের কাছ থেকে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিতে লেখা। সলিল বলেছেন, বুদ্ধিজীবীদের (ইন্টেলেকচুয়ালস) হুমকি দিয়ে আপনি মত প্রকাশকে নীরব করে দিতে, মতকে নিজের মতো করে দেয়ার চেষ্টা করছেন। আমি মনে করি তাই ঘটছে। স্পর্শকাতরা এত বেশি হয়ে পড়েছে যে, বাংলাদেশী অনেক বন্ধু তাকে অনুরোধ করেন যেন তিনি ফেসবুক পোস্ট ট্যাগ না করেন, যেখানে ব্লগারদের হামলা নিয়ে আলোচনা আছে। সলিল বলেন, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এ ইস্যুতে নিজের নামে লিখছেন এমন কোন বাংলাদেশী বোদ্ধার নাম আমি মনে করতে পারছি না।
গত এক মাস ধরে বিভিন্ন মাত্রায়, বিশেষ করে সামাজিক মিডিয়ায় বেনামি একাউন্টস থেকে বিদেশী, নারী সাংবাদিক এমন কি দেশের সংখ্যালঘু শিয়া সদস্যদের বিরুদ্ধে হুমকি দেয়া হচ্ছে। শনিবার ‘হু ইজ নেক্সট’ শীর্ষক একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে আনসার আল ইসলামের পক্ষ থেকে। এরা আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্টের বাংলাদেশী শাখা। হুমকিতে তারা টার্গেটের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে। এ হুমকিতে রয়েছেন সুপরিচিত কবি, বুদ্ধিজীবী, সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনের সম্পাদক, অভিনেতা ও সাংবাদিক। এ মাসের শেষের দিকে ঢাকা লিট (লিটারেচার) ফেস্ট নামের একটি আয়োজন হওয়ার কথা। এতে ৭০ জনের মতো লেখক যোগ দেবেন বলে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু এ সংখ্যা নেমে ১০ এ আসতে পারে বলে শঙ্কায় আয়োজকরা। এরই মধ্যে অনেক লেখক ও মতামত দানকারীরা প্রকাশ্য জীবনযাপন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন। ২০১৩ সালের ‘হিট লিস্ট’এ নাম ছিল ৪৫ বছর বয়সী ঔপন্যাসিক আহমাদ মোস্তাফা কামালের। তিনি বলেন, অফিসের বাইরে যান না বললেই চলে। প্রকাশ্যে কোথাও বক্তব্য রাখার আমন্ত্রণ পেলেই নিয়মিতভাবে তা প্রত্যাখ্যান করছেন। তিনি বলেন, আমার জীবন পুরোপুরি নিঃসঙ্গ। একজন লেখক সব সময়ই সব স্থানে যাওয়ার তাগিদ বোধ করেন। তাদেরকে কথা বলতে হয়। তাদেরকে সাধারণ মানুষের ভিড়ে যেতে হয়। পাঠকের সঙ্গে তাদেরকে কথা বলতে হয়। তিনি কখনও পুলিশের কাছে এ হুমকির বিষয়ে রিপোর্ট করেন নি। এর কারণ, তিনি জানেন তারা তাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলবে। এমন সম্ভাবনার কথা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু গত সপ্তাহের হামলার পর তার বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। আহমাদ মোস্তাফা কামাল বলেন, এক রাতে আমার ছেলে আমার সঙ্গে কথা বলছিল। সে আমার কাছে জানতে চাইলÑ বাবা তারা কি তোমাকেও হত্যা করবে? মোস্তাফা কামাল বলেনÑ এই হলো আমার ছেলে। একজন কিশোর। সে আমার কাছে জানতে চাইছে আমাকে হত্যা করা হবে কিনা। এক্ষেত্রে আমার উত্তর কি হতে পারে?
একই রকম শিহরণ অনুভূত হচ্ছে একাত্তর টিভিতে। এর প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু। তিনি রিপোর্টার ও উপস্থাপক হিসেবে নারীদের নিয়োগ দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছেন। কারণ তিনি বলেন, নারীরা শক্তিধর পুরুষদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছে। এটা আমি পছন্দ করি। তার রিপোর্টাররা অধিক অধিক সতর্ক। তার চ্যানেলের সবচেয়ে সুপরিচিত মুখগুলোর অন্যতম নবনীতা চৌধুরী। তিনি গত জুনে তার নাম দেখতে পান ২৫ সেলিব্রেটির হিট লিস্টে, যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। বর্তমানে নবনীতা টেলিভিশন থেকে দূরে রয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি স্বাস্থ্যগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার ভাই এক্ষেত্রে অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে। সে বলেছে, এসব কাজ বাদ দাও। আমার সঙ্গে বাসায় থাক।
এই টেলিভিশন স্টেশনের আরেকজন রিপোর্টার ফারজানা রুপা (৩৮)। তিনি বলেছেন, প্রকাশকদের ওপর গত সপ্তাহে হামলার পর তা নিয়ে রিপোর্ট না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তার ফেসবুকে বিশ্বাসযোগ্য হুমকি দেয়া হয়েছে। এ জন্য তিনি নিজে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু যে চালককে তিনি নিয়োগ দিয়েছেন তিনি অব্যাহতি নিয়েছেন। এ নিয়ে ৬ জন চালক এমনটা করলেন। তারা মনে করেন, ফারজানার সঙ্গে কাজ করা তাদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি ফারজানা রুপা তার ৮ বছর বয়সী মেয়ে ও বাসার অন্য শিশুদের সঙ্গে এ নিয়ে খোলামেলা কথা বলা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে বলি যে, বর্তমান সময়ে মায়ের যেকোন কিছু ঘটতে পারে। তাই তোমাকে স্বাধীনভাবে বাঁচা শিখতে হবে। শনিবারের পর থেকে বিপদের বিষয়টি বাদ দিয়ে অন্য কিছু ভাবা চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে ফারজানার কাছে। তার মনে একটি প্রশ্ন বিস্ময় সৃষ্টি করছে। তা হলো যদি তাকে হত্যা করা হয় তাহলে রাস্তায় চলাচলকারী পুরুষরা কি বলবে।
ফারজানা বলেন, হৃদয়ের গভীর থেকে বলছি, যদি এমনটাই ঘটে তাহলে লোকজন বলবে কেন সে সীমা লঙ্ঘন করেছে? মানুষজন ভাববে: কেন এসব নারী পর্দার বাইরে বেরিয়ে এসেছে? কেন এসব নারী এত কথা বলে? কেন তারা এত খোলামেলা কথা বলে?
(নিউ ইয়র্ক টাইমসে ৩রা নভেম্বর প্রকাশিত ‘ফিয়ার অ্যান্ড সাইলেন্স ইন বাংলাদেশ অ্যাজ মিলিট্যান্টস টার্গেট ইন্টেলেকচুয়ালস’ শীর্ষক লেখার অনুবাদ)
চারজন ব্লগার ও একজন প্রকাশককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বাংলাদেশে। এ দেশটি ১৬ কোটি মানুষের ছোট্ট একটি দেশ। কিন্তু বেনামি হুমকি এখন সাধারণ বিষয়। সব মিলে মানসিক যে অবস্থা তৈরি হয়েছে তাতে সন্ত্রাসী হুমকির বিষয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা থেকে সুখ্যাত, সুপরিচিত সাধারণ মানুষগুলো দূরে সরে যাচ্ছেন। পেন ইন্টারন্যাশনালস রাইটারস ইন প্রিজন কমিটির চেয়ারম্যান সলিল ত্রিপাঠি। গত মে মাসে একজন ব্লগার হত্যার পর মন্তব্যের জন্য বাংলাদেশী লেখকদের একটি লম্বা তালিকা করেছিলেন তিনি। কিন্তু সবাই তার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন। জবাবে তারা বলেছেন, এ বিষয়ের সঙ্গে তাদের নাম যুক্ত হওয়া হবে ভীষণ ভয়ানক। ‘পেন নেম’-এর আওতায় একজন বিদেশী কলাম লেখকের একটি কলাম প্রকাশে তিনি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
সলিল ত্রিপাঠি ‘দ্য কর্নেল হু উড নট রিপেন্ট’ নামের বইয়ের লেখক। এ বইটি পাকিস্তানের কাছ থেকে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিতে লেখা। সলিল বলেছেন, বুদ্ধিজীবীদের (ইন্টেলেকচুয়ালস) হুমকি দিয়ে আপনি মত প্রকাশকে নীরব করে দিতে, মতকে নিজের মতো করে দেয়ার চেষ্টা করছেন। আমি মনে করি তাই ঘটছে। স্পর্শকাতরা এত বেশি হয়ে পড়েছে যে, বাংলাদেশী অনেক বন্ধু তাকে অনুরোধ করেন যেন তিনি ফেসবুক পোস্ট ট্যাগ না করেন, যেখানে ব্লগারদের হামলা নিয়ে আলোচনা আছে। সলিল বলেন, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এ ইস্যুতে নিজের নামে লিখছেন এমন কোন বাংলাদেশী বোদ্ধার নাম আমি মনে করতে পারছি না।
গত এক মাস ধরে বিভিন্ন মাত্রায়, বিশেষ করে সামাজিক মিডিয়ায় বেনামি একাউন্টস থেকে বিদেশী, নারী সাংবাদিক এমন কি দেশের সংখ্যালঘু শিয়া সদস্যদের বিরুদ্ধে হুমকি দেয়া হচ্ছে। শনিবার ‘হু ইজ নেক্সট’ শীর্ষক একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে আনসার আল ইসলামের পক্ষ থেকে। এরা আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্টের বাংলাদেশী শাখা। হুমকিতে তারা টার্গেটের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে। এ হুমকিতে রয়েছেন সুপরিচিত কবি, বুদ্ধিজীবী, সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনের সম্পাদক, অভিনেতা ও সাংবাদিক। এ মাসের শেষের দিকে ঢাকা লিট (লিটারেচার) ফেস্ট নামের একটি আয়োজন হওয়ার কথা। এতে ৭০ জনের মতো লেখক যোগ দেবেন বলে ধরে নেয়া হয়। কিন্তু এ সংখ্যা নেমে ১০ এ আসতে পারে বলে শঙ্কায় আয়োজকরা। এরই মধ্যে অনেক লেখক ও মতামত দানকারীরা প্রকাশ্য জীবনযাপন থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছেন। ২০১৩ সালের ‘হিট লিস্ট’এ নাম ছিল ৪৫ বছর বয়সী ঔপন্যাসিক আহমাদ মোস্তাফা কামালের। তিনি বলেন, অফিসের বাইরে যান না বললেই চলে। প্রকাশ্যে কোথাও বক্তব্য রাখার আমন্ত্রণ পেলেই নিয়মিতভাবে তা প্রত্যাখ্যান করছেন। তিনি বলেন, আমার জীবন পুরোপুরি নিঃসঙ্গ। একজন লেখক সব সময়ই সব স্থানে যাওয়ার তাগিদ বোধ করেন। তাদেরকে কথা বলতে হয়। তাদেরকে সাধারণ মানুষের ভিড়ে যেতে হয়। পাঠকের সঙ্গে তাদেরকে কথা বলতে হয়। তিনি কখনও পুলিশের কাছে এ হুমকির বিষয়ে রিপোর্ট করেন নি। এর কারণ, তিনি জানেন তারা তাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলবে। এমন সম্ভাবনার কথা তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু গত সপ্তাহের হামলার পর তার বন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের মধ্যে উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। আহমাদ মোস্তাফা কামাল বলেন, এক রাতে আমার ছেলে আমার সঙ্গে কথা বলছিল। সে আমার কাছে জানতে চাইলÑ বাবা তারা কি তোমাকেও হত্যা করবে? মোস্তাফা কামাল বলেনÑ এই হলো আমার ছেলে। একজন কিশোর। সে আমার কাছে জানতে চাইছে আমাকে হত্যা করা হবে কিনা। এক্ষেত্রে আমার উত্তর কি হতে পারে?
একই রকম শিহরণ অনুভূত হচ্ছে একাত্তর টিভিতে। এর প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু। তিনি রিপোর্টার ও উপস্থাপক হিসেবে নারীদের নিয়োগ দেয়ার নীতি গ্রহণ করেছেন। কারণ তিনি বলেন, নারীরা শক্তিধর পুরুষদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাচ্ছে। এটা আমি পছন্দ করি। তার রিপোর্টাররা অধিক অধিক সতর্ক। তার চ্যানেলের সবচেয়ে সুপরিচিত মুখগুলোর অন্যতম নবনীতা চৌধুরী। তিনি গত জুনে তার নাম দেখতে পান ২৫ সেলিব্রেটির হিট লিস্টে, যারা ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। বর্তমানে নবনীতা টেলিভিশন থেকে দূরে রয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি স্বাস্থ্যগত ও পারিবারিক কারণ দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার ভাই এক্ষেত্রে অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছে। সে বলেছে, এসব কাজ বাদ দাও। আমার সঙ্গে বাসায় থাক।
এই টেলিভিশন স্টেশনের আরেকজন রিপোর্টার ফারজানা রুপা (৩৮)। তিনি বলেছেন, প্রকাশকদের ওপর গত সপ্তাহে হামলার পর তা নিয়ে রিপোর্ট না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তার ফেসবুকে বিশ্বাসযোগ্য হুমকি দেয়া হয়েছে। এ জন্য তিনি নিজে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু যে চালককে তিনি নিয়োগ দিয়েছেন তিনি অব্যাহতি নিয়েছেন। এ নিয়ে ৬ জন চালক এমনটা করলেন। তারা মনে করেন, ফারজানার সঙ্গে কাজ করা তাদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সম্প্রতি ফারজানা রুপা তার ৮ বছর বয়সী মেয়ে ও বাসার অন্য শিশুদের সঙ্গে এ নিয়ে খোলামেলা কথা বলা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে বলি যে, বর্তমান সময়ে মায়ের যেকোন কিছু ঘটতে পারে। তাই তোমাকে স্বাধীনভাবে বাঁচা শিখতে হবে। শনিবারের পর থেকে বিপদের বিষয়টি বাদ দিয়ে অন্য কিছু ভাবা চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে ফারজানার কাছে। তার মনে একটি প্রশ্ন বিস্ময় সৃষ্টি করছে। তা হলো যদি তাকে হত্যা করা হয় তাহলে রাস্তায় চলাচলকারী পুরুষরা কি বলবে।
ফারজানা বলেন, হৃদয়ের গভীর থেকে বলছি, যদি এমনটাই ঘটে তাহলে লোকজন বলবে কেন সে সীমা লঙ্ঘন করেছে? মানুষজন ভাববে: কেন এসব নারী পর্দার বাইরে বেরিয়ে এসেছে? কেন এসব নারী এত কথা বলে? কেন তারা এত খোলামেলা কথা বলে?
(নিউ ইয়র্ক টাইমসে ৩রা নভেম্বর প্রকাশিত ‘ফিয়ার অ্যান্ড সাইলেন্স ইন বাংলাদেশ অ্যাজ মিলিট্যান্টস টার্গেট ইন্টেলেকচুয়ালস’ শীর্ষক লেখার অনুবাদ)
No comments