হোসনি দালানে হামলা সন্ত্রাসের নতুন মাত্রা
পুরান
ঢাকার হোসনি দালানের ইমামবাড়ায় তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি চলাকালে বোমা
হামলার ঘটনাকে সন্ত্রাসের ‘নতুন মাত্রা’ হিসেবে অভিহিত করছেন দেশের শীর্ষ
রাজনীতিবিদ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের
মতো সংঘটিত এ হামলাকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই বলেও মনে করেন তারা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, কাজটি কে করেছে- দেশী না বিদেশী ষড়যন্ত্র, এমন সব হালকা
কথা বলেও লাভ নেই। বাস্তবতা হচ্ছে, এ ঘটনা সরকারের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ
দাঁড় করিয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য
সরকারকে আরও সজাগ ও সতর্ক হতে হবে- এমন অভিমত তাদের।
রাজনীতিবিদ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা অবিলম্বে হোসনি দালানে হামলার ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। রোববার জাতীয় সংসদ অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটির সদস্যরা এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিষয়টি হালকাভাবে না নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখার জন্য মন্ত্রণালয়সহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেন। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দু’জন বিদেশী নাগরিককে হত্যার পর সর্বশেষ তাজিয়া মিছিল শুরুর সময় বোমা হামলাসহ দেশে সংঘটিত আলোচিত ঘটনাগুলোর পেছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র কাজ করতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন। তিনি এ সময় আরও বলেন, এসব ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনের আগেই আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটসের (আইএস) তাৎক্ষণিক দায় স্বীকারের বিষয়টি এ সন্দেহকে ঘনীভূত করেছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রোববার যুগান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমরা সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষ একসঙ্গে বাস করি। দেশে ইতিপূর্বে কখনও শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলে হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। দেশে প্রতিদিন মানুষ খুন হচ্ছে, নারী-শিশু হত্যা হচ্ছে, বিদেশী নাগরিকদের হত্যা করা হচ্ছে। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে সরকার বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় বোমা হামলার ঘটনা সরকারের ব্যর্থতার আরেকটি উদাহরণ।’ তিনি অবিলম্বে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
দেশের আরেক সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী হোসনি দালানে বোমা হামলা চালিয়ে শিশু হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনা আইনশৃংখলা রক্ষায় সরকারের আরও একটি ব্যর্থতার নজির। আরও কত ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের ‘কুম্ভকর্ণের’ ঘুম ভাঙবে এটাই দেশবাসীর প্রশ্ন? সাবেক এ রাষ্ট্রপতি এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ। গত কয়েক দিনের মধ্যে দু’জন বিদেশী হত্যা, পীর হত্যা, খ্রিস্টান ধর্মযাজক হত্যার চেষ্টা, ঘরের ভেতর স্বামী-স্ত্রীকে জবাই, পুলিশের এসআই হত্যা, শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে বোমা হামলাসহ অসংখ্য হত্যাই এর প্রমাণ। তিনি আরও বলেন, কোনো গণবিচ্ছিন্ন সরকারই আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এ সরকারও পারছে না।
বোমা হামলায় হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বিষয়টি চরম উদ্বেগের। এর আগেও দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কোনো ব্যাপারেই সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সরকারের ভূমিকা ও অবস্থান এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে সাম্রাজ্যবাদসহ দেশী-বিদেশী নানা অপশক্তি দেশে বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তাদের নীল নকশা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্র সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তাজিয়া মিছিলে হামলার ঘটনা সত্যিই উদ্বেগজনক। এটিকে হালকাভাবে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। কাজটি কে করেছে কিংবা এটি দেশী না বিদেশী ষড়যন্ত্র- এসব কথা বলেও লাভ নেই। বাস্তবতা হচ্ছে, এ ঘটনা সরকারের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দুই বিদেশী হত্যাসহ অতীতের ঘটনা যদি বাদও দেই, তারপরও বলব এটি সন্ত্রাসবাদের ‘নিউ ডাইমেনশন’। পাকিস্তানে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটলেও বাংলাদেশে এবারই প্রথম এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। কারা কাজটি করেছে তা খতিয়ে দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, কাজটি যদি আইএস করে থাকে তাও খতিয়ে দেখা উচিত। তা না হলে বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তা ঝুঁকি শুধু বাড়বে।
বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইন্সটিটিউট অব কমফ্লিক্ট, ল অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই অসাম্প্রদায়িক। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এদেশের সবাই একটি সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। সেই বন্ধন ছিন্ন করতে একটি কুচক্রী মহল নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়।
তিনি আরও বলেন, এ দেশের ৪০০ বছরের ইতিহাসে সিয়া-সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে কখনও বিরোধের ঘটনা দেখা যায়নি। তাজিয়া মিছিলে হামলার ঘটনাও ঘটেনি। এবার প্রথম ঘটল। এখানেই শেষ নয়- যারা সুফিবাদের চর্চা করছেন তাদের ওপরও হামলা হচ্ছে। যাজকদের ওপর হামলা হচ্ছে। এর সবই ওই কুচক্রী মহলের কাজ।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, বিদেশী হত্যা, পুলিশের এএসআই হত্যা, তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে বোমা হামলা- এসব ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে সব একই সূত্রে গাঁথা। মনে হচ্ছে এর মধ্য দিয়ে জনগণের মধ্যে ভীতিসঞ্চারের চেষ্টা চলছে। যখন যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধীদের দণ্ড আসন্ন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র যারা যুদ্ধাপরাধীর বিচার মেনে নিতে পারেনি তারাই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। তাজিয়া মিছিলকে কেন্দ্র করে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে নয়, জনগণের মধ্যে ভীতিসঞ্চার করার জন্য সন্ত্রাসী ও নৈরাজ্যবাদীরা এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশপ্রেমের বহির্প্রকাশ ঘটাতে হবে। এ ধরনের ঘটনা প্রতিহত করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে ধাবিত হচ্ছে। ঠিক তখন একটি অপশক্তি দেশকে পিছিয়ে দিতে এ ধরনের অশুভ তৎপরতা চালাচ্ছে। এ অশুভ শক্তির মূল লক্ষ্য দেশের এবং দেশের মানুষের অর্জন ম্লান করা। বহির্বিশ্বে দেশের ইমেজ ক্ষুণ্ণ করা। বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা করা। সাধারণ মানুষের মধ্যে প্যানিক সৃষ্টি করা।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে আইএসের কোনো অস্থিত্ব নেই। তবে ছোট ছোট বেশকিছু জঙ্গি গোষ্ঠী তৎপরতা রয়েছে। আর এ জঙ্গি গোষ্ঠীকে বিশেষ একটি চক্র আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। যারা নানাভাবে সরকার উৎখাতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এখন অভিনব কায়দায় নাশকতার পথ ধরেছে। তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা সেই অভিনব কায়দারই একটি নতুন ছক। এক্ষেত্রে সরকারকে আরও সজাগ ও সতর্ক হতে হবে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে হবে। যে কোনো মূল্যে অপরাধীদের খুঁজে বের করতে হবে।
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- এসব সহিংসতা কোনোভাবেই বরদাশত করা যাবে না। এ ধরনের মর্মান্তিক হতাহতের ঘটনা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার তৎপরতার কারণে প্রকৃত সন্ত্রাসী এবং অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। তিনি ‘ব্লেম গেম’-এর রাজনীতি পরিহার করে হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান।
রাজনীতিবিদ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা অবিলম্বে হোসনি দালানে হামলার ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। রোববার জাতীয় সংসদ অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কমিটির সদস্যরা এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিষয়টি হালকাভাবে না নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখার জন্য মন্ত্রণালয়সহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেন। জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দু’জন বিদেশী নাগরিককে হত্যার পর সর্বশেষ তাজিয়া মিছিল শুরুর সময় বোমা হামলাসহ দেশে সংঘটিত আলোচিত ঘটনাগুলোর পেছনে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র কাজ করতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করেন। তিনি এ সময় আরও বলেন, এসব ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনের আগেই আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটসের (আইএস) তাৎক্ষণিক দায় স্বীকারের বিষয়টি এ সন্দেহকে ঘনীভূত করেছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে রোববার যুগান্তরকে বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। আমরা সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষ একসঙ্গে বাস করি। দেশে ইতিপূর্বে কখনও শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলে হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। দেশে প্রতিদিন মানুষ খুন হচ্ছে, নারী-শিশু হত্যা হচ্ছে, বিদেশী নাগরিকদের হত্যা করা হচ্ছে। মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে সরকার বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় বোমা হামলার ঘটনা সরকারের ব্যর্থতার আরেকটি উদাহরণ।’ তিনি অবিলম্বে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
দেশের আরেক সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী হোসনি দালানে বোমা হামলা চালিয়ে শিশু হত্যার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এ ঘটনা আইনশৃংখলা রক্ষায় সরকারের আরও একটি ব্যর্থতার নজির। আরও কত ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের ‘কুম্ভকর্ণের’ ঘুম ভাঙবে এটাই দেশবাসীর প্রশ্ন? সাবেক এ রাষ্ট্রপতি এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ। গত কয়েক দিনের মধ্যে দু’জন বিদেশী হত্যা, পীর হত্যা, খ্রিস্টান ধর্মযাজক হত্যার চেষ্টা, ঘরের ভেতর স্বামী-স্ত্রীকে জবাই, পুলিশের এসআই হত্যা, শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে বোমা হামলাসহ অসংখ্য হত্যাই এর প্রমাণ। তিনি আরও বলেন, কোনো গণবিচ্ছিন্ন সরকারই আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এ সরকারও পারছে না।
বোমা হামলায় হতাহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, বিষয়টি চরম উদ্বেগের। এর আগেও দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা হামলার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু কোনো ব্যাপারেই সরকার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সরকারের ভূমিকা ও অবস্থান এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠীকে কাজে লাগিয়ে সাম্রাজ্যবাদসহ দেশী-বিদেশী নানা অপশক্তি দেশে বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তাদের নীল নকশা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্র সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তাজিয়া মিছিলে হামলার ঘটনা সত্যিই উদ্বেগজনক। এটিকে হালকাভাবে উড়িয়ে দেয়ার সুযোগ নেই। কাজটি কে করেছে কিংবা এটি দেশী না বিদেশী ষড়যন্ত্র- এসব কথা বলেও লাভ নেই। বাস্তবতা হচ্ছে, এ ঘটনা সরকারের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দুই বিদেশী হত্যাসহ অতীতের ঘটনা যদি বাদও দেই, তারপরও বলব এটি সন্ত্রাসবাদের ‘নিউ ডাইমেনশন’। পাকিস্তানে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটলেও বাংলাদেশে এবারই প্রথম এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। কারা কাজটি করেছে তা খতিয়ে দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, কাজটি যদি আইএস করে থাকে তাও খতিয়ে দেখা উচিত। তা না হলে বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তা ঝুঁকি শুধু বাড়বে।
বিশিষ্ট নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইন্সটিটিউট অব কমফ্লিক্ট, ল অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশীদ যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বরাবরই অসাম্প্রদায়িক। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে এদেশের সবাই একটি সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। সেই বন্ধন ছিন্ন করতে একটি কুচক্রী মহল নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়।
তিনি আরও বলেন, এ দেশের ৪০০ বছরের ইতিহাসে সিয়া-সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে কখনও বিরোধের ঘটনা দেখা যায়নি। তাজিয়া মিছিলে হামলার ঘটনাও ঘটেনি। এবার প্রথম ঘটল। এখানেই শেষ নয়- যারা সুফিবাদের চর্চা করছেন তাদের ওপরও হামলা হচ্ছে। যাজকদের ওপর হামলা হচ্ছে। এর সবই ওই কুচক্রী মহলের কাজ।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, বিদেশী হত্যা, পুলিশের এএসআই হত্যা, তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে বোমা হামলা- এসব ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে সব একই সূত্রে গাঁথা। মনে হচ্ছে এর মধ্য দিয়ে জনগণের মধ্যে ভীতিসঞ্চারের চেষ্টা চলছে। যখন যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধীদের দণ্ড আসন্ন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র যারা যুদ্ধাপরাধীর বিচার মেনে নিতে পারেনি তারাই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। তাজিয়া মিছিলকে কেন্দ্র করে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে নয়, জনগণের মধ্যে ভীতিসঞ্চার করার জন্য সন্ত্রাসী ও নৈরাজ্যবাদীরা এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। দেশপ্রেমের বহির্প্রকাশ ঘটাতে হবে। এ ধরনের ঘটনা প্রতিহত করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিক এবং সামাজিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে ধাবিত হচ্ছে। ঠিক তখন একটি অপশক্তি দেশকে পিছিয়ে দিতে এ ধরনের অশুভ তৎপরতা চালাচ্ছে। এ অশুভ শক্তির মূল লক্ষ্য দেশের এবং দেশের মানুষের অর্জন ম্লান করা। বহির্বিশ্বে দেশের ইমেজ ক্ষুণ্ণ করা। বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা করা। সাধারণ মানুষের মধ্যে প্যানিক সৃষ্টি করা।’
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে আইএসের কোনো অস্থিত্ব নেই। তবে ছোট ছোট বেশকিছু জঙ্গি গোষ্ঠী তৎপরতা রয়েছে। আর এ জঙ্গি গোষ্ঠীকে বিশেষ একটি চক্র আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। যারা নানাভাবে সরকার উৎখাতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এখন অভিনব কায়দায় নাশকতার পথ ধরেছে। তাজিয়া মিছিলে বোমা হামলা সেই অভিনব কায়দারই একটি নতুন ছক। এক্ষেত্রে সরকারকে আরও সজাগ ও সতর্ক হতে হবে। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে হবে। যে কোনো মূল্যে অপরাধীদের খুঁজে বের করতে হবে।
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চা সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি সমাবেশে বোমা হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- এসব সহিংসতা কোনোভাবেই বরদাশত করা যাবে না। এ ধরনের মর্মান্তিক হতাহতের ঘটনা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার তৎপরতার কারণে প্রকৃত সন্ত্রাসী এবং অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। তিনি ‘ব্লেম গেম’-এর রাজনীতি পরিহার করে হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান।
No comments