হোসেনি দালানে হামলা: সোহান সমাপনী পরীক্ষা দেবে কীভাবে
পুরান ঢাকার হোসেনি দালান প্রাঙ্গণে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতিকালে বিস্ফোরণে আহত সোহান। সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল দুপুরে তোলা ছবি l প্রথম আলো |
ঢাকা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিছানায় ১১ বছরের সোহান শুধু
গোঙাচ্ছে। কিছু বলতে পারে না। কে বলবে, এই ছেলেই সুস্থ-সবল শরীরে বাবার
হাত ধরে তাজিয়া মিছিলে অংশ নিতে বেরিয়েছিল? ছেলের কষ্ট মা পারভিন বেগম
সহ্য করতে পারেন না, শুধু ডুকরে কাঁদেন। বললেন, ‘আপনারা একটু দোয়া করেন,
একটাই ছেলে আমার।’
সোহানের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গ্রেনেডের আঘাতের ক্ষত। স্প্লিন্টার ওর পিঠ দিয়ে ঢুকে অন্ত্র ছিঁড়ে ফেলেছে। বাইরে থেকে দেখে ওর ক্ষত কতটা গভীর বোঝা যাচ্ছিল না। শুক্রবার রাত থেকেই ছটফট করছিল। কষ্ট বাড়ায় শনিবার রাত একটার দিকে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করেন। পরদিন দুপুরে জ্ঞান ফেরে ওর। পুরো পেট কাটতে হয়েছে। নাকের নল দিয়ে দূষিত সব পদার্থ বের করা হচ্ছে।
সোহানসহ আরও চারটি শিশু শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গ্রেনেডের আঘাত নিয়ে চিকিৎসাধীন আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এদের মধ্যে আছে ১৫ মাস বয়সী শিশু মো. কায়েসও।
সোহানের বাবা মো. সেলিম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও সোহান মহররমের দিন দশেক আগে থেকেই মিছিলের প্রস্তুতি নিয়েছিল। ঘরে সবুজ রঙের পতাকাটা ছিলই। সেটাই ধুয়ে ইস্ত্রি করে নিয়েছিল ও। হামলার রাতে তাঁর হাত ধরে হোসেনি দালানের ভেতরে দাঁড়িয়ে ছিল সোহান। গ্রেনেড বিস্ফোরণে বাবা-ছেলে দুজন দুই দিকে ছিটকে পড়ে। অনেকক্ষণ পর ছেলেকে খুঁজে পান সেলিম। সেখান থেকে ছেলেকে নিয়ে প্রথমে মিটফোর্ড হাসপাতালে, পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। গতকাল সোমবার সোহানের মা পারভিন বেগম বললেন, ‘এখন আপনারা বলেন এর বিচার কে করবে? আমার ছেলে সমাপনী পরীক্ষা ক্যামনে দেবে? ওর কী দোষ ছিল?’
গত শুক্রবার গভীর রাতে হোসেনি দালানে গ্রেনেড হামলা বেশ কিছু শিশুকে বাবা-মায়ের কাছছাড়া করেছে। পনেরো মাস বয়সী শিশু কায়েস বাবা মনির হোসেনের কোলে চেপে সেজেগুজে গিয়েছিল মিছিলে, সঙ্গে ছিলেন মামা কামাল হোসেন ও চাচা নূর হোসেন। কসাইটুলীর বাসিন্দা তাঁরা। হালিমা বেগম-মনির হোসেন দম্পতি আট বছর পর বাবা-মা হয়েছেন। জন্মের পর খুব ভুগছিল ছেলে। বাবা-মা মানত করেছিলেন, মিছিলের সামনে যাবেন ছেলেসহ। ওই পরিবারের সবাই আহত। হালিমা বলছিলেন, ‘প্রথমে মনে হলো বাইরের দিকে শব্দ। আমরা সবাই দালানের ভেতরে চলে এলাম। এরপর হামলাটা হলো দালানের ভেতরেই। আমরা সবাই ছিটকে পড়লাম। আমার কিছু মনে নাই। জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমি হাসপাতালে। আমাকে কেউ একজন বলল, বাঁইচা থাকলে ছেলে পাবেন।’ বোমা হামলার পরপরই কায়েসকে অপরিচিত কেউ একজন কোলে করে হাসপাতালে দিয়ে যান বলে জানান কায়েসের নানা আবদুস সোবহান। ব্যান্ডেজ করে আত্মীয়স্বজন ওকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এক বাড়িতে চারজন আহত, কে কাকে দেখবে? শিশু কায়েস সারা রাত যন্ত্রণায় কাঁদে, থামানো যায় না।
নিহত কিশোর সাজ্জাদ হোসেনের ভাইঝি ১১ বছরের স্নেহার পাঁজরের নিচে গ্রেনেডের টুকরা ঢুকে আছে। তাদের পরিবারেরও চারজন আহত। সাজ্জাদকে কোলে করে যখন ভাই রাশেদ হাসপাতালের দিকে দৌড়াচ্ছেন, মেয়ে স্নেহা আর স্ত্রী সুমি তখন মাটিতে গড়াচ্ছেন। স্নেহারও অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা রয়েছে।
ছয় বছরের হাসানের বাঁ হাতটি ক্ষতবিক্ষত হয়ে আছে। ওর শরীরের নানা জায়গায় গ্রেনেডের আঘাত। মা রিনা বেগম মানত পুরো করতে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে মিছিলে গিয়েছিলেন ভাইয়ের সঙ্গে। রিনা বেগম, তাঁর ভাই সানোয়ার হোসেন, মো. হাসান তিনজনই আহত।
ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ১৬: গ্রেনেড হামলার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭৬ জন চিকিৎসা নেয়। এদের মধ্যে ৫৯ জন প্রাথমিক চিকিৎসার পর বাড়ি ফিরে গেছে। এই মুহূর্তে ভর্তি আছে ১৬ জন। এঁরা হলেন কামাল হোসেন (২২), মনির হোসেন (৩০), নূর হোসেন (৩৫), মো. জনি (২৫), সানোয়ার হোসেন (৩৩), মো. আকরাম (২৬), মো. রকিব (২৬), হালিমা বেগম (২০), কায়েস (১৫ মাস), আয়েশা বেগম (৫০), সোহান (১১), রিনা বেগম (৩৮), মো. হাসান (৬), স্নেহা (১১), রুনা (৩০) ও জামাল (৫৫)।
প্রত্যেকের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বোমার আঘাত। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁরা হলেন জামাল হক (৫৫), রকিব (২৬) ও সোহান। জামাল হকের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত আছে, রকিবের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গ্রেনেডের আঘাত, তলপেটে তীব্র আঘাত আছে। স্প্লিন্টার ঢুকে রকিবেরও খাদ্যনালি ছিদ্র হয়ে গেছে। রোববার অস্ত্রোপচার হলেও চিকিৎসকেরা বলছেন এখনো তিনি শঙ্কামুক্ত নন।
চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজনেরা বলেছেন, হোসেনি দালান কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিয়েও তাঁরা সন্তুষ্ট।
আর মিটফোর্ড হাসপাতাল জানিয়েছে, শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৪২ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। এরা সবাই চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে।
সোহানের অবস্থা আশঙ্কাজনক। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গ্রেনেডের আঘাতের ক্ষত। স্প্লিন্টার ওর পিঠ দিয়ে ঢুকে অন্ত্র ছিঁড়ে ফেলেছে। বাইরে থেকে দেখে ওর ক্ষত কতটা গভীর বোঝা যাচ্ছিল না। শুক্রবার রাত থেকেই ছটফট করছিল। কষ্ট বাড়ায় শনিবার রাত একটার দিকে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করেন। পরদিন দুপুরে জ্ঞান ফেরে ওর। পুরো পেট কাটতে হয়েছে। নাকের নল দিয়ে দূষিত সব পদার্থ বের করা হচ্ছে।
সোহানসহ আরও চারটি শিশু শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গ্রেনেডের আঘাত নিয়ে চিকিৎসাধীন আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এদের মধ্যে আছে ১৫ মাস বয়সী শিশু মো. কায়েসও।
সোহানের বাবা মো. সেলিম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও সোহান মহররমের দিন দশেক আগে থেকেই মিছিলের প্রস্তুতি নিয়েছিল। ঘরে সবুজ রঙের পতাকাটা ছিলই। সেটাই ধুয়ে ইস্ত্রি করে নিয়েছিল ও। হামলার রাতে তাঁর হাত ধরে হোসেনি দালানের ভেতরে দাঁড়িয়ে ছিল সোহান। গ্রেনেড বিস্ফোরণে বাবা-ছেলে দুজন দুই দিকে ছিটকে পড়ে। অনেকক্ষণ পর ছেলেকে খুঁজে পান সেলিম। সেখান থেকে ছেলেকে নিয়ে প্রথমে মিটফোর্ড হাসপাতালে, পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। গতকাল সোমবার সোহানের মা পারভিন বেগম বললেন, ‘এখন আপনারা বলেন এর বিচার কে করবে? আমার ছেলে সমাপনী পরীক্ষা ক্যামনে দেবে? ওর কী দোষ ছিল?’
গত শুক্রবার গভীর রাতে হোসেনি দালানে গ্রেনেড হামলা বেশ কিছু শিশুকে বাবা-মায়ের কাছছাড়া করেছে। পনেরো মাস বয়সী শিশু কায়েস বাবা মনির হোসেনের কোলে চেপে সেজেগুজে গিয়েছিল মিছিলে, সঙ্গে ছিলেন মামা কামাল হোসেন ও চাচা নূর হোসেন। কসাইটুলীর বাসিন্দা তাঁরা। হালিমা বেগম-মনির হোসেন দম্পতি আট বছর পর বাবা-মা হয়েছেন। জন্মের পর খুব ভুগছিল ছেলে। বাবা-মা মানত করেছিলেন, মিছিলের সামনে যাবেন ছেলেসহ। ওই পরিবারের সবাই আহত। হালিমা বলছিলেন, ‘প্রথমে মনে হলো বাইরের দিকে শব্দ। আমরা সবাই দালানের ভেতরে চলে এলাম। এরপর হামলাটা হলো দালানের ভেতরেই। আমরা সবাই ছিটকে পড়লাম। আমার কিছু মনে নাই। জ্ঞান ফেরার পর দেখি আমি হাসপাতালে। আমাকে কেউ একজন বলল, বাঁইচা থাকলে ছেলে পাবেন।’ বোমা হামলার পরপরই কায়েসকে অপরিচিত কেউ একজন কোলে করে হাসপাতালে দিয়ে যান বলে জানান কায়েসের নানা আবদুস সোবহান। ব্যান্ডেজ করে আত্মীয়স্বজন ওকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এক বাড়িতে চারজন আহত, কে কাকে দেখবে? শিশু কায়েস সারা রাত যন্ত্রণায় কাঁদে, থামানো যায় না।
নিহত কিশোর সাজ্জাদ হোসেনের ভাইঝি ১১ বছরের স্নেহার পাঁজরের নিচে গ্রেনেডের টুকরা ঢুকে আছে। তাদের পরিবারেরও চারজন আহত। সাজ্জাদকে কোলে করে যখন ভাই রাশেদ হাসপাতালের দিকে দৌড়াচ্ছেন, মেয়ে স্নেহা আর স্ত্রী সুমি তখন মাটিতে গড়াচ্ছেন। স্নেহারও অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা রয়েছে।
ছয় বছরের হাসানের বাঁ হাতটি ক্ষতবিক্ষত হয়ে আছে। ওর শরীরের নানা জায়গায় গ্রেনেডের আঘাত। মা রিনা বেগম মানত পুরো করতে একমাত্র ছেলেকে নিয়ে মিছিলে গিয়েছিলেন ভাইয়ের সঙ্গে। রিনা বেগম, তাঁর ভাই সানোয়ার হোসেন, মো. হাসান তিনজনই আহত।
ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ১৬: গ্রেনেড হামলার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৭৬ জন চিকিৎসা নেয়। এদের মধ্যে ৫৯ জন প্রাথমিক চিকিৎসার পর বাড়ি ফিরে গেছে। এই মুহূর্তে ভর্তি আছে ১৬ জন। এঁরা হলেন কামাল হোসেন (২২), মনির হোসেন (৩০), নূর হোসেন (৩৫), মো. জনি (২৫), সানোয়ার হোসেন (৩৩), মো. আকরাম (২৬), মো. রকিব (২৬), হালিমা বেগম (২০), কায়েস (১৫ মাস), আয়েশা বেগম (৫০), সোহান (১১), রিনা বেগম (৩৮), মো. হাসান (৬), স্নেহা (১১), রুনা (৩০) ও জামাল (৫৫)।
প্রত্যেকের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বোমার আঘাত। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁরা হলেন জামাল হক (৫৫), রকিব (২৬) ও সোহান। জামাল হকের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত আছে, রকিবের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গ্রেনেডের আঘাত, তলপেটে তীব্র আঘাত আছে। স্প্লিন্টার ঢুকে রকিবেরও খাদ্যনালি ছিদ্র হয়ে গেছে। রোববার অস্ত্রোপচার হলেও চিকিৎসকেরা বলছেন এখনো তিনি শঙ্কামুক্ত নন।
চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজনেরা বলেছেন, হোসেনি দালান কর্তৃপক্ষ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা নিয়েও তাঁরা সন্তুষ্ট।
আর মিটফোর্ড হাসপাতাল জানিয়েছে, শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৪২ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। এরা সবাই চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছে।
No comments