‘গুটিকয়েক দর্শকের জন্য বদনাম গোটা দেশের’ by রানা আব্বাস
কিছু দর্শকের অনাকাঙ্খিত আচরণের কারণে জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে আজ ছিল নিরাপত্তার কড়াকাড়ি ছবি: শামসুল হক |
জহুর
আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আজ সকালে ঢুকতেই ছোট্ট ধাক্কা খেতে হলো। গলায়
অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দেখার পরও বিসিবির নিরাপত্তাকর্মীরা ব্যাগ চেক করতে
শুরু করলেন। ব্যাগে থাকা ল্যাপটপ দেখে নিরাপত্তাকর্মী তাঁর ঊর্ধ্বতন এক
কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এটা কী করব?’ বিসিবির নিরাপত্তা কর্মকর্তা
এগিয়ে এসে বললেন, ‘ছেড়ে দাও।’
ছেড়ে দেওয়ার আগে নিরাপত্তাকর্মী ব্যাগে একটা কলম ‘আবিষ্কার’ করে চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘এটা কী করব?’ সাংবাদিকের কাছ থেকে যদি কলমই কেড়ে নেওয়া, তাহলে সে লিখবে কী করে? শুনে বিসিবির নিরাপত্তা কর্মকর্তা খানিকটা লজ্জাই পেলেন। বললেন, ‘কিছু মনে করবেন না। কাল একটা ঘটনা ঘটেছে, জানেন নিশ্চয়ই। ওপরের নির্দেশে সবাইকে এভাবে তল্লাশি করা হচ্ছে।’
ঘটনাটা অবশ্য বাংলাদেশের জন বিব্রতকরই। গতকাল চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাদার উদ্দেশে বাজে মন্তব্য করে পশ্চিম গ্যালারির কিছু দর্শক। মন্তব্যগুলো ছিল রীতিমতো বর্ণবাদী। দক্ষিণ আফ্রিকার টিম ম্যানেজমেন্ট ব্যাপারটি নিয়ে অভিযোগ করেছে ম্যাচ রেফারির কাছে। শুধু তা-ই নয়, প্রোটিয়া খেলোয়াড়দের উদ্দেশে মার্বেল ছোড়ারও অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি জানা ছিল না যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জহিরের। ঈদের ছুটিতে দেশে এসেছেন। এক ফাঁকে এসেছেন খেলা উপভোগ করতে। গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের টিকিট নিয়ে স্টেডিয়ামে ঢোকার মুখে জহিরকে তল্লাশি করে তাঁর কাছে পাওয়া গেল একটি আতরের শিশি! প্রিয় আতরটা বিসর্জন দিতে হলো ভদ্রলোককে। বিরস মুখে কেবল বললেন, ‘কী আর করা!’ গ্যালারির দিকে হাঁটতে হাঁটতে বললেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, এমনকি আমাদের উপমহাদেশের শ্রীলঙ্কাতেও দর্শকেরা শুয়ে-বসে টেস্ট ম্যাচ দেখছে। তারকাটার বেড়া পর্যন্ত নেই। নিরাপত্তার এমন অহেতুক বিড়ম্বনাও নেই।’
হালিশহর থেকে আসা আমজাদ হোসেন মনে করেন, ‘মাঠে এমন নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে। কারণ, আমরা এখনো ওই সব দেশের দর্শকদের মতো সচেতন বা শিক্ষিত হয়ে উঠিনি। বেড়া না থাকলে দেখবেন, দর্শকেরা মাঠে ঢুকে যা ইচ্ছে তা-ই করবে। কাল যে বর্ণবাদী মন্তব্য করা হয়েছে, সেটা তো মারাত্মক অপরাধ। এই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যে মানুষটি ২৭ বছর জেল খেটেছেন, সে দেশের একজন ক্রিকেটারকেই কিনা “ব্ল্যাক” বলে গালি দেওয়া হচ্ছে! এটা অবশ্যই শিক্ষার অভাব। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষের এই বর্ণবাদ নিয়ে কোনো ধারণাই নেই। সে কারণে আমরা খুব সহজেই একে অপরকে “কালা-ধলা” ইত্যাদি বলে ফেলি।’
হালিশহর থেকে আসা আরেক দর্শক মিকাইলের অভিমত, সব দর্শককে এক কাতারে ফেলা ঠিক নয়। গুটিকয়েক দর্শকের জন্য বদনাম হয় গোটা দেশের। যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে, সেটা তাদের মানসিকতার সমস্যা। তবে এর জন পুরো স্টেডিয়ামের দর্শক ভোগান্তি পোহাতে পারে না। মিকাইলের এন্তার অভিযোগ নিরাপত্তাকর্মীদের ওপর, ‘নিরাপত্তাকর্মীদের তৎপরতা অনেক সময় অসহনীয়। তাঁদের আচরণও খুব একটা ভালো নয়। ঢোকার সময় আমার দোকানের চাবি কেড়ে নিল। আমি কি কখনো ওটা ছুড়ে মারব মাঠে? বাধ্য হয়ে ৩০০ টাকা দিয়ে এক জায়গায় রেখে ঢুকেছি। “আসামি”র সঙ্গে পুলিশ সাধারণত যেমন আচরণ করে, আজ খেলা দেখতে আসা দর্শকদের সঙ্গে ঠিক সেই আচরণটাই করা হচ্ছে। নিরাপত্তাকর্মীদের উচিত সদয় আচরণ করা।’
১৯৯৯ সাল থেকে স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখে আসছেন আমজাদ। তিনি দর্শকদের দায়টাও কম দেখছেন না, ‘আমরা ভীষণ ক্রিকেটপ্রেমী, বিশ্বে সুনামও আছে। তবে দর্শক হিসেবে আমাদের আচরণ আরও ভালো হওয়া উচিত। এর আগেও গ্যালারিতে ব্ল্যাক-ব্ল্যাক শুনেছি। কেবল বিদেশি খেলোয়াড়দের নয়, আমাদের খেলোয়াড়দেরও গালি বা নানাভাবে উত্ত্যক্ত করা হয়। রুবেলের কাছে বল গেলে কারণ ছাড়াই “হ্যাপি-হ্যাপি”! সাকিবের বেলায় “শিশির-শিশির”! এমনকি চট্টগ্রামের ছেলে তামিমও কিন্তু বাদ পড়েন না এ যন্ত্রণা থেকে।’
এ সময় মাইক থেকে ভেসে এল বিশেষ সতর্কবাণী—কেউ কোনো খেলোয়াড়, আম্পায়ার কিংবা খেলা-সংশ্লিষ্ট কাউকে বাজে মন্তব্য বা আচরণ করলে ভিডিও দেখে আজীবন নিষিদ্ধ করা হবে। এমন সতর্কবাণী অবশ্য নিয়মিতই শোনা যায় আন্তর্জাতিক ম্যাচে। তবে দুদিন ধরে বেশিই শোনা যাচ্ছে, যেটা বাংলাদেশের দর্শকদের জন মোটেও সুখকর নয়। খেলায় ‘দ্বাদশ খেলোয়াড়ে’র ভূমিকা পালন করা দর্শকেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে নানা রসিকতা, সমালোচনা, দুয়োধ্বনি দিতে পারে; বিশ্বের সব স্টেডিয়ামেই এটা নিয়মিত চিত্র। তবে আদৌ কি তা সীমা ছাড়ানো উচিত?
চট্টগ্রাম টেস্টে এই সীমা ছাড়িয়ে যাওয়াতেই তো যত বিপত্তি!
ছেড়ে দেওয়ার আগে নিরাপত্তাকর্মী ব্যাগে একটা কলম ‘আবিষ্কার’ করে চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘এটা কী করব?’ সাংবাদিকের কাছ থেকে যদি কলমই কেড়ে নেওয়া, তাহলে সে লিখবে কী করে? শুনে বিসিবির নিরাপত্তা কর্মকর্তা খানিকটা লজ্জাই পেলেন। বললেন, ‘কিছু মনে করবেন না। কাল একটা ঘটনা ঘটেছে, জানেন নিশ্চয়ই। ওপরের নির্দেশে সবাইকে এভাবে তল্লাশি করা হচ্ছে।’
ঘটনাটা অবশ্য বাংলাদেশের জন বিব্রতকরই। গতকাল চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে দক্ষিণ আফ্রিকার কাগিসো রাবাদার উদ্দেশে বাজে মন্তব্য করে পশ্চিম গ্যালারির কিছু দর্শক। মন্তব্যগুলো ছিল রীতিমতো বর্ণবাদী। দক্ষিণ আফ্রিকার টিম ম্যানেজমেন্ট ব্যাপারটি নিয়ে অভিযোগ করেছে ম্যাচ রেফারির কাছে। শুধু তা-ই নয়, প্রোটিয়া খেলোয়াড়দের উদ্দেশে মার্বেল ছোড়ারও অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি জানা ছিল না যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জহিরের। ঈদের ছুটিতে দেশে এসেছেন। এক ফাঁকে এসেছেন খেলা উপভোগ করতে। গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের টিকিট নিয়ে স্টেডিয়ামে ঢোকার মুখে জহিরকে তল্লাশি করে তাঁর কাছে পাওয়া গেল একটি আতরের শিশি! প্রিয় আতরটা বিসর্জন দিতে হলো ভদ্রলোককে। বিরস মুখে কেবল বললেন, ‘কী আর করা!’ গ্যালারির দিকে হাঁটতে হাঁটতে বললেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, এমনকি আমাদের উপমহাদেশের শ্রীলঙ্কাতেও দর্শকেরা শুয়ে-বসে টেস্ট ম্যাচ দেখছে। তারকাটার বেড়া পর্যন্ত নেই। নিরাপত্তার এমন অহেতুক বিড়ম্বনাও নেই।’
হালিশহর থেকে আসা আমজাদ হোসেন মনে করেন, ‘মাঠে এমন নিরাপত্তার প্রয়োজন আছে। কারণ, আমরা এখনো ওই সব দেশের দর্শকদের মতো সচেতন বা শিক্ষিত হয়ে উঠিনি। বেড়া না থাকলে দেখবেন, দর্শকেরা মাঠে ঢুকে যা ইচ্ছে তা-ই করবে। কাল যে বর্ণবাদী মন্তব্য করা হয়েছে, সেটা তো মারাত্মক অপরাধ। এই বর্ণবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যে মানুষটি ২৭ বছর জেল খেটেছেন, সে দেশের একজন ক্রিকেটারকেই কিনা “ব্ল্যাক” বলে গালি দেওয়া হচ্ছে! এটা অবশ্যই শিক্ষার অভাব। বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষের এই বর্ণবাদ নিয়ে কোনো ধারণাই নেই। সে কারণে আমরা খুব সহজেই একে অপরকে “কালা-ধলা” ইত্যাদি বলে ফেলি।’
হালিশহর থেকে আসা আরেক দর্শক মিকাইলের অভিমত, সব দর্শককে এক কাতারে ফেলা ঠিক নয়। গুটিকয়েক দর্শকের জন্য বদনাম হয় গোটা দেশের। যারা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকে, সেটা তাদের মানসিকতার সমস্যা। তবে এর জন পুরো স্টেডিয়ামের দর্শক ভোগান্তি পোহাতে পারে না। মিকাইলের এন্তার অভিযোগ নিরাপত্তাকর্মীদের ওপর, ‘নিরাপত্তাকর্মীদের তৎপরতা অনেক সময় অসহনীয়। তাঁদের আচরণও খুব একটা ভালো নয়। ঢোকার সময় আমার দোকানের চাবি কেড়ে নিল। আমি কি কখনো ওটা ছুড়ে মারব মাঠে? বাধ্য হয়ে ৩০০ টাকা দিয়ে এক জায়গায় রেখে ঢুকেছি। “আসামি”র সঙ্গে পুলিশ সাধারণত যেমন আচরণ করে, আজ খেলা দেখতে আসা দর্শকদের সঙ্গে ঠিক সেই আচরণটাই করা হচ্ছে। নিরাপত্তাকর্মীদের উচিত সদয় আচরণ করা।’
১৯৯৯ সাল থেকে স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখে আসছেন আমজাদ। তিনি দর্শকদের দায়টাও কম দেখছেন না, ‘আমরা ভীষণ ক্রিকেটপ্রেমী, বিশ্বে সুনামও আছে। তবে দর্শক হিসেবে আমাদের আচরণ আরও ভালো হওয়া উচিত। এর আগেও গ্যালারিতে ব্ল্যাক-ব্ল্যাক শুনেছি। কেবল বিদেশি খেলোয়াড়দের নয়, আমাদের খেলোয়াড়দেরও গালি বা নানাভাবে উত্ত্যক্ত করা হয়। রুবেলের কাছে বল গেলে কারণ ছাড়াই “হ্যাপি-হ্যাপি”! সাকিবের বেলায় “শিশির-শিশির”! এমনকি চট্টগ্রামের ছেলে তামিমও কিন্তু বাদ পড়েন না এ যন্ত্রণা থেকে।’
এ সময় মাইক থেকে ভেসে এল বিশেষ সতর্কবাণী—কেউ কোনো খেলোয়াড়, আম্পায়ার কিংবা খেলা-সংশ্লিষ্ট কাউকে বাজে মন্তব্য বা আচরণ করলে ভিডিও দেখে আজীবন নিষিদ্ধ করা হবে। এমন সতর্কবাণী অবশ্য নিয়মিতই শোনা যায় আন্তর্জাতিক ম্যাচে। তবে দুদিন ধরে বেশিই শোনা যাচ্ছে, যেটা বাংলাদেশের দর্শকদের জন মোটেও সুখকর নয়। খেলায় ‘দ্বাদশ খেলোয়াড়ে’র ভূমিকা পালন করা দর্শকেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে নানা রসিকতা, সমালোচনা, দুয়োধ্বনি দিতে পারে; বিশ্বের সব স্টেডিয়ামেই এটা নিয়মিত চিত্র। তবে আদৌ কি তা সীমা ছাড়ানো উচিত?
চট্টগ্রাম টেস্টে এই সীমা ছাড়িয়ে যাওয়াতেই তো যত বিপত্তি!
No comments