ইস্কাটনে জোড়া খুন: অভিযোগপত্র দাখিল- সাংসদপুত্র বখতিয়ারই শুধু আসামি
রাজধানীর
নিউ ইস্কাটনে জোড়া খুনের মামলায় সাংসদপুত্র বখতিয়ার আলম রনিকেই (৪২)
একমাত্র আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি)
পুলিশ। ডিবি পুলিশ বলেছে, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আর কারও সংশ্লিষ্টতা পাওয়া
যায়নি।
অভিযোগপত্রে বখতিয়ারের ব্যবহৃত গাড়ির চালক ইমরান ফকিরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। তাঁকে মামলায় প্রধান সাক্ষী করা হয়েছে। গাড়িটির মালিক সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ ও মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পিনু খান। তিনি বখতিয়ারের মা।
গাড়ির মালিককে আসামি না করার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় বখতিয়ার এই গাড়িতে থাকলেও অপরাধ করার জন্যই যে গাড়িটি নেওয়া হয়েছিল, তার প্রমাণ মেলেনি। এ কারণে গাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের সংশ্লিষ্ট সাধারণ নিবন্ধন শাখায় (জিআরও) গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এই মামলার অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক কুমার দাস। অভিযোগপত্রের সঙ্গে মোট ১৫টি আলামত আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। আলামতের মধ্যে রয়েছে বখতিয়ারের পিস্তল, ম্যাগাজিন, ২১টি গুলি, রক্তমাখা একটি গুলির অংশবিশেষ, নিহত দুজনের লুঙ্গি। আগামী ১৩ আগস্ট আদালতে এই অভিযোগপত্র উপস্থাপন ও শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
বখতিয়ার ও ইমরান এখন কারাগারে। গত ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে নিউ ইস্কাটনে একটি গাড়ি থেকে ছোড়া গুলিতে আহত হন অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী ও রিকশাচালক আবদুল হাকিম। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে এ দুজন মারা যান।
আদালত সূত্র বলেছে, দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। মামলায় ৩৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ইমরান ছাড়াও বখতিয়ারের বন্ধু আবাসন ব্যবসায়ী কামাল মাহমুদ, মো. কামাল ওরফে টাইগার কামাল ও জাহাঙ্গীর আলম রয়েছেন। কামাল মাহমুদ ও মো. কামাল প্রত্যক্ষ সাক্ষী। ইমরান, কামাল মাহমুদ ও কামাল আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জাহাঙ্গীর আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। বখতিয়ারের তিন বন্ধু ও গাড়িচালকের বিরুদ্ধে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সূত্রবিহীন ও আলোচিত এই মামলার খুঁটিনাটি ও চুলচেরা বিশ্লেষণ করে তিন মাসেরও কম সময়ে তদন্ত শেষ করা হয়েছে। গাড়িচালকের জবানবন্দিকে দালিলিক সাক্ষ্য হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এ কারণে তাঁকে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
এই মামলায় বখতিয়ারকে তিন দফায় মোট ১১ দিনের রিমান্ডে নেয় ডিবি পুলিশ। ডিবি সূত্র বলেছে, তিনি জিজ্ঞাসাবাদে গুলি করার কথা জানালেও আদালতে জবানবন্দি দিতে রাজি হননি।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, এ মামলায় ৩১ মে গ্রেপ্তার হওয়া গাড়িচালক ইমরান ১ জুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে (পৌনে দুইটা) বখতিয়ারকে বহন করা প্রাডো গাড়িটি নিউ ইস্কাটন রোডে যানজটে আটকে পড়ে। এতে চালকের পাশের আসনে বসা নেশাগ্রস্ত বখতিয়ার বিরক্ত হয়ে তাঁর লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে এলোপাতাড়ি চার-পাঁচটি গুলি করেন। বখতিয়ারের বন্ধু কামাল মাহমুদ ও মো. কামাল ওই সময় গাড়িটির পেছনের আসনে বসা ছিলেন। তাঁরাও জবানবন্দিতে বলেন, বখতিয়ার এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়েছেন। ওই ঘটনার আগে বখতিয়ারের সঙ্গে ছিলেন আরেক বন্ধু জাহাঙ্গীর। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ব্যালাস্টিক প্রতিবেদন, প্রত্যক্ষদর্শীদের আদালতে দেওয়া জবানবন্দি, বস্তুগত প্রমাণ, তদন্ত ও অন্যান্য সূত্র থেকে ডিবি নিশ্চিত হয়েছে, বখতিয়ারের এলোপাতাড়ি গুলিতে দৈনিক জনকণ্ঠ-এর অটোরিকশাচালক ইয়াকুব (৪০) ও রিকশাচালক হাকিম (২৫) আহত হয়েছিলেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাকিম ১৫ এপ্রিল বিকেলে মারা যান। সেদিন রাতে হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম রমনা থানায় হত্যা মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়, গাড়ির জানালা খুলে একজন লোক এলোপাতাড়ি চার-পাঁচটি গুলি ছুড়েছে। একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইয়াকুব মারা যান ২৩ এপ্রিল রাতে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইয়াকুবের বুকে গুলি বিদ্ধ হয় এবং হাকিমের শরীরের পেছনের অংশে গুলি ঢুকে নাভির নিচ দিয়ে বেরিয়ে যায়।
গতকাল দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ইয়াবা উদ্ধার নিয়ে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, সাংসদপুত্র বখতিয়ার তাঁর লাইসেন্স করা অস্ত্র থেকে গুলি ছুড়ে দুজনকে হত্যা করেছেন। এ ঘটনায় বখতিয়ার ছাড়া আর কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। বখতিয়ারের গাড়িচালক ও তাঁর এক বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁদের এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, গাড়িচালক ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল এমন প্রমাণ মেলেনি। বখতিয়ারের ব্যবহার করা গাড়ির মালিককে কেন আসামি করা হলো না—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, গাড়িটি বখতিয়ারের মা সাংসদ পিনু খানের। সেটি জব্দ করা হয়েছে। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় বখতিয়ার এই গাড়িতে থাকলেও অপরাধ করার জন্যই যে গাড়িটি নেওয়া হয়েছিল—তার প্রমাণ মেলেনি। কারণ, গাড়ির মালিক সাংসদ পিনু খান তাঁর মা। মায়ের গাড়ি ছেলে ব্যবহার করতেই পারেন। এ কারণে গাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত—এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি। এটি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটেছে, গাড়িটিতে চড়া হত্যার মুখ্য কারণ ছিল না। গাড়িটি কী করা হবে, সে সিদ্ধান্ত আদালতের।
ঘটনার সময় বখতিয়ার মদ্যপ ছিলেন কি না—এ প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বলেন, তাঁকে ঘটনার অনেক পরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার সময় তিনি কী অবস্থায় ছিলেন তা জানা যায়নি। বখতিয়ারের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না নেওয়া এই মামলার দুর্বল দিক কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেখানে বস্তুগত সাক্ষ্য আছে সেখানে জবানবন্দি না হলেও মামলার কোনো ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। তা ছাড়া এই মামলা প্রমাণের জন্য পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পুলিশের হাতে রয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, জোড়া খুনের এই মামলার তদন্তভার রমনা থানার পুলিশের কাছ থেকে ২৪ মে ডিবির কাছে ন্যস্ত করা হয়। তদন্তের একপর্যায়ে ডিবি জনকণ্ঠ ভবনে স্থাপিত ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজে ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে ওই সড়কে দুবার কালো রঙের একটি প্রাডো গাড়ির (ঢাকা মেট্রো ঘ ১৩-৬২৩৯) বেপরোয়া চলাচল দেখে। ডিবি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নথিপত্র দেখে নিশ্চিত হয়, ওই গাড়ি সাংসদ পিনু খানের। ডিবি তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও অন্য সূত্রের মাধ্যমে ঘটনার সময়, এর আগে ও পরে ঘটনাস্থলে বখতিয়ার ও ইমরানের অবস্থানও নিশ্চিত হয়। বখতিয়ার তাঁর মায়ের ওই গাড়ি ব্যবহার করতেন।
ডিবি ৩১ মে ইমরানকে আটক করে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ধানমন্ডির বাসা থেকে বখতিয়ারকে গ্রেপ্তার ও তাঁর লাইসেন্স করা পিস্তলটি জব্দ করা হয়। ৪ জুন ডিবি ব্যালাস্টিক পরীক্ষার জন্য পিস্তলটি সিআইডির আগ্নেয়াস্ত্র পরীক্ষা শাখায় পাঠায়। এই পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই পিস্তল থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে এবং নিহত ইয়াকুবের শরীরে পাওয়া গুলি ও ওই পিস্তলের গুলির ধরন এক, পয়েন্ট ৩২ বোরের। ১৪ জুন প্রাডো গাড়িটি জব্দ করা হয়। ৫ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে বখতিয়ারের পিস্তলের লাইসেন্স বাতিলের আবেদন করেন।
অভিযোগপত্রে বখতিয়ারের ব্যবহৃত গাড়ির চালক ইমরান ফকিরকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। তাঁকে মামলায় প্রধান সাক্ষী করা হয়েছে। গাড়িটির মালিক সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ ও মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পিনু খান। তিনি বখতিয়ারের মা।
গাড়ির মালিককে আসামি না করার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় বখতিয়ার এই গাড়িতে থাকলেও অপরাধ করার জন্যই যে গাড়িটি নেওয়া হয়েছিল, তার প্রমাণ মেলেনি। এ কারণে গাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের সংশ্লিষ্ট সাধারণ নিবন্ধন শাখায় (জিআরও) গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এই মামলার অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) দীপক কুমার দাস। অভিযোগপত্রের সঙ্গে মোট ১৫টি আলামত আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। আলামতের মধ্যে রয়েছে বখতিয়ারের পিস্তল, ম্যাগাজিন, ২১টি গুলি, রক্তমাখা একটি গুলির অংশবিশেষ, নিহত দুজনের লুঙ্গি। আগামী ১৩ আগস্ট আদালতে এই অভিযোগপত্র উপস্থাপন ও শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
বখতিয়ার ও ইমরান এখন কারাগারে। গত ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে নিউ ইস্কাটনে একটি গাড়ি থেকে ছোড়া গুলিতে আহত হন অটোরিকশাচালক ইয়াকুব আলী ও রিকশাচালক আবদুল হাকিম। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে এ দুজন মারা যান।
আদালত সূত্র বলেছে, দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। মামলায় ৩৭ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ইমরান ছাড়াও বখতিয়ারের বন্ধু আবাসন ব্যবসায়ী কামাল মাহমুদ, মো. কামাল ওরফে টাইগার কামাল ও জাহাঙ্গীর আলম রয়েছেন। কামাল মাহমুদ ও মো. কামাল প্রত্যক্ষ সাক্ষী। ইমরান, কামাল মাহমুদ ও কামাল আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জাহাঙ্গীর আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। বখতিয়ারের তিন বন্ধু ও গাড়িচালকের বিরুদ্ধে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, সূত্রবিহীন ও আলোচিত এই মামলার খুঁটিনাটি ও চুলচেরা বিশ্লেষণ করে তিন মাসেরও কম সময়ে তদন্ত শেষ করা হয়েছে। গাড়িচালকের জবানবন্দিকে দালিলিক সাক্ষ্য হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এ কারণে তাঁকে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে।
এই মামলায় বখতিয়ারকে তিন দফায় মোট ১১ দিনের রিমান্ডে নেয় ডিবি পুলিশ। ডিবি সূত্র বলেছে, তিনি জিজ্ঞাসাবাদে গুলি করার কথা জানালেও আদালতে জবানবন্দি দিতে রাজি হননি।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, এ মামলায় ৩১ মে গ্রেপ্তার হওয়া গাড়িচালক ইমরান ১ জুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে (পৌনে দুইটা) বখতিয়ারকে বহন করা প্রাডো গাড়িটি নিউ ইস্কাটন রোডে যানজটে আটকে পড়ে। এতে চালকের পাশের আসনে বসা নেশাগ্রস্ত বখতিয়ার বিরক্ত হয়ে তাঁর লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে এলোপাতাড়ি চার-পাঁচটি গুলি করেন। বখতিয়ারের বন্ধু কামাল মাহমুদ ও মো. কামাল ওই সময় গাড়িটির পেছনের আসনে বসা ছিলেন। তাঁরাও জবানবন্দিতে বলেন, বখতিয়ার এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়েছেন। ওই ঘটনার আগে বখতিয়ারের সঙ্গে ছিলেন আরেক বন্ধু জাহাঙ্গীর। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ব্যালাস্টিক প্রতিবেদন, প্রত্যক্ষদর্শীদের আদালতে দেওয়া জবানবন্দি, বস্তুগত প্রমাণ, তদন্ত ও অন্যান্য সূত্র থেকে ডিবি নিশ্চিত হয়েছে, বখতিয়ারের এলোপাতাড়ি গুলিতে দৈনিক জনকণ্ঠ-এর অটোরিকশাচালক ইয়াকুব (৪০) ও রিকশাচালক হাকিম (২৫) আহত হয়েছিলেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাকিম ১৫ এপ্রিল বিকেলে মারা যান। সেদিন রাতে হাকিমের মা মনোয়ারা বেগম রমনা থানায় হত্যা মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়, গাড়ির জানালা খুলে একজন লোক এলোপাতাড়ি চার-পাঁচটি গুলি ছুড়েছে। একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইয়াকুব মারা যান ২৩ এপ্রিল রাতে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইয়াকুবের বুকে গুলি বিদ্ধ হয় এবং হাকিমের শরীরের পেছনের অংশে গুলি ঢুকে নাভির নিচ দিয়ে বেরিয়ে যায়।
গতকাল দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে ইয়াবা উদ্ধার নিয়ে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যুগ্ম কমিশনার (ডিবি) মনিরুল ইসলাম বলেন, সাংসদপুত্র বখতিয়ার তাঁর লাইসেন্স করা অস্ত্র থেকে গুলি ছুড়ে দুজনকে হত্যা করেছেন। এ ঘটনায় বখতিয়ার ছাড়া আর কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। বখতিয়ারের গাড়িচালক ও তাঁর এক বন্ধুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁদের এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, গাড়িচালক ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল এমন প্রমাণ মেলেনি। বখতিয়ারের ব্যবহার করা গাড়ির মালিককে কেন আসামি করা হলো না—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, গাড়িটি বখতিয়ারের মা সাংসদ পিনু খানের। সেটি জব্দ করা হয়েছে। অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সময় বখতিয়ার এই গাড়িতে থাকলেও অপরাধ করার জন্যই যে গাড়িটি নেওয়া হয়েছিল—তার প্রমাণ মেলেনি। কারণ, গাড়ির মালিক সাংসদ পিনু খান তাঁর মা। মায়ের গাড়ি ছেলে ব্যবহার করতেই পারেন। এ কারণে গাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ ছাড়া ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত—এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি। এটি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটেছে, গাড়িটিতে চড়া হত্যার মুখ্য কারণ ছিল না। গাড়িটি কী করা হবে, সে সিদ্ধান্ত আদালতের।
ঘটনার সময় বখতিয়ার মদ্যপ ছিলেন কি না—এ প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বলেন, তাঁকে ঘটনার অনেক পরে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার সময় তিনি কী অবস্থায় ছিলেন তা জানা যায়নি। বখতিয়ারের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না নেওয়া এই মামলার দুর্বল দিক কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেখানে বস্তুগত সাক্ষ্য আছে সেখানে জবানবন্দি না হলেও মামলার কোনো ক্ষতি হওয়ার কথা নয়। তা ছাড়া এই মামলা প্রমাণের জন্য পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পুলিশের হাতে রয়েছে।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, জোড়া খুনের এই মামলার তদন্তভার রমনা থানার পুলিশের কাছ থেকে ২৪ মে ডিবির কাছে ন্যস্ত করা হয়। তদন্তের একপর্যায়ে ডিবি জনকণ্ঠ ভবনে স্থাপিত ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজে ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে ওই সড়কে দুবার কালো রঙের একটি প্রাডো গাড়ির (ঢাকা মেট্রো ঘ ১৩-৬২৩৯) বেপরোয়া চলাচল দেখে। ডিবি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নথিপত্র দেখে নিশ্চিত হয়, ওই গাড়ি সাংসদ পিনু খানের। ডিবি তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ও অন্য সূত্রের মাধ্যমে ঘটনার সময়, এর আগে ও পরে ঘটনাস্থলে বখতিয়ার ও ইমরানের অবস্থানও নিশ্চিত হয়। বখতিয়ার তাঁর মায়ের ওই গাড়ি ব্যবহার করতেন।
ডিবি ৩১ মে ইমরানকে আটক করে। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ধানমন্ডির বাসা থেকে বখতিয়ারকে গ্রেপ্তার ও তাঁর লাইসেন্স করা পিস্তলটি জব্দ করা হয়। ৪ জুন ডিবি ব্যালাস্টিক পরীক্ষার জন্য পিস্তলটি সিআইডির আগ্নেয়াস্ত্র পরীক্ষা শাখায় পাঠায়। এই পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই পিস্তল থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে এবং নিহত ইয়াকুবের শরীরে পাওয়া গুলি ও ওই পিস্তলের গুলির ধরন এক, পয়েন্ট ৩২ বোরের। ১৪ জুন প্রাডো গাড়িটি জব্দ করা হয়। ৫ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে বখতিয়ারের পিস্তলের লাইসেন্স বাতিলের আবেদন করেন।
No comments