সিটি নির্বাচনে অনিয়ম তদন্ত না হওয়া লজ্জাজনক
দেশের
তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ব্যাপারে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন
ঢাকায় নিযুক্ত বৃটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন। বলেছেন, ওই দিন সকালে আমি
ভোটে কোন বিচ্যুতি দেখিনি। যে কারণে নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছিলাম। কিন্তু
দুপুরে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে
বিভিন্ন অনিয়মের খবর আসতে থাকে। বিভিন্ন কেন্দ্র দখল এবং বিচ্যুতির ঘটনাও
দেখতে পাই। এ অবস্থায় বিএনপির নির্বাচন থেকে সরে আসার খবরও পাই। আমি আশা
করেছিলাম নির্বাচনে যেসব অনিয়মের অভিযোগ এসেছে, নির্বাচনে হস্তক্ষেপের যে
চিত্র গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওঠে এসেছে তার পূর্ণ এবং
স্বচ্ছ তদন্ত হবে। কিন্তু তা আর হয়নি, এটা বড়ই লজ্জাজনক। গতকাল জাতীয় প্রেস
ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিকাব)
আয়োজিত ডিকাব টক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বৃটিশ দূত এসব কথা
বলেন। ডিকাব সভাপতি মাসুদ করিমের সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় আনুষ্ঠানে স্বাগত
বক্তৃতা করেন সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদ। অনুষ্ঠানে ডিকাব সদস্যরা ছাড়াও
বিভিন্ন মিডিয়ার রিপোর্টাররা অংশ নেন। সিটি নির্বাচনে ফল ঘোষণা প্রসঙ্গে
গিবসন বলেন, ওই নির্বাচনকে আইনিভাবে কেউ চ্যালেঞ্জ করেনি। ফল ঘোষণায়ও কোন
বাধা ছিল না। বিধায় নির্বাচন কমিশন ফল ঘোষণা করেছে। এই পরিস্থিতিতে
যুক্তরাজ্য আশা করে বিজয়ী ৩ সিটি মেয়র জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবেন।
গঠনমূলক কাজে সক্রিয় থাকবেন। পরিবেশের এমন উন্নয়ন করবেন যেন নগরবাসী সুখী
হয়। বিদেশী দূতদের সঙ্গে ডিকাবের নিময়তি মতবিনিময়ের আয়োজন ডিকাব টক এর
গতকালের বিষয় ছিল বাংলাদেশের সঙ্গে বৃটেনের সম্পর্ক। সেখানে কমনওয়েলথভুক্ত
রাষ্ট্র হিসাবে গণতন্ত্রচর্চাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের অভিন্ন যে
মূল্যবোধ এবং অঙ্গীকার রয়েছে তা নিয়ে কথা বলেন হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন।
সেখানে তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আবারও সংলাপে বসার আহ্বান
জানান। তার আলোচনায় ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের প্রসঙ্গও আসে। এক প্রশ্নের
জবাবে গিবসন বলেন, দুর্ভাগ্যজনক বিষয় ওই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। অংশ
না নেয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না ভুল ছিল সেই মূল্যায়নে যাব না। গণতন্ত্র
চর্চা নিয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করা
কঠিন। নির্বাচনই গণতন্ত্রের একমাত্র পূর্বশর্ত নয়। তবে বাংলাদেশের জনগণের
মধ্যে ভোটের জন্য আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের প্রশংসা করে বৃটিশ
রাষ্ট্রদূত বলেন, সার্বিক বিচেনায় এ দেশের মানুষ অসহিংস। তারা সহিংসতা
পছন্দ করে না। কিন্তু অনেক সময় সেই ‘সহিষ্ণু’ পরিবেশ থাকে না। এটা
দুংখজনক। তার দেশ সবসময় সহিংসতার নিন্দা করে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। লিখিত
বিবৃতিতে গিবসন বলেন, আধুনিক স্বৈরতন্ত্র একটা বড় চ্যালেঞ্জ। পৃথিবীর অনেক
দেশে অনেকের মধ্যে এ মানসিকতা রয়েছে। সরকার রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, আইন
বিভাগ, গণমাধ্যম, বিচার বিভাগ, অর্থনীতি, নাগরিক সমাজ, সামরিক বাহিনীসহ সব
ক্ষেত্রে এরকম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রবণতা রয়েছে। ওই সব যারা করতে চায়
তারা কিছু জালিয়াতি করে অন্যায় সুবিধা নিতে চায়। ওই মনোভাব দিয়ে নির্বাচন
কমিশনে নিজেদের লোকদের বসায়। কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচনের রায় নিজেদের
নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে কিভাবে মূল্যায়ন
করেন-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে গিবসন বলেন, আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে
চাই না। এটা আমার কাজ নয়। যে কোন দেশেই এটা যেন না ঘটে সেজন্য যুক্তরাজ্য
উৎসাহ দেয়। তার দেশ এ থেকে ‘মুক্ত’ বলেও দাবি করেন বৃটিশ হাই কমিশনার।
সূচনা বক্তৃতায় বৃটেনের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে ৩ বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এমপি
নির্বাচিত হওয়ার উদাহরণও তুলে ধরেন তিনি। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কিভাবে
মূল্যায়ন করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে বৃটিশ দূত বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র
বিভিন্ন সময়ে ধাক্কা খেয়েছে। জাতীয় সংসদ ‘গণতন্ত্রের সুরক্ষা’র কাজ করে
বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশের বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে বৃটিশ
হাইকমিশনার বলেন, দুর্নীতি বিনিয়োগে বড় চ্যালেঞ্জ। এটি বিনিয়োগকে
নিরোৎসাহিত করে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
No comments