আস্থার সোনার দরজা খুললেন হাসিনা-মোদি by হাসানুল হক ইনু
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি |
বাংলাদেশ
ও ভারতের সম্পর্কের নবযাত্রা শুরু হয় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে। দুই দেশের
জনগণ রক্তের মধ্য দিয়ে এই বন্ধুত্ব রচনা করেন। পঁচাত্তরে বাঙালি জাতির পিতা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যার পর থেকে দুই দেশের
সম্পর্কে যে ভাটা পড়েছিল, শেখ হাসিনার সরকার তা পুনরুদ্ধারে সমর্থ হয়েছে।
নরেন্দ্র মোদির আগমনে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে যে নতুন অধ্যায় রচিত হলো, সেখানে জঙ্গিবাদ, সীমাপার সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা-সৃষ্ট অনাস্থার বীজ যাতে মাথাচাড়া না দিতে পারে, অবিশ্বাসের কুয়াশা তৈরি করতে না পারে, সেদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি দিতেই হবে। একসঙ্গে সামনে এগোতে হলে অবিশ্বাসের জায়গায় আস্থা তৈরি ও চক্রান্তকারীদের নিষ্ক্রিয় করার বিকল্প নেই। আর সে জন্যই জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও সীমাপার সন্ত্রাস বর্জন-দমনে প্রয়োজন উভয় দেশের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও মতৈক্য।
এ মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়া দারিদ্র্য, সাম্প্রদায়িকতা ও আণবিক—এ তিন বোমার ওপর বসে আছে। তাই এ তিন বোমা নিষ্ক্রিয় করা এখন রাজনৈতিক কর্তব্য। এর মধ্য দিয়েই এ অঞ্চলের উন্নয়নের সোনার দরজাটি খুলবে। আর এ সোনার দরজা খোলার সোনার চাবিকাঠি শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির হাতে।
অন্যদের চোখ দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক দেখা আমাদের ঠিক হবে না। আমাদের চোখ দিয়ে দেখতে হবে। আমাদের সম্পর্ক এমন যে, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কোনো তৃতীয় শক্তিকে নাক গলাতে দেবে না। প্রতিবেশীর সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখতে আন্তরিক থাকবে।
সত্য এই যে, পৃথিবীর সব প্রতিবেশীরই মীমাংসাযোগ্য বিষয় থাকে। আমাদেরও আছে। অভিন্ন নদীর পানি, সীমান্ত, জ্বালানি-বিদ্যুৎ, ব্যবসা-বাণিজ্য, সমুদ্র ব্যবহার, নিরাপত্তাজনিত ক্ষেত্রগুলোতে আলোচনার সুযোগ সব সময়ই রয়েছে। একটি কথা বলতেই হয়, ‘One can change his wife or husband but not one’s neighbours’। তাই প্রতিবেশীর সঙ্গে চমৎকার বসবাস করতে শেখা জীবনের অপরিহার্য অংশ বৈকি।
কোনো সমস্যাই সমস্যা নয়, যদি উভয় পক্ষের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে। আমরা যৌথ উদ্যোগে পানি চুক্তি করেছি, সীমান্ত চুক্তি করেছি। অতএব সব বিষয়ই সমাধানযোগ্য। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও উভয়ের সুবিধা-অসুবিধা অনুধাবন করার মন থাকতে হবে। শত্রু শত্রু খেলার উত্তেজনার রাজনীতি পেছনে ফেলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন সম্পর্কের ভিত্তিতে আন্তসম্পর্ক গতিশীল হবে। সামনে তাকাতে হবে, আর তাকানোর একটাই দৃষ্টিভঙ্গি—সম্মান, সমমর্যাদা ও সমতার ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে সকল সমাধান।
অক্টাভিয়া পাজের ভাষায়, ‘In politics as well as in private life, the surest method for resolving conflicts, however slowly, is dialogue.’
আজ যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে, সেই অর্জনের ধাপে দাঁড়িয়ে আমাদের সামনে তাকাতে হবে। যঁাদের নিজের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-আত্মসম্মানে বিশ্বাস কম, তঁারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে সহজেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। স্বাধীনতা নিয়ে সতত উদ্বিগ্নদের উদ্দেশে বলতে চাই, যে জাতি একাত্তরে স্বাধীন হয়েছে, তারা বীরের জাতি—পরাধীনতা মানে না, আগ্রাসন সহ্য করে না; বন্ধুত্বকে চোখের মণির মতো ভালোবাসে। এখানে তাই কোনো হীনম্মন্যতা থাকা উচিত নয়। আমাদের স্বাধীনতা এত সস্তা নয় যে কাভার্ড ভ্যানের ভেতর দিয়ে পাচার হয়ে যাবে, বা কাচের গ্লাসের মতো ঠুনকো নয় যে সামান্য ঠোকাঠুকিতেই ভেঙে যাবে।
দুই দেশের জনগণ সব সময়ই বন্ধুত্ব চেয়েছে। দিল্লি এবং ঢাকার নেতৃত্ব তথা মোদি এবং হাসিনার আন্তরিকতায় সেই বন্ধুত্বের প্রকাশ ঘটল। এটাই যুগের চাহিদা—জনগণের আকাঙ্ক্ষা। দুই নেতা যে বন্ধুত্বের আবহাওয়াটি তৈরি করলেন, নিঃসন্দেহে তা এ অঞ্চলে দারিদ্র্য, সাম্প্রদায়িকতা ও আণবিক বোমাকে নিষ্ক্রিয় করতে সহায়ক হবে।
আরও মীমাংসার বিষয় থাকতেই পারে। কিন্তু তা যদি ঝুলে থাকে, তাহলে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ববিরোধী চক্রান্তকারীরা একটির পর একটি উত্তেজনার বেলুন ওড়াবে, অবিশ্বাসের ধূম্রজাল বুনতে থাকবে। সুতরাং একটির পর একটি সহযোগিতার ধাপে দাঁড়িয়ে তিস্তাসহ অভিন্ন নদ-নদীর পানি সমাধানে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ববিরোধীদের মুখে ছাই দেবে।
পারস্পরিক আস্থার যে সোনার দরজা হাসিনা-মোদি খুললেন, পানি-সমাধান তাকে আরও অনেক বড় লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।
দুই মহান নেতার দিকেই তাকিয়ে আছে জনগণ।
হাসানুল হক ইনু: বাংলাদেশ সরকারের তথ্যমন্ত্রী।
নরেন্দ্র মোদির আগমনে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কে যে নতুন অধ্যায় রচিত হলো, সেখানে জঙ্গিবাদ, সীমাপার সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা-সৃষ্ট অনাস্থার বীজ যাতে মাথাচাড়া না দিতে পারে, অবিশ্বাসের কুয়াশা তৈরি করতে না পারে, সেদিকে আমাদের সজাগ দৃষ্টি দিতেই হবে। একসঙ্গে সামনে এগোতে হলে অবিশ্বাসের জায়গায় আস্থা তৈরি ও চক্রান্তকারীদের নিষ্ক্রিয় করার বিকল্প নেই। আর সে জন্যই জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও সীমাপার সন্ত্রাস বর্জন-দমনে প্রয়োজন উভয় দেশের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও মতৈক্য।
এ মুহূর্তে দক্ষিণ এশিয়া দারিদ্র্য, সাম্প্রদায়িকতা ও আণবিক—এ তিন বোমার ওপর বসে আছে। তাই এ তিন বোমা নিষ্ক্রিয় করা এখন রাজনৈতিক কর্তব্য। এর মধ্য দিয়েই এ অঞ্চলের উন্নয়নের সোনার দরজাটি খুলবে। আর এ সোনার দরজা খোলার সোনার চাবিকাঠি শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির হাতে।
অন্যদের চোখ দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক দেখা আমাদের ঠিক হবে না। আমাদের চোখ দিয়ে দেখতে হবে। আমাদের সম্পর্ক এমন যে, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কোনো তৃতীয় শক্তিকে নাক গলাতে দেবে না। প্রতিবেশীর সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ন রাখতে আন্তরিক থাকবে।
সত্য এই যে, পৃথিবীর সব প্রতিবেশীরই মীমাংসাযোগ্য বিষয় থাকে। আমাদেরও আছে। অভিন্ন নদীর পানি, সীমান্ত, জ্বালানি-বিদ্যুৎ, ব্যবসা-বাণিজ্য, সমুদ্র ব্যবহার, নিরাপত্তাজনিত ক্ষেত্রগুলোতে আলোচনার সুযোগ সব সময়ই রয়েছে। একটি কথা বলতেই হয়, ‘One can change his wife or husband but not one’s neighbours’। তাই প্রতিবেশীর সঙ্গে চমৎকার বসবাস করতে শেখা জীবনের অপরিহার্য অংশ বৈকি।
কোনো সমস্যাই সমস্যা নয়, যদি উভয় পক্ষের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকে। আমরা যৌথ উদ্যোগে পানি চুক্তি করেছি, সীমান্ত চুক্তি করেছি। অতএব সব বিষয়ই সমাধানযোগ্য। রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও উভয়ের সুবিধা-অসুবিধা অনুধাবন করার মন থাকতে হবে। শত্রু শত্রু খেলার উত্তেজনার রাজনীতি পেছনে ফেলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন সম্পর্কের ভিত্তিতে আন্তসম্পর্ক গতিশীল হবে। সামনে তাকাতে হবে, আর তাকানোর একটাই দৃষ্টিভঙ্গি—সম্মান, সমমর্যাদা ও সমতার ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে সকল সমাধান।
অক্টাভিয়া পাজের ভাষায়, ‘In politics as well as in private life, the surest method for resolving conflicts, however slowly, is dialogue.’
আজ যতটুকু অগ্রগতি হয়েছে, সেই অর্জনের ধাপে দাঁড়িয়ে আমাদের সামনে তাকাতে হবে। যঁাদের নিজের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-আত্মসম্মানে বিশ্বাস কম, তঁারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে সহজেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। স্বাধীনতা নিয়ে সতত উদ্বিগ্নদের উদ্দেশে বলতে চাই, যে জাতি একাত্তরে স্বাধীন হয়েছে, তারা বীরের জাতি—পরাধীনতা মানে না, আগ্রাসন সহ্য করে না; বন্ধুত্বকে চোখের মণির মতো ভালোবাসে। এখানে তাই কোনো হীনম্মন্যতা থাকা উচিত নয়। আমাদের স্বাধীনতা এত সস্তা নয় যে কাভার্ড ভ্যানের ভেতর দিয়ে পাচার হয়ে যাবে, বা কাচের গ্লাসের মতো ঠুনকো নয় যে সামান্য ঠোকাঠুকিতেই ভেঙে যাবে।
দুই দেশের জনগণ সব সময়ই বন্ধুত্ব চেয়েছে। দিল্লি এবং ঢাকার নেতৃত্ব তথা মোদি এবং হাসিনার আন্তরিকতায় সেই বন্ধুত্বের প্রকাশ ঘটল। এটাই যুগের চাহিদা—জনগণের আকাঙ্ক্ষা। দুই নেতা যে বন্ধুত্বের আবহাওয়াটি তৈরি করলেন, নিঃসন্দেহে তা এ অঞ্চলে দারিদ্র্য, সাম্প্রদায়িকতা ও আণবিক বোমাকে নিষ্ক্রিয় করতে সহায়ক হবে।
আরও মীমাংসার বিষয় থাকতেই পারে। কিন্তু তা যদি ঝুলে থাকে, তাহলে জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ববিরোধী চক্রান্তকারীরা একটির পর একটি উত্তেজনার বেলুন ওড়াবে, অবিশ্বাসের ধূম্রজাল বুনতে থাকবে। সুতরাং একটির পর একটি সহযোগিতার ধাপে দাঁড়িয়ে তিস্তাসহ অভিন্ন নদ-নদীর পানি সমাধানে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ববিরোধীদের মুখে ছাই দেবে।
পারস্পরিক আস্থার যে সোনার দরজা হাসিনা-মোদি খুললেন, পানি-সমাধান তাকে আরও অনেক বড় লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে।
দুই মহান নেতার দিকেই তাকিয়ে আছে জনগণ।
হাসানুল হক ইনু: বাংলাদেশ সরকারের তথ্যমন্ত্রী।
No comments