নাম তার রেবি ম্যাডাম by আবদুল মাবুদ
মানব পাচারের নারী মাফিয়া নাম তার রেবি ম্যাডাম |
গত
কয়েকদিনে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ কক্সবাজারের ৬ শীর্ষ মানব
পাচারকারী নিহত হলেও এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে এ চক্রের রাঘব
বোয়ালরা। অবৈধভাবে সাগরে ঠেলে দিয়ে বহু মানুষের জীবন বিপন্নকারী এই মানব
পাচারকারী চক্রের হোতাদের আটক করতে না পারায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান হচ্ছে
না। ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনার পর তালিকাভুক্ত শীর্ষ পাচারকারীরা এলাকা থেকে গা
ঢাকা দিলেও থেমে নেই তাদের অপকর্ম।
সরেজমিনে কক্সবাজারের বিভিন্ন স্পট ঘুরে জানা গেছে, মানব পাচারে জড়িত দালালদের দৌরাত্ম্যের নানা কাহিনী। সর্বশেষ গত ১৭ মে দিবাগত রাতে শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্ট মার্টিনের ছেড়াদ্বীপ থেকে মুক্তিপণ দিয়ে ফেরা ১৩ জনকে আটক করেছে কোস্টগার্ড ও বিজিবি। উদ্ধারকৃতরা জানান, কয়েকদিন আগে মহেশখালী থেকে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশ্যে দালাল চক্রের সদস্যরা তাদের ফিশিং বোটে করে সাগরে নিয়ে যায়। সাগরপথে মালয়েশিয়ায় অবৈধ মানব পাচারের বিষয়টি অনেকবার আলোচিত হলেও বর্তমানের মতো ভয়াবহ ছিল না। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গলে গণকবর, বন্দি নির্যাতন কেন্দ্র, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া উপকূলে হাজার হাজার যাত্রীসহ নৌকার সন্ধান পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বিশ্বজুড়ে। সাধারণ মানুষকে ভালো বেতনে বিদেশে চাকরি আর উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে এভাবে নৌকায় গাদাগাদি করে নিয়ে যাওয়া, পথে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়, কাউকে হত্যা করে সাগরে ফেলে দেয়া বা মাটিতে পুঁতে রাখা, সুযোগ বুঝে কোনো উপকূলে নৌকা থেকে নামিয়ে দেয়া বা সাঁতরে যাওয়ার কথা বলে সাগরেই নামিয়ে দেয়া, হাঙ্গরের আক্রমণে প্রাণ হারানো- এসব ভয়াবহ ঘটনা এখন প্রকাশ পাচ্ছে।
সরেজমিনে জানা যায়, সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার জন্য মাকড়সার জালের মতো বিস্তৃত রয়েছে সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্র। এ চক্রের সদস্যরা কারও কাছ থেকে ১০-২০ হাজার টাকা, আবার কাউকে বিনা খরচে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে দালালদের হাতে তুলে দেয়। বিশেষ করে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলের রুট দিয়ে মানুষবোঝাই ট্রলার ভাসিয়ে দেয়া হয় গভীর সমুদ্রে। মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে এসব ট্রলার গিয়ে ভেড়ে থাইল্যান্ড কিংবা ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে। তারপর ভাগ্যান্বেষী অবৈধ অভিবাসীদের জীবনে নেমে আসে চরম বিপর্যয়। পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত প্রতিবেদনে মানব পাচারের সঙ্গে ২৯৭ জন পাচারকারী জড়িত বলে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জন আন্তর্জাতিক চক্রের, ২৬ জন দেশীয় হুন্ডি ব্যবসায়ী ও ইয়াবা পাচারকারী। আর ২৬০ জন দেশের আনাচে-কানাচে থাকা পাচারকারী চক্রের সংঘবদ্ধ সদস্য। এ ছাড়া কক্সবাজার জেলা পুলিশ, বিজিবি, র্যাবও একটি তালিকা তৈরি করেছে। এতে রয়েছে কক্সবাজারের সাড়ে তিনশ’রও বেশি পাচারকারীর নাম। দুটি তালিকাতেই নাম রয়েছে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে অনেক রাঘব বোয়ালের। একজন নারীও যথেষ্ট ‘পরিচিত’ মানব পাচারকারী চক্রের হোতা হিসেবে।
‘রেবি ম্যাডাম’ এখন আত্মগোপনে : নাম তার রেবেকা সুলতানা হলেও সবাই চেনে ‘রেবি ম্যাডাম’ নামে। মানব পাচারের অন্যতম হোতা হিসেবে পরিচিত এ নারী। কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার সোনারপাড়া গ্রামের নুরুল কবিরের স্ত্রী রেবেকা সুলতানাই আজকের রেবি ম্যাডাম। পুলিশের খাতায় নাম থাকলেও প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের আশীর্বাদ থাকায় বারবার পার পেয়ে যাচ্ছেন তিনি। কিছুদিন আগে মানব পাচারের সুবাদে অর্জিত ১ কোটি ২০ লাখ টাকার চেকসহ কক্সবাজার আদালতপাড়ায় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটকের পর জামিনে বেরিয়ে যান তিনি। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, ব্যাংকে তার কত টাকা আছে তিনি নিজেই জানেন না। কক্সবাজারের রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে প্রশাসনের হর্তাকর্তাদের সঙ্গে রেবি ম্যাডামের রয়েছে গভীর সখ্য। এ সুবাদে শীর্ষস্থানীয় মানব পাচারকারী হয়েও তিনি আজ অধরা।
পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৬ পাচারকারী নিহত হওয়ার ঘটনায় গা ঢাকা দিয়েছে ম্যাডাম রেবিসহ উখিয়ার ৩ শতাধিক চিহ্নিত মানব পাচারকারী। মানব পাচার প্রতিরোধ কমিটির নেতাদের দাবি, এসব পাচারকারীকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া না হলে মানব পাচার প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সোনারপাড়া এলাকার মানব পাচারকারী জাফর মাঝি নিহত হওয়ার পর স্থানীয় পুলিশের সংকেত পেয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া মানব পাচারকারী সিন্ডিকেটের শীর্ষস্থানীয় সদস্যরা আত্মগোপনে চলে গেছে। উপকূলের জুম্মাপাড়া, সোনারপাড়া, সোনাইছড়ি, চোয়াংখালী, ছেপটখালীসহ ইনানীর শীর্ষ পাচারকারীদের সঙ্গে স্থানীয় ইনানী পুলিশ ফাঁড়ি ও উখিয়া থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্যের দহরম-মহরম সম্পর্ক ছিল। এলাকায় ব্যাপক প্রচার আছে- মানব পাচারকারীরা মালয়েশিয়া পাঠানো প্রত্যেকের জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ২ হাজার টাকা করে দিত। এ জন্য বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় কাজ করা পুলিশ দিয়ে মানব পাচার প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না বলে স্থানীয় জনগণের অভিমত। তাদের দাবি, পুলিশের ইশারা পেয়েই আত্মগোপনে চলে গেছে শীর্ষ মানব পাচারকারীরা। যাদের মধ্যে আছে রেবি ম্যাডামসহ পূর্ব সোনারপাড়ার কালা মন্টুর ছেলে নুরুল কবির, সোনাইছড়ি গ্রামের মৃত ইউছুপ আলীর ছেলে রোস্তম আলী, সোনারপাড়া গ্রামের অজিউল্যাহর ছেলে কাউছার আহম্মদ জনি, ওমর সওদাগরের ছেলে আলমগীর হোছন রানা, পশ্চিম সোনাইছড়ি গ্রামের আবু ছৈয়দের ছেলে মাহাদু, নুর মোহাম্মদের ছেলে আহম্মদ শরিফ, মৃত হোছন আলীর ছেলে শাহ আলম, মৃত রশিদ আহম্মদের ছেলে আবদুল্লাহ, আবদুল জলিলের ছেলে লাল মাঝি, মৃত মোজাফ্ফর আহম্মদের ছেলে রাসেল, ফজল আহম্মদের ছেলে শামশু আক্তার, উত্তর সোনাইছড়ি গ্রামের হাবিব উল্লাহর ছেলে জয়নাল উদ্দিন জুনু, আমির হামজার ছেলে ছৈয়দ আলম, সুলতান আহম্মদের ছেলে মুজিবুল হক, সোনারপাড়ার জমির আহম্মদ প্রকাশ কালা জমির, সোনাইছড়ি গ্রামের শফি আলম, জমির আহম্মদ, শামশুল আলম সোহাগ, লম্বরী গ্রামের ছৈয়দ আলম তাবাইয়া, লাল বেলাল, রূপপতি গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে জমির মিয়া, চোয়াংখালীর জাহেদুল আলম, মোজাম্মেল হকের মতো শীর্ষ পাচারকারী।
পুলিশের দাবি, মানব পাচারকারীরা গা ঢাকা দেয়ায় তাদের আটক করা যাচ্ছে না। তবে আপাতত পালিয়ে বেড়ালেও আইনের হাত থেকে ছাড়া পাবে না।
জেলার অন্যান্য এলাকার চেয়ে উখিয়ার মনখালী থেকে সোনারপাড়া পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকাকে নিরাপদ মনে করে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ছুটে আসছে ভাগ্যান্বেষীরা। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সাল থেকে সাগরপথে মানব পাচার বেপরোয়া হয়ে ওঠে। উপকূলের ঘরে ঘরে পাচারকারী সৃষ্টি হয়। পর্যটন স্পট ইনানীতে বেড়াতে আসা বেশকিছু পর্যটকও অপহরণের শিকার হন। পাচারকারীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি বোবা, পাগল থেকে শুরু করে প্রতিবন্ধী পর্যন্ত। উখিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান জানান, উপকূলীয় এলাকা দিয়ে যাতে মানব পাচারের মতো ঘটনা আর না ঘটতে পারে সে জন্য কমিউনিটি পুলিশদের কাজে লাগানো হয়েছে। তারা পাচারকারীদের তথ্য থানা পুলিশের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করছে।
সরেজমিনে কক্সবাজারের বিভিন্ন স্পট ঘুরে জানা গেছে, মানব পাচারে জড়িত দালালদের দৌরাত্ম্যের নানা কাহিনী। সর্বশেষ গত ১৭ মে দিবাগত রাতে শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্ট মার্টিনের ছেড়াদ্বীপ থেকে মুক্তিপণ দিয়ে ফেরা ১৩ জনকে আটক করেছে কোস্টগার্ড ও বিজিবি। উদ্ধারকৃতরা জানান, কয়েকদিন আগে মহেশখালী থেকে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশ্যে দালাল চক্রের সদস্যরা তাদের ফিশিং বোটে করে সাগরে নিয়ে যায়। সাগরপথে মালয়েশিয়ায় অবৈধ মানব পাচারের বিষয়টি অনেকবার আলোচিত হলেও বর্তমানের মতো ভয়াবহ ছিল না। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের গভীর জঙ্গলে গণকবর, বন্দি নির্যাতন কেন্দ্র, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া উপকূলে হাজার হাজার যাত্রীসহ নৌকার সন্ধান পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বিশ্বজুড়ে। সাধারণ মানুষকে ভালো বেতনে বিদেশে চাকরি আর উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখিয়ে এভাবে নৌকায় গাদাগাদি করে নিয়ে যাওয়া, পথে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায়, কাউকে হত্যা করে সাগরে ফেলে দেয়া বা মাটিতে পুঁতে রাখা, সুযোগ বুঝে কোনো উপকূলে নৌকা থেকে নামিয়ে দেয়া বা সাঁতরে যাওয়ার কথা বলে সাগরেই নামিয়ে দেয়া, হাঙ্গরের আক্রমণে প্রাণ হারানো- এসব ভয়াবহ ঘটনা এখন প্রকাশ পাচ্ছে।
সরেজমিনে জানা যায়, সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার জন্য মাকড়সার জালের মতো বিস্তৃত রয়েছে সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্র। এ চক্রের সদস্যরা কারও কাছ থেকে ১০-২০ হাজার টাকা, আবার কাউকে বিনা খরচে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে দালালদের হাতে তুলে দেয়। বিশেষ করে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলের রুট দিয়ে মানুষবোঝাই ট্রলার ভাসিয়ে দেয়া হয় গভীর সমুদ্রে। মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে এসব ট্রলার গিয়ে ভেড়ে থাইল্যান্ড কিংবা ইন্দোনেশিয়ার উপকূলে। তারপর ভাগ্যান্বেষী অবৈধ অভিবাসীদের জীবনে নেমে আসে চরম বিপর্যয়। পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত প্রতিবেদনে মানব পাচারের সঙ্গে ২৯৭ জন পাচারকারী জড়িত বলে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ জন আন্তর্জাতিক চক্রের, ২৬ জন দেশীয় হুন্ডি ব্যবসায়ী ও ইয়াবা পাচারকারী। আর ২৬০ জন দেশের আনাচে-কানাচে থাকা পাচারকারী চক্রের সংঘবদ্ধ সদস্য। এ ছাড়া কক্সবাজার জেলা পুলিশ, বিজিবি, র্যাবও একটি তালিকা তৈরি করেছে। এতে রয়েছে কক্সবাজারের সাড়ে তিনশ’রও বেশি পাচারকারীর নাম। দুটি তালিকাতেই নাম রয়েছে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে অনেক রাঘব বোয়ালের। একজন নারীও যথেষ্ট ‘পরিচিত’ মানব পাচারকারী চক্রের হোতা হিসেবে।
‘রেবি ম্যাডাম’ এখন আত্মগোপনে : নাম তার রেবেকা সুলতানা হলেও সবাই চেনে ‘রেবি ম্যাডাম’ নামে। মানব পাচারের অন্যতম হোতা হিসেবে পরিচিত এ নারী। কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার সোনারপাড়া গ্রামের নুরুল কবিরের স্ত্রী রেবেকা সুলতানাই আজকের রেবি ম্যাডাম। পুলিশের খাতায় নাম থাকলেও প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের আশীর্বাদ থাকায় বারবার পার পেয়ে যাচ্ছেন তিনি। কিছুদিন আগে মানব পাচারের সুবাদে অর্জিত ১ কোটি ২০ লাখ টাকার চেকসহ কক্সবাজার আদালতপাড়ায় গোয়েন্দা পুলিশের হাতে আটকের পর জামিনে বেরিয়ে যান তিনি। এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে, ব্যাংকে তার কত টাকা আছে তিনি নিজেই জানেন না। কক্সবাজারের রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে প্রশাসনের হর্তাকর্তাদের সঙ্গে রেবি ম্যাডামের রয়েছে গভীর সখ্য। এ সুবাদে শীর্ষস্থানীয় মানব পাচারকারী হয়েও তিনি আজ অধরা।
পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৬ পাচারকারী নিহত হওয়ার ঘটনায় গা ঢাকা দিয়েছে ম্যাডাম রেবিসহ উখিয়ার ৩ শতাধিক চিহ্নিত মানব পাচারকারী। মানব পাচার প্রতিরোধ কমিটির নেতাদের দাবি, এসব পাচারকারীকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া না হলে মানব পাচার প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সোনারপাড়া এলাকার মানব পাচারকারী জাফর মাঝি নিহত হওয়ার পর স্থানীয় পুলিশের সংকেত পেয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া মানব পাচারকারী সিন্ডিকেটের শীর্ষস্থানীয় সদস্যরা আত্মগোপনে চলে গেছে। উপকূলের জুম্মাপাড়া, সোনারপাড়া, সোনাইছড়ি, চোয়াংখালী, ছেপটখালীসহ ইনানীর শীর্ষ পাচারকারীদের সঙ্গে স্থানীয় ইনানী পুলিশ ফাঁড়ি ও উখিয়া থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্যের দহরম-মহরম সম্পর্ক ছিল। এলাকায় ব্যাপক প্রচার আছে- মানব পাচারকারীরা মালয়েশিয়া পাঠানো প্রত্যেকের জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ২ হাজার টাকা করে দিত। এ জন্য বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় কাজ করা পুলিশ দিয়ে মানব পাচার প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না বলে স্থানীয় জনগণের অভিমত। তাদের দাবি, পুলিশের ইশারা পেয়েই আত্মগোপনে চলে গেছে শীর্ষ মানব পাচারকারীরা। যাদের মধ্যে আছে রেবি ম্যাডামসহ পূর্ব সোনারপাড়ার কালা মন্টুর ছেলে নুরুল কবির, সোনাইছড়ি গ্রামের মৃত ইউছুপ আলীর ছেলে রোস্তম আলী, সোনারপাড়া গ্রামের অজিউল্যাহর ছেলে কাউছার আহম্মদ জনি, ওমর সওদাগরের ছেলে আলমগীর হোছন রানা, পশ্চিম সোনাইছড়ি গ্রামের আবু ছৈয়দের ছেলে মাহাদু, নুর মোহাম্মদের ছেলে আহম্মদ শরিফ, মৃত হোছন আলীর ছেলে শাহ আলম, মৃত রশিদ আহম্মদের ছেলে আবদুল্লাহ, আবদুল জলিলের ছেলে লাল মাঝি, মৃত মোজাফ্ফর আহম্মদের ছেলে রাসেল, ফজল আহম্মদের ছেলে শামশু আক্তার, উত্তর সোনাইছড়ি গ্রামের হাবিব উল্লাহর ছেলে জয়নাল উদ্দিন জুনু, আমির হামজার ছেলে ছৈয়দ আলম, সুলতান আহম্মদের ছেলে মুজিবুল হক, সোনারপাড়ার জমির আহম্মদ প্রকাশ কালা জমির, সোনাইছড়ি গ্রামের শফি আলম, জমির আহম্মদ, শামশুল আলম সোহাগ, লম্বরী গ্রামের ছৈয়দ আলম তাবাইয়া, লাল বেলাল, রূপপতি গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে জমির মিয়া, চোয়াংখালীর জাহেদুল আলম, মোজাম্মেল হকের মতো শীর্ষ পাচারকারী।
পুলিশের দাবি, মানব পাচারকারীরা গা ঢাকা দেয়ায় তাদের আটক করা যাচ্ছে না। তবে আপাতত পালিয়ে বেড়ালেও আইনের হাত থেকে ছাড়া পাবে না।
জেলার অন্যান্য এলাকার চেয়ে উখিয়ার মনখালী থেকে সোনারপাড়া পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার উপকূলীয় এলাকাকে নিরাপদ মনে করে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য ছুটে আসছে ভাগ্যান্বেষীরা। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সাল থেকে সাগরপথে মানব পাচার বেপরোয়া হয়ে ওঠে। উপকূলের ঘরে ঘরে পাচারকারী সৃষ্টি হয়। পর্যটন স্পট ইনানীতে বেড়াতে আসা বেশকিছু পর্যটকও অপহরণের শিকার হন। পাচারকারীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি বোবা, পাগল থেকে শুরু করে প্রতিবন্ধী পর্যন্ত। উখিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান জানান, উপকূলীয় এলাকা দিয়ে যাতে মানব পাচারের মতো ঘটনা আর না ঘটতে পারে সে জন্য কমিউনিটি পুলিশদের কাজে লাগানো হয়েছে। তারা পাচারকারীদের তথ্য থানা পুলিশের কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করছে।
No comments