রাষ্ট্র অসহায় মানুষকে নিয়ে পিংপং খেলছে by সাইমন টিসডাল
ভূমধ্যসাগরে
অভিবাসন-প্রত্যাশীদের সলিলসমাধি নিয়ে অনেক শোরগোল হলেও সাগরে ভাসমান
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের হাজার হাজার শরণার্থী, আশ্রয় ও অর্থনৈতিক
উন্নয়নপ্রত্যাশী অভিবাসীদের করুণ দশা পশ্চিমের গণমাধ্যম ও রাজনীতিকদের
দৃষ্টি এত দিন এড়িয়ে গেছে।
কিন্তু সম্প্রতি মালয়েশিয়ার টহল জাহাজ উদাসীনভাবে ৬০০ মানুষ বহনকারী দুটি নৌকা তাদের উপকূলে ভিড়তে না দিয়ে সাগরে পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনায় এই বড় অভিবাসন-প্রক্রিয়ার দিকে দুনিয়ার দৃষ্টি ফিরতে পারে। মালয়েশিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডও একই কাজ করেছে।
মালয়েশিয়া সরকার তাদের বন্দর বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সে দেশের কর্মকর্তারা গত বৃহস্পতিবার অভিবাসী বহনকারী দুটি নৌকা লাংকাওয়াই ও পিন্যাং দ্বীপে আটক করে তাদের আবার সাগরে ফিরে যেতে বাধ্য করে।
সবাই বিশ্বাস করে, এই নৌকা দুটিকেই পরে থাই জলসীমায় ভাসতে দেখা যায়। থাই কর্তৃপক্ষও তাদের স্বাগত জানায়নি। নৌকার ইংরেজি ব্যানার অনুসারে, এতে মূলত মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানরা ছিল।
‘এই যাত্রায় ১০ জন মানুষ মারা গেছে, আমরা তাদের মৃতদেহ সাগরে ফেলে দিয়েছি,’ স্থানীয় এক প্রতিবেদকের ভাষ্য অনুসারে, একজন অভিবাসী রোহিঙ্গা ভাষায় এ কথা বলেছেন। ‘আমরা দুই মাস ধরে সাগরে ভাসছি, আমরা মালয়েশিয়া যেতে চাই।’
নৌকায় হাড় জিরজিরে মানুষের মধ্যে অনেক শিশুও আছে। সাহায্য প্রদানকারী সংগঠনগুলোর হিসাব অনুসারে, সাগরে প্রায় ৬ হাজার মানুষ ভেসে বেড়াচ্ছে, তাদের যাওয়ারও জায়গা নেই। অন্যদিকে, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংগঠন বলছে, এই মানুষ ও অন্যদের ইচ্ছাকৃতভাবে সাহায্য না করার কারণে শিগগিরই ‘বৃহৎ মানবিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে’।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই অভিবাসীরা ক্ষুৎপিপাসায় আক্রান্ত। তারা অসুস্থতায় ভোগার ঝুঁকিতে রয়েছে। আর দেশগুলোর দায়িত্বজ্ঞানহীন আঞ্চলিক সরকারগুলো তাদের উদ্ধার না করে অন্যের ঘাড়ে সমস্যাটা ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করায় পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়ে উঠছে।
‘থাই, মালয়েশীয় ও ইন্দোনেশীয় সরকার এই মানুষদের নিয়ে ত্রিমুখী পিংপং খেলা খেলছে। তাদের এটা বন্ধ করতে হবে। এই ভাগ্যবিড়ম্বিত নৌকায় ভাসমান মানুষের উদ্ধারে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে’—হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এশিয়ার ফিল রবার্টসন এ কথা বলেছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ‘ব্যাপারটা অত্যন্ত মর্মপীড়াদায়ক যে হাজার হাজার মানুষ এখন সাগরে ভাসছে, খুব বিপজ্জনকভাবে মৃত্যুর কাছাকাছি রয়েছে তারা, এমনকি এসব মানুষ এটাও জানে না যে তারা কোথায় আছে, আর সঙ্গে তো ক্ষুৎপিপাসা আছেই।’
ইন্দোনেশিয়া বলেছে, তারা ৪০০ অভিবাসী বহনকারী নৌকা ফিরিয়ে দিয়েছে। এদের ভাগ্যে কী জুটেছে, তা জানা যায়নি। এই নৌকা ফিরিয়ে দেওয়ার আগে প্রায় ১ হাজার অভিবাসী লাংকাওয়ায় আশ্রয় নেয়, আরও কয়েক শ মানুষ ইন্দোনেশিয়া পৌঁছায়।
থাইল্যান্ডের মতো মালয়েশিয়াও এই মানবিক সমস্যার কারণে পশ্চিমা পর্যটক হারাবে বলে আশঙ্কা করছে। ফলে তাদের রমরমা পর্যটন ব্যবসায় মন্দা সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু তার উদ্বেগ আরও গভীর। সে দেশে ইতিমধ্যে ১ লাখ ৪৫ হাজার অভিবাসী আশ্রয় নিয়েছে, এদের মধ্যে ৪৫ হাজারই রোহিঙ্গা।
মালয়েশিয়ার উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জুনাইদি টুয়ানকু জাফর বলেছেন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
‘আমাদের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করেন?’ ‘যেসব মানুষ আমাদের সীমান্ত অতিক্রম করছে, আমরা তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছি। আমরা তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করছি, কিন্তু তারা এভাবে দলে দলে আমাদের উপকূলে ভিড় করতে পারে না। হ্যাঁ, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করা হয়, তার মধ্যে সমস্যা আছে...আপনি গণতন্ত্রের কথা বলবেন, আর নিজের জনগণকে আবর্জনার মতো মনে করবেন, যতক্ষণ না তারা অপরাধীদের মতো দেশ থেকে পালিয়ে যায়...মিয়ানমারকে আমরা শক্তভাবে জানাতে চাই, তাদের রাষ্ট্রকে জনগণের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে,’ তিনি বলেন।
এমন বক্তব্য কপটতা মনে হয়। ওবামা প্রশাসনের মতো আসিয়ানও ১৩ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে বৌদ্ধ-অধ্যুষিত ও সেনাশাসিত মিয়ানমার রাষ্ট্রের নির্দয় আচরণের ব্যাপারে নিশ্চুপ রয়েছে। তারা দেশটির অন্যান্য অন্যায়ের ব্যাপারেও নিশ্চুপ রয়েছে।
মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ নানা যন্ত্রণা ভোগ করেছে, প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যেরও শিকার হয়েছে তারা। রোহিঙ্গারা খুব কমই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা লাভ করে, এমনকি তারা স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরাও করতে পারে না। অতীতে সেনাবাহিনী তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে, বৌদ্ধ চরমপন্থীরা তাদের ঘরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এমন দৌড়ের ওপর থাকাই যেন তাদের ভবিতব্য।
মিয়ানমারে মার্কিন-সমর্থিত রাজনৈতিক উদারীকরণ সত্ত্বেও গত তিন বছরে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা দেশত্যাগ করেছে। এদের অধিকাংশই জাহাজে চেপেছে, থাইল্যান্ডের আশ্রয়শিবিরে যাওয়ার জন্য পাচারকারীদের বিপুল টাকা দিয়েছে, আবার সেখানে গিয়ে তারা প্রায়ই শারীরিক নির্যাতন, প্রহার ও ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
সম্প্রতি থাই সরকার এসব শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এতে পাচারকারীদের নৌকাগুলো সাগরে ভেসে বেড়াতে বাধ্য হচ্ছে, আর তারা যেখানে-সেখানে ভাগ্যহত এসব মানুষের নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থানাসাক পাতিমাপ্রাকর্ন বলেছেন, তার সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো শিবির না খুললেও তাদের স্বল্প মেয়াদে মানবিক সহায়তা দিতে রাজি। অন্যদিকে, এ অঞ্চলের সরকারগুলো মানব পাচার ও চোরাচালান রোধে ২৯ মে যৌথ প্রচেষ্টা নেওয়ার লক্ষ্যে বৈঠকে মিলিত হবে। এই চ্যালেঞ্জ যেমন কঠিন, তেমনি জরুরি।
সাগরপথে পালিয়ে যাওয়া ছাড়াও যে পরিমাণ মানুষ এই চেষ্টা করছে, তাদের সংখ্যাও বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার হিসাব অনুসারে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ২৫ হাজার রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি পাচারকারীদের নৌকায় উঠেছে। ২০১৪ সালের এ সময়ে যত মানুষ সে চেষ্টা করেছে, এই সংখ্যা তার দ্বিগুণ। এমন বিস্ময়কর সংখ্যাতত্ত্ব দেখে বোঝা যায়, মানুষ কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন ; গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া
সাইমন টিসডাল: গার্ডিয়ান-এর সহকারী সম্পাদক।
কিন্তু সম্প্রতি মালয়েশিয়ার টহল জাহাজ উদাসীনভাবে ৬০০ মানুষ বহনকারী দুটি নৌকা তাদের উপকূলে ভিড়তে না দিয়ে সাগরে পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনায় এই বড় অভিবাসন-প্রক্রিয়ার দিকে দুনিয়ার দৃষ্টি ফিরতে পারে। মালয়েশিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডও একই কাজ করেছে।
মালয়েশিয়া সরকার তাদের বন্দর বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সে দেশের কর্মকর্তারা গত বৃহস্পতিবার অভিবাসী বহনকারী দুটি নৌকা লাংকাওয়াই ও পিন্যাং দ্বীপে আটক করে তাদের আবার সাগরে ফিরে যেতে বাধ্য করে।
সবাই বিশ্বাস করে, এই নৌকা দুটিকেই পরে থাই জলসীমায় ভাসতে দেখা যায়। থাই কর্তৃপক্ষও তাদের স্বাগত জানায়নি। নৌকার ইংরেজি ব্যানার অনুসারে, এতে মূলত মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানরা ছিল।
‘এই যাত্রায় ১০ জন মানুষ মারা গেছে, আমরা তাদের মৃতদেহ সাগরে ফেলে দিয়েছি,’ স্থানীয় এক প্রতিবেদকের ভাষ্য অনুসারে, একজন অভিবাসী রোহিঙ্গা ভাষায় এ কথা বলেছেন। ‘আমরা দুই মাস ধরে সাগরে ভাসছি, আমরা মালয়েশিয়া যেতে চাই।’
নৌকায় হাড় জিরজিরে মানুষের মধ্যে অনেক শিশুও আছে। সাহায্য প্রদানকারী সংগঠনগুলোর হিসাব অনুসারে, সাগরে প্রায় ৬ হাজার মানুষ ভেসে বেড়াচ্ছে, তাদের যাওয়ারও জায়গা নেই। অন্যদিকে, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংগঠন বলছে, এই মানুষ ও অন্যদের ইচ্ছাকৃতভাবে সাহায্য না করার কারণে শিগগিরই ‘বৃহৎ মানবিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে’।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এই অভিবাসীরা ক্ষুৎপিপাসায় আক্রান্ত। তারা অসুস্থতায় ভোগার ঝুঁকিতে রয়েছে। আর দেশগুলোর দায়িত্বজ্ঞানহীন আঞ্চলিক সরকারগুলো তাদের উদ্ধার না করে অন্যের ঘাড়ে সমস্যাটা ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করায় পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়ে উঠছে।
‘থাই, মালয়েশীয় ও ইন্দোনেশীয় সরকার এই মানুষদের নিয়ে ত্রিমুখী পিংপং খেলা খেলছে। তাদের এটা বন্ধ করতে হবে। এই ভাগ্যবিড়ম্বিত নৌকায় ভাসমান মানুষের উদ্ধারে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে হবে’—হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এশিয়ার ফিল রবার্টসন এ কথা বলেছেন।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ‘ব্যাপারটা অত্যন্ত মর্মপীড়াদায়ক যে হাজার হাজার মানুষ এখন সাগরে ভাসছে, খুব বিপজ্জনকভাবে মৃত্যুর কাছাকাছি রয়েছে তারা, এমনকি এসব মানুষ এটাও জানে না যে তারা কোথায় আছে, আর সঙ্গে তো ক্ষুৎপিপাসা আছেই।’
ইন্দোনেশিয়া বলেছে, তারা ৪০০ অভিবাসী বহনকারী নৌকা ফিরিয়ে দিয়েছে। এদের ভাগ্যে কী জুটেছে, তা জানা যায়নি। এই নৌকা ফিরিয়ে দেওয়ার আগে প্রায় ১ হাজার অভিবাসী লাংকাওয়ায় আশ্রয় নেয়, আরও কয়েক শ মানুষ ইন্দোনেশিয়া পৌঁছায়।
থাইল্যান্ডের মতো মালয়েশিয়াও এই মানবিক সমস্যার কারণে পশ্চিমা পর্যটক হারাবে বলে আশঙ্কা করছে। ফলে তাদের রমরমা পর্যটন ব্যবসায় মন্দা সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু তার উদ্বেগ আরও গভীর। সে দেশে ইতিমধ্যে ১ লাখ ৪৫ হাজার অভিবাসী আশ্রয় নিয়েছে, এদের মধ্যে ৪৫ হাজারই রোহিঙ্গা।
মালয়েশিয়ার উপস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জুনাইদি টুয়ানকু জাফর বলেছেন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
‘আমাদের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করেন?’ ‘যেসব মানুষ আমাদের সীমান্ত অতিক্রম করছে, আমরা তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করছি। আমরা তাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করছি, কিন্তু তারা এভাবে দলে দলে আমাদের উপকূলে ভিড় করতে পারে না। হ্যাঁ, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করা হয়, তার মধ্যে সমস্যা আছে...আপনি গণতন্ত্রের কথা বলবেন, আর নিজের জনগণকে আবর্জনার মতো মনে করবেন, যতক্ষণ না তারা অপরাধীদের মতো দেশ থেকে পালিয়ে যায়...মিয়ানমারকে আমরা শক্তভাবে জানাতে চাই, তাদের রাষ্ট্রকে জনগণের সঙ্গে মানবিক আচরণ করতে হবে,’ তিনি বলেন।
এমন বক্তব্য কপটতা মনে হয়। ওবামা প্রশাসনের মতো আসিয়ানও ১৩ লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে বৌদ্ধ-অধ্যুষিত ও সেনাশাসিত মিয়ানমার রাষ্ট্রের নির্দয় আচরণের ব্যাপারে নিশ্চুপ রয়েছে। তারা দেশটির অন্যান্য অন্যায়ের ব্যাপারেও নিশ্চুপ রয়েছে।
মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষ নানা যন্ত্রণা ভোগ করেছে, প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যেরও শিকার হয়েছে তারা। রোহিঙ্গারা খুব কমই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা লাভ করে, এমনকি তারা স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরাও করতে পারে না। অতীতে সেনাবাহিনী তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে, বৌদ্ধ চরমপন্থীরা তাদের ঘরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এমন দৌড়ের ওপর থাকাই যেন তাদের ভবিতব্য।
মিয়ানমারে মার্কিন-সমর্থিত রাজনৈতিক উদারীকরণ সত্ত্বেও গত তিন বছরে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা দেশত্যাগ করেছে। এদের অধিকাংশই জাহাজে চেপেছে, থাইল্যান্ডের আশ্রয়শিবিরে যাওয়ার জন্য পাচারকারীদের বিপুল টাকা দিয়েছে, আবার সেখানে গিয়ে তারা প্রায়ই শারীরিক নির্যাতন, প্রহার ও ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
সম্প্রতি থাই সরকার এসব শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। এতে পাচারকারীদের নৌকাগুলো সাগরে ভেসে বেড়াতে বাধ্য হচ্ছে, আর তারা যেখানে-সেখানে ভাগ্যহত এসব মানুষের নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।
থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থানাসাক পাতিমাপ্রাকর্ন বলেছেন, তার সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো শিবির না খুললেও তাদের স্বল্প মেয়াদে মানবিক সহায়তা দিতে রাজি। অন্যদিকে, এ অঞ্চলের সরকারগুলো মানব পাচার ও চোরাচালান রোধে ২৯ মে যৌথ প্রচেষ্টা নেওয়ার লক্ষ্যে বৈঠকে মিলিত হবে। এই চ্যালেঞ্জ যেমন কঠিন, তেমনি জরুরি।
সাগরপথে পালিয়ে যাওয়া ছাড়াও যে পরিমাণ মানুষ এই চেষ্টা করছে, তাদের সংখ্যাও বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার হিসাব অনুসারে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ২৫ হাজার রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি পাচারকারীদের নৌকায় উঠেছে। ২০১৪ সালের এ সময়ে যত মানুষ সে চেষ্টা করেছে, এই সংখ্যা তার দ্বিগুণ। এমন বিস্ময়কর সংখ্যাতত্ত্ব দেখে বোঝা যায়, মানুষ কতটা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন ; গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া
সাইমন টিসডাল: গার্ডিয়ান-এর সহকারী সম্পাদক।
No comments