২০০ কোটি টাকার ঋণ ফেরত নিচ্ছে জাইকা by সেলিম জাহিদ
রাষ্ট্রায়ত্ত
বিটিসিএলের ২০০ কোটি টাকার নিরবচ্ছিন্ন অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক স্থাপন
প্রকল্প (লট-বি) থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল জাপানের উন্নয়ন সহযোগী-সংস্থা জাইকা।
শুধু তা-ই নয়, এর থেকে শিক্ষা নিতেও বলেছে সংস্থাটি।
৭ মে অর্থনীতি সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিবকে এক চিঠিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) প্রধান মিকিও হাতাইদা জানান, বারবার অনুরোধের পরও বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) লট-বি বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় জাপান সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রকল্পে ঋণের টাকা ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
চিঠিতে ক্ষুব্ধ জাইকা ‘ভবিষ্যতে এ ধরনের পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, তার জন্য এই সিদ্ধান্ত থেকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিটিসিএলকে শিক্ষা নিতে’ বলেছে। আগামী ২ জুন ঋণচুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
ইআরডি ও বিটিসিএল সূত্র জানায়, সরকার-স্বাক্ষরিত ঋণচুক্তি এবং জাইকার নির্দেশনা ভঙ্গ করে বিভিন্ন অনিয়ম থেকে সৃষ্ট দীর্ঘসূত্রতায় বিরক্ত হয়ে জাইকা বিটিসিএলকে নিয়ম মেনে চলতে গত পাঁচ মাস ধরে তাগিদ দিয়ে আসছিল। এরপরও যোগ্য ও সর্বনিম্ন প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ না দিয়ে তৃতীয় দফায় দরপত্র আহ্বানের চেষ্টায় জাইকা গত ১৮ জানুয়ারি বিটিসিএল, ২২ জানুয়ারি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি ইআরডির সচিবকে চিঠি দেয়। তাতেও বিহিত না হওয়ায় ঋণ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিল জাইকা।
এই চিঠির অনুলিপি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিবকেও দেওয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এই বিভাগের সচিব ফাইজুর রহমান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিঠিটি দেখে বলতে হবে।’ তাহলে কি চিঠি পাননি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চিঠি পাইনি, তা বলছি না। জাইকার চিঠি আগেও পেয়েছি, আজকেও (গতকাল রোববার) তিনটা চিঠি পেয়েছি। আপনি যে বিষয়ে বলছেন, তা দেখে বলতে হবে।’
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে গত শনিবার সন্ধ্যায় বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহফুজ উদ্দিন আহমদকে তাঁর মুঠোফোনে ফোন করলে তিনি ধরেননি। এরপর নাম-পরিচয় দিয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।
এরপর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বক্তব্য পেতে রাত আটটায় বিটিসিএলের পরিচালক (জনসংযোগ) মীর মোহাম্মদ মোরশেদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন প্রতিবেদক। তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে রোববার সাক্ষাতের সময় দেন। ১৫ মিনিট পর জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রতিবেদককে ফোন করে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের উদ্ধৃতি দিয়ে সাক্ষাতের বিষয় ‘কী’ জানতে চান। প্রতিবেদক জাইকার ঋণ ফেরত নেওয়ার চিঠির বিষয় সম্পর্কে জানালে রোববার বিকেলে সাক্ষাতের সময় দেন। গত রোববার বেলা আড়াইটায় ফোন করলে জনসংযোগ কর্মকর্তা সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
সমস্যার শুরু: দেশের ভেতর এবং আন্তর্জাতিক প্রবেশ পথগুলোর মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পটি (লট-বি) নেওয়া হয়েছিল, যাতে এক বা একাধিক কেব্ল কাটা গেলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিকল্প পথে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখা সম্ভব হয়। মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ সুদে ৩০ বছরে পরিশোধযোগ্য অতি সহজ ঋণের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটি করে দিতে সাহায্য দিয়েছিল জাইকা।
২০১১ সালের মাঝামাঝি লট-বি প্রকল্পের প্রাক্যোগ্যতার দরপত্র হয়। পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে উচ্চ মূল্যে কাজ দেওয়ার চেষ্টায় দরপত্রে নেটাস নামে তুরস্কের একটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাক্যোগ্যতা যাচায়ের পর্যায়েই বাদ দেয় বিটিসিএল। আর এর থেকেই সমস্যার শুরু।
নথিপত্র পর্যালোচনা ও তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, প্রাক্যোগ্যতায় নেটাসকে বাদ দেওয়ার পর রিভিউ প্যানেলের রায়, এই নিয়ে হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্ট হয়ে পুনঃ দরপত্র আহ্বানে সময় গেছে তিন বছর। এরপর নেটাসকে কারিগরিভাবে অযোগ্য করার চেষ্টায় ছয় মাস, তারপর প্রাক্কলিত ব্যয়ের থেকে সর্বনিম্ন দর বেশি দেখিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ না দেওয়ার চেষ্টায় কেটেছে আরও পাঁচ মাস।
অনিয়মের যাত্রা: বিটিসিএল প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ঠিক করেছিল ১ কোটি ৩৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার বা ১১১ কোটি টাকা। নেটাসকে প্রাক্যোগ্যতায় বাদ দিয়েই তড়িঘড়ি প্রকল্পের ব্যয় ১ কোটি ১১ লাখ ৭ হাজার ডলার বাড়িয়ে ২ কোটি ৪৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার (২০০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা) করে বিটিসিএল। এরপর জাপানের এনইসি ও কোরিয়ান কেটির মধ্যে দরপত্র ডাকে বিটিসিএল।
এদিকে, প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন দেয় যে, নেটাসকে বাদ দেওয়া এবং আকস্মিক প্রাক্কলন বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের শত কোটি টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে। এতে প্রকল্প পরিচালকসহ বিটিসিএলের কিছু কর্মকর্তা, বিদেশি পরামর্শক ও দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার আর্থিক সুবিধার সংশ্লিষ্টতা পায় সংস্থাটি। প্রমাণ হিসেবে কথোপকথনের রেকর্ডও প্রতিবেদনের সঙ্গে জমা দেওয়া হয়।
প্রাক্যোগ্যতায় বাদ পড়ায় নেটাস সরকার-গঠিত রিভিউ প্যানেলের কাছে এর প্রতিকার চায়। বিচারে রিভিউ প্যানেল নেটাসকে প্রাক্যোগ্য ঘোষণা করে আদেশ দেয়। তথ্য পেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) তদন্ত শুরু করে।
সূত্র জানায়, দুদকের তদন্ত এড়াতে বিটিসিএল রিভিউ প্যানেলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট ও পরে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। বিচারাধীন বিষয় বলে দুদকের তদন্তও থেমে যায়। বিচারে হাইকোর্ট রিভিউ প্যানেলের সিদ্ধান্ত সঠিক বলে রায় দেন। পরে সুপ্রিম কোর্টও আপিল খারিজ করে দিয়ে নেটাসকে প্রাক্যোগ্য ঘোষণা করে পুনঃ দরপত্রের নির্দেশ দেন।
আদালতের নির্দেশে নেটাস, এনইসি ও কেটিকে প্রাক্যোগ্য করে পুনঃ দরপত্র হলে মূল্যায়ন কমিটি নেটাসকে কারিগরিভাবে যোগ্য ঘোষণা করে। এরপরেও বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতামত চান প্রকল্পের জাপানি পরামর্শক কাওয়াবাতার। পরামর্শক নেটাসকে অযোগ্য ঘোষণার সুপারিশ করেন। কিন্তু বিটিসিএলের পাঠানো প্রতিবেদনের সত্যতা নিয়ে জাইকা প্রশ্ন তুললে নেটাসকে কারিগরিভাবে যোগ্য বলে স্বীকৃতিপত্র দেওয়া হয়।
এরপর দরপত্রের আর্থিক প্রস্তাব খোলা হলে দেখা যায়, নেটাস সর্বনিম্ন দরদাতা। এই পর্যায়ে কারিগরি উপকমিটি নেটাসকে সফল দরদাতা বলে প্রতিবেদন দেয়। কিন্তু ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবারও পরিচালনা পর্ষদকে এড়িয়ে জাপানি পরামর্শকের মতামত চান। তবে যে পরামর্শক কারিগরি উপকমিটির সদস্য হিসেবে ইতিপূর্বে নেটাসকে সফল দরদাতা ঘোষণা দিয়ে স্বাক্ষর করেছিলেন, তিনি এবার নেটাসকে অযোগ্য বলে পুনঃ দরপত্রের সুপারিশ করেন। বিটিসিএল ওই সুপারিশ আগের মতো জাইকায় পাঠায়। কিন্তু জাইকা এ বিষয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর অনাপত্তিপত্র দেয়।
এরপরেও বিটিসিএলের গত ২২ ডিসেম্বরের পরিচালনা পর্ষদের ১০৮তম সভায় জাইকার অনাপত্তিপত্রের তথ্য গোপন করা হয়। ওই সভায় উল্টো জাইকার কাছে পুনঃ দরপত্র এবং ঋণচুক্তির মেয়াদ বাড়াতে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পাঁচ মাস পরে ঋণ ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জাইকা।
৭ মে অর্থনীতি সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিবকে এক চিঠিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) প্রধান মিকিও হাতাইদা জানান, বারবার অনুরোধের পরও বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল) লট-বি বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় জাপান সরকারের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রকল্পে ঋণের টাকা ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
চিঠিতে ক্ষুব্ধ জাইকা ‘ভবিষ্যতে এ ধরনের পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, তার জন্য এই সিদ্ধান্ত থেকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিটিসিএলকে শিক্ষা নিতে’ বলেছে। আগামী ২ জুন ঋণচুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে।
ইআরডি ও বিটিসিএল সূত্র জানায়, সরকার-স্বাক্ষরিত ঋণচুক্তি এবং জাইকার নির্দেশনা ভঙ্গ করে বিভিন্ন অনিয়ম থেকে সৃষ্ট দীর্ঘসূত্রতায় বিরক্ত হয়ে জাইকা বিটিসিএলকে নিয়ম মেনে চলতে গত পাঁচ মাস ধরে তাগিদ দিয়ে আসছিল। এরপরও যোগ্য ও সর্বনিম্ন প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ না দিয়ে তৃতীয় দফায় দরপত্র আহ্বানের চেষ্টায় জাইকা গত ১৮ জানুয়ারি বিটিসিএল, ২২ জানুয়ারি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি ইআরডির সচিবকে চিঠি দেয়। তাতেও বিহিত না হওয়ায় ঋণ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিল জাইকা।
এই চিঠির অনুলিপি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিবকেও দেওয়া হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এই বিভাগের সচিব ফাইজুর রহমান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘চিঠিটি দেখে বলতে হবে।’ তাহলে কি চিঠি পাননি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘চিঠি পাইনি, তা বলছি না। জাইকার চিঠি আগেও পেয়েছি, আজকেও (গতকাল রোববার) তিনটা চিঠি পেয়েছি। আপনি যে বিষয়ে বলছেন, তা দেখে বলতে হবে।’
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে গত শনিবার সন্ধ্যায় বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহফুজ উদ্দিন আহমদকে তাঁর মুঠোফোনে ফোন করলে তিনি ধরেননি। এরপর নাম-পরিচয় দিয়ে খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি।
এরপর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বক্তব্য পেতে রাত আটটায় বিটিসিএলের পরিচালক (জনসংযোগ) মীর মোহাম্মদ মোরশেদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন প্রতিবেদক। তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে রোববার সাক্ষাতের সময় দেন। ১৫ মিনিট পর জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রতিবেদককে ফোন করে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের উদ্ধৃতি দিয়ে সাক্ষাতের বিষয় ‘কী’ জানতে চান। প্রতিবেদক জাইকার ঋণ ফেরত নেওয়ার চিঠির বিষয় সম্পর্কে জানালে রোববার বিকেলে সাক্ষাতের সময় দেন। গত রোববার বেলা আড়াইটায় ফোন করলে জনসংযোগ কর্মকর্তা সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
সমস্যার শুরু: দেশের ভেতর এবং আন্তর্জাতিক প্রবেশ পথগুলোর মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন প্রকল্পটি (লট-বি) নেওয়া হয়েছিল, যাতে এক বা একাধিক কেব্ল কাটা গেলেও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিকল্প পথে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখা সম্ভব হয়। মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ সুদে ৩০ বছরে পরিশোধযোগ্য অতি সহজ ঋণের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটি করে দিতে সাহায্য দিয়েছিল জাইকা।
২০১১ সালের মাঝামাঝি লট-বি প্রকল্পের প্রাক্যোগ্যতার দরপত্র হয়। পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে উচ্চ মূল্যে কাজ দেওয়ার চেষ্টায় দরপত্রে নেটাস নামে তুরস্কের একটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাক্যোগ্যতা যাচায়ের পর্যায়েই বাদ দেয় বিটিসিএল। আর এর থেকেই সমস্যার শুরু।
নথিপত্র পর্যালোচনা ও তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, প্রাক্যোগ্যতায় নেটাসকে বাদ দেওয়ার পর রিভিউ প্যানেলের রায়, এই নিয়ে হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্ট হয়ে পুনঃ দরপত্র আহ্বানে সময় গেছে তিন বছর। এরপর নেটাসকে কারিগরিভাবে অযোগ্য করার চেষ্টায় ছয় মাস, তারপর প্রাক্কলিত ব্যয়ের থেকে সর্বনিম্ন দর বেশি দেখিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ না দেওয়ার চেষ্টায় কেটেছে আরও পাঁচ মাস।
অনিয়মের যাত্রা: বিটিসিএল প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ঠিক করেছিল ১ কোটি ৩৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার বা ১১১ কোটি টাকা। নেটাসকে প্রাক্যোগ্যতায় বাদ দিয়েই তড়িঘড়ি প্রকল্পের ব্যয় ১ কোটি ১১ লাখ ৭ হাজার ডলার বাড়িয়ে ২ কোটি ৪৭ লাখ ৩০ হাজার ডলার (২০০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা) করে বিটিসিএল। এরপর জাপানের এনইসি ও কোরিয়ান কেটির মধ্যে দরপত্র ডাকে বিটিসিএল।
এদিকে, প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিবেদন দেয় যে, নেটাসকে বাদ দেওয়া এবং আকস্মিক প্রাক্কলন বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের শত কোটি টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে। এতে প্রকল্প পরিচালকসহ বিটিসিএলের কিছু কর্মকর্তা, বিদেশি পরামর্শক ও দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তার আর্থিক সুবিধার সংশ্লিষ্টতা পায় সংস্থাটি। প্রমাণ হিসেবে কথোপকথনের রেকর্ডও প্রতিবেদনের সঙ্গে জমা দেওয়া হয়।
প্রাক্যোগ্যতায় বাদ পড়ায় নেটাস সরকার-গঠিত রিভিউ প্যানেলের কাছে এর প্রতিকার চায়। বিচারে রিভিউ প্যানেল নেটাসকে প্রাক্যোগ্য ঘোষণা করে আদেশ দেয়। তথ্য পেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) তদন্ত শুরু করে।
সূত্র জানায়, দুদকের তদন্ত এড়াতে বিটিসিএল রিভিউ প্যানেলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট ও পরে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে। বিচারাধীন বিষয় বলে দুদকের তদন্তও থেমে যায়। বিচারে হাইকোর্ট রিভিউ প্যানেলের সিদ্ধান্ত সঠিক বলে রায় দেন। পরে সুপ্রিম কোর্টও আপিল খারিজ করে দিয়ে নেটাসকে প্রাক্যোগ্য ঘোষণা করে পুনঃ দরপত্রের নির্দেশ দেন।
আদালতের নির্দেশে নেটাস, এনইসি ও কেটিকে প্রাক্যোগ্য করে পুনঃ দরপত্র হলে মূল্যায়ন কমিটি নেটাসকে কারিগরিভাবে যোগ্য ঘোষণা করে। এরপরেও বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতামত চান প্রকল্পের জাপানি পরামর্শক কাওয়াবাতার। পরামর্শক নেটাসকে অযোগ্য ঘোষণার সুপারিশ করেন। কিন্তু বিটিসিএলের পাঠানো প্রতিবেদনের সত্যতা নিয়ে জাইকা প্রশ্ন তুললে নেটাসকে কারিগরিভাবে যোগ্য বলে স্বীকৃতিপত্র দেওয়া হয়।
এরপর দরপত্রের আর্থিক প্রস্তাব খোলা হলে দেখা যায়, নেটাস সর্বনিম্ন দরদাতা। এই পর্যায়ে কারিগরি উপকমিটি নেটাসকে সফল দরদাতা বলে প্রতিবেদন দেয়। কিন্তু ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবারও পরিচালনা পর্ষদকে এড়িয়ে জাপানি পরামর্শকের মতামত চান। তবে যে পরামর্শক কারিগরি উপকমিটির সদস্য হিসেবে ইতিপূর্বে নেটাসকে সফল দরদাতা ঘোষণা দিয়ে স্বাক্ষর করেছিলেন, তিনি এবার নেটাসকে অযোগ্য বলে পুনঃ দরপত্রের সুপারিশ করেন। বিটিসিএল ওই সুপারিশ আগের মতো জাইকায় পাঠায়। কিন্তু জাইকা এ বিষয়ে গত ১৮ ডিসেম্বর অনাপত্তিপত্র দেয়।
এরপরেও বিটিসিএলের গত ২২ ডিসেম্বরের পরিচালনা পর্ষদের ১০৮তম সভায় জাইকার অনাপত্তিপত্রের তথ্য গোপন করা হয়। ওই সভায় উল্টো জাইকার কাছে পুনঃ দরপত্র এবং ঋণচুক্তির মেয়াদ বাড়াতে আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পাঁচ মাস পরে ঋণ ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জাইকা।
No comments