আত্মসত্তার রাজনীতির স্ববিরোধ by কামাল দারভিস
যুক্তরাজ্যের
সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন থেকে বোঝা গেল, আত্মসত্তার রাজনীতি কীভাবে ইউরোপের
রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে দিচ্ছে। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি আসলে আত্মসত্তার
রাজনীতির বামপন্থী রূপ, তাদের কারণে লেবার পার্টি স্কটল্যান্ড থেকে
নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ফলে কনজারভেটিভরা সংসদে চূড়ান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ
করে। ডেভিড ক্যামেরনের সরকার নিশ্চিতভাবেই যুক্তরাজ্যের ইউরোপীয় ইউনিয়নে
থাকা না–থাকা নিয়ে গণভোট আয়োজন করবেন। ক্যামেরন ব্রিটিশ পরিচয়ে জোর
দিয়েছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের অভিন্ন স্বার্থের দিকে নজর দেননি।
গণভোটের পরিণতিতে কী হবে, সে ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব নয়।
বছরের পর বছর ধরে ইউরোপের রাজনৈতিক বিতর্ক মূলত অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও নীতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। কনজারভেটিভরা বেসরকারি খাত পরিচালিত অর্থনীতির কথা বলেছে, বাধাহীন বাজারের কথা বলেছে। তারা একদিকে কর কমাতে চায়, আরেকদিকে সরকারি ব্যয় হ্রাস করতে চায়। ওদিকে লিবারেল ও সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা ব্যক্তিগত-মালিকানার অর্থনীতিতে সমর্থন দিয়েছিল। তারা বাজার, ইউরোপের অখণ্ডতা, বাণিজ্য বাড়ানোর পক্ষপাতী ছিল। এগুলোকে সহনীয় করার জন্য তারা আবার কর পুনর্বিতরণ, ট্রান্সফার, শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা জাল, অবকাঠামো ও আর্থিক খাতে কিছু সরকারি মালিকানার কথা বলেছিল।
এই দ্বিমেরুভিত্তিক ব্যবস্থায় দলগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক নীতির কিছু ক্ষেত্রে মতানৈক্য থাকলেও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ইউরোপীয় প্রকল্প, বিশ্বায়নকে পত্রপাঠ খারিজ না করে তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তাদের মধ্যে মতৈক্য আছে। কিন্তু পরিচয়ের রাজনীতির ক্রমবর্ধমান সফলতা ও নবসৃষ্ট নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের প্রভাবে পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। ২০ শতকের শুরুর ও মাঝের সময়ের ভূত কি আবার ফিরে আসছে?
ইউরোপের ক্ষেত্রে তা বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক, কিন্তু এর আবার বৈশ্বিক তাৎপর্যও আছে। যেমন, মধ্যপ্রাচ্যে আত্মপরিচয়ের রাজনীতির সবচেয়ে অশুভ রূপ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে: শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে সবচেয়ে বিশৃঙ্খল ও সহিংস সংঘাত, ইসলামিক স্টেট বা আইএসের উত্থানের মধ্য দিয়ে তা দেখা যাচ্ছে।
ধারণাকৃত পরিচয়ের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের নির্বিষ ও সমৃদ্ধিকারী উপাদান রয়েছে, যেমন আঞ্চলিক ভাষার প্রচার। কিন্তু আত্মসত্তার রাজনীতির মুশকিল হচ্ছে, এর ফলে ‘ভেতরের’ সঙ্গে ‘বাইরের’ সংঘাত শুরু হয়। যে মনোভঙ্গি খুব সহজেই জাত্যভিমান, বিদ্বেষপ্রসূত বৈষম্য ও প্রকাশ্য শত্রুতা সৃষ্টি করতে পারে।
ইউরোপের এই আত্মসত্তার রাজনীতির পুনরুত্থানের অন্যতম কারণ হচ্ছে বিশ্বায়ন। এর ফলে যেকোনো দেশের মানুষের পক্ষে তার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে উঠেছে। বটেই, বৈশ্বিক অর্থনীতি এতটাই আন্তর্দেশীয় ও বিশ্ববাজার এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে জাতীয় নীতি দিয়ে অতি চলিষ্ণু আন্তর্জাতিক পুঁজির অবাধ যাতায়াত ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না।
বিশ্বায়ন সামগ্রিকভাবে সমৃদ্ধি এনেছে, কিন্তু তার ফসল নব্য অভিজাতদের ঘরেই উঠছে। অন্যদিকে ইউরোপের অনেক মানুষই নতুন প্রযুক্তি ও বিভিন্ন দেশে সহজলভ্য নিম্ন মজুরির শ্রমিকের কারণে অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। নিজেদের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে না পারলে বা কিছু ক্ষেত্রে নতুন শিল্পে চলে যেতে না পারলে তাদের অর্থনৈতিক জীবন সংকুচিত হবে। সাম্প্রতিক অতীতে যে দেশগুলো আর্থিক মন্দায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সেখানেই এই সুবিধাহীন মানুষের সংখ্যা বেশি। আর সেসব দেশ বেকারত্বেও জর্জরিত হয়ে পড়েছে।
কিন্তু যে মানুষেরা বিশ্বায়নের সুফল আপেক্ষিকভাবে বেশি ভোগ করেছে, তারাও বিশ্বায়নের কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে হতাশ। আর অভিবাসীদের মতো দরিদ্র অনাত্মীয় মানুষের জন্য তাদের করের টাকা ভর্তুকি হিসেবে ঢালা হবে, এটা নিশ্চয়ই তারা চাইবে না। এই কাতারে আরও আছে ফরাসি ভাষী বেলজিয়ান, দক্ষিণ ইতালীয় ও গ্রিক জনগণ।
এদিকে বাণিজ্য সংরক্ষণনীতি, ইউরোপীয় অখণ্ডতা ও অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের প্রশ্নে চরম ডান ও বামের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। যেমন, ফ্রান্সে ন্যাশনাল ফ্রন্টের অনেক সমর্থকই ৩০ বছর আগে কমিউনিস্টদের ভোট দিয়েছিল। আর ন্যাশনাল ফ্রন্টের অর্থনৈতিক কর্মসূচি অনেকটা বামফ্রন্টের (নির্বাচনী জোট, যার মধ্যে ফরাসি কমিউনিস্ট পার্টি ও রেফট পার্টি আছে) মতোই। কিন্তু এই দলগুলো চরম ডানপন্থী দলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেই মোহভঙ্গ হওয়া ভোটারদের দলে টানতে চাইছে। ফলে এসব বিষয়ে তাদের মানবিকতা চরম রাজনৈতিক অন্তরায়ে পরিণত হয়েছে। আর সম্প্রতি ভোটের নির্বাচনে যে চরম ডানপন্থীরা সফল হলো, এ বিষয়টিকেও তার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে।
অন্যদিকে, এই আত্মসত্তার রাজনীতির উত্থান ইউরোপের ঐতিহ্যবাহী দলগুলোর জন্য বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মূলধারার রক্ষণশীলেরা ধনীদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় এককাট্টা বলে সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, আজ তাদেরও জনপ্রিয় হওয়ার পন্থা খুঁজতে হবে। কিন্তু অভিবাসন ও মানবাধিকার প্রশ্নে তাদের আবার চরম ডানপন্থীদের কথা বলা চলবে না। ক্যামেরন ভারসাম্য প্রণয়নের এই সূক্ষ্ম খেলায় সফল হয়েছেন, সে কারণেই তিনি জিতেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রিপাবলিকান পার্টিও দলের মধ্যে এমন চরমপন্থীদের চাপে পড়েছে, তাদেরও এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
ওদিকে মধ্য বামপন্থী দলগুলোর জন্য আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। ভোটারদের জন্য তাদের বাস্তবসম্মত অর্থনৈতিক কর্মসূচি হাজির করতে হবে, যেটা হবে বাজারবান্ধব ও আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য উন্মুক্ত। আবার অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি-প্রকৃতিতে হতাশ হওয়া ৬০-৭০ শতাংশ জনগণের জন্যও দৃষ্টিগ্রাহ্য সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। বাম দলের অর্থনৈতিক নীতিকে যদি ডানপন্থী দলের অর্থনৈতিক নীতির দুর্বল অনুকরণ বলে মনে হয়, তাহলে জনগণের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র অংশটি জাত্যভিমানী দলগুলোতে ভিড় করবে। আর সেই দলগুলো তাদের বিশ্বায়নের প্রভাব থেকে বের করা যে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়, সেটা গিলবে।
স্পেন, তুরস্ক, ডেনমার্ক ও পর্তুগালের আসন্ন নির্বাচন এবং আগামী বছরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও এই চ্যালেঞ্জ নানা রূপে আবির্ভূত হবে। বিশেষ করে, বামপন্থীদের সমতা ও গণতন্ত্রের নীতি রক্ষা করতে হবে। আবার আন্তর্জাতিক সহযোগিতাসহ বিশ্বায়নের অপরিবর্তনীয় প্রপঞ্চকে ব্যবস্থাপনার মধ্যে রাখতে হবে। স্ববিরোধের বড় জায়গা হচ্ছে, আত্মসত্তার রাজনীতির এমন বাড়বাড়ন্ত হতে থাকলে কোনো সরকারের পক্ষে এর কারণগুলো আমলে নেওয়া সম্ভব হবে না।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন; স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
কামাল দারভিস: তুরস্কের সাবেক অর্থমন্ত্রী।
বছরের পর বছর ধরে ইউরোপের রাজনৈতিক বিতর্ক মূলত অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও নীতিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। কনজারভেটিভরা বেসরকারি খাত পরিচালিত অর্থনীতির কথা বলেছে, বাধাহীন বাজারের কথা বলেছে। তারা একদিকে কর কমাতে চায়, আরেকদিকে সরকারি ব্যয় হ্রাস করতে চায়। ওদিকে লিবারেল ও সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটরা ব্যক্তিগত-মালিকানার অর্থনীতিতে সমর্থন দিয়েছিল। তারা বাজার, ইউরোপের অখণ্ডতা, বাণিজ্য বাড়ানোর পক্ষপাতী ছিল। এগুলোকে সহনীয় করার জন্য তারা আবার কর পুনর্বিতরণ, ট্রান্সফার, শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা জাল, অবকাঠামো ও আর্থিক খাতে কিছু সরকারি মালিকানার কথা বলেছিল।
এই দ্বিমেরুভিত্তিক ব্যবস্থায় দলগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক নীতির কিছু ক্ষেত্রে মতানৈক্য থাকলেও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, ইউরোপীয় প্রকল্প, বিশ্বায়নকে পত্রপাঠ খারিজ না করে তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তাদের মধ্যে মতৈক্য আছে। কিন্তু পরিচয়ের রাজনীতির ক্রমবর্ধমান সফলতা ও নবসৃষ্ট নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের প্রভাবে পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। ২০ শতকের শুরুর ও মাঝের সময়ের ভূত কি আবার ফিরে আসছে?
ইউরোপের ক্ষেত্রে তা বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক, কিন্তু এর আবার বৈশ্বিক তাৎপর্যও আছে। যেমন, মধ্যপ্রাচ্যে আত্মপরিচয়ের রাজনীতির সবচেয়ে অশুভ রূপ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে: শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে সবচেয়ে বিশৃঙ্খল ও সহিংস সংঘাত, ইসলামিক স্টেট বা আইএসের উত্থানের মধ্য দিয়ে তা দেখা যাচ্ছে।
ধারণাকৃত পরিচয়ের প্রতি আনুগত্য প্রকাশের নির্বিষ ও সমৃদ্ধিকারী উপাদান রয়েছে, যেমন আঞ্চলিক ভাষার প্রচার। কিন্তু আত্মসত্তার রাজনীতির মুশকিল হচ্ছে, এর ফলে ‘ভেতরের’ সঙ্গে ‘বাইরের’ সংঘাত শুরু হয়। যে মনোভঙ্গি খুব সহজেই জাত্যভিমান, বিদ্বেষপ্রসূত বৈষম্য ও প্রকাশ্য শত্রুতা সৃষ্টি করতে পারে।
ইউরোপের এই আত্মসত্তার রাজনীতির পুনরুত্থানের অন্যতম কারণ হচ্ছে বিশ্বায়ন। এর ফলে যেকোনো দেশের মানুষের পক্ষে তার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে উঠেছে। বটেই, বৈশ্বিক অর্থনীতি এতটাই আন্তর্দেশীয় ও বিশ্ববাজার এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে জাতীয় নীতি দিয়ে অতি চলিষ্ণু আন্তর্জাতিক পুঁজির অবাধ যাতায়াত ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না।
বিশ্বায়ন সামগ্রিকভাবে সমৃদ্ধি এনেছে, কিন্তু তার ফসল নব্য অভিজাতদের ঘরেই উঠছে। অন্যদিকে ইউরোপের অনেক মানুষই নতুন প্রযুক্তি ও বিভিন্ন দেশে সহজলভ্য নিম্ন মজুরির শ্রমিকের কারণে অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। নিজেদের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে না পারলে বা কিছু ক্ষেত্রে নতুন শিল্পে চলে যেতে না পারলে তাদের অর্থনৈতিক জীবন সংকুচিত হবে। সাম্প্রতিক অতীতে যে দেশগুলো আর্থিক মন্দায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সেখানেই এই সুবিধাহীন মানুষের সংখ্যা বেশি। আর সেসব দেশ বেকারত্বেও জর্জরিত হয়ে পড়েছে।
কিন্তু যে মানুষেরা বিশ্বায়নের সুফল আপেক্ষিকভাবে বেশি ভোগ করেছে, তারাও বিশ্বায়নের কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়ে হতাশ। আর অভিবাসীদের মতো দরিদ্র অনাত্মীয় মানুষের জন্য তাদের করের টাকা ভর্তুকি হিসেবে ঢালা হবে, এটা নিশ্চয়ই তারা চাইবে না। এই কাতারে আরও আছে ফরাসি ভাষী বেলজিয়ান, দক্ষিণ ইতালীয় ও গ্রিক জনগণ।
এদিকে বাণিজ্য সংরক্ষণনীতি, ইউরোপীয় অখণ্ডতা ও অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের প্রশ্নে চরম ডান ও বামের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখা যায় না। যেমন, ফ্রান্সে ন্যাশনাল ফ্রন্টের অনেক সমর্থকই ৩০ বছর আগে কমিউনিস্টদের ভোট দিয়েছিল। আর ন্যাশনাল ফ্রন্টের অর্থনৈতিক কর্মসূচি অনেকটা বামফ্রন্টের (নির্বাচনী জোট, যার মধ্যে ফরাসি কমিউনিস্ট পার্টি ও রেফট পার্টি আছে) মতোই। কিন্তু এই দলগুলো চরম ডানপন্থী দলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সেই মোহভঙ্গ হওয়া ভোটারদের দলে টানতে চাইছে। ফলে এসব বিষয়ে তাদের মানবিকতা চরম রাজনৈতিক অন্তরায়ে পরিণত হয়েছে। আর সম্প্রতি ভোটের নির্বাচনে যে চরম ডানপন্থীরা সফল হলো, এ বিষয়টিকেও তার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে।
অন্যদিকে, এই আত্মসত্তার রাজনীতির উত্থান ইউরোপের ঐতিহ্যবাহী দলগুলোর জন্য বড় সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। মূলধারার রক্ষণশীলেরা ধনীদের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় এককাট্টা বলে সাধারণভাবে ধারণা করা হয়, আজ তাদেরও জনপ্রিয় হওয়ার পন্থা খুঁজতে হবে। কিন্তু অভিবাসন ও মানবাধিকার প্রশ্নে তাদের আবার চরম ডানপন্থীদের কথা বলা চলবে না। ক্যামেরন ভারসাম্য প্রণয়নের এই সূক্ষ্ম খেলায় সফল হয়েছেন, সে কারণেই তিনি জিতেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মূলধারার রিপাবলিকান পার্টিও দলের মধ্যে এমন চরমপন্থীদের চাপে পড়েছে, তাদেরও এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
ওদিকে মধ্য বামপন্থী দলগুলোর জন্য আরও কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। ভোটারদের জন্য তাদের বাস্তবসম্মত অর্থনৈতিক কর্মসূচি হাজির করতে হবে, যেটা হবে বাজারবান্ধব ও আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য উন্মুক্ত। আবার অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি-প্রকৃতিতে হতাশ হওয়া ৬০-৭০ শতাংশ জনগণের জন্যও দৃষ্টিগ্রাহ্য সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। বাম দলের অর্থনৈতিক নীতিকে যদি ডানপন্থী দলের অর্থনৈতিক নীতির দুর্বল অনুকরণ বলে মনে হয়, তাহলে জনগণের মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র অংশটি জাত্যভিমানী দলগুলোতে ভিড় করবে। আর সেই দলগুলো তাদের বিশ্বায়নের প্রভাব থেকে বের করা যে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়, সেটা গিলবে।
স্পেন, তুরস্ক, ডেনমার্ক ও পর্তুগালের আসন্ন নির্বাচন এবং আগামী বছরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও এই চ্যালেঞ্জ নানা রূপে আবির্ভূত হবে। বিশেষ করে, বামপন্থীদের সমতা ও গণতন্ত্রের নীতি রক্ষা করতে হবে। আবার আন্তর্জাতিক সহযোগিতাসহ বিশ্বায়নের অপরিবর্তনীয় প্রপঞ্চকে ব্যবস্থাপনার মধ্যে রাখতে হবে। স্ববিরোধের বড় জায়গা হচ্ছে, আত্মসত্তার রাজনীতির এমন বাড়বাড়ন্ত হতে থাকলে কোনো সরকারের পক্ষে এর কারণগুলো আমলে নেওয়া সম্ভব হবে না।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন; স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট
কামাল দারভিস: তুরস্কের সাবেক অর্থমন্ত্রী।
No comments