এখনও নিখোঁজ কয়েক হাজার অভিবাসী
বঙ্গোপসাগর
ও আন্দামান সাগরে বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের কয়েক হাজার অভিবাসী এখনও নিখোঁজ।
তাদের কোন হদিস নেই কারও কাছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন
ইউএনএইচসিআর এবং অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন আইওএম একথা বলেছে। তারা
বলেছে, সাগরে ভাসমান ও নিখোঁজ অবস্থায় থাকা ওইসব মানুষকে উদ্ধার করতে হবে।
ওদিকে, মালয়েশিয়া সাগরে অনুসন্ধান চালিয়ে বাংলাদেশী ও মিয়ানমারের
রোহিঙ্গাদের কোন চিহ্নই পায়নি। সমুদ্রে ভাসমান অভিবাসীদের উদ্ধারে অভিযান
চালিয়েছে মালয়েশিয়া। তারা এসব অভিবাসীকে সহায়তা করে উদ্ধার করে তীরে নিয়ে
ঠাঁই দেয়ার প্রস্তাবে রাজি হয় এবং সেমতে কাজ শুরু করে। কিন্তু দেশটির পুলিশ
প্রধান খালিদ আবু বকর গতকাল কুয়ালালামপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবাদ
সম্মেলনে বলেন, আমাদের মেরিন পুলিশ অথবা মালয়েশিয়ান মেরিটাইম এনফোর্সমেন্ট
এজেন্সির কাছ থেকে এ সংক্রান্ত কোন খবর আসে নি। তবু আমরা এসব অভিবাসীকে
গ্রহণ করতে প্রস্তুত। তাদের কাগজপত্র তৈরি করে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা
হবে। ওদিকে, সাগরে ভাসমান এসব নৌযানে কোন রোহিঙ্গা নেই এমন দাবি করে গতকাল
মিয়ানমারে বিক্ষোভ করেছে বৌদ্ধরা। তারা বলেছে, বোটের ওইসব মানুষ মিয়ানমারের
নয়। প্রায় ৩০ জন বৌদ্ধ ভিক্ষু গতকাল ইয়াঙ্গুনে র্যালি করেন। এ সময় তারা
যেসব ব্যানার বহন করেন তাতে লেখা ছিল- বোটের মানুষ মিয়ানমারের নন। এ নিয়ে
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া গল্প বানাচ্ছে। ওদিকে ভাসমান এসব মানুষের
সমস্যা সমাধানের লক্ষ্য নিয়ে আগামীকাল শুক্রবার থাইল্যান্ডের রাজধানীতে
বসছে আন্তর্জাতিক সম্মেলন। অনেক দরকষাকষির পর তাতে যোগ দিতে সম্মতি দিয়েছে
মিয়ানমার। কিন্তু জাতিসংঘ, মানবাধিকার বিষয়ক বিভিন্ন সংস্থা ও ওই অঞ্চলের
সরকারগুলো বলছে, নৌযানে আটকা পড়া এসব মানুষের বেশির ভাগই মিয়ানমারের
রোহিঙ্গা। রাখাইন প্রদেশের মুসলিম রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার কোন নাগরিকত্ব দেয়
নি। তাদের সঙ্গে সবদিক থেকে করা হয়েছে বৈষম্য। এমন পরিস্থিতিতে তারা বেঁচে
থাকার আশায় উত্তাল, ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্র পথে পাড়ি জমান উন্নত দেশে। কিন্তু
বৌদ্ধ ভিক্ষু থুডা নান্দা বলেন, নৌকার ওইসব মানুষ নিজেদের নাম বানিয়েছে
রোহিঙ্গা। তারা এখন শরণার্থী মর্যাদা চায়। তাই তারা যে কোন উপায়ে মিয়ানমারে
আশ্রয় চাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা এটা মেনে নিতে পারি না। গতকাল এসব খবর
দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা, দ্য নেশন ও বার্তা সংস্থা এপি। এতে বলা হয়, গতকাল
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে ইউএনএইচসিআর ও আইওএম ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায়
যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেছে। সেখানে উদ্ধার অভিযান, পুনর্বাসন ও প্রাং ১০
হাজার মানুষকে ফেরত দেয়ার জন্য ২ কোটি ৬০ লাখ ডলারের তহবিল চাওয়া হয়।
ইউএনএইচসিআরের ফিলিপাইনের প্রতিনিধি বার্নার্ড কারব্লাট বলেন, এখনও সমুদ্রে
ঝুঁকিপূর্ণ নৌযানে ভাসমান কমপক্ষে ২৬২১ জন অভিবাসী। এর বেশির ভাগই
মালয়েশিয়া ও মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের কাছাকাছি উপকূলে। তবে এক্ষেত্রে
প্রকৃত সংখ্যা হতে পারে অনেক বেশি। তিনি বলেন, প্রতি ঘণ্টা পার হওয়ার সঙ্গে
সঙ্গে সমুদ্রে আটকে পড়া এসব মানুষকে রক্ষার আবেদন জোরালো হচ্ছে। তার
ভাষায়- আমরা যখন এ নিয়ে কথা বলছি তখন জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়া, খাদ্য-পানীয়
ফুরিয়ে যাওয়া কয়েক হাজার শিশু, নারী, পুরুষ, বয়স্ক মানুষ গভীর সমুদ্রে
জীবনের সঙ্গে লড়ছে। তাদেরকে দ্রুত তীরে নিয়ে যেতে হবে। অভিবাসীদের বেশির
ভাগই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা। অভিবাসনের এই সংকট গতকাল ২৭তম দিন অতিবাহিত
করলো। এ বিষয়ে কারব্লাট বলেন ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড উপকূলে এ
পর্যন্ত কমপক্ষে ৩৩০২ জন অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ১০১৩ জনকে ফেরত
পাঠানো হয়েছে মিয়ানমার ও বাংলাদেশে। তিনি বলেন, ওই অঞ্চলে নতুন করে কোন
বোটের আনাগোনা নেই। তবে ইউএনএইচসিআর ও আইওএম যখন বলছে, সমুদ্রে এখনও
কমপক্ষে ২৬২১ জন অভিবাসী মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন তখন মালয়েশিয়ার বক্তব্য
নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। গত সপ্তাহের বুধবারে
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে জরুরি বৈঠক করেন থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া
ও মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। এতে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া
শর্তসাপেক্ষে অভিবাসীদের অস্থায়ীভিত্তিতে ঠাঁই দিতে সম্মত হয়। তারা বলেছে,
এক বছরের জন্য এই ঠাঁই দেবে তারা। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে
আর্থিকভাবে সহায়তা দিতে হবে। একই সময়ের মধ্যে অভিবাসীদের যার যার দেশে অথবা
তৃতীয় কোন দেশে পুনর্বাসন করতে হবে। ওই সময়ে মানবাধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো
বলে আন্দামান, মালাকা প্রণালীতে আটকে আছে কমপক্ষে ৮০০০ অভিবাসী। সেখানে
মালয়েশিয়া কোন অভিবাসীবাহী বোটের চিহ্নও পায় নি। এমন বক্তব্যে আইওএমের
মুখপাত্র জোই লোরি বলেছেন, সমুদ্রের ওই এলাকাটি বিশাল। সেখানে এক লাখ জেলে
নৌকা মাছ ধরে। তার মধ্য থেকে বেছে বেছে ডজনখানেক নৌযান শনাক্ত করা কঠিন।
তবে এ মাসে নৌপথে প্রায় ৩০০০ অভিবাসী গিয়েছেন মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।
লোরি বলেন, যেসব মানুষ এখনও সমুদ্রে আটকে আছেন তাদের দুর্ভোগ অপরিসীম। যারা
কয়েক দিনে ইন্দোনেশিয়া পৌঁছেছেন তাদের অবস্থা ভাল নয়। ওদিকে দক্ষিণ-পূর্ব
এশিয়ার সমুদ্রে ভাসমান মানুষদের শনাক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী
ফ্লাইটের মাধ্যমে নজরদারি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের
মুখপাত্র জেফ রাথকে মঙ্গলবার বলেছেন, মালয়েশিয়ার সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্রের
নৌবাহিনীর পি-৮ বিমান এ অভিযানে অংশ নেয়।
No comments