‘গণতন্ত্রের সূর্য ডুবেছে প্রেস ক্লাবে’, প্রেস ক্লাবে নতুন সংকট- বিনা ভোটে কমিটি ঘোষণা, প্রত্যাখ্যান
আইল্যান্ড
অব ডেমোক্রেসি বা গণতন্ত্রের দ্বীপ বলা হয় জাতীয় প্রেস ক্লাবকে। সেই জাতির
বিবেকখ্যাত জাতীয় প্রেস ক্লাবেই আজ গণতন্ত্রের সূর্য ডুবেছে। যারা
সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার সাহস রাখেন না, তারাই আজ সমঝোতা করে
বিনাভোটে ক্লাবের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। জাতীয় প্রেস ক্লাবে কমিটি ঘোষণার
প্রতিক্রিয়ায় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমান এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে এসব
কথা লিখেছেন। তিনি আরও লিখেছেন, প্রথম আওয়ামী লীগ-জামায়াতের সমঝোতা কমিটি
হয়েছিল। প্রতিক্রিয়া তীব্র হওয়ায় লজ্জা পেয়ে দম নেন। পরে আওয়ামী
লীগ-বিএনপির মোড়লরা কমিটি নির্বাচিত করে স্বঘোষিত নেতা নির্বাচিত হয়েছেন।
গণতন্ত্রের এমন করুণ মৃত্যু যারা ঘটিয়েছেন, তারাই গণমাধ্যমের আলোচিত মুখ
হয়ে মধ্যরাতের টক শোতে নীতিবাক্য বলেন। এ লজ্জা রাখার জায়গা নেই, তারা
ঢাকবেন কিভাবে। আমরা অনেকেই প্রেস ক্লাবের সদস্য, আমাদের ডাকা হলো না,
জানানো হলো না, ভোট হলো না, আমাদের না জানিয়ে শয়তানের প্ররোচনায় নেতৃত্ব
হাইজ্যাক করলো দুটি দলের অন্ধরা। একটি পেশাদার ক্লাবের কর্তৃত্ব তারা দখল
করে নিলো! কেউ প্রতিবাদও করলো না! এই অবৈধ নেতৃত্বে যারা তাদের সমাজে না
বলুন। যেখানেই দেখবেন সালাম না দিয়ে মনে মনে বলবেন শেম। এদের আমন্ত্রণে কোন
অনুষ্ঠানে আমি যাবো না। এরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের ইমেজ নষ্ট করেছে অতীতে
দলবাজিতে। এবার ক্ষমতাবাজি আর সুবিধাবাদিতায় গণতন্ত্রের কবর দিয়েছে। এরা
আমার নেতা নয়। ক্লাবের বিনাভোটের কমিটি বানানোর ক্ষমতা দুই ফোরাম বা দুই
ইউনিয়নকে কে দিয়েছে? এদের নাম ক্লাব ইতিহাসে কালো হরফে লেখা থাকবেই। এই দিন
দিন নয়। জবাব একদিন দিতেই হবে।
প্রেস ক্লাবে নতুন সংকট- বিনা ভোটে কমিটি ঘোষণা, প্রত্যাখ্যান
বিনা ভোটে জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল আকস্মিকভাবে ডাকা এক সাধারণ সভা থেকে সদস্যদের একাংশ এ কমিটি ঘোষণা করে। সভায় কমিটির প্রায় এক হাজার সদস্যের মধ্যে একশ’ জনও উপস্থিত ছিলেন না। সভায় গঠিত কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মুহাম্মদ শফিকুর রহমানকে, সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে বিএনপি সমর্থিত কামরুল ইসলাম চৌধুরীকে। ১৭ সদস্যের কমিটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের প্রাধান্য রয়েছে। তবে সৈয়দ আবদাল আহমেদ ও কামাল উদ্দিন সবুজের নেতৃত্বাধীন কমিটি নতুন ঘোষিত কমিটিকে অবৈধ হিসেবে
আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত প্রেস ক্লাবের নির্বাচন নিয়ে গত ছয় মাস ধরেই জটিলতা চলছিল। নির্বাচন না করে সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি গঠনের পক্ষে শুরু থেকেই অবস্থান ছিল সরকার সমর্থকদের। একপর্যায়ে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক গোলাম সারওয়ারকে সভাপতি ও রুহুল আমিন গাজীকে সাধারণ সম্পাদক করে এক ধরনের সমঝোতার প্রচেষ্টা নেয়া হয়। পরে এ সমঝোতা উদ্যোগ ভেস্তে যায়। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও পদত্যাগ করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরবর্তী নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে প্রেস ক্লাবের কার্য নির্বাহী কমিটি আগামী ২৭শে জুন অতিরিক্ত সাধারণ সভা আহ্বান করে। এদিকে এক পক্ষের কমিটি ঘোষণা এবং বর্তমান কমিটির তা প্রত্যাখ্যান করাকে কেন্দ্র করে প্রেস ক্লাবে নতুন সঙ্কট তৈরি হলো। এ সঙ্কট শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়াতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।
কমিটিতে যারা আছেন
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে গতকালের দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রেস ক্লাবের প্রবীণ সদস্য শাহজাহান মিয়া। সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর, গোলাম সারওয়ার, হাসান শাহরিয়ার, খন্দকার মনিরুল আলম, আবুল কালাম আজাদ, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, আলতাফ মাহমুদ, কাজী সিরাজ, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, আবদুল জলিল ভুঁইয়া, কুদ্দুস আফ্রাদ প্রমুখ। বিএনপি সমর্থিত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এলাহী নেওয়াজ খান সাজু নতুন কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন। ঘোষিত কমিটিতে অন্যান্যের মধ্যে আছেন সিনিয়র সহসভাপতি- মনজুরুল আহসান বুলবুল, সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজী, যুগ্ম সম্পাদক আশরাফ আলী, ইলিয়াস খান, কোষাধ্যক্ষ কার্তিক চ্যাটার্জি। সদস্য করা হয়েছে আমানুল্লাহ কবীর, খন্দকার মনিরুল আলম, আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, সাইফুল আলম, শ্যামল দত্ত , শামসুদ্দিন আহমেদ চারু, মোল্লা জালাল উদ্দিন, সরদার ফরিদ আহমেদ, হাসান আরেফিন, শামসুল হক দুররানীকে। সভায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য সংখ্যা আরও ৫০০ বাড়িয়ে ১৫০০ করার সিদ্ধান্ত হয়। সকাল সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়া এই সাধারণ সভার কথা জানতেন না বলে অনেক সদস্য অভিযোগ করেছেন।
কমিটি প্রত্যাখ্যান ব্যবস্থাপনা কমিটির
বিনা ভোটে ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছে প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটি। কমিটির পক্ষে সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে ঘোষিত কমিটিকে অবৈধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এতে বলা হয়, দীর্ঘ ৬০ বছরের ঐতিহ্যলালিত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান জাতীয় প্রেস ক্লাব নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ঐকান্তিক আগ্রহ, আন্তরিকতা এবং অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভবপর হয়নি। ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেবলমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমেই এক কমিটির কাছ থেকে আরেক কমিটিকে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রথা রয়েছে। এর কোন রূপ ব্যত্যয় এবং লঙ্ঘন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্যবৃন্দ এবং দেশের সাংবাদিক সমাজ কোন ভাবেই মেনে নেবে না।
প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটির গত ২৫ ও ২৬শে মে ২০১৫ অনুষ্ঠিত সভায় আগামী ২৭শে জুন ২০১৫ অতিরিক্ত সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভার আলোচ্য বিষয় দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন। ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ক্লাবের স্বত্বাধিকারী বা মালিক যেহেতু স্থায়ী সদস্যবৃন্দ, সুতরাং তাদের সম্মিলিত প্রজ্ঞা, দায়িত্বশীলতা এবং সংকট নিরসনের আন্তরিক প্রয়াসের উপর ব্যবস্থাপনা কমিটি সব সময়ই আস্থাশীল। আগামী ২৭শে জুন অনুষ্ঠেয় অতিরিক্ত সাধারণ সভাতেই সংকট নিরসনের পন্থা বের করা এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে অন্য কারো পক্ষে দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা করার নৈতিক ও আইনগত কোন এখতিয়ার বা বৈধতা নেই।
জাতীয় প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটি সুস্পষ্ট ভাবে জানাচ্ছে যে, ২৮শে মে ২০১৫ তারিখে কোন দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা নির্ধারিত ছিল না। ইতিপূর্বে আহূত সভাটি ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে বাতিল করা হয়েছে এবং সাধারণ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তা সদস্যদের এর মধ্যেই অবহিত করা হয়েছে। কাজেই দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভার নামে যারা তথাকথিত একটি সভা করেছেন তা গঠনতন্ত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং ক্লাবের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিপন্থি। একই সঙ্গে তা জাতীয় গণতন্ত্র এবং প্রেস ক্লাবের স্বার্থ ও ঐক্যবিরোধী। এটা ক্লাবের অখণ্ডতা এবং সাংবাদিক সমাজের বৃহত্তর ঐক্য বিনষ্ট করবে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। ক্লাব পরিচালনা করে ক্লাবের বৈধ কমিটি। ২৭শে জুন ২০১৫ এর অতিরিক্ত সাধারণ সভাই ক্লাবের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে। তাই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সকল স্থায়ী সদস্যের প্রতি আমাদের আবেদন- ক্লাবের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও অখণ্ডতা রক্ষার ব্যাপারে আপনারা যার যার অবস্থান থেকে বলিষ্ঠ ও দৃঢ় ভূমিকা পালন করুন।
আপনারা অবৈধ, আপনারা আর ক্ষমতায় নেই
ওদিকে, প্রেস ক্লাব মিলনায়তে সাধারণ সভায় সরকার সমর্থক সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, কয়েক বছর ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাব একটি গোষ্ঠি ও রাজনৈতিক দলের আখড়ায় পরিণত হয়েছে, এভাবে ক্লাব চলতে পারে না। আমি স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, আমরা দেশে স্বেচ্ছাচারিতা মানি নাই, জাতীয় প্রেস ক্লাবেও আর কোন স্বেচ্ছাচারিতা মেনে নেয়া হবে না। বর্তমান কমিটিকে অবৈধ হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ৩১শে মার্চের পর থেকে এই কমিটির ক্লাব পরিচালনার কোন আইনগত ভিত্তি নেই। অতিরিক্ত সাধারণ সভায় তাদের এ সময়ের মধ্যে সাধারণ সভা ও নির্বাচনের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। তারপরও তারা চেয়ার আঁকড়ে রেখেছেন। আমরা সাধারণ সদস্যরা এর জবাবে বলতে চাই, আপনারা অবৈধ, আপনারা আর ক্ষমতায় নেই। এরপরও যদি আপনারা ক্লাবের চেয়ার আঁকড়ে থাকেন, তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। সাধারণ সদস্যরা আপনাদের মোকাবিলা করবে। আমানুল্লাহ কবীর বলেন, প্রেস ক্লাবকে ইউনিয়নের মতো বিভক্ত করে এর অখণ্ড ঐতিহ্যকে বিনষ্ট করায় আজকের এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যদি এক ব্যক্তি এই ক্লাবের দেখভাল না করত, এই সংকট সৃষ্টি হতো না বলে আমি মনে করি। আমরা সেজন্য সমঝোতার একটি প্যানেলের মাধ্যমে এই সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে চাই। খন্দকার মনিরুল আলম বলেন, ২০০২ সালে যে কমিটি বিজয়ী হয়ে আসে, তারাই একচেটিয়াভাবে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে দুই ফোরামের ভোট ভারসাম্যহীন করে ফেলে। ফলে সৃষ্টি হয় সংকটের। আমরা এই ভারসাম্যহীনতার অবসান চাই। সভাপতির বক্তব্যে শাহজাহান মিয়া বলেন, আজকের এই সভা ঐতিহাসিক একটি সভা। এটা জাতীয় প্রেস ক্লাবের ইতিহাস মাইল ফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
প্রেস ক্লাব দখলের অপচেষ্টার নিন্দা
এদিকে, জাতীয় প্রেস ক্লাব দখলের অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএফইউজে ও ডিইউজের একাংশের নেতারা। বিএফইউজের একাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মো. মোদাব্বের হোসেন, ডিইউজে’র একাংশের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান এক যৌথ বিবৃতিতে জাতীয় প্রেস ক্লাব নিয়ে নোংরা খেলা থেকে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরত থাকার আহ্বান জানান। বিবৃতিতে তারা বলেন, নির্বাচনকে এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিবেকবান সদস্যদের মূল্যবান মতামতকে যারা আস্থায় নিতে ভয় পান, তারাই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এটির পদ-পদবি কুক্ষিগত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। ক্লাবের নীতিবান সদস্যরা যা কখনো মেনে নেবেন না। ক্লাবের পদ-পদবি দখলের এ অশুভ কর্মকাণ্ড সাধারণ সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে মোকাবিলা করা হবে বলে তারা বিবৃতিতে উল্লেখ করেন।
প্রেস ক্লাবে নতুন সংকট- বিনা ভোটে কমিটি ঘোষণা, প্রত্যাখ্যান
বিনা ভোটে জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল আকস্মিকভাবে ডাকা এক সাধারণ সভা থেকে সদস্যদের একাংশ এ কমিটি ঘোষণা করে। সভায় কমিটির প্রায় এক হাজার সদস্যের মধ্যে একশ’ জনও উপস্থিত ছিলেন না। সভায় গঠিত কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মুহাম্মদ শফিকুর রহমানকে, সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে বিএনপি সমর্থিত কামরুল ইসলাম চৌধুরীকে। ১৭ সদস্যের কমিটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের প্রাধান্য রয়েছে। তবে সৈয়দ আবদাল আহমেদ ও কামাল উদ্দিন সবুজের নেতৃত্বাধীন কমিটি নতুন ঘোষিত কমিটিকে অবৈধ হিসেবে
আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে। গণতন্ত্রের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত প্রেস ক্লাবের নির্বাচন নিয়ে গত ছয় মাস ধরেই জটিলতা চলছিল। নির্বাচন না করে সমঝোতার ভিত্তিতে কমিটি গঠনের পক্ষে শুরু থেকেই অবস্থান ছিল সরকার সমর্থকদের। একপর্যায়ে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক গোলাম সারওয়ারকে সভাপতি ও রুহুল আমিন গাজীকে সাধারণ সম্পাদক করে এক ধরনের সমঝোতার প্রচেষ্টা নেয়া হয়। পরে এ সমঝোতা উদ্যোগ ভেস্তে যায়। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরাও পদত্যাগ করেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরবর্তী নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে প্রেস ক্লাবের কার্য নির্বাহী কমিটি আগামী ২৭শে জুন অতিরিক্ত সাধারণ সভা আহ্বান করে। এদিকে এক পক্ষের কমিটি ঘোষণা এবং বর্তমান কমিটির তা প্রত্যাখ্যান করাকে কেন্দ্র করে প্রেস ক্লাবে নতুন সঙ্কট তৈরি হলো। এ সঙ্কট শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়াতে পারে বলে অনেকে মনে করেন।
কমিটিতে যারা আছেন
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে গতকালের দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রেস ক্লাবের প্রবীণ সদস্য শাহজাহান মিয়া। সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর, গোলাম সারওয়ার, হাসান শাহরিয়ার, খন্দকার মনিরুল আলম, আবুল কালাম আজাদ, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, আলতাফ মাহমুদ, কাজী সিরাজ, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, আবদুল জলিল ভুঁইয়া, কুদ্দুস আফ্রাদ প্রমুখ। বিএনপি সমর্থিত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এলাহী নেওয়াজ খান সাজু নতুন কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন। ঘোষিত কমিটিতে অন্যান্যের মধ্যে আছেন সিনিয়র সহসভাপতি- মনজুরুল আহসান বুলবুল, সহসভাপতি আমিরুল ইসলাম কাগজী, যুগ্ম সম্পাদক আশরাফ আলী, ইলিয়াস খান, কোষাধ্যক্ষ কার্তিক চ্যাটার্জি। সদস্য করা হয়েছে আমানুল্লাহ কবীর, খন্দকার মনিরুল আলম, আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, সাইফুল আলম, শ্যামল দত্ত , শামসুদ্দিন আহমেদ চারু, মোল্লা জালাল উদ্দিন, সরদার ফরিদ আহমেদ, হাসান আরেফিন, শামসুল হক দুররানীকে। সভায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য সংখ্যা আরও ৫০০ বাড়িয়ে ১৫০০ করার সিদ্ধান্ত হয়। সকাল সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়া এই সাধারণ সভার কথা জানতেন না বলে অনেক সদস্য অভিযোগ করেছেন।
কমিটি প্রত্যাখ্যান ব্যবস্থাপনা কমিটির
বিনা ভোটে ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছে প্রেস ক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটি। কমিটির পক্ষে সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে ঘোষিত কমিটিকে অবৈধ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এতে বলা হয়, দীর্ঘ ৬০ বছরের ঐতিহ্যলালিত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান জাতীয় প্রেস ক্লাব নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ঐকান্তিক আগ্রহ, আন্তরিকতা এবং অঙ্গীকার থাকা সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভবপর হয়নি। ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেবলমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমেই এক কমিটির কাছ থেকে আরেক কমিটিকে দায়িত্ব হস্তান্তরের প্রথা রয়েছে। এর কোন রূপ ব্যত্যয় এবং লঙ্ঘন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্যবৃন্দ এবং দেশের সাংবাদিক সমাজ কোন ভাবেই মেনে নেবে না।
প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটির গত ২৫ ও ২৬শে মে ২০১৫ অনুষ্ঠিত সভায় আগামী ২৭শে জুন ২০১৫ অতিরিক্ত সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভার আলোচ্য বিষয় দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা ও নির্বাচন। ক্লাবের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ক্লাবের স্বত্বাধিকারী বা মালিক যেহেতু স্থায়ী সদস্যবৃন্দ, সুতরাং তাদের সম্মিলিত প্রজ্ঞা, দায়িত্বশীলতা এবং সংকট নিরসনের আন্তরিক প্রয়াসের উপর ব্যবস্থাপনা কমিটি সব সময়ই আস্থাশীল। আগামী ২৭শে জুন অনুষ্ঠেয় অতিরিক্ত সাধারণ সভাতেই সংকট নিরসনের পন্থা বের করা এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। এই অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে অন্য কারো পক্ষে দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা করার নৈতিক ও আইনগত কোন এখতিয়ার বা বৈধতা নেই।
জাতীয় প্রেস ক্লাব ব্যবস্থাপনা কমিটি সুস্পষ্ট ভাবে জানাচ্ছে যে, ২৮শে মে ২০১৫ তারিখে কোন দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভা নির্ধারিত ছিল না। ইতিপূর্বে আহূত সভাটি ব্যবস্থাপনা কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে বাতিল করা হয়েছে এবং সাধারণ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তা সদস্যদের এর মধ্যেই অবহিত করা হয়েছে। কাজেই দ্বি-বার্ষিক সাধারণ সভার নামে যারা তথাকথিত একটি সভা করেছেন তা গঠনতন্ত্রের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং ক্লাবের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিপন্থি। একই সঙ্গে তা জাতীয় গণতন্ত্র এবং প্রেস ক্লাবের স্বার্থ ও ঐক্যবিরোধী। এটা ক্লাবের অখণ্ডতা এবং সাংবাদিক সমাজের বৃহত্তর ঐক্য বিনষ্ট করবে এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। ক্লাব পরিচালনা করে ক্লাবের বৈধ কমিটি। ২৭শে জুন ২০১৫ এর অতিরিক্ত সাধারণ সভাই ক্লাবের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে। তাই জাতীয় প্রেস ক্লাবের সকল স্থায়ী সদস্যের প্রতি আমাদের আবেদন- ক্লাবের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও অখণ্ডতা রক্ষার ব্যাপারে আপনারা যার যার অবস্থান থেকে বলিষ্ঠ ও দৃঢ় ভূমিকা পালন করুন।
আপনারা অবৈধ, আপনারা আর ক্ষমতায় নেই
ওদিকে, প্রেস ক্লাব মিলনায়তে সাধারণ সভায় সরকার সমর্থক সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, কয়েক বছর ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাব একটি গোষ্ঠি ও রাজনৈতিক দলের আখড়ায় পরিণত হয়েছে, এভাবে ক্লাব চলতে পারে না। আমি স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, আমরা দেশে স্বেচ্ছাচারিতা মানি নাই, জাতীয় প্রেস ক্লাবেও আর কোন স্বেচ্ছাচারিতা মেনে নেয়া হবে না। বর্তমান কমিটিকে অবৈধ হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ৩১শে মার্চের পর থেকে এই কমিটির ক্লাব পরিচালনার কোন আইনগত ভিত্তি নেই। অতিরিক্ত সাধারণ সভায় তাদের এ সময়ের মধ্যে সাধারণ সভা ও নির্বাচনের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল। তারপরও তারা চেয়ার আঁকড়ে রেখেছেন। আমরা সাধারণ সদস্যরা এর জবাবে বলতে চাই, আপনারা অবৈধ, আপনারা আর ক্ষমতায় নেই। এরপরও যদি আপনারা ক্লাবের চেয়ার আঁকড়ে থাকেন, তাহলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। সাধারণ সদস্যরা আপনাদের মোকাবিলা করবে। আমানুল্লাহ কবীর বলেন, প্রেস ক্লাবকে ইউনিয়নের মতো বিভক্ত করে এর অখণ্ড ঐতিহ্যকে বিনষ্ট করায় আজকের এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যদি এক ব্যক্তি এই ক্লাবের দেখভাল না করত, এই সংকট সৃষ্টি হতো না বলে আমি মনে করি। আমরা সেজন্য সমঝোতার একটি প্যানেলের মাধ্যমে এই সংকট থেকে উত্তরণ ঘটাতে চাই। খন্দকার মনিরুল আলম বলেন, ২০০২ সালে যে কমিটি বিজয়ী হয়ে আসে, তারাই একচেটিয়াভাবে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে দুই ফোরামের ভোট ভারসাম্যহীন করে ফেলে। ফলে সৃষ্টি হয় সংকটের। আমরা এই ভারসাম্যহীনতার অবসান চাই। সভাপতির বক্তব্যে শাহজাহান মিয়া বলেন, আজকের এই সভা ঐতিহাসিক একটি সভা। এটা জাতীয় প্রেস ক্লাবের ইতিহাস মাইল ফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
প্রেস ক্লাব দখলের অপচেষ্টার নিন্দা
এদিকে, জাতীয় প্রেস ক্লাব দখলের অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএফইউজে ও ডিইউজের একাংশের নেতারা। বিএফইউজের একাংশের সভাপতি শওকত মাহমুদ, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মো. মোদাব্বের হোসেন, ডিইউজে’র একাংশের সভাপতি আবদুল হাই শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান এক যৌথ বিবৃতিতে জাতীয় প্রেস ক্লাব নিয়ে নোংরা খেলা থেকে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরত থাকার আহ্বান জানান। বিবৃতিতে তারা বলেন, নির্বাচনকে এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিবেকবান সদস্যদের মূল্যবান মতামতকে যারা আস্থায় নিতে ভয় পান, তারাই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এটির পদ-পদবি কুক্ষিগত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। ক্লাবের নীতিবান সদস্যরা যা কখনো মেনে নেবেন না। ক্লাবের পদ-পদবি দখলের এ অশুভ কর্মকাণ্ড সাধারণ সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে মোকাবিলা করা হবে বলে তারা বিবৃতিতে উল্লেখ করেন।
No comments