মনে করি না আমি ব্যর্থ: মনজুর আলম by সোহরাব হাসান ও একরামুল হক
সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আগে ২০-দলীয় জোট-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী মোহাম্মদ মনজুর আলম ও আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আ জ ম নাছির উদ্দিন প্রথম আলোর মুখোমুখি হন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান ও জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক একরামুল হক
প্রথম আলো: আপনি পাঁচ বছর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। অনেকে বলেন, আপনি ব্যর্থ হয়েছেন। তার পরও কেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন?
মনজুর আলম: আমি মনে করি না মেয়র হিসেবে আমি ব্যর্থ হয়েছি। আমি নির্বাচনের সময়ই বলেছিলাম, যেসব এলাকা অনুন্নত, সেই সব এলাকার উন্নয়নকাজ আগে করব। আমি পাঁচ বছর কাজ করেছি। গত পাঁচ বছরে আমি ১০-১২ দিনের বেশি ছুটি নিইনি। প্রতিদিনই কাজ করেছি। ৫৭টি সাধারণ সভা করেছি। ২০টি স্থায়ী কমিটি ছিল। সব উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমি সংসদীয় রীতিতে সিটি করপোরেশন পরিচালনার চেষ্টা করেছি। এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।
প্রথম আলো: মেয়র নির্বাচনে আপনি বিএনপি তথা ২০-দলীয় জোটের সমর্থন পেয়েছেন। কিন্তু মানুষ আপনাকে মহিউদ্দিনের সমর্থক হিসেবেই জানে। এটা কি রাজনৈতিক দ্বিচারিতা নয়?
মনজুর আলম: এটা মোটেই রাজনৈতিক দ্বিচারিতা নয়। বরং আমি বিষয়টিকে দেখি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক মহলের মানুষ যদি আমাকে পছন্দ করেন, সেটি আমার জয়কে আরও সহজ করে দেবে। আপনি একজন সাবেক মেয়রের কথা বললেন। আরেকজন সাবেক মেয়র মীর নাছিরউদ্দিন আজ সারা দিন আমার সঙ্গে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। এর আগের মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীও আমার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেছেন।
প্রথম আলো: আপনার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের কথা বলে ভোট নিলেও এ ব্যাপারে কোনো কাজ করেননি।
মনজুর আলম: অভিযোগটি সত্য নয়। আমি জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করেছি বলেই আগে যেখানে বৃষ্টি হলে চার-পাঁচ দিন জলাবদ্ধতা থাকত, এখন সেটি থাকে কয়েক ঘণ্টা। গত বছরের ১৪ জুন প্রথম আলোতেই ছাপা হয়েছে কয়েক ঘণ্টা জলাবদ্ধতা থাকার কথা। চাক্তাই খাল খনন, শহরের নর্দমাগুলো প্রশস্ত ও পরিষ্কার করার কারণেই এই অগ্রগতি হয়েছে। ভবিষ্যতে জলাবদ্ধতা পুরোপুরি দূর করা যাবে আশা করি।
প্রথম আলো: আরেকটি অভিযোগ, আপনার সময়ে চট্টগ্রাম অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন শহরে পরিণত হয়েছে। চারদিকে নোংরা আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। এর কারণ কী?
মনজুর আলম: মনে রাখতে হবে, নগরে জনসংখ্যা অনেক বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় বাজেট ও লোকবল বাড়ানো হয়নি। সীমিত লোকবল ও সরঞ্জাম নিয়ে এখন আমরা দিনে দুবার আবর্জনা সরাই। ডাস্টবিন থেকে ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য ১০০ কনটেইনার কেনা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের গাড়িগুলো ছিল ৩০ বছরের পুরোনো। আমি ৬৩টি ডাম্প ট্রাক ও ১২টি কনটেইনার মুভার কিনেছি।
প্রথম আলো: বিএনপির নগর কমিটির সম্পাদক ডা. শাহাদত হোসেনও প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দল তাঁকে সমর্থন দেয়নি। এ কারণে তিনি ও তাঁর সমর্থকেরা আপনার পক্ষে কাজ করা থেকে বিরত আছেন।
মনজুর আলম: আমি মনে করি না তাঁরা বিরত আছেন। ডা. শাহাদত হোসেনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি মামলার জামিন নিতে এখন ঢাকায় আছেন। আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা হয়েছে, যে কারণে তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রচারে নামতে পারছেন না। কিন্তু তাঁর কর্মীরা সবাই আমার সঙ্গে কাজ করছেন। তা ছাড়া নির্বাচনী প্রচারে ছয়টি নির্বাচনী এলাকার জন্য ছয়জন কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সাংসদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রথম আলো: আপনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সখ্য থাকায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা আপনার নির্বাচনী প্রচারে নামছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন।
মনজুর আলম: কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। আমাকে প্রার্থী করা হয়েছে ২০-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে। চট্টগ্রামে ২০-দলীয় জোটের সব নেতা-কর্মীই আমার পক্ষে কাজ করছেন। ৪১টি সাধারণ কাউন্সিলর পদের মধ্যে জামায়াতকে ১০টি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে সমস্যা থাকতে পারে। বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন দলের ভেতরেও। এটিকে ২০-দলীয় জোটের সমস্যা হিসেবে দেখা ঠিক হবে না।
প্রথম আলো: আপনি বিএনপি-সমর্থিত মেয়র ছিলেন। সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব পালনকালে আপনি কি আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে কোনো বাধার সম্মুখীন হয়েছেন? কোনো অসহযোগিতা?
মনজুর আলম: অসহযোগিতা পাইনি। সরকার কোনো প্রকল্পে বাধা দেয়নি, তবে দীর্ঘসূত্রতা হয়েছে। আমার সময়ে সিটি করপোরেশন ৯০০ কোটি টাকার কাজ করেছে। এর মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা এসেছে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে, বাকি ৪০০ কোটি টাকা সিটি করপোরেশনের নিজস্ব আয় থেকে। আগের তিন মেয়াদে সিটি করপোরেশন মাত্র ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। তাহলে কী করে বলা যায়, আমি ব্যর্থ হয়েছি? সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ কাউন্সিলর ছিলেন আওয়ামী লীগের। বিএনপি, জামায়াত ও বাসদেরও কাউন্সিলর ছিলেন। আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। সিটি করপোরেশন ছিল সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও নির্দলীয়। এটাও আমার সফলতা বলতে পারেন।
প্রথম আলো: সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে মনে করেন?
মনজুর আলম: নির্বাচন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করেছে। আমরা তাদের কথায় আস্থা রেখেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। এখন কমিশনেরই দায়িত্ব সুষ্ঠু নির্বাচনের বাধাগুলো অপসারণ করা।
প্রথম আলো: নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে আপনার বিরুদ্ধেও নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিয়েছে।
মনজুর আলম: আমার বিরুদ্ধে মোটর শোভাযাত্রা করার যে অভিযোগ কমিশন এনেছে, সেটি কিন্তু মোটেই ইচ্ছাকৃত ছিল না। আমি ও কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্ধারিতসংখ্যক সমর্থককে নিয়ে প্রচারে বের হই। কিন্তু আমাদের সঙ্গে স্বেচ্ছায় অনেকেই যোগ দেন, যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন। তাই এটিকে কোনোভাবেই মোটর শোভাযাত্রা বলা যায় না। নির্বাচন কমিশনের শোকজের জবাবে আমরা সে কথাই বলেছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, দুটি ওয়ার্ডে আমার কর্মীরা ব্যানার-পোস্টার লাগাতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। কোথাও কোথাও আমার ব্যানার ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের লক্ষণ নয়। তার পরও আমরা নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা রাখতে চাই। আশা করব, প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থী আচরণবিধি মেনে চলবেন এবং মানুষ নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।
প্রথম আলো: আপনি যে দলের বা জোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন, সেই দল ও জোট কয়েক দিন আগেও সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনে ছিল। সেই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পেট্রলবোমায় বহু মানুষ মারা গেছে। অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিরোধী জোট নতুন করে আন্দোলন শুরু করলে আপনার ভূমিকা কী হবে?
মনজুর আলম: তখন পরিস্থিতি বুঝে করণীয় ঠিক করব। জনপ্রতিনিধিত্ব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ। আর আন্দোলন হলো একটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, উন্নয়ন ব্যাহত হয় এমন কিছু কারও করা উচিত নয়। যে-ই করুক না কেন, বোমা মেরে মানুষ হত্যা আন্দোলন নয়। আবার রাজনৈতিক সমস্যা থাকলে সরকারকেও তা সমাধানে এগিয়ে আসতে হয়। গণতন্ত্রের স্বার্থে সবাইকে সহনশীল হতে হবে।
প্রথম আলো: আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আ জ ম নাছির সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাই।
মনজুর আলম: একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল-সমর্থিত একজন প্রার্থী তাঁর প্রতিটি কথা ও আচরণে অধিকতর রাজনৈতিক দায়িত্ববোধের পরিচয় দেবেন, এটাই প্রত্যাশিত।
প্রথম আলো: আপনি পাঁচ বছর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। অনেকে বলেন, আপনি ব্যর্থ হয়েছেন। তার পরও কেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন?
মনজুর আলম: আমি মনে করি না মেয়র হিসেবে আমি ব্যর্থ হয়েছি। আমি নির্বাচনের সময়ই বলেছিলাম, যেসব এলাকা অনুন্নত, সেই সব এলাকার উন্নয়নকাজ আগে করব। আমি পাঁচ বছর কাজ করেছি। গত পাঁচ বছরে আমি ১০-১২ দিনের বেশি ছুটি নিইনি। প্রতিদিনই কাজ করেছি। ৫৭টি সাধারণ সভা করেছি। ২০টি স্থায়ী কমিটি ছিল। সব উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। আমি সংসদীয় রীতিতে সিটি করপোরেশন পরিচালনার চেষ্টা করেছি। এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।
প্রথম আলো: মেয়র নির্বাচনে আপনি বিএনপি তথা ২০-দলীয় জোটের সমর্থন পেয়েছেন। কিন্তু মানুষ আপনাকে মহিউদ্দিনের সমর্থক হিসেবেই জানে। এটা কি রাজনৈতিক দ্বিচারিতা নয়?
মনজুর আলম: এটা মোটেই রাজনৈতিক দ্বিচারিতা নয়। বরং আমি বিষয়টিকে দেখি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক মহলের মানুষ যদি আমাকে পছন্দ করেন, সেটি আমার জয়কে আরও সহজ করে দেবে। আপনি একজন সাবেক মেয়রের কথা বললেন। আরেকজন সাবেক মেয়র মীর নাছিরউদ্দিন আজ সারা দিন আমার সঙ্গে নির্বাচনী প্রচার চালিয়েছেন। এর আগের মেয়র মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীও আমার প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেছেন।
প্রথম আলো: আপনার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগ, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনের কথা বলে ভোট নিলেও এ ব্যাপারে কোনো কাজ করেননি।
মনজুর আলম: অভিযোগটি সত্য নয়। আমি জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করেছি বলেই আগে যেখানে বৃষ্টি হলে চার-পাঁচ দিন জলাবদ্ধতা থাকত, এখন সেটি থাকে কয়েক ঘণ্টা। গত বছরের ১৪ জুন প্রথম আলোতেই ছাপা হয়েছে কয়েক ঘণ্টা জলাবদ্ধতা থাকার কথা। চাক্তাই খাল খনন, শহরের নর্দমাগুলো প্রশস্ত ও পরিষ্কার করার কারণেই এই অগ্রগতি হয়েছে। ভবিষ্যতে জলাবদ্ধতা পুরোপুরি দূর করা যাবে আশা করি।
প্রথম আলো: আরেকটি অভিযোগ, আপনার সময়ে চট্টগ্রাম অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন শহরে পরিণত হয়েছে। চারদিকে নোংরা আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। এর কারণ কী?
মনজুর আলম: মনে রাখতে হবে, নগরে জনসংখ্যা অনেক বেড়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় বাজেট ও লোকবল বাড়ানো হয়নি। সীমিত লোকবল ও সরঞ্জাম নিয়ে এখন আমরা দিনে দুবার আবর্জনা সরাই। ডাস্টবিন থেকে ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য ১০০ কনটেইনার কেনা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের গাড়িগুলো ছিল ৩০ বছরের পুরোনো। আমি ৬৩টি ডাম্প ট্রাক ও ১২টি কনটেইনার মুভার কিনেছি।
প্রথম আলো: বিএনপির নগর কমিটির সম্পাদক ডা. শাহাদত হোসেনও প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দল তাঁকে সমর্থন দেয়নি। এ কারণে তিনি ও তাঁর সমর্থকেরা আপনার পক্ষে কাজ করা থেকে বিরত আছেন।
মনজুর আলম: আমি মনে করি না তাঁরা বিরত আছেন। ডা. শাহাদত হোসেনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি মামলার জামিন নিতে এখন ঢাকায় আছেন। আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা হয়েছে, যে কারণে তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রচারে নামতে পারছেন না। কিন্তু তাঁর কর্মীরা সবাই আমার সঙ্গে কাজ করছেন। তা ছাড়া নির্বাচনী প্রচারে ছয়টি নির্বাচনী এলাকার জন্য ছয়জন কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক সাংসদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রথম আলো: আপনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সখ্য থাকায় জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা আপনার নির্বাচনী প্রচারে নামছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। তাঁরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন।
মনজুর আলম: কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব নেই। আমাকে প্রার্থী করা হয়েছে ২০-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে। চট্টগ্রামে ২০-দলীয় জোটের সব নেতা-কর্মীই আমার পক্ষে কাজ করছেন। ৪১টি সাধারণ কাউন্সিলর পদের মধ্যে জামায়াতকে ১০টি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে সমস্যা থাকতে পারে। বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন দলের ভেতরেও। এটিকে ২০-দলীয় জোটের সমস্যা হিসেবে দেখা ঠিক হবে না।
প্রথম আলো: আপনি বিএনপি-সমর্থিত মেয়র ছিলেন। সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব পালনকালে আপনি কি আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে কোনো বাধার সম্মুখীন হয়েছেন? কোনো অসহযোগিতা?
মনজুর আলম: অসহযোগিতা পাইনি। সরকার কোনো প্রকল্পে বাধা দেয়নি, তবে দীর্ঘসূত্রতা হয়েছে। আমার সময়ে সিটি করপোরেশন ৯০০ কোটি টাকার কাজ করেছে। এর মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা এসেছে সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে, বাকি ৪০০ কোটি টাকা সিটি করপোরেশনের নিজস্ব আয় থেকে। আগের তিন মেয়াদে সিটি করপোরেশন মাত্র ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। তাহলে কী করে বলা যায়, আমি ব্যর্থ হয়েছি? সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ কাউন্সিলর ছিলেন আওয়ামী লীগের। বিএনপি, জামায়াত ও বাসদেরও কাউন্সিলর ছিলেন। আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি। সিটি করপোরেশন ছিল সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও নির্দলীয়। এটাও আমার সফলতা বলতে পারেন।
প্রথম আলো: সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে মনে করেন?
মনজুর আলম: নির্বাচন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে আমাদের আশ্বস্ত করেছে। আমরা তাদের কথায় আস্থা রেখেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। এখন কমিশনেরই দায়িত্ব সুষ্ঠু নির্বাচনের বাধাগুলো অপসারণ করা।
প্রথম আলো: নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে আপনার বিরুদ্ধেও নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিয়েছে।
মনজুর আলম: আমার বিরুদ্ধে মোটর শোভাযাত্রা করার যে অভিযোগ কমিশন এনেছে, সেটি কিন্তু মোটেই ইচ্ছাকৃত ছিল না। আমি ও কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী নির্ধারিতসংখ্যক সমর্থককে নিয়ে প্রচারে বের হই। কিন্তু আমাদের সঙ্গে স্বেচ্ছায় অনেকেই যোগ দেন, যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন। তাই এটিকে কোনোভাবেই মোটর শোভাযাত্রা বলা যায় না। নির্বাচন কমিশনের শোকজের জবাবে আমরা সে কথাই বলেছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, দুটি ওয়ার্ডে আমার কর্মীরা ব্যানার-পোস্টার লাগাতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন। কোথাও কোথাও আমার ব্যানার ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের লক্ষণ নয়। তার পরও আমরা নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা রাখতে চাই। আশা করব, প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থী আচরণবিধি মেনে চলবেন এবং মানুষ নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।
প্রথম আলো: আপনি যে দলের বা জোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নেমেছেন, সেই দল ও জোট কয়েক দিন আগেও সরকারের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনে ছিল। সেই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে পেট্রলবোমায় বহু মানুষ মারা গেছে। অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিরোধী জোট নতুন করে আন্দোলন শুরু করলে আপনার ভূমিকা কী হবে?
মনজুর আলম: তখন পরিস্থিতি বুঝে করণীয় ঠিক করব। জনপ্রতিনিধিত্ব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ। আর আন্দোলন হলো একটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, উন্নয়ন ব্যাহত হয় এমন কিছু কারও করা উচিত নয়। যে-ই করুক না কেন, বোমা মেরে মানুষ হত্যা আন্দোলন নয়। আবার রাজনৈতিক সমস্যা থাকলে সরকারকেও তা সমাধানে এগিয়ে আসতে হয়। গণতন্ত্রের স্বার্থে সবাইকে সহনশীল হতে হবে।
প্রথম আলো: আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আ জ ম নাছির সম্পর্কে আপনার প্রতিক্রিয়া জানতে চাই।
মনজুর আলম: একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল-সমর্থিত একজন প্রার্থী তাঁর প্রতিটি কথা ও আচরণে অধিকতর রাজনৈতিক দায়িত্ববোধের পরিচয় দেবেন, এটাই প্রত্যাশিত।
No comments