গগনবিদারী কান্নায় ভারি ছিল চারপাশ by নাজমুল আহসান
রানা
প্লাজা ধসে পড়ার মাত্র এক ঘণ্টা পরই সেখানে পৌঁছান ফটোসাংবাদিক আবির
আবদুল্লাহ। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই মারাত্মক ছিল যে, তিনি বুঝে উঠতে
পারছিলেন না, ঠিক কোন জায়গা থেকে ছবি তোলা শুরু করবেন। এক হাজারেরও বেশি
মানুষ এ দুর্ঘটনায় নিহত হন। আরও হাজার হাজার মানুষ আহত হন। বহু মানুষ তখন
ধ্বংসস্তূপের ভেতরে আটকে পড়ে চিৎকার করছিলেন। গগনবিদারী কান্নায় চারপাশ ছিল
ভারি। উদ্ধারকারীরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আহতদের টেনে বের করছিলেন। এর
আগে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া বহু কারখানার ছবি তুলেছিলেন আবির।
সেখানেও নিহত হয়েছে বহু শ্রমিক। তবে রানা প্লাজার ঘটনার মতো বীভৎস কিছু এর
আগে কখনই দেখেননি তিনি। তার মতে, সেটা ছিল যুদ্ধক্ষেত্রের মতো। ইউরোপিয়ান
প্রেসফটো এজেন্সির ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করেন আবির আবদুল্লাহ। গতকাল এসব
কথা লিখেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। এতে
আরও বলা হয়, সেদিন ঘটনার আকস্মিকতা সামলিয়ে নিজেকে দ্রুত ধাতস্থ করে নেন
তিনি। তুলতে শুরু করেন ওই ভয়াবহ দুর্ঘটনার ছবি। সেসব ছবি ছড়িয়ে পড়ে
বিশ্বময়। সে ছবিই এ দুর্ঘটনাকে বিশ্বের নজরে আনতে সাহায্য করে। এরপর
দুর্ঘটনার শিকার মানুষের দুরবস্থার চিত্রও তিনি খুঁজে ফেরেন। তিনি বলেন,
এটা ছিল বেদনা ভারাক্রান্ত ঘটনা। আমরা মানুষের কষ্ট দেখেছি, দেখেছি অশ্রু।
সেসব শোকাহত মানুষ প্রায় ২ সপ্তাহ আহত বা নিহত স্বজনের লাশের অপেক্ষায়
ছিলেন। এ সময় যথাযথ খাবার ও আশ্রয় ছিল না তাদের। এ সময়েই গার্মেন্টকর্মীদের
দুর্ভাগ্যের চিত্র পৌঁছে যায় বিশ্বদরবারে। সস্তা শ্রমের জন্য পশ্চিমা
বিশ্ব বেছে নিয়েছিল বাংলাদেশকে। ভোক্তারা কখনও ভাবেনি, তাদের কাপড় তৈরি হয়
খুব কম দামে। শ্রমিকদের দেয়া হয় নামমাত্র মজুরি। এ নিয়ে বহু সম্পাদকীয় ও
মন্তব্য প্রতিবেদন ছাপা হয় বিশ্বের নামীদামি গণমাধ্যমে। কিন্তু একসময়
ক্রমেই হ্রাস পেতে শুরু করে বিশ্ববাসীর মনোযোগ। আবির আবদুল্লাহ বলেন,
পশ্চিমা পত্রিকাগুলোর শিরোনাম খুব দ্রুতই ভুলে গেল মানুষ। অপরদিকে সস্তা
কিন্তু ফ্যাশনদুরস্ত পোশাক বানানোর দাম আহত শ্রমিকরা নিজেদের জীবন দিয়ে
চুকাচ্ছিল। ওই ঘটনার পরপরই, আমি ঘটনায় বেঁচে যাওয়া মানুষদের অনুসরণ শুরু
করি। তা না হলে তাদেরকেও হয়তো সবাই ভুলে যেত।
আজ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি। কিন্তু আবির আবদুল্লাহ এখনও দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের নিয়ে কাজ করছেন। ওই ঘটনায় আহত অনেকে ছিলেন কিশোরী শ্রমিক। পরিবারকে সাহায্য করতে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমিয়ে গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি নিয়েছিলেন তারা। ওই আহত কিশোরীদের আস্থা অর্জন করে তাদের ছবি তোলেন আবির। তখন সরকারসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দেয়া অর্থ সাহায্যের ওপর ভর করে তারা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে নিজেদের নতুন জীবন শুরু করার চেষ্টা করছিলেন। আবির জানান, তাদের বেশির ভাগই ছিলেন মানসিকভাবে আঘাতগ্রস্ত। কেননা, এদের অনেকে কয়েক ঘণ্টা, এমনকি কয়েক দিন ধরে নিজের নিহত বন্ধু বা সহকর্মীর পাশে আটকা ছিলেন। অনেকে হারিয়েছেন নিজেদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। তারা এরপর গ্রামে ফিরে গেছেন। পরিবারের সদস্যরা তাদের সেবাশুশ্রূষা করছেন। অনেকেই কারখানার আশপাশে রয়ে গেছেন। এরপর ক্ষতিপূরণের অর্থ দিয়ে নিজেদের জীবন নতুন করে গড়ার চেষ্টা করেছেন।
রেবেকা নামের এক মারাত্মক আহত নারীকে অনুসরণ করছিলেন আবির। ওই ঘটনায় নিজের মাকে হারান রেবেকা। তিনি ছিলেন খুবই শক্ত মানসিকতার। প্রায় আটটি অপারেশন হয় তার। এর পরও তার দুটি পা-ই হারিয়ে ফেলেন। কার্পেন্টার হিসেবে কাজ করতেন তার স্বামী মুস্তাফা। কিন্তু স্ত্রীর সেবা করার জন্য সে চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। গত ডিসেম্বরে, আবির আবদুল্লাহকে ফোন দিয়ে নিজের ফেসবুক পেজে ঘুরে আসতে বলেন রেবেকা। আবির ফেসবুকে দেখেন, রেবেকার নতুন কন্যাসন্তানের ছবি। আবির এরপর ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া তরুণদের দিকে মনোযোগ দেন। কেননা, তারা অনেকে বড় হয়েছে, এমনকি বিয়েও করেছেন। ২০১৩ সালে, অ্যালেক্সিয়া ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য পেয়ে নিজের কাজ এগিয়ে নিতে শুরু করেন আবির। তখন তিনি, ঘরে ও কর্মস্থলে গার্মেন্ট শ্রমিকদের পরিস্থিতি নথিভুক্ত করার কাজ চালান। ওই ঘটনার পর কিছু শ্রমিকের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তাদের বেতনও বেড়েছে। তবে এখনও অনিরাপদ ভবনে তাদের অনেকে লম্বা সময় কাজ করেন। মাসে বেতন পান মাত্র ১১০ ডলার।
আবির জানান, এটি একটি শোষণের গল্প। বাংলাদেশে এখনও ভাল গার্মেন্ট কারখানা রয়েছে। তবে ডিজনি, ওয়ালমার্ট, নাইকিসহ বড় বড় ব্র্যান্ডগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে, ন্যায়সঙ্গত মূল্য পরিশোধ করা। যাতে করে সব কারখানায় আদর্শ শ্রম ও নিরাপত্তা মানদণ্ড অনুযায়ী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। যাতে করে আবারও মানুষের জীবন ও স্বপ্নগুলো ভেঙে চুরমার না হয়।
আজ রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি। কিন্তু আবির আবদুল্লাহ এখনও দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের নিয়ে কাজ করছেন। ওই ঘটনায় আহত অনেকে ছিলেন কিশোরী শ্রমিক। পরিবারকে সাহায্য করতে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমিয়ে গার্মেন্ট কারখানায় চাকরি নিয়েছিলেন তারা। ওই আহত কিশোরীদের আস্থা অর্জন করে তাদের ছবি তোলেন আবির। তখন সরকারসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দেয়া অর্থ সাহায্যের ওপর ভর করে তারা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে নিজেদের নতুন জীবন শুরু করার চেষ্টা করছিলেন। আবির জানান, তাদের বেশির ভাগই ছিলেন মানসিকভাবে আঘাতগ্রস্ত। কেননা, এদের অনেকে কয়েক ঘণ্টা, এমনকি কয়েক দিন ধরে নিজের নিহত বন্ধু বা সহকর্মীর পাশে আটকা ছিলেন। অনেকে হারিয়েছেন নিজেদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। তারা এরপর গ্রামে ফিরে গেছেন। পরিবারের সদস্যরা তাদের সেবাশুশ্রূষা করছেন। অনেকেই কারখানার আশপাশে রয়ে গেছেন। এরপর ক্ষতিপূরণের অর্থ দিয়ে নিজেদের জীবন নতুন করে গড়ার চেষ্টা করেছেন।
রেবেকা নামের এক মারাত্মক আহত নারীকে অনুসরণ করছিলেন আবির। ওই ঘটনায় নিজের মাকে হারান রেবেকা। তিনি ছিলেন খুবই শক্ত মানসিকতার। প্রায় আটটি অপারেশন হয় তার। এর পরও তার দুটি পা-ই হারিয়ে ফেলেন। কার্পেন্টার হিসেবে কাজ করতেন তার স্বামী মুস্তাফা। কিন্তু স্ত্রীর সেবা করার জন্য সে চাকরি ছেড়ে দেন তিনি। গত ডিসেম্বরে, আবির আবদুল্লাহকে ফোন দিয়ে নিজের ফেসবুক পেজে ঘুরে আসতে বলেন রেবেকা। আবির ফেসবুকে দেখেন, রেবেকার নতুন কন্যাসন্তানের ছবি। আবির এরপর ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া তরুণদের দিকে মনোযোগ দেন। কেননা, তারা অনেকে বড় হয়েছে, এমনকি বিয়েও করেছেন। ২০১৩ সালে, অ্যালেক্সিয়া ফাউন্ডেশনের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য পেয়ে নিজের কাজ এগিয়ে নিতে শুরু করেন আবির। তখন তিনি, ঘরে ও কর্মস্থলে গার্মেন্ট শ্রমিকদের পরিস্থিতি নথিভুক্ত করার কাজ চালান। ওই ঘটনার পর কিছু শ্রমিকের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তাদের বেতনও বেড়েছে। তবে এখনও অনিরাপদ ভবনে তাদের অনেকে লম্বা সময় কাজ করেন। মাসে বেতন পান মাত্র ১১০ ডলার।
আবির জানান, এটি একটি শোষণের গল্প। বাংলাদেশে এখনও ভাল গার্মেন্ট কারখানা রয়েছে। তবে ডিজনি, ওয়ালমার্ট, নাইকিসহ বড় বড় ব্র্যান্ডগুলোর দায়িত্ব হচ্ছে, ন্যায়সঙ্গত মূল্য পরিশোধ করা। যাতে করে সব কারখানায় আদর্শ শ্রম ও নিরাপত্তা মানদণ্ড অনুযায়ী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। যাতে করে আবারও মানুষের জীবন ও স্বপ্নগুলো ভেঙে চুরমার না হয়।
No comments