উড়ে গেল বুনো হাঁস by শরীফ খান
তেরখাদার সেই হাঁস দুটি l ছবি: লেখক |
‘চাচা! হাঁসগুলো কি কিনলেন? নাকি বেচবেন?’
প্রশ্ন শুনে বৃদ্ধ ভদ্রলোক বাইসাইকেলের ব্রেক কষলেন, বাঁ পা মাটিতে ঠেকিয়ে দিয়ে বললেন, ‘নাতি-পুতিগে জন্যি রাজৈর বাজারের কাছ থেইকে কিইনে আনলাম গোপনে। অতিথি পাহি তো! পুলিশি মেলা ঝামেলা করে।’
আমি চারটি হাঁসই দেখলাম, সাইকেলের রডে ঝুলানো। চারটির পা-ই একত্রে বাঁধা। বললাম, ‘পুলিশ যদি আপনাকে ধরে?’
বৃদ্ধ লোকটি এবার রাস্তার পাশে দাঁড় করানো আমাদের আট সিটের মাইক্রোবাসটির দিকে তাকালেন একবার, নেমে পড়লেন সিট থেকে, চোখ দুটি তার ঘোলা হয়ে গেছে ভয়ে—রডে ঝোলানো চারটি হাঁসের চোখের মতো। ‘ভয় নেই চাচা, কিন্তু আপনাকে ছেড়ে দিতে হবে হাঁসগুলোকে।’ বললাম আমি। উনি তড়িঘড়ি হাঁস চারটিকে আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, ‘আমি তাহলে যাই স্যার?’ উত্তরে আমি গম্ভীরভাবে বললাম, ‘যান, কত দিয়ে কিনেছিলেন?’ ‘তের শো টাহা,’ বলেই উনি সাইকেলে চাপলেন। আমরা হাঁস চারটি উড়িয়ে দিলাম আকাশে। না, কোনো আনন্দ পেলাম না। হয়তোবা ওরা আবারও পড়বে পেশাদার-নেশাদার নানা রকম শিকারির ফাঁদে, চড়বে রান্নাঘরের চুলায়। আমি মোটামুটি নিশ্চিত, পাখি চারটি মাদারীপুরের রাজৈরে এসেছিল বাগেরহাটের চিতলমারী বা ফকিরহাট অঞ্চল থেকে।
ঘটনাটি গত ফেব্রুয়ারি মাসের, আমার এক অনুজপ্রতিম বন্ধুর সঙ্গে মোট ছয়জন ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে বেড়াতে যাচ্ছিলাম বরিশালের বানারীপাড়ার এক গ্রামে। যাওয়ার পথেই মাদারীপুরের রাজৈরের কাছাকাছি ঘটনা এটি। ২০১১ সালের শীতে বেড়াতে গিয়েছিলাম খুলনার তেরখাদা উপজেলায়। যে গ্রামে গিয়েছিলাম এবং যার সঙ্গে গিয়েছিলাম, তিনি আমার জন্য একজোড়া বুনো হাঁস কিনেছিলেন ৯৫০ টাকায়। তখন আমার সঙ্গে ক্যামেরা ছিল, ছবি তোলা হলো। রাজৈরের হাঁস চারটির ছবি তোলা যায়নি, আমাদের কারও কাছেই ক্যামেরা ছিল না। মোবাইলে ক্যামেরা ছিল, মোটেই উন্নত মানের নয়। তেরখাদার হাঁস দুটিও ছেড়ে দিয়েছিলাম (২৮/৯/২০১৩)।
যে ছয়টি হাঁসের কথা বললাম, সেগুলোকে ফকিরহাট অঞ্চলে বলা হয় চড়ুই হাঁস, নাইরোলি। জিরিয়া হাঁস, নীলপক্ষÿবলাকা নামেও পরিচিত এরা। ইংরেজি নাম Gargany, বৈজ্ঞানিক নাম Anas querquedula, মাপ ৩৯ সেন্টিমিটার। আমাদের পরিযায়ী বুনো হাঁস এটি। শীত মৌসুমে যথেষ্টই দেখা মেলে এদের হাওর-বাঁওড়ে। মূল খাদ্য মূলত শামুক-গুগলীসহ নানা রকম জলজ শস্যবীজ, মাছ ও কচি ঘাস-পাতা-কুঁড়ি।
বেশ বড় দলে চলে এরা। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের হাওরগুলোতে এখন কম পরিমাণে হলেও শিকারিদের কবলে পড়তে হয় এদের। তবে ফকিরহাট-মোল্লাহাট-চিতলমারীজোড়া ‘উত্তরের হাওরে’ এরা ধরা পড়ে বেশি। ওই অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সচেতন জনগণ ও বাংলাদেশ ওয়াইল্ড লাইফ ক্লাবের তৎপরতায় বিক্রি করা আজকাল খুবই মুশকিল। তাই শিকার ছড়িয়ে দেওয়া হয় দূর-বহুদূরে। আমার বিশ্বাস, রাজৈরের হাঁস চারটি ছিল ও রকমেরই। কত ছোট বুনো হাঁস! তবু রক্ষা পায় না ওরা। রক্ষা করার উপায়টা কী?
প্রশ্ন শুনে বৃদ্ধ ভদ্রলোক বাইসাইকেলের ব্রেক কষলেন, বাঁ পা মাটিতে ঠেকিয়ে দিয়ে বললেন, ‘নাতি-পুতিগে জন্যি রাজৈর বাজারের কাছ থেইকে কিইনে আনলাম গোপনে। অতিথি পাহি তো! পুলিশি মেলা ঝামেলা করে।’
আমি চারটি হাঁসই দেখলাম, সাইকেলের রডে ঝুলানো। চারটির পা-ই একত্রে বাঁধা। বললাম, ‘পুলিশ যদি আপনাকে ধরে?’
বৃদ্ধ লোকটি এবার রাস্তার পাশে দাঁড় করানো আমাদের আট সিটের মাইক্রোবাসটির দিকে তাকালেন একবার, নেমে পড়লেন সিট থেকে, চোখ দুটি তার ঘোলা হয়ে গেছে ভয়ে—রডে ঝোলানো চারটি হাঁসের চোখের মতো। ‘ভয় নেই চাচা, কিন্তু আপনাকে ছেড়ে দিতে হবে হাঁসগুলোকে।’ বললাম আমি। উনি তড়িঘড়ি হাঁস চারটিকে আমার হাতে তুলে দিয়ে বললেন, ‘আমি তাহলে যাই স্যার?’ উত্তরে আমি গম্ভীরভাবে বললাম, ‘যান, কত দিয়ে কিনেছিলেন?’ ‘তের শো টাহা,’ বলেই উনি সাইকেলে চাপলেন। আমরা হাঁস চারটি উড়িয়ে দিলাম আকাশে। না, কোনো আনন্দ পেলাম না। হয়তোবা ওরা আবারও পড়বে পেশাদার-নেশাদার নানা রকম শিকারির ফাঁদে, চড়বে রান্নাঘরের চুলায়। আমি মোটামুটি নিশ্চিত, পাখি চারটি মাদারীপুরের রাজৈরে এসেছিল বাগেরহাটের চিতলমারী বা ফকিরহাট অঞ্চল থেকে।
ঘটনাটি গত ফেব্রুয়ারি মাসের, আমার এক অনুজপ্রতিম বন্ধুর সঙ্গে মোট ছয়জন ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে বেড়াতে যাচ্ছিলাম বরিশালের বানারীপাড়ার এক গ্রামে। যাওয়ার পথেই মাদারীপুরের রাজৈরের কাছাকাছি ঘটনা এটি। ২০১১ সালের শীতে বেড়াতে গিয়েছিলাম খুলনার তেরখাদা উপজেলায়। যে গ্রামে গিয়েছিলাম এবং যার সঙ্গে গিয়েছিলাম, তিনি আমার জন্য একজোড়া বুনো হাঁস কিনেছিলেন ৯৫০ টাকায়। তখন আমার সঙ্গে ক্যামেরা ছিল, ছবি তোলা হলো। রাজৈরের হাঁস চারটির ছবি তোলা যায়নি, আমাদের কারও কাছেই ক্যামেরা ছিল না। মোবাইলে ক্যামেরা ছিল, মোটেই উন্নত মানের নয়। তেরখাদার হাঁস দুটিও ছেড়ে দিয়েছিলাম (২৮/৯/২০১৩)।
যে ছয়টি হাঁসের কথা বললাম, সেগুলোকে ফকিরহাট অঞ্চলে বলা হয় চড়ুই হাঁস, নাইরোলি। জিরিয়া হাঁস, নীলপক্ষÿবলাকা নামেও পরিচিত এরা। ইংরেজি নাম Gargany, বৈজ্ঞানিক নাম Anas querquedula, মাপ ৩৯ সেন্টিমিটার। আমাদের পরিযায়ী বুনো হাঁস এটি। শীত মৌসুমে যথেষ্টই দেখা মেলে এদের হাওর-বাঁওড়ে। মূল খাদ্য মূলত শামুক-গুগলীসহ নানা রকম জলজ শস্যবীজ, মাছ ও কচি ঘাস-পাতা-কুঁড়ি।
বেশ বড় দলে চলে এরা। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের হাওরগুলোতে এখন কম পরিমাণে হলেও শিকারিদের কবলে পড়তে হয় এদের। তবে ফকিরহাট-মোল্লাহাট-চিতলমারীজোড়া ‘উত্তরের হাওরে’ এরা ধরা পড়ে বেশি। ওই অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সচেতন জনগণ ও বাংলাদেশ ওয়াইল্ড লাইফ ক্লাবের তৎপরতায় বিক্রি করা আজকাল খুবই মুশকিল। তাই শিকার ছড়িয়ে দেওয়া হয় দূর-বহুদূরে। আমার বিশ্বাস, রাজৈরের হাঁস চারটি ছিল ও রকমেরই। কত ছোট বুনো হাঁস! তবু রক্ষা পায় না ওরা। রক্ষা করার উপায়টা কী?
No comments